![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মুক্তি আলোয় আলোয় ; ধূলায় ধূলায় ; ঘাসে ঘাসে এই আকাশে ।।
কাউকে ছোট করা বা পক্ষপাতিত্ব করা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। শুধুই আমার অভিজ্ঞতা আর একান্ত অনুভবের কিছু কথা ।।
খুলনা ফিরে আসার পর থেকেই বেশ কিছু পুরানো বিষয় আবার নতুন করে বিব্রত করছে। ছেলে আর মেয়ে যে আলাদা এটা ছোটবেলায় খুলনা থাকতে জানতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে দেখি পুরাই ভিন্ন পরিবেশ। সেখানে সবাই সমান, সবার প্রতি সবার রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা । ভাবলাম বুঝি খুলনায় থাকতে আমি ছোট ছিলাম, আমাদের সমবয়সী ছেলেদের তখন জীবনের গভীর অনুভব আর পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হবার বয়স হয়নি। দীর্ঘ ৭ বছর পর আমি স্থায়ী ভাবে থাকার জন্য খুলনায় ফিরেছি এবং বিসিএস এর জন্য কোচিং এ ভর্তি হয়েছি। ছোটবেলার পুরনো কথাগুলো আবার শুনে চমকে উঠলাম। এই ছেলেরা সব উচ্চ শিক্ষিত এবং তারা অনেকেই কিছুদিন পর বিসিএস ক্যাডার ও হবে।
অর্থাৎ সমস্যা বয়সে নয় , তাহলে কোথায়?
কথাগুলো অনেকটা এরকম -
১। মেয়েরা কিচ্ছু বোঝেনা, মেয়েদের মাথা মোটা। ( কোচিং এ টপ লিস্ট এ সবকজন মেয়ে )
২। মেয়েরা ঝগড়াটে, হিংসুক। ( আজ পর্যন্ত কোনও ছেলেকে তার স্বজাতির কাছ থেকে ক্লাস লেকচার নিতে দেখিনি। এসে আমাদের কাছেই চায় )
৩। মেয়েদের নিয়ে আজব সব কৌতুক যার অধিকাংশই তাদেরকে ছোট করার জন্য। ( সে সব কৌতুক সবাই জানে)
৪। বিবাহিত জীবনে বউ এর দেয়া যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্টের বর্ণনা। ( এর জন্য আজ পর্যন্ত কোনও ছেলেকে বিয়ে না করে থাকতে দেখিনি। সম্ভবত তারাই পৃথিবীর সবচে বোকা প্রজাতি যারা জেনেশুনে দুঃখকষ্টে পতিত হয় !! )
মেয়েদের এখানে এভাবেই সর্বসমক্ষেই নিত্যদিন কথা শুনতে হয়। কোচিং এ আজ পর্যন্ত কোনও মেয়েকে আমি কোনও প্রতিবাদ করতে শুনিনি।আমি একজন কে বললাম যে দোষ তো ছেলেদের না তোমাদের , তোমরা কখনও প্রতিবাদ করোনা । মেয়েটি বলল কিছু বলনা তাহলে আরও বহুত কিছু শোনা লাগবে তারচে চুপ করে থাক কিছুক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে এমনি চলে যাবে। আমি বাস্তবিক ই অবাক !! বহুদিন শুনিনি তাই অভস্ত ও নই, তবে আসলেই এ ব্যাপারে কথা বলতে রুচিতে বাঁধে , তাই আমিও নিসচুপ।।
প্রথম প্রথম খারাপ লাগত এখন দুশ্চিন্তা হয়। বাংলাদেশ খুব ছোট একটা দেশ। আমাদের নিজেদের বলে আছে শুধু স্বপ্ন আর পারিবারিক বন্ধন। দিনদিন পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে তার প্রভাব পরছে সব জায়গাতেই। মানুষ যা শেখার তা শিশুকালেই শেখে। পরিবারের বড়দের কাছ থেকে , এভাবেই তৈরি হয় পারস্পারিক স্রধাবোধ , ভালবাসা আর বিশ্বাস। পরিবার ছোট হয়ে পরছে, বাবা মা বা্স্ত। শিশু বেশিরভাগ সময় একা অথবা বুয়ার কাছে মানুষ হচ্ছে। দাদি বা নানা থেকে যে শিক্ষা পাওয়া সম্ভব তা কি বুয়ার কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব ? বাবা মা দুজন দুজনকে সন্মান করেনা শিশু শিখবে কার কাছ থেকে? এছাড়াও পারিবারিক দ্বন্দ্ব , বিদ্বেষ শিশুর মনোজগৎ কে ছোট করে দিচ্ছে। অভাব দেখা দিচ্ছে উদারতা, স্রধাবোধ আর পারস্পারিক বিশ্বাসের ।। অথচ দেশকে এগোতে গেলে সবাইকে একসাথে পথে নামতে হবে, সেখানে সবাই একে অন্যর দোষ ধরতে বাস্ত।।
মেয়েরা যে এ ধরনের আচরন করেনা তাও কিন্তু নয়। এক একজন মেয়ে এক একরকম আচরন করে। সেগুলি সব এক করলেই অভিযোগের বিশাল এক লিস্ট হয়ে যায়। আমি নিশ্চিত ছেলেদের এমন একটা লিস্ট করা হলে সেটাও বিশাল হবে। মানুষ মাত্রই মরণশীল !!
