নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাঝে মাঝে কিছু কিছু অনুভূতি অব্যক্ত থাকে। কারন এই অনুভূতিগুলো প্রকাশের ভঙ্গি আমাদের জানা নেই। এই অনুভূতিগুলো সারাজীবন অপ্রকাশিতই থেকে যায়!!!
আজকাল অনেকের গালির খাতায় ‘মুক্তিযোদ্ধার ছেলে’ শব্দটাও যোগ হয়েছে। অনেকে তো টিটকারি করে বলেই বসে ‘হয়ে গেলি তো বিসিএস ক্যাডার’। আবার কেউবা ভ্রূ কুঁচকে বলে ‘তোর বাপের সার্টিফিকেট জাল না তো ?’ আর কেউ কেউ তো আরেক ধাপ সারস। বলে, ‘আংকেলের দাড়ি দেখে তো মনে হয় উনি পাকিস্তানের সাপোর্টার। যুদ্ধ কোন দেশের হয়ে করছিলো?’
একটা সময় ছিলো যখন বাবা মুক্তিযোদ্ধা বলে বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেবার সাহস পেতাম। যখন গর্ব করে বলতে পারতাম আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। বাবার একাত্তর থেকে তিয়াত্তরের দিনগুলির গল্প শুনিয়ে বন্ধুদের চোখ বড়বড় করে দিতাম। শীতের দুপুরে বাবার পিঠে তেল মালিশ করতে গিয়ে চমকে উঠতাম কালো চেরা দাগ গুলোর স্পর্শে। বইয়ের আলমারি ঘাটতে গিয়ে ছেঁড়া ডাইরিতে গোটা গোটা লেখাগুলো স্বর্ণাক্ষর বলেই মনে হতো। সার্টিফিকেটের ফাইলে প্রথম সারিতে রাখা ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র’ আর ‘মুক্তিবার্তা’য় বাবার নাম দেখে অজান্তেই নোনতা জল বেরিয়ে আসতো।
কিন্তু আজকাল বিষয়গুলো সাড়া দেয় না বরং ‘মুক্তিযোদ্ধার ছেলে’ বলে দেওয়া গালিটাই বারবার কানে বাজতে থাকে। কোটা নিয়ে খোঁটা খেতে খেতে আজকাল আর সরকারী চাকরির দিকে মন টানে না। মাসের শেষে বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় কোন কিছু কেনার আবদার করাটা শিখতেই পারিনি।
ভায়া, আমিই ‘মুক্তিযোদ্ধার ছেলে’। অন্তত বাবা রাজাকার নয় বলে আমি গর্বিত। একাত্তরের মার্চে কারাচি থেকে ঢাকায় পালিয়ে এসেছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনিতে সৈনিক পদে থাকা আমার বাবা। যদিও দেশের মাটিতে খুব বেশিদিন থাকতে পারে নি কিছু ‘বিশ্বাসঘাতকে’র কারনে। এপ্রিলে ধরা পরে আবার কারাচি ফিরতে হয়। পরের তিনটি বছর কেটেছে পশ্চিমের এক একটি জেলের সেলে। দিনের পর দিন টর্চারের পর টর্চার করতো শুধুমাত্র কয়েকটা তথ্যের জন্য। ভাগ্যক্রমে বেঁচে দেশে ফেরা একদল বিধ্বস্ত তরুণদের ভিড়ে ছিল আমার বাবাও। অনেকে গল্পটুকু শোনার পর হেসে বলে ‘শুধু এটুকু করেই মুক্তিযোদ্ধা?’ হ্যাঁ। আর কেউ বলুক বা নাই বলুক দাঁতে দাঁত চেপে কাটানো সেসব দিনের জন্য হলেও আমি বাবাকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বলবোই।
ভায়া, আমিই ‘মুক্তিযোদ্ধার ছেলে’। সাথে গর্বিত আমাদের পুরো পরিবার। কোটার খোঁটা নিয়ে বলতে গেলে আশ্চর্য্য হলেও এটিই সত্যি যে আমার বড় বোন বিসিএস উত্তীর্ণ মেডিকেল অফিসার, বড় ভাই বিসিএস উত্তীর্ণ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। অথচ ভাইভা বোর্ডে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ না করে হাঁ করিয়ে দিয়ে এসেছে সামনে থাকা লোকগুলোকে। আজ পর্যন্ত আমাদের পরিবারের কেউ কোথাও মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহার তো দূরে থাক, চিন্তাতেও আনে নি। এমনকি ভার্সিটির কোর্স ফি কমাতেও না।
ভায়া, আমিই ‘মুক্তিযোদ্ধার ছেলে’। বাবার সার্টিফিকেট জাল কি না জানি না তবে এটুকু জানি বাবা তিয়াত্তরে দেশে ফেরার পর এরিয়া কমান্ডার নিজে এসে সার্টিফিকেট দিয়ে গিয়েছিলেন বাবার হাতে।
ভায়া, আমিই ‘মুক্তিযোদ্ধার ছেলে’। প্রতিমাসে বাবার নামে আসা মুক্তিভাতা আজ পর্যন্ত একবারও আনতে যায় নি। অবস্থা এতো খারাপ না যে মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় সংসার চালাতে হবে। সে টাকা যেন যুদ্ধাহত কোন মুক্তিযোদ্ধার কাজে আসে সে ব্যবস্থা করে এসেছে অনেক আগেই।
জ্বি... আমিই সেই যাকে তোমরা ‘মুক্তিযোদ্ধার ছেলে’ বলে গালি দেও।কান খুলে শুনে নাও আমি শুধু ‘মুক্তিযোদ্ধার ছেলে’ই নই, আরো দুই মুক্তিযোদ্ধার ভাতিজাও বটে। আরো জেনে রেখো, তোমাদের এই গালিতে আমি গর্বিত।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৮
আমি মাধবীলতা বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ !! মুক্তিযোদ্ধা !! আমাদের অস্তিত্ব !! অদ্ভুত এক শিহরণ !!!
শুভকামনা !!