নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার নিজস্ব কিছু মন খারাপের গল্প থাকে :( আবার সময়ে মন খারাপের গল্পের ভুমিকা বদলায়, গল্প বদলায় কিন্তু মন খারাপের গল্প না থাকলেও কেমন যেনো অপূর্ন ভাব থেকে যায়, তাই আমি চাই মন খারাপের গল্প লিখে যেতে :) সময়ে-অসময়ে :( শেষ কবে কেঁদেছি সে কথা মনে থাকলেও শে

তাই-ফি

আমি বাংলাদেশের একজন দালাল বলছি !!

তাই-ফি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাতাসের কাছে আমায় দিয়ে দিও !!!

২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৩৭

অনুবাদ

রেহানা জব্বারি একজন ইরানি ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। তাকে গত ১১ বছর আগে গ্রেফতার করা হয় নিজের ক্লায়েন্টকে তার ফ্ল্যাটেই খুনের অভিযোগে। খুনের সময় রেহানা সেই ফ্ল্যাটের ইন্টেরিয়রের দায়িত্বে ছিলো। ৩য় এক ব্যক্তির উপস্থিতিও হত্যাকালে সেখানে প্রমাণিত হয়। রেহানার মতে সে তার ট্যাক্সি চালক। আর নিহতের পরিবারের মতে সে ছিলো রেহানার বয়ফ্রেন্ড। রেহানার অভিযোগ ছিলো- তার ক্লায়েন্ট তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় গাড়ি চালক বাঁধা দ্যায়- এবং সেই ধস্তাধস্তিতেই মারা যায় ফ্ল্যাট মালিক। অন্যদিকে ফ্ল্যাট মালিককে হত্যার পেছনে রেহানার মোটিভ অস্পষ্টই থেকে গ্যাছে আদালত বা নিহতের পরিবারের কাছে।

[সূত্র - Click This Link

এই চিঠিটা রেহানার লেখা।

প্রিয় মা,

আমি আজকে জানতে পারলাম যে এবার আমার কিসাস’এর পালা। (কিসাস- ইরানি আইনে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের উপায়)। তুমি নিজে থেকে কেনো জানালে না যে আমি জীবনের শেষ পৃষ্ঠায় পৌঁছে গেছি, কষ্ট পেলাম। তোমার (একবারও) মনে হলো না যে ব্যাপারটা আমার জানা উচিত? তুমি (এটা নিয়ে) দুঃখ করছো সেটা আমার জন্য ঠিক কতোটা লজ্জার- তা তো তুমি জানো। কেনো তুমি (সেদিন) আমায় তোমার আর বাবার হাতের পিঠে একটু চুমু খেতে দিলে না?

পৃথিবী আমাকে ঠিক ১৯ টা বছর বাঁচতে দিয়েছিলো। (এরপর) সেই অশনি রাতটাতে আমারই খুন হয়ে যাওয়া উচিত ছিলো আসলে। আমার শরীরটা ছুঁড়ে ফ্যালা থাকতো এই শহরেরই কোনো কোণায়, এর ক’দিন পরে আমার মরদেহ সনাক্ত করতে পুলিশ তোমায় নিয়ে যেতো করোনারের অফিসে আর সেখানেই তুমি আরো জানতে পারতে যে আমায় ধর্ষণও করা হয়েছিলো। খুনিকে কোনোদিনই খুঁজে পাওয়া যেতোনা, যেহেতু সেই টাকা কিম্বা প্রভাব কোনোটাই আমাদের নেই। তারপর তুমি এই গ্লানি নিয়েই বেঁচে থাকতে বাকিটা জীবন, এই গ্লানি নিয়েই মরে যেতে একসময়, ব্যস!

যাহোক, সেদিনের সেই অভিশপ্ত ঝড়ে পুরো গল্পটাই পালটে গেলো। আমার শরীরটা রাস্তার পাশে ছুঁড়ে না ফেলে পুরে দেয়া হলো এভিন জেলখানার একাকী প্রকোষ্ঠে, তারপর এখনকার এই কবরের মতো শাহর-ই-রায় কারাগারে। তাই বলে আফসোস কোরোনা, এটাকেই ভাগ্য বলে মেনে নাও। তুমি তো ভাল জানো, মৃত্যুই সবকিছুর শেষ না।