এখন দেখা যাক মেয়েদের মাঝে এমন আচরনের কারন কি?
খুব শিক্ষিত পরিবারেও মেয়েকে ছেলের চে ছোট করে দেখা হয়। নারী, সে ছোটবেলা থেকেই জেনে যায় যে সে ক্ষুদ্র, ছোট, অকিঞ্চিৎকর।। খুলনা সদরে আমার বাড়ি, বাবা মা শিক্ষিত এবং আমরা দুবোন থাকার পরেও তারা ছেলে সন্তানের আশায় অনেক মানত করে আবার সন্তান নিয়েছেন। এ চিত্র প্রতি ঘরে। আমি মেয়ে তাই জানি নিজেকে কত নিঃস্ব, অসহায় আর ক্ষুদ্র মনে হয়!! এরপর চিন্তা আসে যে আমাকে আপন পিতামাতাই ভালবাসেনা সে আমাকে আরেকজন আর কী ভালবাসবে? কিন্তু বিয়ে তো একদিন করতেই হবে । ছোটবেলা থেকেই এই বৈষম্য মেয়েদের মনোজগৎ কে অসম্ভব নাড়া দেয়। তাই মেয়েরা যখন কিছু পায় তার সবটা পেতে চায় আবার একই সাথে সবসময় তা হারানোর ভয়ে থাকে। তারই ফলশ্রুতিতে এক একজন মেয়ে এক একভাবে আচরনের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আর সামাজিক বৈষম্য, পুরুসসাসিত সমাজ এসব তো আছেই। তবে মোল্লার দৌড় যেমন মসজিদ পর্যন্ত মেয়েদের দৌড় তার প্রিয় মানুষ পর্যন্ত, যাকে সে সবচে বেশি ভালবাসে !!
শিক্ষা আমাদেরকে উদার হতে শেখায়। খুলনা ছাড়ার সময় আমারও অনেক সমস্যা ছিল, এমন সব আচরন করতাম !! এখন ভাবলে হাসি পায়।
মেয়েরা খারাপ বা ছেলেরা খারাপ এই তর্ক প্রতিটি পোস্ট এই দেখতে পাই। অথচ কোনও মানুষ ই এককভাবে ভালো বা খারাপ হতে পারেনা। ভালো মন্দ মিলেই একজন পরিপূর্ণ মানুষ । একই মানুষ আপনার কাছে খারাপ তো আরেকজনের কাছে ভালো। কখনও কী ভেবে দেখেছেন এমন কেন হয় ? কারন হল ভালবাসা। ভালবাসলে সব ভালো ; ভালো না বাসলে সব খারাপ।
কথায় আছে যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা !!
ছেলেরা ধোঁকা দেয় বা মেয়েরা ধোঁকা দেয়; একে অন্যকে তুলো ধুনো করছেন। আসলে ছেলে বা মেয়ে হোক যেঁ আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে মহান আল্লাহতায়ালা তার জন্য আপনাকে রাখেননি। আপনি যতই প্রেম করুন আর নিজের জীবনসঙ্গী/ সঙ্গিনী খোঁজার চেষ্টা করুন ; আপনার জীবনসাথি উনি ঠিক করে রেখেছেন। যা বদলানোর ক্ষমতা কারও নেই। তাইতো দিনের পর দিন ঝগড়া হয়েও অনেক সম্পর্ক কখনও ভাঙ্গেনা আবার সামান্য মনমালিন্যে অনেক সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।
আমি নিশ্চিত যে শিশু ( ছেলে বা মেয়েই হোক) অফুরন্ত ভালবাসায় শৈশব কাটিয়েছে তার মন হবে আকাশের মত বিশাল সে কখনও অন্যকে ছোট করে আনন্দ পেতে পারেনা।
যারা এ লেখাটি পড়েছেন ;
পিতামাতাকে বলছি_ শিশুকে সময় দিন, শুধু পরীক্ষায় পাস করা শিখাবেন না তাকে ভাল মন্দ , আচরন সম্পর্কেও শিক্ষা দিন, ্স্রধাবোধ গরে তুলুন। সর্বোপরি বৈষম্য করবেন না ; সন্তানদের সমান ভালবাসুন।
আর বিবাহিত যারা আছেন বা বিয়ে করার চিন্তা করছেন তাদেরকে বলছি _ হিংসা ,অবিশ্বাস দিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ কিছুই জয়লাভ করতে পারেনি। জীবনসঙ্গীকে অফুরন্ত ভালবাসুন, এতটা যাতে দুজনের সব সমস্যা দূর হয়ে যায়। ভালবাসারই শুধু সেই ক্ষমতা আছে যা মানুষকে শুধওতম মানুষে পরিনত করতে পারে।
কিশোর বয়স থেকে শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যন্ত মানুষ কারও কাছ থেকে কিছুই শিখতে চায়না। যা শেখার নিজে নিজেই শিখে। তাই তাদের বলার কিছুই নেই।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ঃ কটু মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন। কথায় ব্যক্তিতের পরিচয় ।।
_ জাকরিন কাদীর ।।
©somewhere in net ltd.