![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র নানান ভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র
বাংলাদেশের পরীক্ষার হলগুলোতে কিছু বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় এদেশের নিরীহ শান্তিপ্রিয় ছাত্ররা। মাফ করবেন পাঠক। প্রথম লাইনটা ‘রস+আলো’ (দৈনিক প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ফান ম্যাগাজিন) থেকে কপি-পেস্ট করলাম। কিন্তু অন্যদের বেলায় আসলে কী ঘটে ঠিক বলতে পারব না। কিন্তু আমার বেলায় 100% সত্যি। ছাত্র হিসেবে আমি কোনকালেই খুব বেশী সুবিধার ছিলাম না। ফলস্বরূপ পরীক্ষার আগের রাতে ‘কোপা সামসু’ টাইপ পড়া ছাড়া আমার খুব বেশী উপায় থাকত না। কিন্ত তারপরেও যে, খুব বেশী সুবিধা করতে পারতাম তাও না, কিন্তু চেষ্টা করে যেতে দোষ কী ? ছাত্র হিসেবে ভাল ছিলাম না বলেই হয়তোবা, পরীক্ষা হলে পরীক্ষার চেয়ে আজাইরা বিষয়গুলোতে আমার বরাবরই আগ্রহ ছিল বেশী। যেমন স্কুলে পড়ার সময় যে সমস্ত বজ্জাত ছাত্র খাতা দেখাতে চাইত না তাদের একটা শ্রেণীবিভাগের মত করেছিলাম। পাঠকদের সুবিধার্থে নিচে আমার ঐ সৃজনশীল কর্মের কিছু অংশ যথাসাধ্য বর্ণনা করছি।বলা বাহুল্য, এইখানে যেসব টাইপের ছাত্রদের কথা বলা হয়েছে তাদের সবারই সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য (নাকি দুর্ভাগ্য!!) আমার হয়েছে।
১.বিটকেলে ছাত্রঃ কিছু ছাত্র আশেপাশের ছাত্রের কাছ থেকে যা শুনবে প্রতিদান হিসেবে তাদের ভুল বলে দিবে (যদি কোন দুর্ভাগা ছাত্র তাদের কাছ থেকে কিছু শুনতে চায়)।
২.স্পষ্টভাষী ছাত্রঃ এরা পরীক্ষার শুরুতেই আশেপাশের ছাত্রদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয় যে, তারা খাতা দেখাদেখির মত জঘন্য কাজ করে পরীক্ষা হলের পবিত্র পরিবেশকে অবমাননা করতে পারবে না।এদের ৯৯% ই ভাল ছাত্র হিসেবে পরিচিত (১% ইচ্ছা করেই বাদ রাখলাম কারন ব্যতিক্রম থাকলেও থাকতে পারে)।
৩.ঘুষখোর ছাত্রঃ কোথায় যেন পড়েছিলাম, ঘুষ গ্রহণ ও ঘুষ প্রদান দুটোই বাংলার সুবিশাল সাহিত্য ভাণ্ডারের অংশ। এদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় সবাই শিক্ষাজীবনের শুরুর দিকে একটি ছড়া মুখস্ত করে। বৃষ্টিকে নিমন্ত্রনবিষয়ক একটি ছড়া। ছড়ার প্রথম লাইনটা এরকম, ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দিব মেপে...............’। এই রকম ছড়া মুখস্ত করার সাথে সাথে ঘুষ দেওয়ার সিস্টেমটাও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অবচেতন মনে ঢুকে যায়। তা যাই হোক, অনেক স্কুলেই পরীক্ষার সময় সীট প্ল্যান ঘন ঘন বদল করা হয়। তাই অনেকসময় কোন ঢ্যাঁড়শ টাইপ ছাত্রের এইরকম ঘুষখোর ছাত্রের পাশে সীট পড়লে অবস্থা সত্যি সত্যিই টাইট হয়ে যায়। তারা পরীক্ষার আগেই একটা মুক্তিপণ দাবি করে বসে। উদাহরণঃ তারা পাস করানোর বিনিময়ে ঢ্যাঁড়শের কাছে কোন গল্পের বই অথবা গেমস্ এর ডিস্ক দাবি করে বসবে (যা ঐ বেচারার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে আগে থেকেই প্রমাণিত)।
৪.সুযোগসন্ধানী বধির ছাত্রঃ এরা নিজেদের প্রয়োজনে আশপাশ থেকে যথাসম্ভব সাহায্য চাইবে। কিন্তু এদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করলেই সাময়িকভাবে বধির হয়ে যাবে, ভাবখানা এমন যেন শুনতে পাচ্ছে না।
৫.ডেঞ্জারাস টাইপ ছাত্রঃ এরা হল সবথেকে বিপজ্জনক শ্রেণীর ছাত্র। এরা সবসময় আশেপাশের ছাত্রদের জ্বালিয়ে মারবে। ভাবখানা এমন যে, তারা কিছুই পারে না। কিন্তু ঘটনা থাকে অন্য। এরা কখনই চায় না যে, সে যে কিছু পড়ে এসেছে তা পাশের ছাত্রটি জেনে যাক। সেটাই নিশ্চিত করার জন্য, পাশের ছাত্রটি কোন প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস করার আগেই উলটো তারা সেটা আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে বসে থাকে। তাই তার পাশের ছাত্র সর্বদাই এই সরল বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকে যে, তার গোবেচারা বন্ধুটি কিছুই জানে না। কিন্তু ফলাফলে কেন জানি সেই গোবেচারা বন্ধুটিই সবসময় অনেকখানি এগিয়ে থাকে।
এই ছিল আমার বজ্জাত ছাত্রদের নিয়ে গবেষণার ফলাফল। কিন্তু হায় আফসোস!! এদের থেকে সারাজীবন ২০০ হাত দূরে থাকার চেষ্টা করে গেলেও আমার এমনই ফাটা কপাল যে, ঘুরেফিরে এদের পাশেই বারবার বসতে হয়েছে। তাই পরীক্ষার হল মানেই আমার কাছে বিভীষিকাময় কিছু। কী আর করা ?
©somewhere in net ltd.