নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উদীয়মান সূর্য়

সময়, স্রোত আর সূর্য কারো জন্য অপেক্ষা করে না

উদীয়মান সূর্য় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভেঙ্গে গেল স্বাধীন দেশের সাজানো স্বপ্নগুলো

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৩

বাবা, লল্ডনে আমরা থাকি, বাংলাদেশে নয় কেন?
.......
বাবা তোমাকে অনেক বার এক‌ই প্রশ্ন করি, তুমি বাংলাদেশে যেতে চাওনা কেন? কিন্তু তোমার কাছে উত্তর পাই না, কেন? তুমি তো বাংলাদেশী বাবা? মা কে বলি, মাও তার সেই এক‌ই কথা বলে, আমরা এসেছি ইরান থেকে, এই লল্ডনে তোর বাবার সাথে পরিচয়, তারপর বিয়ে, আমি তোর বাবা সমন্ধে বেশী কিছু জানিনা।
......
বাবা? আজ ১৬ ডিসেম্বর, বাবা বলনা আজ?
......
....মারে, আমি ভালোবাসি আমার দেশকে কিন্তু একটি কষ্ট আমাকে আজও পোড়ায়, সেই কষ্টের ভয়েই ....যাইনা, তুই এখন বড় হয়েছিস, আর কতদিন‌ই বা লুকোবো সেই গল্প, ঠিক আছে বলছি।
...
......
আমি ছিলাম এতিম। এতিম খানায় বড় হয়েছি। জানিনা কে আমার বাবা কে আমার মা। কোন বন্ধন ছিল না, রক্তের সম্পর্কের কেউ নেই, যে মাথায় হাত বোলাবে। আমার ভালো মন্দের খোঁজ নেবে।
কিন্তু ছিল একটি মেয়ে, একমাত্র সেই আমার ভালো মন্দের খবর নিত। জানিনা কেন সে আমাকে পছন্দ করতো। আর তাই ওকে নিয়েই ছিল আমার যত স্বপ্ন। সপ্নের জাল।
.........
তখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যুদ্ধে যেতে, বাধা দেবার তো কেউ নেই, শুধু‌ ও ছাড়া। যেভাবে অসহায় মানুষ মারা যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত নিলাম আমি যুদ্ধে যাব। ওকে অনেক কষ্টে বোঝালাম, কিন্তু মেয়েদের মন, সহজে মানতে চায় না, তবুও অশ্রু নয়নে বিদায় দিল আমাকে। র‌ওনা দিলাম ‌অবিচল এক লক্ষ্যে।
......
ক‍্যাম্পে চললো যুদ্ধের ট্রেনিং।
ফ্রন্টের জীবন, শুরু হলো বাঁচা মড়ার লড়াই। ভুলে গেলাম নিজের কথা, লক্ষ্য একটিই, মুক্ত করতে হবে এই দেশ। তাদের হাত থেকে, যারা সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে।... কখনো ডানে কখনো বামে সহযোদ্ধা মারা যাচ্ছে, চোখের পানি মুছে আবার ঠিক করে নিচ্ছি টার্গেট।
.......
ডিসেম্বরের সেই ১৬, সকল যোদ্ধা ফিরে এলো। এক হলাম যারা ট্রেনিং নিয়েছিলাম। যারা তখনও জীবিত আছি... কিন্তু একি সবাই নিশ্চুপ কেন? আমরা যোদ্ধারা পরস্পর পরস্পরের চোখে তাকিয়ে কি যেন খুজছি, চোখগুলো যেন ভেজা। নির্বাক, কথা হচ্ছে নীরবে। একদিকে বুকে দেশ বিজয়ের আনন্দ অন‍্যদিকে তাদের জন্য কষ্ট, আমাদের সহযোদ্ধা, যারা আজ ফেরেনি, ফিরবে না আর কখনো। একফোঁটা অশ্রু যেন ঝরে পড়ল।
......
গ্রামে ফিরছি আমি আর রাইফেল। পথে যার সাথে দেখা হচ্ছে জড়িয়ে ধরছি, ভায়ের মত। আর যদি কারো হাতে রাইফেল থাকে, তাহলে মনে হচ্ছে আমরা এক, মনে হচ্ছে একসাথে যুদ্ধ করেছি.... কতকাল।
.......
গ্রামে এলাম, মাটির দালানে রাইফেলটি ঠেস দিয়ে রেখে, স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বসলাম। আমার চারপাশে অনেকেই ঘিরে ধরেছে, তাদের মধ্যে আছে সেও। সামান্য দূরে, নির্বাক কিন্তু তার চোখ বলছে এতো খুশি সে কখনো হয়নি আগে। আমাদের দুজনের‌ই চোখে, আনন্দ আর স্বপ্নের ঝিলিক। কিন্তু....... কিন্তু ভয়ংকর বিপদ ঘনিয়ে এসেছে নিঃশব্দে, চুপিচুপি..বুঝতেই পারিনি।
....... কখন যেন অগোচরে, দুটি ছোট ছোট ছেলে আমার রাইফেলটি হাতে নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে, দেখতে পাইনি। হঠাৎ গর্জে উঠলো আমারিই রাইফেলটা ...আবার‌ও! আর গুলিটি আঘাত করলো আমারই স্বপ্নকে! আর্তনাদ করে মাটিতে আছড়ে পড়লো ও.... সব শেষ। ছিড়ে গেল একমাত্র বাধনটিও। সেই সাথে ভেঙে গেল স্বাধীন দেশে সাজানো স্বপ্নগুলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.