নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
আপনি কি বাংলাদেশি না বাঙালি? বাম না ডান? লীগ না বিএনপি?
এতদিন ধরে এ প্রশ্নই ছিল ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী এমনকি সমাজের সুশীল দের প্রতিও।
আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার পড়ে এই একটি কাজ সবথেকে সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। যার ফল হল রাষ্ট্রীয় বিবাদ এখন ঘরের মধ্যেও হানা দিয়েছে। এখন ভাই ভাইয়ের শত্রু। সব ক্ষেত্রেই পেশিশক্তির জয় জয়কার।
অপরাধীর সাজাও নির্ভর করে দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে। স্বাভাবিকভাবেই যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের সমর্থক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দলের নেতা-কর্মীরাই দেশের হত্যা কর্তা সেজে বসে। তবু এসব মেনে নিয়েই এতদিন ধরে এ দেশের সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর শুভবুদ্ধি উদয়ের অপেক্ষায় দিনাতিপাত করছিল। লাভ হল না, মানুষের এই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি তাদের পছন্দ হল না। ভাবখানা এমন যে, তোমরা কতখানি ধৈর্যধারণ করতে পার আমরা তাই দেখতে চাই। বিএনপি ইদানীং একটা কথা বলে। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কথাটি আংশিক সত্য। পুরো সত্য হোল শুধু সরকার নয় এ দেশের রাজনীতিবিদরা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এবার তারা তাঁর ষোলকলা পূর্ণ করতেই আস্তিক-নাস্তিকের বিভাজন ডেকে এনে দেশকে এক ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
কেউ কেউ হয়ত বলবেন এ জন্য তারা দায়ী নন। দায়ী তারাই যারা মহানবী(সঃ) এবং ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন। যদি এই যুক্তিই মেনে নিতে হয়। তাহলে তো এ জাতিকে খুনি, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ বলেও বিভাজিত করা যায়। কারণ এই কুকর্মগুলি এদেশের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। যাদের নাস্তিক বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, সত্যিই তারা নাস্তিক কিনা আমি জানিনা। যদি তাদের নাস্তিক বলে ধরেও নেই তবু বলব এদের সংখ্যা এতটাই নগণ্য যে তার থেকে দেশে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাও অনেক বড়। অথচ এই গুটি কয় লোককে নির্দেশ করে কি করে বলা যায় এদেশ আস্তিক–নাস্তিকে বিভাজিত?
সমাজে সংগঠিত অন্যান্য অপরাধের মতই ধর্মের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাও একটি বড় ধরনের অপরাধ। যার প্রতিকার স্বরূপ রয়েছে প্রচলিত আইন। রয়েছে বিচার ব্যবস্থা। সংক্ষুব্ধ যে কেউ এর বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। বিক্ষুব্ধ হতে পারেন, সঠিক প্রতিকার না পেলে। কিন্তু সে পথে না গিয়ে সরল মনা ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করে সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করাটা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জাতির সাথে প্রতারণারই শামিল।
এই ধরনের প্রতারণা করা আমাদের নেতাদের মজ্জাগত। আর এইসব কুকর্মগুলি জায়েজ করতেই তারা প্রতিটি গোষ্ঠীর মধ্যে নিজেদের প্রতিনিধি তৈরির মানসে অঙ্গ সংগঠনের ঝাঁপি খুলে বসেছেন। যাতে তাদের কোন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেই জনগণ সোচ্চার হতে না পারে। ফল হাতে নাতে। এ দেশের নেতারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন। তাদের পক্ষে কথা বলবেন টক শো’তে উপস্থিত দলীয় বুদ্ধিজীবী। তাদের বিরুদ্ধে কেউ রাস্তায় নেমে এলে তাঁর ঠ্যাং ভেঙ্গে দিতে আছে অঙ্গ সংগঠনগুলির ক্যাডার। তারা চাইলেই পারেন দেশ অচল করে দিতে। হরতালের নামে তারা নৈরাজ্য চালালে নেতা একে পিকেটিং বলে সাফাই গান।
আর এত কিছু করেও তাদের মন ভড়ে না। তাই নতুন আমদানি আস্তিক-নাস্তিকের বিভাজন।
আমাদের ধূর্ত নেতারা খুব ভাল জানেন মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত এ দেশের বেশিরভাগ মুফতি, মাওলানা আধুনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে খুব একটা পরিচিত নন। এমনকি ধর্মীয় পুস্তক-মসজিদ-মাদ্রাসার বাইরের জগতের সাথে তাদের যোগাযোগও নেহায়েতই নগণ্য। আর তাই তাদের ভুল বুঝিয়ে ব্যবহারও অনেক সহজ।
আজ আমরা একুশ শতকের অভিযাত্রী। আমাদের মেয়েরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। অথচ তারা তাদের গৃহবন্দি করতে চান। আজকের পুরো বিশ্বকেই যখন ধরা হয় একটি গ্লোবাল ভিলেজ। ঠিক তখন তারা দরজা-জানালা আটকে দিতে বদ্ধ পরিকর। এরপরেও যারা তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আমরা ধরে নিতে পারি তারা ক্ষমতায় গেলে এই দাবীসমূহ বাস্তবায়ন করবে। আসলে কি তাই?
