নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নের খোঁজে দেখি তোমায় /বাঁধি সীমাহীন ভালোবাসায়/দাও কিছু সুখের বৃষ্টি / ভিজি আমি /উড়াই দিগন্তের নীলিমায় তোমার নামে / স্বপ্নের এক বিশাল ঘুড়ি।

স্প্যানকড

আমি হারিয়ে ফেলি নিজেকে ফিরে ফিরে পাই এক চিলতে হাসিতে।

স্প্যানকড › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহরতলীর মুখ ! পর্ব ৪

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:২৩

ছবি নেট।

ছাদের কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে জাহিদ। শহুরে সুর্যাস্ত দেখল। নিউইয়র্কে থাকতে এমন করে সুর্যাস্ত দেখার ফুরসত তেমন পায়নি। যন্ত্রের মতন ছুটতে হয়েছে দিবা রাত্র। ঢাকা এসেছে তিন মাসের জন্য পরিবার এর চাপে। পরিবার বারবার বলছে, বয়স হয়ে গেছে বিয়ে করার জন্য কনে দেখা চলছে। যদিও ওর তেমন সাড়া নেই।

ঢাকাতে এসেই দুই দিন ধরে কিছুই খেতে পারেনি। যা খায় তাই বেরিয়ে যায় মানে বমি, পেট খারাপ নানাবিধ সমস্যা। অথচ নিউইয়র্কে থাকতে এত বছরে একবারও ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি। ঠান্ডা জ্বর হলে বেশী করে অরেঞ্জ জুস আর একটু আকটু লেবু চিপে রাশিয়ান ভোদকা মেরে দিত। ব্যস! তাতেই চাংগা। আর এখানে আসার পর শালার একটার পর একটা লেগে আছে। দু দিন স্যুপ খেয়েছে শুধু । এখন ঠিক আছে কিছুটা। বন্ধুরা শুনে হাসে আর বলে আরে ব্যাটা !  কুত্তার পেটে কি আর ঘি সয় ! তাও আবার বিলেতি ! আমরা দেশী যারা আছি তারা দেখ লোহা, সীসা সব হজম করে চলেছি। করোনাতেও কম মরছি। আর তোমাদের ওখানে শালায় লাশের মিছিল! 

আসলে তোগ উপরে মাইনষের অভিশাপ আছে। গজব পড়ছে ইত্যাদি কত কথা ! জাহিদের ঘুমের ও সমস্যা হয়েছে। এক সময়ের হেরফের। দুই রিক্সা, গাড়ির হর্ণ টুং টাং শব্দ দূষণ ! উফফ! পুরা পাগল হওয়ার দশা। জাহিদ ভাবছে কেমনে আছে এ দেশে মানুষ? এত ভেজাল খেয়ে? এত ভেজাল দেখে? এত ভেজাল শুনে? সত্যি! এ দেশ এবং জাতি মহান !

এসব জাহিদ ভাবছে গত দু দিন ধরে কিছুতেই মাথা থেকে নামাতে পারছে না। জট লেগে যাচ্ছে ক্রমশ। অথচ দেশে যখন ছিল এগুলি তেমন সমস্যা মনে হয়নি। কি আজব না !

এই কবছর নিউইয়র্কে থেকে এতটা বদলে গেছে ও। যা নিজেও টের পায়নি। আজ টের পাচ্ছে খুব। মাথার জট খুলতে বন্ধুদের আজ দাওয়াত করেছে সন্ধ্যের পর কারণ সবাই চাকুরী করে শুধু একজন ছাড়া যে বোহেমিয়ান জীবন যাপন করছে নাম মুনতাসীর মামুন।

লেখালেখি করে কবিতা লিখে। যদিও কোথাও তেমন সাড়া পড়েনি। তেমন দামী কাগজেও ছাপা হয়নি কিছু। পদক তো আলোকবর্ষের পথ! যদিও এদেশে জায়গা মতন তেল মারলে আর রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হলে পদক মিলতে বেশী টাইম লাগেনা। বন্ধুরা মামুনকে কবি বলে আর মামুন বলে " কাগজ কলমের সংগম ঘটাই এখন বাচ্চা যা প্রসব হয় তাই শোকর আলহামদুলিল্লাহ ! "

