নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হারিয়ে ফেলি নিজেকে ফিরে ফিরে পাই এক চিলতে হাসিতে।
ছবি নেট । ( প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম )
টং দোকানের আড্ডার মতন জিনিস আর হয় না কারণ ঐ খানে দেশের সবচেয়ে বেস্ট বেস্ট রাজনীতিবিদ গন থাকে লগে আরও মেলা কিছিমের লোক। তবে আমি যে দোকানের কথা বলছি ইহা টং আর মুদি দোকানের মিশ্রণ।
বাইরে বসে চা খাওয়া যায় আড্ডা দেয়ার জায়গা আছে।এই আড্ডা দেয়া যা অবশ্য আমাদের সংস্কৃতির একটা অংশ। গ্রাম গঞ্জে সবচেয়ে বেশী দেখা যায়।
আর এতে যারা আড্ডা মারে এদের বেশির ভাগ বেকার থাকে মানে কাম কাইজ তেমন কিছু নাই। সারাদিন আট দশ কাপ চা আর কয়টা বিড়ি সিগারেট টানবে আর ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা চালাবে।
আমি মাঝেসাঝে টং দোকানে গেলে পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে বসে আড্ডা দেই যদি হাতে সময় থাকে।
সেদিন তেমন পরিচিত কয়জন কে পেয়ে গেলাম আর কি! সৌভাগ্য? না, দুর্ভাগ্য বলব বুঝতাছিলাম না। সে যাই হোক। চলেন সে আড্ডার কিছু চুম্বক অংশ গুলিতে দৃষ্টিপাত করি।
তবে একটা জিনিস কমন যা বলতে হয় এদের সব বিষয়ে কিছু না কিছু জ্ঞ্যান থাকে এরা কোন টিভি চ্যানেলের এর চেয়ে কম যায় না!
এই যেমন বর্তমানে আফগান নিয়া এত ক্যাচাল প্যাঁচাল ! তো সেদিন সেই আড্ডায় একজন বলে বসল " আফিম খাওয়া আর আফিম বেঁচা জাতি কতদূর আর কি করব? "
আমি শুইনা কইলাম, ঠিক আছে। তা মুসলিম রাষ্ট্র গুলি কতদূর কি করছে? আফগানে মংগলরা এসে কচুকাটার মতন মানুষ মারছে এরপর রাশিয়া তারপর আমেরিকা! পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র গুলি কি করছে?এদের বেশীরভাগ অঞ্চল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা।
বন্ধু রাষ্ট্র বলতে তেমন কেউ নাই তাইলে এই ব্যাটারা আফিম বেঁচে চলবে না তো কি !
আফগান চ্যাপ্টার চলাকালীন সময়েই একজন মার্কিন বিরোধী খিস্তি দিয়া কইয়া বসল," আমরিকান মাদার চোদরা যেখানে গেছে সে দেশরে ফকির কইরা ছাড়ছে! " আজকের ইরাক আর কুড়ি পঁচিশ বছর আগের ইরাক এক আছে? বা সিরিয়া?
আমি কইলাম, আমরিকা কে গাইল দেওনের আগে মাথামোটা মুসলিম রাষ্ট্র পতি দের গাইল দেন।অপর পাশ থেকে একজন বলে বসল, " আরে মিয়া তুমি আমরিকারে গাইল দাও। আজকা ভিসামুক্ত যাওনের কথা কইলে তুমি সবার আগে দৌড় দিবা। ঠিক কি না? "
সাথে সাথে দু তিন জন আওয়াজ দিয়া দিল " হ! ভাই ঠিক। " হালায় বহুবার ডিভি লটারি ট্রাই করছে পায় নাই। তাই এখন গাইল পারে। ঘটনা এখন পরিষ্কার হইল। তার কথা গুলি মুসলিম প্রীতি থেকে আসে নাই।
এর মধ্যে একজন কইল এমন একটা হ্যারিক্যান গেল মানুষ মরল একখান দুই খান ! যেমন, হ্যারিকেনে করোনার মতন লাখ লাখ মরলে সে খুশী হইত! মানে কি আর কমু!
