![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনুপ্রেরণায়ঃ (কাক্কা)- কবি ও কাব্য, অন্যান্য সিনেমা খোর ব্লগার বৃন্দ।
হ্যাঁ ভাই- আমি আপনাদের প্রিয় গাজী মাঝহারুল ইসলাম- হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে চলে এলাম আপনাদেরকে উজ্জীবিত করতে। আসিতেছে- বিউটি কুইন শাবানা, মিষ্টি মেয়ে শাবনুর অভিনীত ক্লাইমেক্সে ভরপুর, পারিবারিক ছবি। বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত বিজ্ঞাপন তরঙ্গের কথা কেউ ভুলবে কিনা সন্দেহ আছে! এইতো সেদিনও নিখাদ বিনোদন বলতে এগুলোই বুঝাতো। প্রথম প্রেমের মত মনে সফেদ দাগ কেটে আছে অদ্যবধি।
বিগত শতকের নব্বই দশক ছিল সঙ্গীত-চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী ক্ষণ। কী গানের সুরতান, কী বাংলা ছায়াছবির ইন্দ্রজাল- মানুষ যেন তন্ময় মুগ্ধতায় বুঁদ হয়ে থাকত। একে তো বিনোদনের একক উৎস ছিল বিটিভি (স্যাটেলাইট যুগ ছিল অপ্রচলিত) এবং সিনেমা হল, ছায়াছবি নিয়ে অধীর আগ্রহ এবং উন্মাদনার কমতি ছিলনা একদম। শুক্রবারের বৈকালিক পারিবারিক জমায়েত ছিল টেলিভিশন সম্মুখে- উদ্দেশ্য বাংলা ছায়াছবি অবলোকন। কম বেশী প্রত্যেক নায়ক-নায়িকার আলাদা আলাদা ভক্ত শ্রেণীর উদ্ভব ছিল। সিনেমা হলগুলোতে পারিবারিক-সামাজিক-অ্যাকশন ছায়াছবি উপভোগের জন্য দর্শকদের রীতিমত ঢল নামত।
স্বর্ণ সময়ের সর্বশেষ হিসেবে সালমান- সানী যুদ্ধ তখন ছিল বহুল প্রতীক্ষিত আলোচনার এক উপলক্ষ। সময়ের পরিক্রমায় দর্শকদের স্বাদ, চাহিদা, পছন্দ পরিবর্তিত হতে থাকল। আজকের দিনে চারপাশে নীরব হাহাকার- বাংলা চলচ্চিত্রের জাত গেল, জাত গেল রব। দ্বিমত পোষণ করবোনা, সার্বিকভাবেই বাংলা চলচ্চিত্র ধুঁকছে গত এক যুগ ধরেই। সালমান শাহ নামক এক হিরণ্ময় নক্ষত্রের পতনের সাথে সাথে যেন রোমাঞ্চ নির্ভর চলচ্চিত্রের পিছু হটা শুরু হয়েছিল। শাবনাজ- নাইমের বিয়ে জনিত কারণে ক্যারিয়ার শেষ হওয়া, সালমান চলে গেল, অজানা কারণে সানী ফ্লপ করতে থাকল, পরিবার নির্ভর ছায়াছবির মূল কুশীলব শাবানার পদচারণাও হ্রাস পেতে শুরু করল- চলচ্চিত্রের গুমোট ভাব শুরু হল তখন। মান্না-রুবেলের মারদাঙ্গা ছবি তরুণদের টানলেও প্রণয়ভিত্তিক রোমান্টিক ছবির ক্রমহ্রাসমান পরিস্থিতি বাংলার তরুণীদের হল বিমুখ করা শুরু করল। ব্যাস, সিনেমা হলগুলোতে নাটকীয় নির্জনতা, দর্শক শুন্যতা। হল মালিকদের বাণিজ্যিক স্বাদ মেটাতে পরিচালক- প্রযোজকদের চিন্তাভাবনা ঘুরিয়ে আনা; ফলশ্রুতিতে সিনেমায় অসহনীয় অশ্লীলতার তীব্র মাথাচাড়া।
৯৮/৯৯ এর পর থেকে ২০০৫/২০০৬ পর্যন্ত মোটামুটি বলেই দেওয়া যায় বাংলা সিনেমার কলঙ্ক কাল। দ্বিতীয়- তৃতীয় শ্রেণীর নায়ক নায়িকাদের রগরগে অভিনয়, কাহিনী বিন্যাসের নিম্নগামী মান- সব মিলে জলবৎ তলরং পরিস্থিতি। এরই মাঝে স্যাটেলাইটের দুর্দান্ত আবির্ভাব, হলগুলোতে অযত্নের ছাপ বাংলা সিনেমার সার্বিক দুর্দশা বাড়িয়ে দিল আরও এক ধাপ। তৎকালীন বিশ্বব্যাপী গ্রাফিক্স, সাউন্ড সিস্টেমের হালনাগাদ উৎকর্ষ বাংলা সিনেমাকে ছুঁতে পারেনি, তাই তো দর্শকদের কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে ৩৫ মি.মি. আকৃতির ছায়াছবি। বলে রাখা ভালো, সিনেমার সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা কিন্তু বাণিজ্য তথা হলব্যবসার উপর মূল্যায়িত হয়। গৃহাভ্যন্তরে বসে তৃপ্তির ঢেঁকুর কিংবা সমালোচনার বাণ- কোন কিছুরই সিকি ভাগ ক্ষমতা নেই সিনেমা হিট নাকি ফ্লপ- তা নির্ধারণে।
