নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হারিয়ে ফেলি নিজেকে ফিরে ফিরে পাই এক চিলতে হাসিতে।
ছবি নেট ।
মল্লিকা বাসের জানালা দিয়ে যতটুকু পারা যায় শহর এর চারপাশ দেখছে। শরতের স্বচ্ছ আকাশ যদিও ঢাকা শহরের আসমানে ধুলো কাঁদা নজরে পড়ে বেশী। ওমন স্বচ্ছ নীল আকাশ গ্রামে আর গল্প কবিতায় পাওয়া যায় আর উন্নত বিশ্বে। ফুরফুরে বাতাস। বাতাসে ওর চুল উড়ছে কিছু চুল বারবার কপালে এসে পড়ছে ও হাত দিয়ে বারবার ঠিক করছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। একরকম ব্যার্থ হয়ে চুল ঠিক করা ছেড়ে দিল। বাসের স্পীড আনুমানিক ৬০ এর কাছে হয়তো আরও বেশী ! স্পীড মিটার রাস্তায় থাকলে এতক্ষণে জরিমানা খাইতো কম করে পাঁচ টা আর সিগনাল ব্রেক তো আছে। মল্লিকা মাঝে মাঝে ভাবে এ দেশে আইন না মানা বিশাল কিছু গর্বের বিষয়! আর মানবেই কেন জনতা ? যেখানে দেশ যারা চালায় তারাই নানান আইন না মেনে চলছে। মানি লন্ডারিং করছে। ক্যাডার পালছে। ছাত্র রাজনীতির নামে ছাত্রদের মাস্তান, খুনি বানিয়ে ছাড়ছে। বিদেশে বাড়ি - গাড়ি করে বসে আছে। সো, যেদেশে যেমন বাও সেদিকে চলে নাও !
মল্লিকা এখন যেমন জীবন কে ছেড়ে দিয়েছে যেন বিশাল জলরাশির উপর ভেসে চলা একটা কিস্তি। যেদিক খুশি সেদিকে চলে যাক জোয়ারে কিংবা ভাটায় কোন আফসোস নেই। কোন চাওয়া পাওয়া নেই। অনেক টা শুকিয়ে যাওয়া ফলের মতন কোনমতে ঝুলে আছে যেকোনো বাতাসে টুপ করে পড়ে যাবে।
ফুটপাতের লোকজনের উপর নজর ফেলছে আবার বাসের ভেতর দেখছে আর ভাবছে এই যে এক সাথে কত লোক যাচ্ছে কেউ নেমে যাচ্ছে কেউ উঠছে এক মুহুর্তের জন্য ফাঁকা থাকছে না। কেউ দাঁড়িয়ে আছে কেউ বসে। জীবন বুঝি এমনই কখনো ফাঁকা থাকে না পুর্ণ হয় সুখে কিংবা বিষে ! সবার চোখ মুখে কেমন জানি একটা অন্য ভাব। কেউ সুখে নেই ভালো করে দেখলেই বুঝা যায়। আসলে কে যে সুখি আর কে যে অসুখি বলা মুশকিল। সুখের আসল সংগা মানুষ কি জানার চেষ্টা করেছে কখনো? নাকি মন মতলবি কিছু একটা বলে বেড়াচ্ছে। যা এ কান ও কান ঘুরতেই আছে।
আসলে এ যাত্রার শেষ নেই চলছে চলতে থাকবে শুধু যাত্রীদের মুখ বদল হবে সিট বদল হবে স্টেশন বদল হবে ড্রাইভার, কন্ট্রাক্টর, মালিক সকলে বদল হবে। রুট বদল হবে কিন্তু চাকা চলবে।
ওর দুই সিট সামনে একটা কচি বয়সের ছেলে। কোলে একটা ব্যাগ তার উপর নানান ধরনের স্টিকার লাগানো। ও যখন বাসে উঠে তখন ছেলেটি ওকে হা করে দেখছিল ।
আসলে এ বয়সই এমন। হরমোনের দৌড়ঝাঁপ। যেকোন নারীর শরীর দেখলেই বাড়তি উত্তেজনা কাজ করে। তার উপর আজকাল সবার হাতে মোবাইল ইন্টারনেট সুতরাং নর নারীর গোপন বিষয়গুলি খুব সহজে জেনে যাচ্ছে।
এই তো সেদিন ওর পড়শী ভাবি বলল, ওর ছেলের হাতে নোকিয়া পুরান মোবাইল তুলে দিছে কারণ জিগ্যেস করাতে বলল, হুম দিছিলাম স্মার্ট ফোন । আসলে ওর মামা দুবাই থেকে পাঠিয়েছিল।কি হয়েছে জানেন, একদিন লক্ষ্য করলাম ঘন ঘন বাথরুমে যায় পকেটে মোবাইল!
মল্লিকা বোকার মতন প্রশ্ন করে বসল তাতে কি ? অনেকে তো বাথরুমে দৈনিক নিয়ে যায় তারপর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়।
পড়শী ভাবি হাসতে লাগলো। মল্লিকা কিছুটা ইতস্তত বোধ করল। ভাবল ও কি কোন জোকস বলেছে বা যার কোন মানে নেই এমন অসাড় কিছু। পড়শী ভাবি হাসি থামিয়ে বলল এখন তো আপনার ছেলে মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে মাধ্যমিকে গেলেই বুঝতে পারবেন এরা কত দুরন্তপনায় গা ভাসিয়ে দেয়। নিজের অজান্তে ভুল পথে চলে যায়।
এরপর ভাবিটি বলতে শুরু করল নিজের ছেলে তবুও লজ্জা শরম মাথা খেয়ে বলছি। একদিন ওর মোবাইল রেখে ও একটু বাইরে গেছিল। আমি ওর মোবাইল চেক করে দেখি শুধু পর্ণ আর পর্ণ! ভাবছেনে গোপনে গোপনে কি বিষে শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার রেজাল্ট আগের চেয়ে খারাপ। মল্লিকা বোকা হয়ে যায়। শুধু বলল, বলেন কি?
