![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদিও এখন শীতকাল, তাই বলে কি বসন্ত খুব বেশী দূরে!
ঠিক সোয়া আটটা, প্রতিদিনের মতো কলেজে যাবে বলে বাস স্টপের লাইনে দাড়ায় মেয়েটা। সকালের এই সময়টাতে গাড়ি এসে দাড়ালেই ভরতে সময় লাগেনা এক মুহূর্ত । চলছে গাড়ির জন্য অপেক্ষা। ঠিক সেই সময় রাস্তার অপরদিকে জোরে ব্রেক কষে থামে দ্রুত গতির এক সাইকেল। ছেলেটার পরনে কলেজ ইউনিফর্ম, কাধে ব্যগ। এত দূর থেকে চেহেরাটাই ঠিক মতো দেখা যায়না, তার পরেও পকেট থেকে টিসু বের করে কপালের ঘাম মুছা, স্মার্টলি দাড়িয়ে তাকিয়ে থাকা। মেয়েটা সরাসরি না তাকালেও কানের পিছনে চুল গুজে দেয়ার ভঙ্গিতে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে ছেলেটাকে। এর মধ্যেই চলে আসে গাড়ি। নাটকের অবসান ! চলে যায় যে যার গন্তব্যে।
এভাবে দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাসের পর মাস যায়। সকালের এক পলকের প্রাপ্তি মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে দুপুর পর্যন্ত, এরপর বিকেল থেকেই ভর করে বিষন্নতা। দুজনের ভিতরেই বাড়তে থাকে অস্থিরতা, প্রত্যেকেরই রাত কাটে নির্ঘুম !
অত:পর একদিন মনের সবটুক সাহস বুকে নিয়ে বাস স্টপে এসে মেয়েটির হাতে ফোন নাম্বার লেখা একটুকরো কাগজ গুজে দিয়ে সাইকেল নিয়ে চম্পট !
রাত ১১-টায় মেয়েটির কাছ থেকে এলো সেই কাঙ্খিত ফোন, "হ্যালো..."
এই হ্যালো "কথা"-টি দিয়েই শুরু হলো নতুন এক প্রেমের গল্প। দুটি জীবনের গল্প।
চন্ডিদাস, রজকিনীকে দেখার জন্য প্রতিদিন পুকুর পাড়ে মাছ ধরার ছল করে বসে থাকতো। দুপুরের দিকে রজকিনী একবার মাত্র পানি নিতে আসতো।দিন,সপ্তাহ, মাস পেরিয়ে কেটে যায় ১২টি বছর। এরপর রজকিনী একদিন ঘটে এসে জিগ্গেস করে, "বড়শিতে কি মাছ উঠলো ?" উত্তরে চন্ডিদাস জানায়, "এত দিন উঠেনি, আজ উঠলো !"
এই "কথার" পরে যে ঘটনা, সেটা এক কালজয়ী প্রেমের গল্প।
১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর,ভার্সাই চুক্তির প্রতিশোধ নিতে, পোলান্ডের রাষ্ট্রনায়ককে জার্মানিতে দাওয়াত দিয়ে এনে ডিনারের টেবিলে,হিটলার জানালেন, পোল্যান্ড আজ থেকে জার্মানির অধীনে থাকবে, দাবি না মানলে এক্ষুনি পোল্যান্ড আক্রমন করা হবে। শুধু একটি "কথা" ! যার ফলে একটি বিশ্ব যুদ্ধের সূত্রপাত...।
মেসিডোনিয়া থেকে আসা একটি মেয়ে। মানুষের দুক্ষ-কষ্ট সহ্য করতে করতে না পেরে, তাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য সাহায্য চাইতে এসেছে এক ধনী লোকের কাছে। যখন সে সাহায্যের জন্য হাত পাতে,লোকটি অবগ্গা করে তার হাতে থুতু নিক্ষেপ করে, তখন মেয়েটি তার অপর হাতটি বাড়িয়ে দিয়ে বলে, "আমার ডান হাতকে যদি আপনার অপছন্দ হয় তাহলে বা হাতকে সাহায্য করুন।" শুধু একটি "কথা"। লোকটি তার ভুল বুঝতে পেরে মেয়েটির কাছে ক্ষমা চায়। সৃষ্টি হয় আর্ত মানবতার সেবায় এক অনন্য নজির। মেয়েটির নাম মহিয়ষী মাদার তেরেসা।
সভ্যতার পরিবর্তনে "কথা" একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কথা দিয়ে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি। একজন আর একজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি। কথা দিয়ে বন্ধুত্ব তৈরী হয়, আবার কথার মাধ্যমেই যুদ্ধ বাধে। কাউকে কথা দিয়ে আঘাত করাটা সহজ কিন্তু সেই তুলনায় কথা দিয়ে খুশি করাটা একটু কঠিন। আমরা বুঝে বা নাবুঝে অনেক সময়ই আশেপাশের মানুষকে আঘাত দিয়ে কথা বলি। কাউকে কথা দিয়ে পরাজিত করলে, তার প্রতি অবগ্গা প্রকাশ করলে বা কথা দিয়ে তাকে ছোটো করলে, নিজের সম্মান যে কোনো ভাবেই বৃদ্ধি পায়না এই কথাটা আমরা বেশিরভাগ সময়ই ভুলে যাই। মানুষ হয়ে আমরা আর একজন মানুষকেই যদি সম্মান করতে না পারি তাহলে আমাদের এই ভদ্র লেবাস আর পড়াশুনার মুল্য কি ! আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি যে আমাদের কথা দ্বারা আমরা আর কাউকে কষ্ট দিবনা, তাহলে হয়তো আমাদের এই চেনা জানা পৃথিবীটাই একদিন অনেকখানি বদলে যাবে...........
©somewhere in net ltd.