![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকার পথঘাট এখন পুরোপুরি ফাঁকা। কোরবানির মাংস কাটাকাটিতে দিনের বেশির ভাগ সময়ই শেষ। ক্লান্ত-অবসন্ন হয়ে থাকেন পরিবারের বড় সদস্যরা। কিন্তু শিশুদের তো বেড়াতে যেতেই হবে। তাই নানা আরজ-আবেদন আর বায়না নিয়ে প্রফুল্ল মনে নেচে বেড়াচ্ছে একদল শিশু। বেড়াতে যাওয়ার জন্য শিশুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর ইত্যাদি। কোরবানির ঈদে শিশুপার্ক ও চিড়িয়াখানায় লোক সমাগম কমই দেখা যায়। কিন্তু ঈদের পরের দিন শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় বেড়ে যায় বলে জানায় জাতীয় শিশুপার্ক কর্তৃপক্ষ। কোরবানি ঈদ মনেই মাংস কাটার ঈদ। মাংস খাওয়া এবং মাংস বণ্টনের আনন্দঘন একটি আয়োজন। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত, এমনকি কম আয়ের মানুষগুলোর মাঝে খানিকটা লক্ষ্য করা যায় এই আনন্দ আয়োজন। ধার-কর্জ কিংবা কষ্ট করে হলেও মাংসময় একটি দিন কাটানোর আয়োজনে কোনো প্রকারের কোনো কমতি থাকে না বাংলাদেশে প্রায় মুসলিম প্রতিটি পরিবারে। কিন্তু, এর পাশাপাশি উল্টো চিত্র ‘পথশিশু’ ‘ছিন্নমূল’ শিশুদের ব্যাপারে। কোরবানিদাতা অনেকেই হয়ত ভাবেন না তাদের কথা। অনেকে হয়তো দুই-এক টুকরা মাংস দেন ঠিকই কিন্তু সেই প্রদান-আয়োজনটি থাকে নানা প্রকার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং অবহেলা-অবজ্ঞায় পরিপূর্ণ। মাংস নিতে এসে মাংসদাতার হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা বর্তমান বাংলাদেশে অতি সাধারণ একটি চিত্র। অথচ ইসলামের শিক্ষা কিন্তু ঠিক এখানেই- কোরবানি করার মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষের মাঝে বন্টন। ইসলামের বিধান হলো- কোরবানির মাংসকে তিন ভাগ করে দুই ভাগ মাংসকে বিলিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে ইসলাম। অথচ আমরা করছি এর উল্টোটা- নামে মাত্র মাংস বণ্টনের পর অধিকাংশ মাংসই রেখে দেই নিজেদের জন্য। আর এজন্যই দেখায় কোরবানির ঈদ এলেই রেফিজারেটর/ফ্রিজ ক্রয়-বিক্রির ধুম পড়ে যায়...
মধ্যবিত্ত ঘরের একজন শিশু যখন বাসায় বসে মায়ের হাতের সুস্বাদু রান্না খাচ্ছে, ঠিক সে সময়ই পথশিশু বা ছিন্নমূল শিশুরা ঈদ-উল আজহায় বের হয় উচ্ছিষ্ট মাংস কুড়াতে। কেউবা গরিব-দুঃখীদের ভাগের মাংস থেকে কিছুটা অংশ এই ছিন্নমূল শিশুদের দিয়ে দেন। কেউবা আবার দূর দূর করে তাড়িয়েও দেন। কথা বলে জানা গেল, ঈদের দিন হলেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পেটে এক ফোঁটা পানিও পড়েনি রুবির। বয়স কত জানতে চাইলে রুবি হাসে। কোথায় থাকো ? তারপরও রুবির হাসি মুখ থেকে যায় না। কেবল এই এক রুবিতেই শেষ নয় এই কাহিনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাত কাটে আরো অনেক রুবির। কে তার বাবা এবং কে মা- জানা নেই ওদের। কোরবানি ঈদের দিন পলিথিন নিয়ে ওরা মাংস সংগ্রহের জন্য বাড়ি বাড়ি যায়। কারো ভাগ্যে জোটে কিছু মাংস, আবার কারো ভাগ্যে মেলে মাংসদাতার লাথি-তাচ্ছিল্য। এই যদি হয় কোরবানি ঈদের মাংস বিলির নামে মাংসভোগের পরিস্থিতি- কী জন্যে তাহলে এই কোরবানি?