৮/৪/১৩ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, “হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে অন্তত চারটিতে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ আপত্তির কথা তুলে ধরেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের ঢাকায় লংমার্চ কর্মসূচি পালন ও তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাকালে চারটি দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা হয়। ১৩ দফা দাবির মধ্যে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করা, নারীদের চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ, ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার মতো দাবিগুলোর বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আপত্তি তোলেন। তবে ইসলাম ও মহানবী(সঃ) সম্পর্কে কটূক্তি কারীদের শাস্তিসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার বিষয়ে সংগঠনের আন্দোলনকে বিএনপি সর্মথন জানিয়েছে।“
তাহলে বিএনপি আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা হল কি করে? ইসলাম ও মহানবী(সঃ) সম্পর্কে কটূক্তি কারীদের শাস্তিসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ তো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতেও শুরু করেছে। সে অর্থে আওয়ামী লীগ তো বিএনপি থেকেও একধাপ এগিয়ে।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল হেফাজতে ইসলাম কেন শুধুমাত্র একটি বিষয়ে শরীয়া আইন চাচ্ছে। তাদের তো এদেশে পুরোপুরি শরীয়া আইন চালুর দাবী জানানোর কথা। প্রচলিত আইনের সাথে একটি মাত্র বিষয়ে শরিয়া আইন সাংঘর্ষিক হতে বাধ্য যা আমাদের সংবিধানের সাথেও সাংঘর্ষিক হবে এটা কি তারা জানেননা? অবশ্যই জানেন। তারা এও জানেন সরকারের পক্ষে এ দাবী মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তারপরেও এ দাবীতে অনড় থাকা তাদের সরকার পতনের ডাকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈ কি?
প্রশ্ন হল; এ সরকারের পতন হলে তাদের কি লাভ? সে প্রশ্নের উত্তর হেফাজতের নেতাদের ভাষণেই খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তারা যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে সহজেই বোঝা যায় হেফাজতের কণ্ঠে কথা বলছে অন্য কেউ। অন্য কোন শক্তি।
আসল কথা হল আওয়ামী লীগ-বিএনপি বা জাতীয় পার্টি কারো কাছেই ধর্ম ততটা মূল্যবান নয় যতটা মূল্যবান ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর সমর্থন বা ভোট। আর হেফাজতে ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ এসব না বুঝলেও এরা এই ভোটের হিসেবটা ঠিকই বোঝেন। আর তাই তারা এ বলে শাসাতে ভুলেন না যে, তাদের দাবী না মেনে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না এবং ক্ষমতায় থাকাও যাবে না। কিন্তু তারা এটা বুঝতে অক্ষম যে তারা নিজেদের ঘরের ভোটটিও নিজেদের হেফাজতে রাখতে ব্যর্থ। নয়ত এ দেশে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয় ক্ষমতায় ইসলামী দলগুলিই যেত।
পাঠক এখানেই আমাদের স্বস্তি। আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি বাংলা কখনই আফগান হবে না। যার প্রধান কারণ দুটি। প্রথমত- এ দেশের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই কম বেশি স্বাধীনচেতা। দ্বিতীয়ত- এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হলেও এর মধ্যের ৫ ভাগও গোঁড়া নয়।
হেফাজতের লং মার্চে অংশগ্রহণ করা সিংহভাগ মানুষ ইসলাম ও মহানবী (সঃ) এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারীদের শাস্তির দাবীতেই একত্রিত হয়েছেন। এ দেশকে তালিবানি রাষ্ট্র বানাতে নয়। তাই আমাদেরও উচিত সরলমনা এই লোকগুলোর ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান জানানো। এবং ব্লগ ও ব্লগার সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা প্রদান করা। সে লক্ষে প্রতিটি জাতীয় পত্রিকার সম্মানিত প্রকাশকদের কাছে আবেদন,
আপনারা আপনাদের পত্রিকায় ব্লগ শিরোনামে অন্তত একটি কলাম রাখুন ব্লগারদের জন্য। ব্লগে অনেক মান সম্পন্ন নিবন্ধ লেখা হয়। সেখান থেকে আপনারা মানসম্পন্ন লেখা বাছাই করে ব্লগ সূত্র উল্লেখপূর্বক প্রকাশের উদ্যোগ নিন। এতে একদিকে যেমন পত্রিকায় সাধারণ মানুষের কথা উঠে আসবে। অন্যদিকে ব্লগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনাও দূর হবে। যা মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে উৎসাহিত করবে এবং এতে সাধারণ মানুষের সচেতনতাও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের মত দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে তুলতে এটা নিঃসন্দেহে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
[email protected]
©somewhere in net ltd.