ভাল সিনেমা যে একদম হয়নি, তা নয়। অশ্লীলতার রাজত্বের মাঝেও আমরা পেয়েছি হুমায়ুন আহমেদ, তারেক মাসুদের ভিন্ন ধারা- ধাঁচের মুষ্টিমেয় কিছু ছবি, তবে তা বাণিজ্যিক ব্যর্থতার ভরা প্লাবনে একেবারেই অপ্রতুল খড়খুটো। বর্তমান দিনকাল যেন সুদিনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত ২/৩ বছর বাংলা চলচ্চিত্রের প্রত্যাবর্তন খ্যাত। আশি-নব্বই এর মত হয়তো শুধু এক নায়কী উন্মাদনায় দর্শক টানা যাচ্ছেনা, তবে কাহিনী বৈচিত্র্য এবং আনুষঙ্গিক উন্নত পরিবর্তন দর্শকদের হলমুখো করছে আবার। হলিউডি কায়দায় স্পেশাল ইফেক্টকে আমরা সাদরেই গ্রহণ করব। পাশাপাশি আরও নানান পদক্ষেপ নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা,
গতানুগতিক কাহিনীধারা ভেঙ্গে বাণিজ্যিক সিনেমা বানাতে হবে।
একঘেয়েমি দূর করে আধুনিক সজ্জা কায়দায় মানসম্পন্ন সিনেমা বানানোর বিকল্প নেই।
হলের উন্নয়ন অবশ্যই পূর্ব শর্ত (অবশ্য দর্শক আসা শুরু হলেই হলের আমূল পরিবর্তন হবে)।
কোন সিনেমা ব্যবসায় মার খেলেও যেন হল মালিকদের লগ্নি অটুট থাকে, সে রকম নিরাপত্তা সরকারী পর্যায় থেকে আসা বাঞ্ছনীয়।
মেধা সঙ্কট অবনমনের বড় নিয়ামক। এই বাংলার কোলেই আছেন একজন আলাউদ্দিন আলী, একজন আলম খান, একজন ইমতিয়াজ বুলবুল, একজন রফিকুজ্জামান, একজন সাবিনা-রুনা-এন্ড্রু-বিশ্বজিৎ, একজন রাজ্জাক, একজন আলমগীর, একজন কাঞ্চন, একজন শিবলী সাদিক, একজন সোহানুর রহমান সোহান, একজন শহিদুল ইসলাম খোকন, একজন এ জে মিন্টু সহ তাদের উত্তরসূরিরা। তাই, এসব কিংবদন্তীদের এখনো অবদান রাখা বাকি পড়ে আছে। যোগ্য সম্মান আর মর্যাদায় অভিষিক্ত করে তাদের হাত ধরে বাণিজ্যিক গল্পের ছবি উদ্ভাসিত হবে।
সরকারী অনুদানের বিষয় থাকতে হবে সদা সক্রিয়।
পাইরেসি এবং কাটপিস প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ হোক ইস্পাত কঠিন।
বাংলা সংস্কৃতির প্রতি দর্শকদের অনুরাগ জন্মাতে হবে, দেশপ্রেমের দ্যোতনা খুব বেশী প্রয়োজন।
গণ মাধ্যমের ভূমিকা সব সময়ই গুরুত্ব বহন করে।
সিনেমার প্রসারে গঠনমূলক সমালোচনা এবং ধ্বন্যাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি আশু জরুরী।
যত বড় হোক ইন্দ্রধনু সেতো সুদূর আকাশে আঁকা, আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতির পাখা- এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হলেই আমাদের চোখে বাংলার সিনেমা অখাদ্য-কুখাদ্য হবে না। অনন্ত জলিলের আধুনিক সময় উপযোগী প্রয়াসকে হাসি- তামাশার বিন্দু মনে হবে না আর।
একটি পরিষ্কার বিষয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নব্বইয়ের জনপ্রিয় নায়ক ওমরসানীর বাচনভঙ্গি বা বাহ্যিক অনুবাদ কিন্ত আজকের অনন্ত জলিল বা শাকিব খানের তুলনায় দৃষ্টিকটু ছিল। কই, তবুও তো সানীর আলাদা ভক্ত শ্রেণী ছিল, প্রবল বিক্রমে সানি-সুমি গোটা বিশেক সুপার হিট সিনেমা উপহার দিতে পেরেছিল। সিনেমা না দেখার পণ কিন্তু সে সময়ের শিক্ষিত- অশিক্ষিত কোন দর্শকেরাই করেনি।
সেদিন বেশী দূরে নয়, আমাদের সিনেমা তাবৎ ধরণী দখল করবে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঝলক আমরা সব সময়ই দেখাই, যেমন- ফারুকির টেলিভিশন ছবিটি বুসান মাতালো; তবে ধারাবাহিকতা দরকার। শুভ- সুশ্রী সিনেমার ঢালাও জোয়ার উঠলেই কেল্লাফতে। আবারো পেয়ে যাবো পনের বছর আগের উচ্চ ধারণা/ থিমের কে অপরাধী বা সাগরিকা, আঠারো বছর পূর্বের নান্দনিক প্রেমের অন্তরে অন্তরে, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, দোলা, লজ্জা, প্রথম প্রেম, তোমাকে চাই, তুমি আমার, সমাজ অসঙ্গতির তীব্র প্রতিবাদরুপী বিশাল আক্রমণ, বিক্ষোভ কিংবা চোখে জল সঞ্চারী পারিবারিক কাহিনী নির্ভর সব সিনেমা
অপেক্ষায় আছি সুসময়ের...
©somewhere in net ltd.