জাহিদের আরো কত বন্ধু ছিল কিন্তু টিকে আছে এই দুই তিন জন। যাদের সাথে সেই নার্সারি থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত দীর্ঘদিন পথ চলেছে।

বারবার ঘড়ি দেখছে জাহিদ কারো দেখা নাই। শ্যামল কে বলা হয়েছে সবাই কে নিয়ে এক সাথে যেন চলে আসে। শ্যামল কে ফোন দিতেই ধরে বলল,  দোস্ত ! জ্যামে আছি আর কিছুক্ষণ সরি। সময়মতো এখানে কিছুই হয়না। জাহিদের রোবটের মতন জবাব,  জলদি আয় অপেক্ষায় আছি। বাই। শ্যামল ওকে।

জাহিদ দেখছে আশেপাশে কত বড় বড় ইমারত দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তাঘাট ভালোই উন্নত হয়েছে কিন্তু কিছু সমস্যা ঠিকই রয়ে গেছে যেমন দুই দলের কে ক্ষমতায় যাবে এ নিয়ে মারামারি কামড়াকামড়ি ! রাজনীতিতে ওর কোনকালে ইন্টারেস্ট ছিলো না। তবু দেশ নিয়ে ভাবে মাঝেমধ্যে।

এত ভাবনার ভীড় ঠেলে হঠাৎ দেখে ওদের বাসার সামনে একটা ট্যাক্সি এসে পৌছলো। তিন জন গাড়ি থেকে নামলো। দৃষ্টি বিনিময় হতেই হাত নেড়ে সবাই বাসার গেটের দিকে আসতে লাগলো। জাহিদের চোখের কোণে জল। ইস! কতদিন পর ওদের সাথে আড্ডা দেয়া হবে স্বশরীরে। ফেসবুকে ভিডিও কলে কথা হতো কিন্তু ভার্চুয়াল কিছুতে কি আর শান্তি মিলে যদি কথায় কথায় ধরা না যায় ছোঁয়া না যায় কাছের মানুষ কে! মানে ভার্চুয়াল জগত হলো দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতন।

একে একে সবাই ছাদে চলে আসলো। সবার মুখে হাসি। শ্যামল জাহিদকে দেখে বলতে শুরু করল, কি রে তুই দেখি ফর্সা হয়ে গেছিস ? মুনতাসীর মামুন শ্যামল কে উদ্দেশ্য করে ঐ ব্যাটা ! এইটা কি কইলি প্রথমেই কালার লইয়া কথা! এত দিন পর জানটারে কাছে পাইছি। কি দিনকাল যাচ্ছে ঠিক? উজ্জ্বল বলে বসল, ভালো আছিস এখন? জাহিদ এক গাল হেসে বলল, এখন এত ভালো যে, আমার চেয়ে ভালো আর কেউ এই দুনিয়ায় নাই। তা তোরা ভালো আছিস ? সব ঠিকঠাক ? এক সংগে তিন জন বলে বসল, আমরাও অনেক অনেক খুশী। পাখি আবার ফিরে আসছে ডেরায়। এক সংগে সকলে হাসতে লাগলো।

হাসাহাসির এক পর্যায়ে শ্যামল জাহিদ কে জিজ্ঞেস করে বসল তা কেমন দেখছিস দেশ? জাহিদ দেখার সময় কই পাইলাম। বের হতেই পারিনি ঘর থেকে। ছোট ঘর বিছানা এই ছিল গত দু দিন। কি বিশ্রী ! দেশে আইতে না আইতে ডায়রিয়া, বমি, নিদ্রাহীন রাইত ! উফফ !

মুনতাসীর মামুন বলে বসলো,  কয়দিন থাক গা সওয়া হয়ে যাবে? আমগো যেমন হয়ে গেছে সব কিছু গা সওয়া ! জাহিদ হুম, তাই তো দেখছি। উজ্জ্বল বলে বসল দেশ কিন্তু আগায় যাইতাছে। জাহিদ বলল, হ্যাঁ অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে বেশ কিন্তু মানবিকতা কমে গেছে। মুনতাসীর মামুন মানবিকতা আছিল কবে? এ দেশ বহুত আগেই লুট হয়ে গেছে এখন খোসা আছে। তাও যাবার যোগাড়। উজ্জ্বল বলে বসল, মামুন তুই হয়তো বেশী কইতাছত। মামুন এবার উজ্জ্বল রে কইয়া বসলো তুই তো ল্যাওড়া আছত এসি রুম কম্পিউটার হিসাব কিতাব আর মাস শেষে মোটা মাইনে। ব্যাংকে চাকরি করছ ৯ টা ৫ টার অফিস। তুই কি বুঝবি ?

