নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিশ্বাস করি, \'মানুষের জন্যই ধর্ম ধর্মের জন্য মানুষ নয়\'৷ তাই প্রথমে প্রকৃৃত মানুষ হওয়া চাই, নিরাপদ আলোকিত একজন মানুষ৷ \nhttps://www.facebook.com/SufiMahfuz/

সুফী আহমাদ মাহফুজ

সুফী আহমাদ মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জৈবচৈতন্য বা নফস৷

০৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩

নিজেকে পরিপূর্ন পরিশুদ্ধ করা ব্যতীত দুনিয়াবি পুনঃজন্ম চক্র হতে কেউই পরিপূর্ণ মুক্তি লাভ করতে পারে না৷নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে চাইলে নিজের দেহস্বত্বা এবং চৈতন্যস্বত্বা উভয়কেই পরিশুদ্ধ করা জরুরী৷শুধু দেহের পরিশুদ্ধি চৈতন্য শুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট নয় সত্য তবে দেহের শুদ্ধতা ছাড়া চৈতন্যের উপলব্ধি অর্জনও সম্ভব নয়, তাই সবার আগে মানব দেহকে জানা একান্ত জরুরী বিষয়৷
মানব দেহে ছয়টি লতিফা মতান্তরে সাতটি চক্র বিদ্যমান৷বেদ শাস্ত্রে সাতটি চক্রকে লিঙমূল হতে মস্তিস্ক পর্যন্ত উপর নীচ লম্বালম্বি ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে আর তাসাউফে ছয়টি লতিফাকে নাভীমূল হতে মস্তিস্ক পর্যন্ত জিগজ্যাগ বা আড়াআড়ি কৌনিক ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে৷তাসাউফে লিঙমূল এবং নাভীমূল কে একসাথে নফস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার ফলে তাসাউফে লতিফা ছয়টি৷যেহেতু লিঙমূল এবং নাভীমূল হতেই সকল জৈবিক চাহিদার উৎপত্তি তাই তাসাউফে দুটি চক্রকে একসাথে বর্ণনা করার মাধ্যমে বিষয়টিকে আরও সহজ করে দেয়া হয়েছে৷
মানব দেহের লতিফা সমূহ :
০১.নফস (মূলাধার+স্বাধীষ্ঠান চক্র)
০২.ক্বলব (মনিপুর চক্র)
০৩.রূহ (অনাহূত চক্র)
০৪.সিরর (বিশুদ্ধ চক্র),
০৫.খফি (জ্ঞান/আজ্ঞা চক্র)
০৬.আখফা(সহস্রদল চক্র)
{বিঃদ্রঃ কিছু অতিপন্ডিত সাধক বেদের দেহচক্র এবং তাসাউফের দেহ লতিফার মধ্যে ভিন্নতা খুঁজে পান যা প্রকৃতপক্ষে তাদের নিজের অপূর্ণ জ্ঞানের ফসল ছাড়া আর কিছুই নয়৷}
লতিফা সমূহকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে নফসের পরে ক্বলব এবং তার পরে রূহের অবস্হান অর্থাৎ যে নফস কে চিনতে পারে নাই তার পক্ষে ক্বলব অথবা রূহ কোনোটিকেই চেনা সম্ভব নয় তাই নফসকেই প্রথমে চিনতে হবে৷ নিজের নফসকে চিনতে হলে নিজস্ব ইন্দ্রিয়গত জৈবিক চাহিদা সমূহকে অনুধাবন করা জরুরী৷মূলাধার এবং স্বাধীষ্ঠান চক্র মানুষের বেঁচে থাকা এবং টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন সকল চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, যৌনতা ইত্যাদি) তৈরি করে এবং মস্তিস্ক সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহন করে৷মানুষের এই রকম জৈবিক চাহিদার সামগ্রিক রূপকে নফস বলা যেতে পারে৷
নফসের কার্যক্রম মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয় শক্তির মাধ্যমে সংঘটিত হয় -
০১.চোখ/ দৃষ্টি
০২.কান/ শোনা
০৩.নাক/ঘ্রাণ
০৪.জিহ্বা/স্বাদ
০৫.চামড়া/স্পর্শ
