নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালপুরুষ

এপিটাফের গল্পগুচ্ছ্

https://soaib.me/

এপিটাফের গল্পগুচ্ছ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের বাড়ি গাড়ি কোথায় লুকিয়ে রেখেছ বাবা?

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৬

কলেজে পড়ার সময়ে একবার উপবৃত্তির টাকা দেয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল আমাদের ক্লাসের সব মেয়েকে। আমাকে ডেকে ম্যাম জিজ্ঞেস করলেন,"তোমার ফর্মে তো লিখা আছে তোমার বাবা পেশায় আইনজীবী!"
হ্যাঁ ম্যাম,ভুল তো লিখিনি কিছু।
"এইখানে কি আমাদের সাথে মশকরা করতে এসেছো?" ম্যাডামের কথা শুনে আমার গলায় সাহারা মরুভূমি সৃষ্টি হলো! ফর্মে কি ভুল করসি কে জানে! ম্যাডাম ত এত রাগী না,হঠাত্‍ "ম্যায় তেরি দুশমান" হয়ে যাওয়ার কারণটা কি?!
"তোমার বাবার বাড়ি গাড়ি থাকতে এখানে গরীবদের সামান্য কয়েকটা টাকাও মেরে দিতে এসেছো না? তোমাদের টাকায় একেবারে কুলোয় না?"
আমি প্লুটো থেকে ফিরে এসে ম্যামকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, "দেখুন ম্যাম,আমার জানামতে আমরা একটা টিনশেডের ভাড়া বাসায় থাকি। আর বাবা আমাকে অনেক কিছু কিনে দিলেও কোনদিন খেলনার গাড়ি কিনে দেন নাই।আসল গাড়ির কথা ত স্বপ্নেও ভাবা যায় না!"
ম্যাম বললেন,"তুমি এবার যাও,তোমার মিথ্যে শুনে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।"
বাসায় ফিরেই বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,আমাদের বাড়ি গাড়ি কোথায় লুকিয়ে রেখেছ? বাবা এক ধমক লাগিয়ে বললেন,"তোর মাথা খারাপ হইসে নাকি? কলেজ থেকে এসেই কি হাবিজাবি প্রশ্ন করতেছিস!" বাবার মাথা গরম। তাই আর ফাইজলামি না করে কলেজের ঘটনা বললাম। তখন বাবা হাসতে হাসতে বললেন,"আরে মা,ওকালতি করে,মানুষ ঠকিয়ে বিল্ডিংয়ের মালিক হওয়া কোন ব্যাপারই না। কিন্তু দেখা যেত একদিন ভূমিকম্পে আমাদের বিল্ডিংটাই ঠুস করে ভেঙ্গে গেছে! আমি শুধু চাই আমার সন্তানরা যেন কখনো ভাতের কষ্ট না পায়। তোরা খেয়ে পড়ে বড় হয়ে একদিন বুড়া বাবাকে চালাবি।"
বাবা তার আয়ের বেশিরভাগ টাকা খরচ করেন আমাদের খাবারের পেছনে। বাবা চান আমরা যেন ইচ্ছেমত খাই,কখনো যেন খিদেয় কাতর না হই। এর একটা কারণ আছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবারা তখন কিশোর,পরিবারের বাকিদের সাথে পাহাড়ে পাহাড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কতদিন খাওয়া জোটেনি তাদের। ভাত চাইলে পিশি মা বলতেন,"তোদের এত ক্ষুধা ক্যান,হ্যাঁ? পেটের মধ্যে আগুন ভরে দিব"।সেই কষ্টের দিনগুলোর কথা ভুলেননি বাবা।
আমি পড়ালেখা শিখে আর কিছু হতে না পারলেও খুব ভালো মুচি হতে পারব। কারণ বাবা কোর্টে যাওয়ার সময় জুতোগুলো মুছে ব্রাশ করে দিয়ে আসছি সেই ছোটবেলা থেকেই! এইকাজটা করতে আমার খুব ভালো লাগে। বাবা যখন কোন গরীব মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নেন না,কোর্ট থেকে ফেরার পথে কোন অনাহারী বৃদ্ধকে বাসায় এনে মাকে ডেকে বলেন,"ওনাকে ভাত বেড়ে দাও তো",আমি তখন মনে মনে ভাবি,"কালকে বাবার জুতোগুলো আরও চকচকে করে দিতে হবে"।

[এক আপুর জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে]

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৩

নতুন বলেছেন: সৎ মানুষের মনে এক শান্তি থাকে যেটা দূনিতিবাজেরা কখনোই পায়না..

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৬

এপিটাফের গল্পগুচ্ছ্ বলেছেন: সবাই তো আর বোঝে না দুঃখ তো সেখানেই

২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০৮

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: না জেনে এভাবে মন্তব্য করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া অনেকেরই সভাব ।

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:




এই সৎ মানুষগুলোর জন্য এদেশ এখনো বসবাসের যোগ্য।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৭

এপিটাফের গল্পগুচ্ছ্ বলেছেন: কতদিন থাকে সেটাি এখন দেখার বিষয়

৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

ভিটামিন সি বলেছেন: এটাই আমাদের শক্তি। আমরা সৎভাবে জীবনযাপন করি। আমাদের কেউ দমাতে পারবে না।

৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৮

কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার বাবা । খুব ভাল লাগলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.