![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বলার অনেক কিছু আছে যা লেখার মাধ্যমেই জানাতে চাই
মানবিক সহজাত গুণাবলির মধ্যে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা বা পরোপকার অন্যতম গুণ। এই মহৎ ও সুন্দর গুণটি যার মধ্যে বিদ্যমান, তিনি সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে উত্তম কাজের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। তাই ইসলামে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতাকে সর্বোত্তম কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং মানবতার মঙ্গল সাধনে এই গুণটির গুরুত্ব অত্যধিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা বিভিন্নভাবে মানব ও মানব সমাজের উপকার সাধন করতে পারি। এই উপকার বা সেবাদান কায়িক পরিশ্রম বা আর্থিক সাহায্য কিংবা সৎ পরামর্শ দ্বারাও হতে পারে। একথা স্মরণীয়, মহৎ লোকেরা বরাবরই পরের কল্যাণ সাধনে নিজেদের উৎসর্গ করেন। যাঁরা নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারেন_তাঁরাই শুধু এই মহৎ কাজটি পুরোপুরি সমাধা করতে পারেন। পক্ষান্তরে মহত্ত্বের এই গুণটি যাঁর মধ্যে নেই তিনি কস্মিনকালেও একে অপরের প্রতি সহানুভূতির কাজটি করতে পারেন না।
ইসলামে পরোপকারের কথা বারবার গুরুত্বসহকারে বলা হয়েছে। দান-সাহায্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা আল বাকারায় এরশাদ করা হয়েছে_'তোমাদের দান-সদকা, সাহায্যগুলো প্রকাশ্যে করো_তাও ভালো। তবে যদি গোপনে অভাবীদের দাও তাহলে তোমাদের জন্য এটিই বেশি ভালো।' এ ছাড়া আল কোরআনে আরো বলা হয়েছে_'ওয়া আম্মাস সায়িলা ফালা তানহার' অর্থাৎ 'কোনো গরিব-দুঃখীজন কিছু চাইলে তাকে ধমক দিয়ে ফিরিয়ে দিও না।'
পূর্ণাঙ্গ মানুষের মূর্ত প্রতীক আমাদের প্রিয় নবী করিম (সা.)-এর জীবনে আমরা পরোপকারের দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। তাঁর অন্তঃকরণ ছিল সমবেদনা ও পরোপকারের আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ। অকথ্য নির্যাতন ও অসহনীয় দুঃখকষ্টেও তাঁর ধৈর্য ছিল সীমাহীন। তাঁকে যারা কষ্ট দিত, তাদেরও তিনি ঔদার্যের মাধ্যমে শিক্ষা দিতেন। যারা তাঁকে বঞ্চিত করত তাদের তিনি অকাতরে দান-সাহায্য করতেন।
তিনি রোগব্যাধি ও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের সেবা, যত্ন-আত্তি করে শান্তি পেতেন। রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের তিনি সেবা, সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো পীড়িত ব্যক্তিকে দেখতে পথচলা শুরু করে, সে যেন আল্লাহর রহমতের দরিয়ায় সাঁতরাতে থাকে। যখন রোগীর কাছে উপস্থিত হয় তখন রহমতের দরিয়ায় ডুবে যায়। তিনি আরো একটি হাদিসে বলেছেন, বিধবা ও দারিদ্র্যের সেবক আল্লাহর পথে যোদ্ধার তুল্য। ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, পীড়িতদের সেবা করো এবং বন্দিদের মুক্তি দাও, এটাই ছিল তাঁর আহ্বান।
মক্কার এক বুড়ি প্রতিদিন হজরত রাসুলে করিম (সা.)-এর যাতায়াতের পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন। হঠাৎ একদিন রাসুলে করিম (সা.) দেখলেন পথে কাঁটা নেই, খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন সেই বুড়ি রোগাক্রান্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী।
আল্লাহর রাসুল (সা.) এই খবর শোনামাত্র ছুটে গেলেন বুড়ির বাড়িতে এবং মহানবী (সা.) সেবা-শুশ্রূষা, যত্ন-আত্তি করে ওষুধপত্র খাইয়ে বুড়িকে সুস্থ করে তুললেন। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর এই উদার ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডে বুড়ি অনুশোচনায় নিজেকে ধিক্কার দিলেন। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর এমন মহৎ ও উন্নত মনমানসিকতার বিরল দৃষ্টান্ত।
ইসলামে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি অর্থাৎ পরোপকারের বহু উল্লেখযোগ্য নজির রয়েছে। আমরা হজরত ওমর (রা.)-এর কথা অনেকেই জানি। তিনি ছিলেন বিশাল সাম্রাজ্যের খলিফা। তিনিও অতি সহজ-সরলভাবে জীবন নির্বাহ করতেন। সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অতি মহানুভব-পরোপকারী হৃদয়। এক রাতে তিনি নগরীর শহরতলির আশপাশে ঘুরে যখন একটি ক্ষুধার্ত পরিবারের শূন্য হাঁড়িতে পানি জ্বাল দেওয়ার দৃশ্য অবলোকন করলেন তখনই হজরত ওমর (রা.) ছুটে যান সরকারি গুদামে_সেখান থেকে তিনি বয়ে নিয়ে এলেন আটার বস্তা। গৃহকর্ত্রী খলিফার এমন দয়া ও সহানুভূতি দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন।
পরোপকারের এই অপূর্ব ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
অতএব, পরোপকারের মতো একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতার গুণটি যদি আমরা অনুশীলন করি তবে আমাদের সমাজের উঁচু-নিচু ভেদাভেদ থাকবে না, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধিতে আমূল শান্তিময় পরিবেশ ফিরে আসবে সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, এতে রয়েছে আত্দিক তৃপ্তি। আবার লক্ষ করুন, আমাদের মহানবী (সা.) বলেছেন, যে প্রতিবেশীকে উপোস রেখে পেটপুরে খায় সে মুমিন নয়।
আসুন, আমরা যেন মানবিক কল্যাণে-মঙ্গলে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল, সহমর্মিতা এবং সমবেদনায় একাত্দ হয়ে সমাজ সংসারে স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। দেশের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধিকরণে যেন ধর্মীয় মূল্যবোধকে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে পার
মূল লেখকঃ-- মাওলানা শাহ আব্দুস সাওার
©somewhere in net ltd.