নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাঝে মাঝে কিছু কিছু অনুভূতি অব্যক্ত থাকে। কারন এই অনুভূতিগুলো প্রকাশের ভঙ্গি আমাদের জানা নেই। এই অনুভূতিগুলো সারাজীবন অপ্রকাশিতই থেকে যায়!!!
ছোটখাটো একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির একাউন্টেন্ট ফারুক সাহেবের একমাত্র মেয়েটার নাম তুলি। আগামি বছরই মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাবেন ফারুক সাহেব। মাসের শেষ শুক্রবার সকালে মেয়ের সাথে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন...
-বাবা ওইটা কি?
-ওটা বেলুন! ওই দূরে মেলা হচ্ছে, বানিজ্য মেলা..
-ওখানে কি কি পাওয়া যায়?
-ওখানে সওওব আছে...
-জানো বাবা সেদিন মিতুদের বাসায়
টিভিতে আমি কার্টুনদেখেছি।
-তাই?
-হুউউম, আমাদের টিভি নেই কেন আব্বু?
-লাগবে?
-হুম...মিতুর আম্মু বলেছে আমাদের টিভি নেই, কম্পিউটার নেই কিছুই নেই..
-তাই?
-হুউউম। জানো আব্বু সেদিন ঝুমুদের বাসাও দেখেছিলাম টম এ্যান জেরি।
-ভালো লাগে?
-হুম অনেএএক ভালো লাগে। আব্বু আমাদের একটা টিভি আনোনা!
-আচ্ছা মামনি আনবো।
সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতনে দিন এনে দিন খাওয়াদের তালিকায় নামটা উঠিয়েছেন অনেক আগেই। তাই টিভি কিংবা কম্পিউটার তার কাছে শুধুই বিলাসিতা। নাজমাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন ফারুক সাহেব। নিঃচ্ছেদ ভালোবাসায় মাখামাখি নিম্নমধ্যবিত্তের সংসার বলেই অভাবটা কখনো ধরা দেয়নি।
সারারাত ঘুমাতে পারেনি ফারুক সাহেব। একবার এপিট এবার ওপিঠ করে কাটিয়েছেন রাতটা...
পরদিন অফিসে গিয়ে বসকে অনেক বলে কয়ে এক মাসের অগ্রিম অর্ধেকটা বেতন তুলে নিলেন। বাসায় এসে তুলিকে আদর
করতে করতে বলছেন...
-তোমাকে আর মিতুদের বাসায় যেতে হবেনা। আজই আব্বু টিভি আনবো।
-ইয়ায়ায়ায়ায়া... উম্মম্মাহ
স্বামীকে একটু আড়ালে ডেকে আনে নাজমা বেগম। চোখের কোণে উদ্দিগ্নের স্পষ্ট ছাপ।
-এতো টাকা কোথায় পেলে?
-অগ্রিম তুলছি।
-তাহলে আগামী মাসটা চলবো কীভাবে?
-এতো ভেবো না তো। হয়ে যাবে কোনো একভাবে।
বানিজ্য মেলায় নাকি অনেক ছাড় দিয়ে জিনিসপত্র দেয়। কিন্তু সেখানেও আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও তিন-চার হাজার টাকা দামের কোন টিভিই পেলেন না ফারুক সাহেব। সন্ধ্যার আকাশের মতো কালো মুখ নিয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরলেন।
ঢুকতেই মেয়েটা দৌড়ে এসে গলা চেপে ধরল...
-আব্বুউউউউ... টিভি কই আব্বু? এনেছো! কই আব্বু? আব্বু আমি মিতু,মালিহা,রনি
সবাইকে বলেছি কালকে আমাদের বাসায় যেন টিভি দেখতে আসে।কই আব্বু টিভি? বাবার কাঁধের ওপর দিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে টিভি খোঁজে তুলি...
হঠাত ধমকে ওঠেন ফারুক সাহেব
-যাও পড়তে বস। সারাদিন খালি টিভি আর টিভি, যাও টিভি নাই। আরেকবার টিভির কথা বললে থাপ্পড় লাগাবো বেয়াদব মেয়ে কোথাকার...
বাবাকে এমন রেগে যেতে কখনোই দেখেনি তুলি। থমকে গিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। ঘরের কোণে গিয়ে লুকিয়ে কেঁদে ফেলে...
শব্দ পেয়ে নাজমা বেরিয়ে আসে রান্নাঘর থেকে। মেয়ের কান্না আর স্বামীর ভেঙে পরা চেহারা দেখে এক মুহূর্তে বুঝেনেয় কি হয়েছে...
-টিভি পাওনি?
-না। তিন-চার হাজার টাকায় কোন টিভি নেই।
মেয়েকে কাছে টেনে নেয় নাজমা। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়। তুলির মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁধদুটো আরো ঝুলে পরে ফারুক সাহেবের। মুহূর্তেই বয়স আরো দশ বছর বেড়ে গেছে যেন...
-আব্বু আমি আর কক্ষনো টিভির কথা বলবো না।আব্বু তুমি দেখো আমি কারোও বাসাতেও আর যাবো না। প্রমিস আব্বু...স্যরি আব্বু।
এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না ফারুক। ধপ করে হাটু গেড়ে বসে পরে বাচ্চার মতোই কাঁদতে শুরু করেন। নাজমাও কাঁদছে নিরবে। তুলি এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে দুজনকেই, শক্ত করে...
তিনটি মানুষ একই সাথে কাঁদছে। হয়তো অতৃপ্তির কান্না অথবা প্রাপ্তির...
-বিশ্বাসঘাতক
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫১
মাকড়সাঁ বলেছেন: