নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীরু, লোভী, বর্বর, অসভ্য, নির্গুণ, কৃপণ, অশ্লীল, রগচটা, স্বার্থপর, বেআদব, প্রতারক, দুরাচারী, অকৃতজ্ঞ,স্বার্থাণ্বেষী,পরনিন্দুক, মিথ্যাবাদী, উচ্চাভিলাষী, ইঁচড়ে পাকা, অসামাজিক, অবমূল্যায়নকারী ও ভাল মানুষের ভান ধরা আদ্যোপান্ত একটি খারাপ ছেলে...

মিহাল রাহওয়ান

মাঝে মাঝে কিছু কিছু অনুভূতি অব্যক্ত থাকে। কারন এই অনুভূতিগুলো প্রকাশের ভঙ্গি আমাদের জানা নেই। এই অনুভূতিগুলো সারাজীবন অপ্রকাশিতই থেকে যায়!!!

মিহাল রাহওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীল শার্ট

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫

প্রত্যেক মাসের তিন তারিখে প্রাইভেট পড়াতে যাওয়াটা বেশ উপভোগ করে নাহিদ। এ দিনটায়ই যে বেতনটা পায় সে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ভার্সিটি পড়ুয়া যে কোন ছেলের কাছেই দিনটি আনন্দের।

নীলা ওর ছাত্রী। নীলাঞ্জনা নীলা। এস. এস. সি পরীক্ষার্থী। এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাসেম খাঁয়ের ছোট মেয়ে। অঢেল সম্পত্তির মালিক হাসেম খাঁ এবার নির্বাচনে দাড়াবেন বলে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে।

কয়েকদিন ধরেই আকাশ মুখ গোমড়া করে আছে,
যেকোনো মুহূর্তেই বৃষ্টি আসতে পারে। অন্য দিকে নাহিদের ডাঁট ভাঙা ছাতাটাও কে যেন গত মাসে চুরি করে নিয়ে গেছে। পকেটে তেমন টাকাও নেই যে রিক্সা কিংবা অটোতে করে যাবে। যে কোন সময় বৃষ্টি নেমে পরতে পারে। তাই খুব দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো নাহিদ।
সবটা এড়াতে পারলো না। বাসার কাছাকাছি আসতেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। ছাতা নেই, আশেপাশে মাথা গোঁজার তেমন কোন জায়গাও চোখে পরছে না
তাই বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় একটা দৌড় দিলো নাহিদ।
কিন্তু তার ভাগ্যটা আজ সত্যিই খারাপ। দৌড় দেওয়ার সময় রাস্তার ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে তিনবার তালি দেওয়া দীর্ঘ দিনের পথ চলার সঙ্গী জুতোটা ছিঁড়ে গেলো। হাঁটতে গিয়েই টের পেলো ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের নখটা উপড়ে রক্ত বেরুচ্ছে। অবশ্য নখের দিকে নাহিদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তার আফসোস হচ্ছে জুতো গুলোর জন্য। প্রায় একবছর ধরে এগুলো ব্যবহার করে আসছে সে। আবার নতুন জুতো কিনতে হবে, টাকাটা কোন খাত থেকে বের করবে এখনই তা চিন্তা করছে।
নখের গোড়া থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সামনের ফার্মেসী থেকে ব্যান্ডেজ করে নিতে হবে। কিন্তু, এই মুহূর্তে ব্যান্ডেজ করার সামর্থ্য তার নেই। অগত্যা রক্ত পায়েই বাসার গেটে ঢুকে পরলো নাহিদ।

কলিংবেল চাপার ঠিক দশ সেকেন্ডের মাথায় দরজা খুললো নীলা। দরজা খুলেই নাহিদের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। ভেতর থেকে নীলার মায়ের ডাকে দৃষ্টি ফিরে এলো তার। পাশে সরে ঘরে ঢোকার জায়গা করে দিলো। চেয়ারে বসতে না বসতেই তোয়ালে আর চা নিয়ে হাজির মেয়েটা। বেশ রাগী স্বরে বললো
- স্যার! আপনাকে না কত বার বলেছি ভালো একটা ছাতা কিনে নিতে। আর যেদিন বৃষ্টি হবে, সে দিন আসার দরকার নাই। কিন্তু, আপনি!!! আজ আসাটা কি খুব প্রয়োজন ছিল?