তুমিই আমায় শিখিয়েছিলে- মানুষ পৃথিবীতে আসে শিখতে, অভিজ্ঞতা নিতে আর তাদের প্রত্যেকের কাঁধে থাকে একেকটা দায়িত্ব। আমি শিখেছিলাম- কখনো কখনো কাউকে কাউকে লড়তে হয় এজন্য। (আবার) আমার (এও) মনে আছে তুমি বলেছিলে- ঐ গাড়িওলা সেদিন প্রতিবাদ করেছিলো যে লোকটা আমায় চাবুক মারছিলো তার বিরুদ্ধে, কিন্তু উলটো তার মুখে আর মাথায় চাবুকের আঘাত লাগে প্রচন্ড- সেটাতেই মারা যায় লোকটা। তুমিই বলেছিলে, এমনকি মরতে হলেও নিজের মূল্যবোধ টিকিয়ে রাখতে লড়ে যেতে হয় মানুষকে।

স্কুলে যেতাম যখন, তখন আমাদের শিখিয়েছিলে হাজারো অভাব-অভিযোগ আর বিতন্ডার মুখেও কিভাবে লক্ষ্মী মেয়েটি হয়ে থাকতে হয়। মনে আছে তোমার, কতবার করে তুমি মনে করিয়ে দিতে আমাদের আচার-আচরণ ঠিক ক্যামনটা হতে হবে?! তোমার জানায় ভুল ছিলো। এই ঘটনাটা যখন ঘটলো- তোমার শিক্ষা কাজে আসেনি আমার। আমাকে কোর্টে দাঁড় করানো হয়েছিলো একজন ঠান্ডা মাথার খুনি আর দাগী অপরাধী হিসেবে। আমি কাঁদিনি। আমি (দয়া) ভিক্ষাও চাইনি। আমি কাঁদিনি কারণ, আমি আইনের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম।

অথচ, আমায় অভিযুক্ত করা হলো অপরাধ সংঘটনকালে নিষ্ক্রিয় থাকার অপরাধে। তুমি দেখেছো, আমি এমনকি মশাও মারতাম না, তেলাপোকাও শুঁড় ধরে বাইরে ফেলে দিয়ে আসতাম। আজ আমি একজন পরিকল্পিত খুনি। প্রাণীর প্রতি আমার আচরণকে বলা হয়েছে পুরুষালি আচরণ আর ওদিকে বিচারক একবার কষ্ট করে দেখতেও যাননি যে ঘটনার সময় আমার রীতিমতো লম্বা, পলিশ করা নখ ছিলো। ঠিক কতোটা আশাবাদী হলে এমন বিচারকের কাছে ন্যায়বিচার আশা করা যায়! সে একটাবারও জানতে চায়নি ক্যানো আমার হাত খেলোয়াড়, বিশেষত বক্সার মেয়েদের মতো রূক্ষ না। আর এইযে দেশটাকে নিয়ে হাজার ভালোবাসা তুমি আমার মনে গেঁথে দিয়েছো- (সেদেশের) কেউ আমার জন্য এগিয়ে আসেনি যখন আমি প্রচন্ড জেরার মুখে অঝোরে কাঁদছিলাম আর শুনছিলাম জেরাকারীর অকথ্য সব খিস্তি। যখন আমি আমার সৌন্দর্যের শেষ চিহ্ন চুলগুলো ছেটে ফেললাম একেবারে তখন আমায় পুরষ্কৃত করা হয়েছিলো- ১১ দিনের নিঃসঙ্গবাস!

সোনা মা আমার, যা শুনছো তা শুনে কেঁদোনা। পুলিশ অফিসে প্রথমদিন এক অবিবাহিত পুলিশ এজেন্ট নখ রাখার অপরাধে মেরেছিলো আমায়, আমি বুঝে গিয়েছিলাম- সৌন্দর্যের যুগ এটা নয়। দ্যাখার সৌন্দর্য, চিন্তা আর ইচ্ছাশক্তির সৌন্দর্য, সুন্দর কোনো হাতের লেখা, চোখ আর দৃষ্টির সৌন্দর্য, এমনকি মিষ্টি কোনো কণ্ঠের সৌন্দর্য পর্যন্ত।

প্রিয় মা আমার, আমার আদর্শ বদলে গ্যাছে আর এজন্য তুমি দায়ী নও মোটেই। আমার কথা ফুরোবার নয়, তাই আমি এগুলো দিয়ে যাচ্ছি একজনার কাছে যাতে করে যখন তোমার অজান্তেই আমাকে ফাঁসি দেয়া হবে তোমায় এগুলো পৌঁছে দেয়া হয়। আমার স্মৃতি হিসেবে বেশকিছু হাতে লেখা জিনিস রেখে গেলাম তোমার জন্য।

