নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ আকাশ এমন আকাশ, কখনো ছায় মেঘে- সে আবার সুখেই ভাসে, দখিন হাওয়া লেগে

কে আই তাজ

মানুষ পুরো খাঁটি হয় না, হলে সে ফেরেশতা। তবুও কারণে- অকারণে নিজেকে নিত্য মনে হয়, বিশুদ্ধতার প্রতীক।

কে আই তাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে অচিরেই!

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:১৮

প্রথমেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন। ১৬ বছর পর ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি পাকিস্তান দলকে হেসে খেলে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ, বীর বিক্রমে ওয়ানডে সিরিজ জিতল। এই একটি উপলক্ষ ছাড়া ভিনদেশে আমাদের মুখ উঁচু করার কোন অস্ত্র নেই। ক্রিকেটের আনন্দে উন্মাদ হয়ে ওঠে আমাদের প্রধানমন্ত্রী- রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে দুধের শিশু। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ভেসে যায় আবেগের উচ্ছ্বসিত জোয়ারে। তাই ষোল কোটি মানুষের স্বার্থে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন আমাদের করতেই হবে।

বাংলাদেশ দলের ঝলক শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে, যখন আমাদের পঞ্চম প্রজন্মের কারো জন্ম হয় নি। চতুর্থ প্রজন্মের তরুণেরা তখন ছিল হাঁটি হাঁটি পা পা, আর তৃতীয় প্রজন্মের আমরা ছিলাম স্কুল পড়ুয়া। তবে ক্রিকেটের উন্মাদনা বুঝতাম ষোল আনা। অভিষেক বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড, পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে সেই যে বিজয় ডঙ্কা শুরু, তা আজো অব্যাহত। মাঝে অনেক বছর চড়াই- উৎরাই ছিল, সমালোচনার বিষাক্ত বাণে আমরা খেলোয়াড়দের অজস্রবার জর্জরিত করেছি। পরাজয়ের ভারে নুয়ে পড়েছিল আমাদের ক্রিকেট, খেলার মর্যাদা পর্যন্ত হুমকিতে এসেছে। ইদানীং আমাদের দলের অবস্থা অনেকটাই স্থিতধী বলা চলে। সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে আমরা জাত চিনিয়েছি। সেমিফাইনাল আমাদের ন্যায্য ছিল, তবে কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা হারিনি; আমাদের হারানো হয়েছে জোর জবরদস্তি করে- এই বিশ্বাস অন্তত আমার। অতীত কচলিয়ে এখন আর লাভ নেই তেমন। কিন্তু, বাংলাদেশ দলের তুঙ্গস্পর্শী স্পৃহা আর জেদের অনলে কাবাব হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। এই প্রথম কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দেখলাম বাংলাদেশ দল বলে-কয়ে, অনায়াসে, রাজকীয় বেশে, চালকের মসনদে নির্ভার বসে থেকে জয়লাভ করল, কোন ক্ষেত্রেই মনে হয়নি আমরা হারতে পারি। গত ৫ বছরে নিউজিল্যান্ড বাংলাওয়াশ হয়েছিল ২ বার, তবু তারা লড়াই করেছিল ভালোই। অথচ এবারের পাকিস্তান সিরিজ- বড্ড একপেশে! যেন র‍্যাঙ্কিং এর ১ নম্বর দলের সাথে খেলছে আইসিসির সহযোগী কোন দেশ! বাহ, বাংলাদেশ। দারুণ কাঁচকলা দেখিয়েছ পাকি ক্রিকেট দলকে। ক্রিকেটের মোড়লদের অহমিকা এবার যদি কমে কিছুটা। এই সিরিজ জয়ে বড় কথার লোকদের নাক কাটা যাবে নিঃসন্দেহে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে কিছু হিরক খণ্ড আছে, আছে সম্পদ- যাদের পরিচর্যায় হাতে আসতে পারে বিশ্বকাপ। আমাদের সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ- কাঁচ কাটা হীরা। মাশরাফি তার শেষের পথে। ভবিষ্যৎ ছকে সে হয়তো আসবে না বয়সের ভারে। তবে অভয় সাহসে তার যে অবদান গত এক দশকে, তাতেই সে ক্রিকেটের বীরশ্রেষ্ঠ হবার যোগ্য। আমরা পেয়েছি রুবেলকে, দিনে দিনে যে শাণিত হচ্ছে। নতুন আবিষ্কার তাসকিন, যথার্থ যত্নে যে হবে গতিদানব। সাব্বির, নাসির, নাইম মিডল অর্ডারের হাতিয়ার। ঘূর্ণিবলের যাদুকর দুই “সানি” আমাদের অনেকদিন টেনে নিয়ে যাবে। লিখন, তাইজুল, সৌম্য, মমিনুলদের কথা বলাই বাহুল্য। এদের ছুঁড়ে ফেলা যাবে না। ধরে রাখতে হবে মায়ের যত্নে। অতীতে দেখেছি, মাত্র দুই বা তিন ম্যাচ যাচাই করে অনেক সম্ভাবনাকে কবর দেওয়া হয়েছে। আকরাম, বুলবুল, দুর্জয়, সানোয়ারদের ক্যারিয়ার আরও লম্বা হতে পারত। বড্ড অল্পতেই তাদের ডাকাবুকো বুড়ো দেখিয়ে বিদায় দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তালহা জুবায়ের, আল শাহরিয়ার রোকন, এহসানুল হক সেজান সহ আরও অনেক আশার ফুল শুকিয়ে গেছে নিরুদ্দেশে। নাফিস ইকবাল, রাজিন সালেহ, জুনায়েদ সিদ্দিক, শাহরিয়ার নাফিস, জহুরুল ইসলাম, আফতাব আহমেদ- এরা হারানোর পথে; কিছুটা নিজেদের ভুলে, কিছুটা আমাদের পদ্ধতিগত কারণে। মোঃ আশরাফুল যেমন সুযোগ পেয়েছিল অবারিত, সেরকম দলে থাকার নিশ্চয়তা পেলে আরও কিছু যোগ্য ক্রিকেট সেনানী আমরা পেতাম। সুতরাং, নির্বাচকের ধৈর্য এবং যাচাই মুন্সিয়ানার প্রত্যাশা করা যায়।

