নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীরু, লোভী, বর্বর, অসভ্য, নির্গুণ, কৃপণ, অশ্লীল, রগচটা, স্বার্থপর, বেআদব, প্রতারক, দুরাচারী, অকৃতজ্ঞ,স্বার্থাণ্বেষী,পরনিন্দুক, মিথ্যাবাদী, উচ্চাভিলাষী, ইঁচড়ে পাকা, অসামাজিক, অবমূল্যায়নকারী ও ভাল মানুষের ভান ধরা আদ্যোপান্ত একটি খারাপ ছেলে...

মিহাল রাহওয়ান

মাঝে মাঝে কিছু কিছু অনুভূতি অব্যক্ত থাকে। কারন এই অনুভূতিগুলো প্রকাশের ভঙ্গি আমাদের জানা নেই। এই অনুভূতিগুলো সারাজীবন অপ্রকাশিতই থেকে যায়!!!

মিহাল রাহওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাস্টার্ড ৩

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৮

নতুন কেনা সেম্ফনি ডব্লিউ সিক্সটি এইটটা হঠাৎ করেই সকাল থেকে আর চালু করতে পারছি না। প্রাইভেট পড়িয়ে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে কিনেছিলাম সাধের ফোনটা, আর আজ মাসখানেক না যেতেই ধুপ করে হার্ট এ্যাটাক!! নাহ সকাল সকাল মেজাজটাই বিগড়ে গেল। আসলে মধ্যবিত্তের সংসারে শখের জিনিসগুলো বোধহয় খুব বেশিদিন টেকে না। ড্রয়ার হাতড়ে পুরোনো নোকিয়া বারোশ ফোনটায় সিম বদলে নিলাম।

কাস্টমার কেয়ারে আজকে তেমন একটা লোকজন নেই। ঈদের পর আমার মতো কজন অভাগাই বা আসে মোবাইল সার্ভিসিং করতে? প্লাস্টিকের টুলে বসে নোকিয়া ফোনে সাপের গেমস খেলছি এমন সময় পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলো
-বাবা, তুমার মুবাইলে কি হইসে?

মাথায় চুল তেমন নেই শুধু কানের পাশ দিয়ে অল্পকিছু অগোছালো সাদা চুল। চোখের চশমাটা বেশ পাওয়ারের। চশমার ডাঁটে সুপার গ্লুর দাগটা স্পষ্ট। চোয়ালের চামড়ার কুঁচকানি দেখেই বোঝা যায় বয়স কম হয় নি। গলার হাড়টা বেয়াড়া ভাবে বেরিয়ে পরেছে। শুকনো হাড় জিরজিরে লোকটার পরনে অনেকদিন ইস্ত্রি না করা পাঞ্জাবী পাজামা আর পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল...

-ইয়ে...  আমার আরেকটা ফোন ওখানে দেওয়া আছে। ওটা চালু হচ্ছে না।
-ও... তুমার এই ফুন আর আমার ফুন দেখি একই রকম!
বলতে বলতেই পকেট থেকে নোকিয়া বারোশ মডেলের আধভাঙা ফোনটা দেখালো। কোনমতে বেঁচে আছে ফোনটা।  রাবার দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছে যাতে ব্যাটারি না খুলে যায়।
স্মিত হেসে বললাম
-চাচা আপনার ফোনে কি সমস্যা হয়েছে?
-ও হা হা! দেখি ওরা কি কয়!
বলে সার্ভিসিং ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেলো লোকটা।

কিন্তু মিনিটখানেকের মধ্যের ফিরে এলো মলিন মুখ নিয়ে। সেম্ফনির কাস্টমার কেয়ারে নোকিয়া ফোনের সার্ভিসিং কে করে দিবে? হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নড়তে আমার পাশে এসে বসে পরলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎই ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো লোকটা। শব্দ শুনে কেয়ারের সবাই এদিকে তাকানো শুরু করছে। বেশ অপ্রস্তুত অবস্থা...

-ইয়ে চাচা, কি হয়েছে আমাকে বলেন? চলেন বাহিরে গিয়ে বসি।
-আচ্ছা...
বলে চোখটা মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলো। পাশের চায়ের দোকানে বসে দুটো চায়ের অর্ডার দিয়ে তার দিকে তাকালাম। পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছছে।

-বাবা তোমার এই ফুন কি ভালো আছে? কল করন যায়?
-হুম।
-তা বাবা কি তুমার এইটা দিয়া কি বিদেশ ফুন করন যায়?
-হ্যাঁ যায়।
-ও... অস্টেলিয়া ফুন যাইবো?
-হ্যাঁ যাবে! কে আছে ওখানে?
-লিখন... আমার ছেলে। চাকরি করতে গেছে! অনেক বড় চাকরি পাইসে আমার পোলা!
-ও আচ্ছা! নাম্বার আছে?
-হ হ আছে আছে!! কইসে এই নাম্বারে কল দিলে পাওয়া যাইবো।
বলতে বলতেই পাঞ্জাবীর পকেট থেকে কাঁপা হাতে একটা মলিন কাগজ বের করলো। বেশ বোঝা যাচ্ছে কাগজটা কোনো এক সময় পানিতে ভিজেছিলো। চারভাঁজ করা কাগজটা মেলতেই থমকে গেলাম। একটা এয়ারটেল নাম্বার লেখা....
ফোন দিতেই একটা মেয়ে যান্ত্রিক কন্ঠে বলে গেল 'আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এখন বন্ধ আ...'
ফোনটা কান থেকে নামাতেই লোকটার মুখ আরো চুপসে গেল। মাথাটা নিচু করে ধীরে বলে উঠলো
-একটা মাইয়্যা ধরছিলো..  না বাবা?
-চ্ব চা.. চাচা আর কোন নাম্বার আছে?
-না নম্বর তো নাই! আচ্ছা বাবা ওইখান থিকা আমার নম্বরে ফুন করা যাইবো না?
-হ্যাঁ যাবে। কিন্তু আপনার ফোন ঠিক আছে তো?
-দেখো তো বাবা!
বলে নিজের ভাঙা ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।
-এই নিয়া পেরায় সোয়াশ ফুন সারাইয়ের দুকানে গেলাম। সবাই কয় ফুন ঠিক আছে কিন্তু যুদি ফুন ঠিকই থাকে তাইলে আমার পোলার ফুন আইবো না ক্যান? আমারে কইসে সে ওইখানে গিয়াই ফুন দিবো! পাঁচ মাস হয়া গেলো কিন্তু এখনো একটা ফুনও আইলো না! সবাই কইতাছে 'তর পোলাও তরে ফাঁকি দিছেরে হেলু! ফাঁকি দিয়া ভাগছে!' কি. কি.. কিন্তু...  আমার পোলায় তো এইরকম না! ওরে তো আমি অনেক আদর করতাম!  ওরে তো আমি...বাবা আমার পোলায় তো আমারে অনেক ভা....

লোকটা কাঁদছে,কাঁদুক। কাঁদলে নাকি মনের দুঃখ হালকা হয়...
 

-বিশ্বাসঘাতক

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৯

আহসান শামীম বলেছেন: লোকটা কাঁদছে,কাঁদুক। কাঁদলে নাকি মনের দুঃখ হালকা হয়.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.