যাহোক, মৃত্যুর আগে তোমার কাছে আমার কিছু চাইবার আছে, যা তোমায় তোমার সর্বশক্তি দিয়ে যেভাবেই পারো করবার চেষ্টা করতে হবে। আসলে এটাই একমাত্র কিছু যা আমি এই পৃথিবীর কাছে, এই দেশের কাছে আর তোমার কাছে চাই। আমি জানি তোমার সময় লাগবে এগুলো করতে। তাই আমি আমার উইলের আংশিক তোমায় আগেভাগেই জানিয়ে রাখছি।

প্লিজ কেঁদোনা, মন দিয়ে শোনো। আমি চাই তুমি কোর্টে গিয়ে আমার অনুরোধটুকু ওদের জানাও। জেলের ভেতর থেকে জেল প্রধানের অনুমতি নিয়ে এধরণের চিঠি লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না; অর্থাৎ এই কারণে আবারো তোমাকে ঝামেলা পোহাতে হবে আমার জন্য। যদিও তোমায় আমি বহুবার নিষেধ করেছি আমায় রক্ষা করতে ওদের কাছে অনুনয়-বিনয় না করতে, তবে এটা একমাত্র কিছু যেটার জন্য তুমি অনুনয় করলেও আমি রাগ করবো না তোমার ওপর।

লক্ষ্মী মা আমার, আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় সোনা আম্মুটা, আমি মাটির নিচে পচতে চাইনা। আমি চাইনা আমার এই চোখ, আমার এই তরুণ হৃদয়টা ধুলায় পরিণত হোক। অনুরোধ কোরো যাতে, আমি মরে যাবার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব আমার হৃদপিন্ড, কিডনি, চোখ, অস্থি আর আমার শরীরের অন্য যা কিছু প্রতিস্থাপনযোগ্য তার সব বের করে নিয়ে যাদের প্রয়োজন এমন কাউকে উপহার হিসেবে দেবার অনুমতি দেয়া হয়। আমি চাইনা কোনো গ্রহীতা আমার নাম জানুক, কিম্বা আমায় পুষ্পস্তবক অর্পন করুক, এমনকি চাইনা আমার জন্য দোয়াও করুক। আমি আমার হৃদয়ের ঠিক মধ্যিখান থেকে তোমায় বলছি- শোক পালন করতে বা নিজেকে কষ্ট দিতে তোমার জন্য আমি নিজের কোনো কবর রেখে যেতে চাইনা। আমার জন্য কালো কাপড় পরো, তাও আমি চাইনা। সর্বোচ্চ চেষ্টা কোরো আমার কষ্টের দিনগুলো ভুলে যেতে। বাতাসের রাহে দিয়ে দিও আমায়। পৃথিবী আমাদের ভালোবাসেনি। পৃথিবী চায়নি আমার এই অদৃষ্ট। আর এখন আমিই ছেড়ে যাচ্ছি তাকে, বুকে টেনে নিচ্ছি মৃত্যুকে। কেননা ইশ্বরের আদালতে আমি দোষী করবো দারোগাদেরকে, আমি অভিযুক্ত করবো ইন্সপেক্টর শামলুকে, আমি অভিযুক্ত করবো জাজকে, আর দেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের যে কোর্ট আমায় যতক্ষণ জেগেছিলাম আঘাত করেছে, আমায় রক্ষা করেনি যখন হেনস্তা হয়েছি। সৃষ্টিকর্তার আদালতে আমি অভিযুক্ত করবো ড. ফারভান্দিকে, আমি অভিযুক্ত করবো কাশেম শাভানিকে আর তাদের সবাইকে যারা নিজেদের মূর্খতায় অথবা মিথ্যায় আমাকে ফাঁসিয়েছে, আমার অধিকারকে বিচূর্ণ করেছে আর কোনোক্রমেই বুঝতে চায়নি যে কখনো কখনো য্যামনটা খালি চোখে মনে হয় বাস্তবতা তারচে’ ভীষণ ভিন্ন হতে পারে।

সোনাপাখি মা, অন্য সেই পৃথিবীতে আমি আর তুমিই হবো বাদী, আর বাকি সবাই আসামী। দেখবো বিধাতা কী চায়। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমায় জড়িয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। তোমায় ভালোবাসি।

অতঃপর রেহানা জব্বারিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদন্ড কার্যকর করা হয়েছে নিজের সম্ভাব্য ধর্ষককে হত্যার অভিযোগে।

[সূত্র - Click This Link


____________________________________________________

আশরাফুল মাহমুদ
ফ্রীল্যান্স ফিল্মমেকার
ঢাকা, বাংলাদেশ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.