স্বাভাবিক নিয়মেই এই ইন্দ্রিয়গুলির মাধ্যমে নফস মস্তিস্কে নিয়মিত তথ্য পাঠাতে থাকে৷কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় যখন মস্তিস্ক কোনো একটি নির্দিষ্ট জৈবিক চাহিদার প্রতি অভ্যস্ত এবং আসক্ত হয়ে পড়ে, সেই আসক্তির কারনে তখন মানুষ ইন্দ্রিয় অনুভূতির তুলনামূলক পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয় এবং তার মস্তিস্ক নিয়মিত ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে থাকে৷ইন্দ্রিয় অনুভূতির তুলনামূলক পার্থক্য করতে পারার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে নফসকে চারটি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়েছে-
০১.আম্মারা/অচেতন: যে সকল নফস ইন্দ্রিয় অনুভূতির তুলনামূলক পার্থক্য করতে পারেনা বিধায় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়
০২. লওয়ামা/চেতন : যে সকল নফস ইন্দ্রিয় অনুভূতির তুলনামূলক পার্থক্য করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে সক্ষম৷
০৩. মুতমাঈন্না/সচেতন : যে সকল নফস সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারার কারনে পরিতৃপ্ত এবং প্রশান্ত হয়েছে৷
০৪. মুহলেমা/অতিচেতন :যে সকল নফস প্রশান্ত এবং পরিতৃপ্ত হওয়ার কারনে স্থায়ী প্রশান্ত চৈতন্যের অনুভুতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে৷
অচেতন নফসকে চেতন করতে হলে তাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে৷এই পরিশুদ্ধির যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়াতে প্রাথমিক স্তরে নিত্যদিনকার জীবন যাপনের মধ্যেই কিছু অনুভুতিকে নিয়ন্ত্রন/বর্জন করা এবং কিছু অনুভুতিকে অর্জন করা শিখতে হবে৷
নিয়ন্ত্রনীয়/ বর্জনীয় অনুভুতি / রীপু /খান্নাস -
০১.কাম
০২.ক্রোধ
০৩.লোভ
০৪.হিংসা
০৫.অহংকার
০৬.মোহ৷
অর্জনীয় অনুভুতি/ সিফাত -
০১.আত্মত্যাগ
০২.আত্মসমর্পন
০৩.সহিষ্ঞুনতা
০৪.একাত্বতা
০৫.সহমর্মীতা
০৬.ন্যায্যতা
এত কিছু বর্ণনা করার পরও হয়তো এই লিখা সকলের নফস পরিশুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে একজন মোকাম্মেল মুর্শিদের সংস্পর্শে থেকে তাঁর নিত্যদিনকার জীবন যাপনের পদ্ধতি দেখে এবং সে অনুযায়ি নিজেকে হাতে কলমে সংশোধন করে নেয়াই নফসের পরিশুদ্ধি অর্জনের নির্ভরযোগ্য উপায়৷
*অনিশ্চয়তার দ্বন্দ্ব:
দুনিয়াবি জীবনের অনিয়শ্চয়তা অধিকাংশ মানুষকেই দুর্বল এবং অস্হির চিত্ত করে দেয়৷ নফসের চরিত্র না বুঝতে পারলে এই ধরণের অস্থিরতার কারন এবং প্রতিকার উভয়ই প্রায় অসম্ভব৷নফসের সাথে মানুষের শারিরীক অনুভুতি/ ফিজিওলোজি এবং মস্তিষ্কের অনুধাবন/সাইকোলজী উভয়ই জড়িত৷যাদের দেহের অনুভুতির দ্বারা মস্তিষ্কের অনুধাবন নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের নফস অচেতন অবস্থায় থাকে৷নফস হলো দেহের মূল তিনটি নদী/নহর/নাড়ি/শিরার প্রথম সঙ্গমস্হল৷ ডান দিকে ইড়া/গঙ্গা/ নদীতে ধণাত্মক/ইল্লীন গুণ সমূহ প্রবাহিত হয়, বাম দিকে পিঙ্গলা/যমুনাতে ঋনাত্মক/সিজ্জিন গুণ সমূহ প্রবাহিত হয় আর মধ্যবর্তী সুষন্না/স্বরস্বতিতে তুলনামূলক পার্থক্য জ্ঞান/মিজান প্রবাহিত হয়৷এই সুষন্নার মাধ্যমে মানুষ ধণাত্মক এবং ঋনাত্মক বৈশিষ্ট বিচার করে সুষম সিদ্ধান্ত গ্রহন করে থাকে৷যখন কোনো