![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বয়স বাড়ার কিছু লক্ষণ আছে। এই যে বাইশ-তেইশ বছর বয়সটা আছে, এই বয়সে মনে হয় প্রথমবার আমরা টের পাই যে, অন্য সবার মতো আমাদেরও বয়সটা থেমে নেই, বয়সটা আসলেই বাড়ছে। বয়স বাড়ার প্রথম লক্ষণ হচ্ছে, বাসায় টাকা চাইতে লজ্জা লাগা। স্বাবলম্বী হওয়ার যে আশাটা আমরা বুকের গভীরে পোষণ করি, সে আশার পথে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এটা। এই বয়সে এসেই প্রথমবার আমরা খেয়াল করি যে, আমাদের সম্পর্কগুলো আমাদের কেমন যেন বিভ্রান্ত করছে। বয়সটাই এমন, বাচ্চারা "আংকেল" ডাকলেও লজ্জা পেয়ে মনে হয়, "আমি কি এতোই বড় হয়ে গেলাম ?" আবার ভাইয়া ডাকলেও মনে হয়, "আমার চেহারা থেকে বাচ্চা ভাবটা কি একেবারেই যায়নি ?" সব মিলিয়ে খুবই "ঝুলে থাকা" ধরনের পরিস্থিতি। না পারি ফেলতে, না পারি গিলতে।
রবীন্দ্রনাথ "ছুটি" গল্পে কিশোর বয়সের ছেলেদের সমস্যাগুলোর কথা বলেছিলেন, সুকান্ত "আঠারো বছর বয়স" কবিতায় তারুণ্যের জয়গান গেয়ে গেছেন কিন্তু এই সময়টা বাইশ-তেইশ বছর বয়স!!! যখন আমরা তারুণ্য থেকে যৌবনে পা ফেলি, খুব গভীরভাবে মনে হয় এই সময়টা নিয়ে কেউই তেমন লেখেননি। এই বয়সটা সিনেমায় দেখাতে যখন সালমান, আমির বা বাংলাদেশি মীর সাব্বির, জাহিদ হাসানদের মতো চল্লিশোর্ধ অভিনেতাদের নিয়োগ দেয়া হয়, তখন মনে হয়, "এই শালারা কী বুঝবে এই বয়সে আমি কী ভাবি ?
বহু দিক থেকেই তাই বড় একা রয়ে গেছে আমাদের এই বয়স, বাইশ-তেইশ-চব্বিশ। এই একাকীত্বটাই তাই আমাদের বড় সঙ্গী। যে একা, সেই স্বাবলম্বী। যে একা, সেই নিজের একটা পৃথিবী বানানোর অসামান্য ক্ষমতা রাখে। এই বয়সে এসে গার্লফ্রেন্ডদের সাথে আমরা "বিয়ে-শাদী" সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোকে সিরিয়াসলি নিতে শিখি। পরিবারের হাল কীভাবে ধরবো, সেই চিন্তা করতে শিখি। ব্যাপক পরিবর্তন আসে একটা মানুষের এই বয়সের মধ্য দিয়ে। সেটা সুখ হোক, দুঃখ হোক বা হোক অজানা কোনও আবেগ এই বয়সেই আমরা সবচেয়ে বেশি বাস্তববাদী হতে শিখি। এমনকি ফেসবুকে বসে "স্বপ্নবাজ" নিক নিয়ে যে যুবকটি স্বপ্নের চাষবাস করে, সেও এই বয়সে এসে ভাবতে শেখে, "আমার গন্তব্য কোথায় ? কী হতে যাচ্ছে আমার জীবনে ? "মানুষ বড় হয়, কমতে থাকে তার স্বপ্নবৃত্তের ব্যাসার্ধ। যে ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো, ক্লাস নাইনে এসে সে চলে যায় কমার্সে। এরপর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেয়ে পড়ে ছোটখাটো কোনও কলেজে। স্বপ্ন ছিলো বিশাল বহুজাতিক কোম্পানিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চাকরি করবে, সেখানে হয়তো ঠাঁই হয় অন্ধকার কোনও অফিসে।
এই বয়সে প্রথমবারের মতো অভিজ্ঞতা হয় চোখের সামনে প্রিয়জনদের লাগাতার মৃত্যুপথযাত্রা দেখার। হঠাৎ করেই এই বয়সে এসে আমরা আবিষ্কার করি, আমাদের পাশে যে মানুষগুলো এতোদিন আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে ছিলো, তারা নিজেরাই আজ আর কেউ বেঁচে নেই। তাই মাঝে মাঝে কিছুটা অসহায় লাগে। একটা প্রশ্ন বড় পীড়া দেয় এই সময়, "আমার কী হবে এরপর ? কী করবো আমি ?" এই অসহায়ত্বটাই একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় সামনে, "নিজের মতো একটা কিছু" করার। এতো কিছুর পরেও, এই যে "নিজে একটা কিছু করতে পারার ক্ষমতা", এটাই বিশাল বড়। দুনিয়ার কারও ধার ধারে না এই বয়স। সে যা পারে, "নিজে করে দেখায়"।
____________________________________________________
আশরাফুল মাহমুদ
©somewhere in net ltd.