এমন সময় বাসটি জোরে ব্রেক মারল। মল্লিকা সামনের সিটের সাথে একটা জোরেশোরে ধাক্কা খেলো কপালটা সামান্য ফুলে গেছে একটা ছোটখাটো টিউমার এর মতন।
মল্লিকার পাশে বসা মধ্যবয়সী লোকটি যেন এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল একদম ওর উরুতে হাত রেখে জোরে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিল। সাথে সাথে সরি বলে বসল। মল্লিকা বলে বসল অসভ্য! লোকটি উলটো গরম হয়ে গেল। বলতে লাগলো আরে! আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি। এত জোরে ব্রেক মারলে কেমনে সামলাই !
ওদিকে ড্রাইভার কন্ট্রাক্টর কে একটা অশ্লীল গালি দিয়ে বলল, ঐ মান্দার পো! দেখ তো হালায় কি মরে গেছে? বাসের সবাই ড্রাইভার কে যাচ্ছেতাই বলতে শুরু করল। কচি বয়সের ছেলেটার কোন শোক তাপ নাই বরংঞ্চ মজা পাচ্ছে। হাসছে।
মল্লিকার তিন সিট পিছনে বসে থাকা ভদ্রলোক ড্রাইভার কে খিস্তি দিয়ে বসল কারণ তার পাশে বসা স্ত্রীর কপাল আঘাতে ফুলে গেছে। কোলে বসা চার বছর এর বাচ্চা ও কিছুটা আঘাত পেয়েছে। খুব জোরেশোরে কান্না করছে। সেই ভদ্রলোকের সাথে আরও দুই চারজন গলা উঁচু করে ড্রাইভার কে যাচ্ছেতাই বলতে শুরু করল।
ড্রাইভার এতক্ষণ হজম করে আসছিল। যেই কন্ট্রাক্টর এসে বলল, ওস্তাদ! মরে নাই। হাতে পায়ে চোট লাগছে। বুড়ো মানুষ রিক্সা উলটে পড়ে গেছে। রিক্সা ওয়ালা বারবার বলছে আমার টাকা দেন রিক্সা ঠিক করাতে হবে। কন্ট্রাক্টর বারবার গালি দিচ্ছে চুপ! খানকির পুত ! বেশী কথা কইলে টান দিয়া চাকার তলে ফালায় দিমু!
ড্রাইভার এখন গর্জে উঠলো, দেখি চেহারা খানি দেখান কে কে এত শোরগোল করছেন? এতই যখন লাগছে নেমে পড়ুন বাস থেকে আমি ড্রাইভার খারাপ!
আপনাদের যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। এমন কি একদম সিধা উপরে! নেমে পড়ুন বলছি। যারা এতক্ষণ শোরগোল করছিল তারা কিছুটা নরম হয়ে গেল বলতে লাগলো আমাদের টাকা ফেরত দাও। ড্রাইভার বললো, কাউন্টারে যান। আমার কাছে নাই।
মল্লিকার পাশে বসা লোকটি বলতে লাগলো ড্রাইভার কে " তুমি মিয়া হারামি ! " ড্রাইভার হাসি দিয়ে কইল ঠিক কইছেন। খুশী। মল্লিকা কপালে হাত দিয়ে ভাবছে কে যে হারামি সে তো একদম একটু আগে টের পেলো। মনে মনে খিস্তি দিলো
" সব খানকির ছেলে ! "
চলবে....
০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৫৭
স্প্যানকড বলেছেন: তাই নাকি ! আর কতদিন এভাবে চলবে ? ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫০
অপু তানভীর বলেছেন: ঢাকা শহরে ড্রাইভার এইভাবে নেমে পড়তে বললে নির্ঘাত মাইর খাবে ।
গল্প এগিয়ে চলুক । সামনে কি হয় জানার অপেক্ষায় !
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:২৩
স্প্যানকড বলেছেন: তাই নাকি ! তবে যাই বলুন এমন গুন্ডা আছে কিন্তু ! ভালো থাকবেন। ইন শা আল্লাহ চেষ্টা করবো।
৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২১
বিটপি বলেছেন: অপু তানভীর, ড্রাইভারকে কে মারতে যাবে? ড্রাইভার এবং হেলপার মিলে যখন উলটো মারতে আসবে - তখন কে ঠেকাবে?
৪| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:১৬
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: এভাবে কতদিন চলবে তা বলা মুসকিল। কারণ, কেউ কিছু তো করছে না!
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০২
স্প্যানকড বলেছেন: আফসোস ! সবাই নিজের চরকা নিয়ে ব্যস্ত। দেশের চরকা দেখে কি লাভ বলেন ? ভালো থাকবেন।
৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ঢাকা শহরে আমরা যারা প্রতিদিন চলাচল করি; তাদের নিত্যকার দিনকার সুন্দর এক টুকরো চিরকুট। ভালো ছিল, লেখায় আরেকটু বেশী কিছু আশা করেছিলাম শুরুর প্যারা পড়ার পর।
আসলে জীবন সত্যি এক ছুটে চলা পথ, যেখানে পথিকের আদি-অন্ত আছে, কিন্তু পথেই নেই।
ভালো থাকবেন, শুভকামনা রইবে।
১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৫৬
স্প্যানকড বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন সব সময়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৫৩
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: সবাই সুযোগ সন্ধানী। সুযোগ পেলে সবাই এক-হাত নিয়ে নেয়!