নফস হকের উপর অর্থাৎ সুষন্নাতে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন সে সকল ধরণের ব্যক্তিকেন্দ্রীক পক্ষপাতিত্ব অতিক্রম করে তিক্ত সত্য সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে৷এভাবে নফসের তিন নদী হকের বিন্দুতে মিলিত হয় ,তখন ক্রোধের পরিবর্তে ক্ষমা, হিংসার পরিবর্তে ভালোবাসা প্রতিষ্ঠীত হয়, কুভাব সুভাবে পরিণত হয়৷ এমন নফস সবসময় যেকোনো হক সিদ্ধান্ততে খুশী থাকে ফলে খুব দ্রুতই তারা মুতমঈন হতে থাকেন৷ যখন তারা নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনাকে শতভাগ হক্ক হিসেবে উপলব্ধি করেন তখন দ্বৈতস্বত্তার দ্বিধায় পড়ে তারা আর রাস্তা হতে ছিটকে যান না৷ এমন পর্যায় পর্যন্ত যারা টিকে থাকতে পারে তাদের দ্বীধামুক্ত নফস সেচ্ছায় সকল সিদ্ধান্তে খুশী থাকে ,অল্পে তুষ্ট থাকে৷ এতে করে নিজের পশুপ্রবৃত্তি গুলি আস্তে আস্তে মস্তিস্কের উপর হতে নিয়ন্ত্রন প্রত্যাহার করে নেয়৷ এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকাও খুব জরুরী৷খাদ্যে সংযম করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় ভোজন হতে বিরত হতে হবে এবং প্রানীজ আমিষ বর্জন করতে হবে৷[সব না হলেও অন্তত লাল মাংস(Red meat) অবশ্যই বর্জন করতে হবে]
সর্বোপরি একনিষ্ঠ ভাবে আত্মসমর্পন এবং আত্মত্যাগের ক্রমাগত সাধনা যেকোনো অবস্হাতে চালিয়ে যেতে হবে, কোনো অবস্থাতেই পরাস্ত হওয়া চলবে না ৷এমন সাধনা দ্বীধামুক্ত নফসকে নিশ্চিত ভাবেই বিশুদ্ধ/বিদগ্ধ/মুহলেমে পরিণত করে আর এরূপ শুদ্ধ নফসই কেবলমাত্র নিজের চিত্তাকাশ বা ক্বলবকে অনুভব করতে সক্ষম হয়৷
*নফস এবং ক্বলবের মধ্যবর্তী প্রতিবন্ধকতা/ দ্বৈততা/ আরাফ:
মানুষের জীবচৈতন্য বা নফসের মাঝে বিপরীতধর্মী গুনাবলীর অবস্থান লক্ষ করা যায়৷ যাকে স্বত্বার দ্বৈততা/Duality বলা হয়ে থাকে, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় মানুষ একারনে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে থাকে৷নফসের দুটি নাড়িতে দুই ধরণের গুনাগুন প্রবাহিত হয়, ইড়া/গঙ্গাতে ধনাত্মক/Positive এবং পিঙ্গলাতে ঋণাত্মক/Negative গুন|এই দুই নাড়ি হতেই মানুষের চৈতন্যে দ্বিধাগ্রস্থতার সূত্রপাত আর এই দ্বিধাগ্রস্থতাই নফস এবং ক্বলবের মাঝখানে আরাফ/দেয়ালের মত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখে৷কুরআনুল হাকিমের সূরা আরাফে নফসের এমন বিপরীতধর্মী চরিত্র এবং তা হতে মুক্তির পন্থা বিশ্লেষন করা হয়েছে৷দেহের দুই নাড়ির গুনাবলীর দ্বিধা হতে মুক্তি পাবার জন্য নিজের জীবচৈতন্যকে সুষন্না/সরস্বতীর তুলনামূলক পার্থক্য জ্ঞানের ধারায় প্রতিষ্ঠিত করা জরুরী অর্থাৎ মিজান/ন্যায্যতার জ্ঞানের দ্বারা নিজেকে জাগতিক দ্বিধার আরাফ/দেয়ালের উর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷এর মাধ্যমে মানুষ একক জীব চৈতন্য হতে বেরিয়ে এসে সামগ্রীক জীব চৈতন্যে বা ক্বলবের অনুভূতি প্রাপ্ত হয় এবং সামগ্রিক অবস্থানের পরিচিতি লাভ করে৷

বিঃ দ্রঃ আত্মিক উন্নতির জন্য কামেল মুর্শিদের নিকট স্বশরীরে শিক্ষা গ্রহনের কোনো বিকল্প নেই ৷

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.