নাহিদের সাদা গালদুটো কেমন লাল হয়ে যায়। মাথাটা নিচু করে ফেলে। বাকিটা বুঝে নেয় নীলা। ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
তোয়ালে দিয়ে সারা শরীর মুছতে শুরু করে নাহিদ। শরীর মুছতেই চোখ পড়ে গায়ের শার্টের দিকে। বৃষ্টিতে ভিজে শার্ট'টার ছোট ছোট কালো দাগ গুলো খুব স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। দেখা যাওয়াটাই স্বাভাবিক। গত ১ বছর ধরে তো শুধু এই একটা শার্টই ব্যবহার করে আসছে সে।

নীলা রুমে এসে ঢুকেছে, হাতে একটা খাম। ফ্লোরে রক্তের লাল ছোপের উৎস খুঁজতে খুঁজতে নাহিদের পায়ের দিকে নজর গেল। চমকে উঠে নীলা, পরক্ষণেই চেহারাটা কাঁদোকাঁদো হয়ে যায়।

- স্যার, আপনার পায়ে কি হয়েছে?
- তেমন কিছুনা। এই একটু রক্ত পড়ছে।
- একটু রক্ত পড়ছে মানে? পুরো ফ্লোর তো লাল হয়ে গেছে!
-স.. স্যরি আমি মুছে দিচ্ছি
-চুপ! একদম চুপ করে বসে থাকেন। আপনি ব্যান্ডেজ করেননি কেন? আচ্ছা থাক আপনি দাড়ান, আমি আসছি..
এই বলে দৌড়ে ভেতরে যায়, ফিরে আসে পুরো মেডিকেল বক্স নিয়ে। ভাবটা এমন আইসিওর রোগীর অপারেশনে যাচ্ছে সে।

- এই কি করছো! দরকার নেই, তুমি পড়তে বসো।
- আপনাকে চুপ করে বসে থাকতে বলছি না! এতো বেশি কথা বলেন কেন?
বলতে বলতেই পায়ের আঙ্গুলের রক্ত গুলো তুলো আর স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

- আজ আমি পড়বোনা। আপনি বৃষ্টি কমে গেলে বাসায় চলে যাবেন...আর বাসায় গিয়ে এই খামটা খুলবেন। এ কি! চা খাচ্ছেন না কেন?

এই বলে নাহিদের হাতে খামটা দিয়ে সে ভেতরে চলে যায়। বৃষ্টিটা কমে যেতেই মেসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে নাহিদ।
ছেঁড়া জুতো পরে হাঁটা বেশ মুশকিল তাই এখন আর না হেঁটে রিকশাই নিতে হলো।
মানিব্যাগে রিকশা ভাড়াটাও নেই। তাই খামটাই খুলতে হলো। খামটা খুলতেই সাদা কাগজ বেড়িয়ে পরলো। ধরতে গিয়েও আর ধরা হলো না কাগজটা। আধঘণ্টার বৃষ্টিতে এদিক সেদিক পানি জমে আছে। আর আজ যেন কপালপোড়া ভাগ্য নাহিদের। ঠিক পানি জমে থাকা একটা জায়গায় গিয়ে পরলো কাগজটা। দ্রুত তুললো কাগজটা কিন্তু নীল কালিতে গোটাগোটা অক্ষরে লেখাগুলো ততোক্ষণে মুছে যেতে শুরু করেছে। নীলার হাতের লেখাটা এই ছয় মাসে চিনে নিয়েছে নাহিদ। কাগজের লেখাটাও ওরই।
দ্রুত মেসে ঢুকে চুলোয় কাগজটা শুকিয়ে নিলো।অর্ধেক লেখা তেমন পড়া যাচ্ছে না। তবে যতোটুকু আছে তাতে একটা ভাবার্থ দাড় করানো খুব একটা কঠিন হবে না।

"স্যার প্লিজ চমকে যাবেন না। কথাগুলো বেশ কিছুদিন ধরে বলবো ভাবছিলাম কিন্তু সাহস হয়ে ওঠে নি। তাই কালি কলমেই বাঁধতে হলো।

এই যে স্যার, আপনি এমন গাধা টাইপ কেনো?
প্রতিদিন একই চেক শার্ট বার বার পরে আসেন। চশমার ফ্রেমের রঙ ঝলসে গেছে সেটা কখনো খেয়াল করে দেখেছেন? আপনাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে আমার খুব রাগ লাগে। ইচ্ছে করে তার গলা টিপে ধরি। জানিনা কেন আপনার প্রতি আমার এরকম অনূভুতি!