কথা হলো মনা নামের একটি মেয়ের সাথে। ধুলো-মলিন অবস্থায় রাস্তার পাশেই পরে আছে সে সোমবার আর শুক্রবারের মাঝে যেমন কোনো পার্থক্য নেই ওদের, তেমন কোনো পার্থক্য খুজে পায় না রমজানের ঈদ আর কোরবানির ঈদের মাঝেও। না আছে নতুন জামা-কাপড়, না থাকে নতুন কোনো খাদ্য-খাবার। তবে কোরবানি ঈদটাকে একটু আলাদাই ভাবে ওরা। কারণ এই ঈদে কিছু হলেও মাংস কুড়িয়ে পাওয়া যায়। মা কোথায় জানতে চাইলে খেলতে খেলতে মনা জবাব দেয়, ‘আইজ তো মাংস কাটার ঈদ। মায় মাংস কাটতে গ্যাছে। মাংস কাটলে মাংস পাইবো। হেই মাংস রাতে রাইন্ধ্যা খামু।’ এভাবেই কাটে ছিন্নমূল শিশুদের ঈদ।
অভাগী দুস্থ এই সব শিশুদের খবর কি কেউ রাখবে! মনে হয় না। দিন যায়, মাস যায়। বছরও যায়। তারপরও রাষ্ট্র না পালন করে তার দায়িত্ব, সমাজও বড় আত্মকেন্দ্রিক। কার কী হলো, তা নিয়ে ভাবনা নেই সমাজের। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খবর আর কে আর রাখে!! ধনী, মধ্যবিত্ত, ধর্মবেত্তা, সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তি, সংবাদমাধ্যম কারোরই মনে থাকে না পথশিশুরা বা হতচ্ছাড়া ছিন্নমূল শিশুরা কী খেলো না খেলো, কোথায় রাত কাটলো! কীভাবে কাটলো একটি কোরবানির ঈদ। আসুন আমরা সবাই মিলে কোরবানির ঈদের মহত্ত্ব অনুধাবন করি এবং সবাই মিলে এগিয়ে আসি পথশিশুদের সহযোগিতায়। আমার ঘরের শিশুটির মতো মাংসময় আনন্দঘন আয়োজনে কাটুক পথশিশুদের ঈদ। কুড়াতে আসবে কেন, আমিই চলে যাই ওদের কাছে এবং হাত বাড়িয়ে তুলে দিই কোরবানির গরুর মাংসগুলো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরবানির ঈদের মহত্ত্ব বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১২
ছদ্দবেশি লৌকিক বলেছেন: মনে থাকবে কিকরে!! সবাই যার যার ঈদ নিয়ে ব্যস্ত।
৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩
হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: আমার ঘরের শিশুটির মতো মাংসময় আনন্দঘন আয়োজনে কাটুক পথশিশুদের ঈদ। কুড়াতে আসবে কেন, আমিই চলে যাই ওদের কাছে এবং হাত বাড়িয়ে তুলে দিই কোরবানির গরুর মাংসগুলো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরবানির ঈদের মহত্ত্ব বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সবার চাওয়া তাই হওয়া উচিৎ, কিন্তু হয় না...........
৪| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৪
ছদ্দবেশি লৌকিক বলেছেন: সবাই যদি এরকম করে ভাবতো।
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২২
প্রামানিক বলেছেন: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খবর আর কে আর রাখে!! ধনী, মধ্যবিত্ত, ধর্মবেত্তা, সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তি, সংবাদমাধ্যম কারোরই মনে থাকে না পথশিশুরা বা হতচ্ছাড়া ছিন্নমূল শিশুরা কী খেলো না খেলো, কোথায় রাত কাটলো! কীভাবে কাটলো একটি কোরবানির ঈদ।
সুন্দর কথাই বলেছেন। ধন্যবাদ