আরেকটি ব্যাপার আছে, “বয়স।” অন্য সব দলে চোখ বুলাই, কচি বয়সের খেলোয়াড় হাতে গোনা দু বা এক। অথচ আমাদের দলে যেন ঝাঁকে ঝাঁকে চাষ হয়। এক সিরিজে ব্যর্থ হলেই পরের সিরিজে গোটা তিন চার নতুন মুখের আমদানি। যাদের অধিকাংশ অনভিজ্ঞ। এ যেন ঘর থেকে ধরে এনে আন্তর্জাতিক তপ্ত কড়াইতে ফেলানো। “টিকতে পারলে তো থেকে যাও, না হলে ফ্রাই হয়ে শেষ হয়ে যাও”। দল নির্বাচনের দুষ্টচক্র এবং যাওয়া আসার মিছিলের মারপ্যাঁচ বলা চলে। এক্ষেত্রে, নির্বাচকদের সহনশীলতা খুব কাম্য। কারণ, গত সিরিজেই যে খেলোয়াড় দলকে ম্যাচ জিতিয়েছিল, পরের সিরিজের ব্যর্থতায় সে অপাংতেয় হতে পারে না।

বর্তমান দলটি আশার বেলুন খুব উঁচুতে উড়িয়েছে। এদের নিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখাই যায়। যে স্বপ্ন বাতুলতা নয়, উচ্চাভিলাষও নয়। এক সাথে আরও বছর দুয়েক খেলতে পারলে এই দল হবে ক্রিকেট কমান্ডো বাহিনী। টি টুয়েন্টি বা বড় আসরের শিরোপা অথবা নিদেনপক্ষে এশিয়া কাপ আমাদের করায়ত্ত হতেই পারে খুব সহজে। যে কোন দলকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের অনেকটা আছে। ভবিষ্যতে এই ক্ষমতা হবে মহাক্ষমতা। একই সুতোয় গাঁথা থাকলে সাকিব, তামিম, রিয়াদ, মুশফিকের সেরা ফর্ম থেকে যাবে; তাসকিন, রুবেল, শফিউল, আল আমিনরা হবে আরও পরিণত। সাব্বির, সৌম্য, নাসিররা বেগবান হবে। সুতরাং, বড় শিরোপা কঠিনসাধ্য নয় তেমন। দরকার শুধু দলের মধ্যে একতা, কোচ- নির্বাচকদের ভুল বুঝাবুঝির অবসান, খেলোয়াড়দের ইনজুরিমুক্ত থাকা এবং তাদের সহজাত খেলা ধরে রাখা। যার যে ধরণ, সে সেটা বজায় রাখবে। মারকুটে ব্যাটসম্যান মেরেই খেলবে, ইনিংস ধরবে অন্য খেলোয়াড়- যে সহজাত সময় নিয়ে খেলে। তবেই আমাদের দল দুর্ভেদ্য হবে খুব শিগগির। হয়তো আগামী বসন্তেই। বড় বুকে বেঁচে থাকুক বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্য। আবারো শুভ কামনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.