নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীরু, লোভী, বর্বর, অসভ্য, নির্গুণ, কৃপণ, অশ্লীল, রগচটা, স্বার্থপর, বেআদব, প্রতারক, দুরাচারী, অকৃতজ্ঞ,স্বার্থাণ্বেষী,পরনিন্দুক, মিথ্যাবাদী, উচ্চাভিলাষী, ইঁচড়ে পাকা, অসামাজিক, অবমূল্যায়নকারী ও ভাল মানুষের ভান ধরা আদ্যোপান্ত একটি খারাপ ছেলে...

মিহাল রাহওয়ান

মাঝে মাঝে কিছু কিছু অনুভূতি অব্যক্ত থাকে। কারন এই অনুভূতিগুলো প্রকাশের ভঙ্গি আমাদের জানা নেই। এই অনুভূতিগুলো সারাজীবন অপ্রকাশিতই থেকে যায়!!!

মিহাল রাহওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন থেকে নেয়া : সিনেমার চেয়ে বেশি কিছু

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২১



‘একটি দেশ
একটি সংসার
একটি চাবির গোছা
একটি আন্দোলন
একটি চলচ্চিত্র ‘


যুদ্ধ শুধুমাত্র অস্ত্র দিয়ে হয় না, হয় শিল্প সংস্কৃতি দিয়েও। সিনেমাও হতে পারে প্রতিবাদের ভাষা, যুদ্ধের হাতিয়ার তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই সিনেমাটি।
জহির রায়হান। শুধু একটি নাম নয় বরং বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। শুধুমাত্র সিনেমা জগতে নয় বরং সাহিত্য থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত শহীদদের সাথে উচ্চারিত হয় তার নাম। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিটিই দেখেছেন খুব কাছ থেকে। দেখেছেন অত্যাচার, স্বৈরশাসন, প্রতিবাদ। সে থেকেই অনুপ্রেরণা আর দেশের জন্য কিছু একটা করার সংকল্প থেকেই তৈরি করেন জীবন থেকে নেয়া সিনেমাটি। যেখানে তিনি প্রত্যক্ষভাবে দেশের আপামর জনগণকে এক হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ডাক দেন।
জীবন থেকে নেয়া সিনেমাটি মুক্তি পায় ১০ই এপ্রিল ১৯৭০ সালে। নানা চড়াই উৎরাইয়ের পর মুক্তি পেয়ে সে উত্তপ্ত সময়কে আরেকটু তাতিয়ে দিয়েছিল এই কালজয়ী সিনেমাটি।

প্রথম দেখায় অনেকে এটিকে একটি পরিবারের অন্তর্দ্বন্দের কাহিনি হিসেবে দেখবেন। তবে এটি শুধুমাত্র একটি পরিবারের গল্প নয়, এটি ছিলো সে সময়ের স্বৈরশাসনের গল্প, প্রতিবাদের গল্প, একুশের গল্প, মানুষের না বলা কথাগুলোর কন্ঠস্বর। প্রবল চাপের মুখে সিনেমাও যে প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে এ সিনেমাটি তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। একটি পরিবারের সাধারণ ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়েই নির্মাতা জহির রায়হান সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানুষের প্রতিবাদের পথ প্রতীকী রূপ দেখিয়ে গেছেন।

সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, সুচন্দা, আনোয়ার হোসেন, রওশন জামিল, রোজী সামাদের মতো প্রখ্যাত সব অভিনেতা অভিনেত্রীরা। তাদের প্রত্যেকের অভিনয়ই আজও দাগ কেটে যায় সিনেমাটির দর্শকদের। সিনেমাটি যেমন ব্যবসাসফল ছিলো তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে শুরু করে সমালোচকদের ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। বাংলাদেশের সেরা দশ সিনেমার তালিকা করতে গেলে জীবন থেকে নেয়া সিনেমাটি নিঃসন্দেহে স্থান করে নিবে।

১৯৫২ থেকে ১৯৭০ এ সময়ের প্রেক্ষাপটে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। একগুঁয়ে স্বৈরচারী শাসকের অত্যাচারের প্রতিবাদে সকলকে এক হবার আহবানে জাতীয়তাবাদ ও দেশাত্মবোধকে একই সাথে তুলে ধরেছেন। এটিই ছিলো ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন ও একুশ নিয়ে নির্মাণ হওয়া প্রথম সিনেমা।

সিনেমাটিতে অন্যতম চরিত্রে রওশন জামিল ছিলেন যেন তৎকালীন সরকার তথা শাসক ইয়াহিয়া খান ও আইয়ুব খানের প্রতিচ্ছবি। সিনেমায় তার চরিত্রের আবির্ভাব হয় শাড়ির আঁচলে বাড়ির চাবির গোছা ঝুলতে থাকার দৃশ্য দিয়ে। যেখানে চাবির গোছাকে ক্ষমতা হিসেবে তুলনা করা যায়।

নতুন বউয়ের কাছ থেকে গহনা কেড়ে নেওয়া, স্বামী,ভাই ও চাকরদের ওপর দাপট দেখানো, বোনদের মাঝে ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়া সবই পরিবারে তার দাপট ও একনায়কতন্ত্রের সাক্ষ্য দেয়। ছোট ভাই চরিত্রে রাজ্জাকের ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ বলে টিটকারি দিয়ে সে সময়ে এই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যে সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে তা দেখিয়েছেন নির্মাতা। সরকার যেমন ক্ষমতা হারাবার লোভে নির্বাচন না দেবার পায়তারা করছিলো সেটি এ চরিত্রেও দেখা যায় ভাইয়ের বিয়ে না দিতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে।