জাহিদ এই থাম থাম পরিবেশ গরম করে লাভ নাই। দেশ কে ছেড়ে দে। যারা চালনা করছে তাদের হাতে। মামুন তাই তো দিছি ফলাফল পাচ্ছি ইয়া বড় একটা শুণ্য। যা পূরণ হবার নয়। মামুন বাম ঘেঁষা লোক এমনিতেই পুঁজিবাদী দের দেখতে পায় না। শ্যামল সব শুনে বলল আর দেশ! বাদ দে এসব ফালতু ক্যাঁচাল ।

মামুন এই বাদ দে বাদ দে স্বভাবের কারণে সব শালায় এখন জিন্দা লাশ ! উজ্জ্বল হাসতে হাসতে বলে বসল মামুন তুই বড্ড সিরিয়াসলি নিচ্ছিস। মামুন বলতে শুরু করল, দেশ নিয়া ব্যাপার এইটা কি ডাইল ভাত! খাইলে খাইলাম, না খাইলে নাই। দেশ মাতা। পরিবেশ পাল্টাতে জাহিদ প্রশ্ন করল এত দেরি করলি ক্যান? শ্যামল কইল মামুন রে জিগা। মামুন কইল ঐ ব্যাটা ! আমি কি করছি। যখন ফোন দিছত তখন ছাত্রী পড়াইতাছি। একটা কাম শেষ না কইরা আসি ক্যামনে ? উজ্জ্বল ছাত্রী পড়াও? না, ঘষামাজা কর কে জানে? একটু তাচ্ছিল্যের সুরে। এই বার মামুন রেগে গেল। ঐ ব্যাটা! চরিত্র নিয়া কথা বলবি না একদম ! তোর মতন বিয়ের আগে রুম ডেটিং! তা রুম ডেটিং এ কি দুইজন নফল নামাজ পড়ছ? জাহিদ খুব গলা উঁচা করে আরে! থামবি। কি বালের প্যাঁচাল শুরু করলি।

মামুন যা মাফ কইরা দিলাম দোস্তির খাতিরে। অন্য কেউ হইলে এইখানে খাড়ার উপরে গাইড়া দিতাম ! উজ্জ্বল হাসতে হাসতে বলল, ঠিক আছে পাগলা। নেক্সট টাইম কেউ চারিত্রিক সনদ চাইলে তোর কাছে পাঠায় দিমু।

শ্যামল দূর বাল ! থাম এবার। জাহিদ হুম বাদ দে। দোস্ত না। কষ্ট দিয়া কি লাভ । আজ আছি কাল নাই।

মামুন এখন কিছুটা শান্ত । উজ্জ্বল বলে বসল, মামুন শ্যামল রে দেখছিলি মানিক মিয়া এভিনিউর আগে গাড়ি জ্যামে পড়ে থাকতে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়ানো খানকি দের কেমনে দেখছিল ? জাহিদ কি? মামুন ও কি? ওর এত অবনতি। ছিঃ ! শ্যামল কিছু বলার আগেই জাহিদ বলে বসল, সংসদ ভবনের আশেপাশে এই হাল!

মামুন বলে বসল, ঠিকই আছে। ভেতরে তো বহু দালালরা আছে তাই বেশ্যারা বাইরে খদ্দের ধরে। দালালরা বাইরে থাকলে ওরা ভিতরে থাকতো ! আসলে দেশ স্বাধীন হইয়া কোন লাভ হয় নাই ! একটা শ্রেনীর লাভ হইছে। আগে পাকিস্তানীরা গুলি গুম করে নিরীহ মানুষ মারতো এখন দেশী মানুষে তা করে। আগে পাকিস্তানীরা মা, বোন দের ইজ্জত নিতো এখন দেশী মানুষে সেই কাজ করে। এই দেশের স্বাধীনতা !



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.