খুব ইচ্ছে করে, বিকেলের শেষ প্রহরে আপনার হতটি ধরে পাতাঝড়া পথে ঘুরে বেড়াতে। ইচ্ছে করে শীতের সকালে কফির মগ হাতে বারান্দায় বসে ভোর দেখতে, আপনার সাথে বৃষ্টি বিলাশ করতে, আর বজ্রপাতের গুড়ুম শব্দে ভয়ে আপনার বুকে মুখ লুকাতে।

আপনার বেতনের সাথে অতিরিক্ত আমার জমানো টাকার অর্ধেকটা আপনাকে দিয়েছি। সেটা দিয়ে
ভালো সুন্দর দেখে নীল রঙের শার্ট নিবেন, নীল
শার্টে আপনাকে খুব ভালো মানাবে। আর ছাতার টাকাটা কষ্ট করে ম্যানেজ করে নিন। যাতে প্রতিদিন এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে না হয়...

কি? চমকে গেছেন? ধরবেন আমার হাত গুলো?
যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ হয় তবে নতুন কেনা নীল শার্টটা পরে পরের দিন পড়াতে আসবেন। আর যদি না হয় তাহলে কাউকে কিছু বলেন না। ভেবে নিবো সবাই আমরা কিছু না কিছু অপূর্ণতাতেই বন্দি... '

চিঠিটা পড়ে কিছুক্ষন চুপ করে জানালা দিয়ে বাহিরে
তাকিয়ে থাকে নাহিদ। নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। চিঠিটার দিকে তাকে একটা মলিন হাসি হেসে পাগলের মতো একা একাই বলতে শুরু করলো সে

"আবেগী মেয়ে!
তুমি বোঝো বাস্তবতা কি? হুহ... বোঝ! কচুটা বোঝ। সাত তলা চার চারটা বাড়ির মালিকের আদরের ছোট মেয়ে তুমি। তুমি বুঝবে না বাস্তবতা কি!
সত্যিকার অর্থে, বাস্তবতা কি সেটা একমাত্র আমরা
মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের ছেলেরাই বুঝতে পারি।
যারা রিকশা ভাড়া বাঁচাতে কয়েক মাইক হেঁটে পাড়ি দেয়। দুপুরে কাচ্চি তেহারির বদলে সস্তা ডাল ভাজিতেই যাদের তৃপ্তি। যারা দিনের পর দিন তিল পরা শার্ট পরেই বছর কাটিয়ে দেয়। যারা মুচির কাছে আজ খুব পরিচিত মুখ..
তুমি হয়ত কখনও পারবেনা, নিজেকে এসব প্রতিকূলতার মাঝে টিকিয়ে রাখতে। অযথা তোমার সর্বস্ব খুঁইয়ে কিংবা পরগাছা হয়ে বাঁচতে চাই না। এতোটুকু আত্নসম্মান অন্তত আমার আছে।

বাস্তবতা যখন দরজায় কড়া নাড়ায়, আবেগ তখন জানালা দিয়ে পালায়"

কথা বলতে বলতে চিঠিটা ড্রয়ারে রেখে আরেকটা খাম নেয় নাহিদ। অতিরিক্ত টাকাগুলো ফেরত দিতে হবে আর সিয়ামকে ফোন করতে হবে একটা প্রাইভেট জোগাড় করে দেবার জন্য। বড্ড হাঁফিয়ে উঠেছে সে।
ভাল থাকুক নীলা, আয়নায় দেখা কিছু স্বপ্ন নিয়ে...


-বিশ্বাসঘাতক

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩০

ডাঃ মারজান বলেছেন: চমৎকার! অনেক ভালো লাগা রইল পোস্টটির প্রতি। আরেকটু লিখলে পারতেন। অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১২

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: আহা ভালবাসা কেন যে মাঝ পথে এসে থেমে যায়' অর্থ মন্ত্রনালয়ে' বন্দি ভালবাসার মুক্তি চাই। অনেক সুন্দর লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.