৫২ ও পরবর্তী আন্দোলনে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের ব্যবহারে আন্দোলনকে অন্য মাত্রা এনে দেয়। সেজন্য পাকিস্তান সরকার পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। নির্মাতা তার সিনেমায় বিভিন্ন মিছিলে পোস্টারের ব্যবহার করেছেন। এমনকি বউয়ের অত্যাচারে অতিষ্ট স্বামীকে দিয়ে সারা বাড়িতে পোস্টার লাগিয়ে নিরব প্রতিবাদ করতে দেখিয়েছেন। তার এসব পোস্টারে উঠে আসে সে সময়ে চলা আন্দোলন গুলোর কথাই। ‘ শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, একজনের শাসন চলবে না, অন্ন চাই বস্ত্র চাই, রাজবন্দীদের মুক্তি চাই, কৃষক মজুর এক হও’ এ ধরনের পোস্টার ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদ চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন নির্মাতা।
সিনেমায় বেশ কিছু জায়গায় সেই সময়ে তোলা স্থিরচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে প্রভাত ফেরি আর মিছিলের দূর্লভ ভিডিও জুড়ে দিয়ে সিনেমাটিতে দর্শকের অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছেন।
সিনেমার গান ও সাউন্ড ইফেক্ট সিনেমাটিকে অন্য একমাত্রা এনে দিয়েছে। সিনেমায় ব্যবহার করা গানগুলো ‘আমার সোনার বাংলা, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, কারার ঐ লৌহ কপাট, এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’ জাতীয়তাবাদ ও দেশের প্রতি এক হবার আহবান করে। তেমনি সিনেমার বিভিন্ন অংশে প্রতিধ্বনি শব্দ ব্যবহার করে উদ্দীপনা তৈরি করেছেন।

সিনেমার শুরু ও শেষ অংশে শহীদ মিনারে ফুল দেবার মধ্য দিয়ে সে সময়ের সবচেয়ে বড় অর্জন ও দেশের জন্য ত্যাগের দৃষ্টান্তকে সামনে আনা হয়েছে। বারবার একুশে ফেব্রুয়ারির মহত্বকে বড় করে দেখিয়ে বাংলার প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসা বের করে আনতে পেরেছেন। এছাড়াও সর্বপ্রথম দৃশ্যেই অমর একুশে লেখা পোস্টার দেখানোর মধ্য দিয়েই দেশ ও জাতির প্রতি চেতনাকে নাড়া দিয়েছেন।

চলচ্চিত্রটিতে আনোয়ার চরিত্রটি ছিলো একজন দেশপ্রেমিক, সংগ্রামী, অন্যায়ের প্রতি বলিষ্ঠ কন্ঠে কথা বলবার। যার প্রতিটি সংলাপেই ঝরেছে দেশের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা, অত্যাচারীর প্রতি ঘৃণা, আগামী দিনের স্বপ্নের কথা। তার চরিত্রে বারবার উঠে এসেছে একজন জাতীয়তাবাদী চেতনায় গড়ে ওঠা মানুষের কথা যে সর্বদা নিজের চেয়ে দেশকে এগিয়ে রাখেন।

‘পরিবার একটি দেশ’ সিনেমায় এ কথাটি দিয়ে নির্মাতা যে আসলে একটি পরিবারের গল্প করতে গিয়ে সমগ্র দেশের কথাই তুলে ধরছেন তা বুঝতে পারি। পরিবারের মধ্যে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাড়ালে তার পতন যেন নিশ্চিত হবে তেমনি বৃহৎ অর্থে দেশের মানুষকেও এক হয়ে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে বিজয় আসবেই বলে মূলভাব চিত্রায়ন করেছেন।

শেষ অংশে যে মেয়ে শিশুটির জন্ম হয় তার নাম রাখা হয় মুক্তি। অত্যাচার নিপীড়নের দিন শেষে মুক্তি মিলবে এমন আশায় সকলকে এক হয়ে কণ্ঠস্বর জাগিয়ে তোলার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

বোনের সদ্যজাত শিশু মারা যাওয়ায় ছোট বোন তার নিজের শিশুকে তুলে দেয় বোনের হাতে। এ থেকে পরিবার ও বৃহৎ অর্থে অর্থাৎ দেশের স্বার্থে নিজেদের ত্যাগী হবার আহবান ফুটে ওঠে।

শেষ দৃশ্যে শহীদ মিনার বেদীতে ফুল দিয়ে ভরাট কন্ঠে ‘সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার তোমরা আমাদের দোয়া করো, আশির্বাদ দেও আমরা যেন এ দেশকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি, এদেশের প্রতি ঘরে, প্রতি সংসারে সুখ আর শান্তি এনে দিতে পারি। এদেশের প্রতি ঘর থেকে ঈর্ষা, বিদ্বেষ, লোভ লালসা, ঘৃণা, অবিচার, অত্যাচার যেন চিরতরে মুছে দিতে পারি’ বলার মধ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মরণআঘাত হানার আহবান করেছে। একই সাথে রৌদ্রজ্জ্বল দিনের এমন দৃশ্য যেন আগামি দিনের স্বাধীনতার পরশ কাছে এনে দেয়।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৫

রসায়ন বলেছেন: গানগুলো খুবই সুন্দর এই চলচ্চিত্রটির

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৬

মিহাল রাহওয়ান বলেছেন: একদম মাস্টারপিস একটা

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:৩০

সিসৃক্ষু বলেছেন: এমন ভালো পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.