মনে মনে ভাবলাম, দেশে এত মার্কিন বিরোধী কেমনে আসল? নাকি যেতে পারছে না বলে এসব বলছে। নাকি বাংলা ওয়াজ !
এই আড্ডার টপিকস বদলানো দরকার নইলে এখানেই আরেক আফগান হয়ে যাবে দেখছি। আমিই সাহস করে বলে বসলাম,
আইচ্ছা, জিয়ার লাশ নিয়া রাজনীতি চলছে ইহা কি ঠিক?
সাথে সাথে কয়েকজন নইড়া চইড়া বসল। একজন বলে বসল, " ভাই! হ্যারা ক্ষমতায়। এহন রাইত কইলে রাইত! দিন কইলে দিন! বুঝলাম সে বি এন পি বা জামাত ! " আবার নাও হতে পারে ধারণা থেকে বলছি। সে আমার মহল্লায় নতুন।
একজন হুইনা কইল আরে মিয়া দাদার কাছ থাইকা শুনছি, লাশ বলতে কিছু ছিল না হুদাই একটা ভাওতাবাজি! " এমন ব্রাশ ফায়ার করলে কেউ কি আস্তা থাকে ছিন্নভিন্ন হইয়া যায় না। হালায় যেমন করছে অমন ফল পাইছে।কম আর্মি অফিসার মারছে! "
বুঝলাম এ টপিকস আফগানের চেয়ে ভয়ানক! আগুনে ঘি ঢালার সামিল ! তবে ইহা সত্য সবার ভেতর একটা বাড়তি উত্তেজনা আছে আমাদের রাজনীতি নিয়ে।খালি জায়গা মতন হিট করতে পারলেই হলো পুরা দেশ, মিডিয়া ব্যস্ত! প্রধানমন্ত্রী কি তেমন কিছুই করে দিল?
আবার দ্রুত টপিকস পালটে গেল যেই একজন বলে বসল, পরীমনির জামিন হয়ে গেছে! এইতো মাত্র খবর শুনে আসলাম। একজন মজা কইরা বলে বসল " ভাই! মিষ্টি খাওয়ান ! " একজন কইয়া বসল, এ বাল! কোন খবর! আজ হইলেও হতো কাল হলেও হতো।
অমন মদের বোতল দেশের বহু মানুষের ঘরে আছে। আমার ঘরেও আছে তয় খালি। ফ্রিজে পানি ভইরা রাখি আর নারিকেল তেল ! এক লগে সবাই হাসতে লাগলাম।
আরেকজন কইয়া বসল, এই যে যারা মিডিয়াতে কাম করে এরা ব্যাডা হোক আর ব্যাডি বেশীরভাগ দুই নম্বর! এরা ব্যাডি হইলে রাইতে এ হোটেল ও হোটেল অথবা বাগান বাড়িতে দুই পা ছড়াইয়া হুইয়া পড়ে আর মাল কামায়! ব্যাডা হইলে এদের দালালী করে সুযোগ পেলে নিজেও লাগায়!
চুপ করে কথা শুনলাম, বুঝতে চেষ্টা করলাম এ লোক যেন নিজ চোখে এগুলি দেখে বলছে। কত নিখুঁত ভাবে বর্ননা করছে। এদের আগ্রহ এবং জ্ঞ্যানের সীমা আমাকে মুগ্ধ করে রাখে। উফফ! কি জিনিয়াস এক এক জন!
আমি মোচড়ামুচড়ি শুরু করলাম উঠার জন্য। বললাম, যেতে হবে একটা কাজ আছে।পরিচিত একজন বলে বসল, " কি বাল! কাম তোমার? আইজ তো কামে যাও নাই মানে অফিস ছুটি। নইলে এ সময় কি আর তোমারে পাই। ঘরে বউ নাই যে গিয়া ফুসুরফাসুর করবা। " এত তাড়া কিসের? আরেকটু বও। বহুদিন পর আড্ডা হচ্ছে । একটা সেলিব্রেশন করি। এসব বলে সে অর্ডার দিল, ঐ! দোকানে মুড়ি আছে, সরিষার তেল খাঁটি আর টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, চানাচুর ভালো টা থাকলে ঝালমুড়ি বানা খাই লগে রং চা। আমি বললাম, এত খবর রাখেন আপনি। ধন্যবাদ।
যিনি এ কথা গুলি বললেন, তিনি সিনিয়র বড় ভাই। কি আর করা বসে রইলাম। মুড়ি খাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। এর মাঝে আরো টপিকস যোগ হলো যেমন, পদ্মা সেতুতে বার বার ধাক্কা, আমরিকার শেষমেশ চলে যাওয়া আফগান দের উল্লাস ইত্যাদি।
মুড়ি হয়ে গেছে চাবাতে চাবাতে বললাম, আইচ্ছা আপনারা কেউ প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম কে চেনেন? কেউ চিনে না তাদের ভাবভঙ্গি দেখেই বুঝে গেলাম।
আমি বলতে লাগলাম, যিনি ১৯৮৪ সালে সোয়া লাখ টাকা বেতনের চাকুরী, কেমব্রিজ ভার্সিটির অধ্যাপক, এই চাকুরী অবলীলায় ছেড়ে দিয়ে এই দেশে চলে এসেছিলেন।যোগ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
একজন বলে বসল " হালায় দেহি পাগল! "
তারপর আমি বলতে শুরু করলাম ,মানুষটা ছিলেন ছাত্রজীবনে স্টিফেন হকিং এর বন্ধু আর রুমমেট। লেভেলটা বুঝতে পারছেন তো ?
এইবার সবাই নড়ে চড়ে বসল। বলতে লাগলাম, এই লোকটা নিজের দেশ কে প্রচন্ডভাবে ভালোবেসে ছিল বলে অমন করে ছুটে এসেছিলেন।
তিনিই সর্ব প্রথম বাঙালী যিনি কি না ১৯৭১ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেন বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের জন্য।
যার সম্পর্কে বলতে গিয়ে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ওয়েইনবারগ তিনি বলেন, ‘‘we are particularly indebted to Jamal Islam, a physicist colleague now living in Bangladesh. For an early draft of his 1977 paper which started us thinking about the remote future”
ভাবতে পারছেন? কি বড় মাপের মানুষ ছিলেন তিনি? দুঃখের বিষয় কি জানেন, এ দেশের সরকার,মিডিয়া তাঁর কথা তেমন প্রচার করে না।
তারা ব্যস্ত জিয়ার লাশ নিয়া, তারা ব্যস্ত কাবুল নিয়া। অথচ দেশের ৬ কোটি বেকার নিয়া ভাবে না। রংপুরে ৬ লাখ লোক বেকার তা নিয়া কথা তেমন বলে না। এগুলি বলে সবাইকে বললাম, দুঃখিত, যেতে হচ্ছে। সবার মুখ গম্ভীর। চিন্তায় মগ্ন।
এমন সময় একজন বলে বসল,
" উনি কি শেখ সাহেবের কিছু লাগে অথবা জিয়ার ? " এক লগে সবাই হাসতে লাগলাম।এই আমরা! এই আমাদের আড্ডাবাজী !আজকের মতন টং বাজী মুলতবি ঘোষণা করা হলো।
বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবলাম " যে দেশ গুনীদের সম্মান দেয় না সে দেশে গুনী জন্মায় না। জন্মায় তেলবাজ, হাইব্রিড ! " ভালো থাকবেন সকলে এবং সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:৪২
স্প্যানকড বলেছেন: আর জ্ঞ্যানগর্ভ ! একটা কিছু নিয়া চালাইয়া যাওয়া। চলতে তো হবে নাকি ! ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন এবং সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৫৭
ইন্দ্রনীলা বলেছেন: ভালোই তো জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হলো।