নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
নদীমাতৃক আমাদের এই জনপদের এক সময়ের অত্যাবশ্যকীয় বাহন নৌযান। গত কয়েক দশকে সড়কপথে যাতায়াতের সুযোগ অনেকটাই বৃদ্ধি পেলেও আজো এর আবেদন কমেনি এতটুকু। সড়ক পথের ব্যাপক দুর্ঘটনা ও ব্যয়বাহুল্যের বিপরীতে আরামদায়ক ও তুলনামূলক কম খরচে যাতায়াতের সুবিধার্থে অনেক যাত্রী এখনো সড়কপথের পরিবর্তে নৌপথে চলাচলেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাছাড়া এখনো এ দেশে এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ। তবে আরামদায়ক এই পথই কখনো কখনো হয়ে উঠে বিপদ সংকুল। বিশেষত বর্ষা মৌসুমে। যার কিছু প্রাকৃতিক, কিছু মনুষ্য সৃষ্ট।
মাঝে মাঝেই ঘটা এই সব দুর্ঘটনায় হতাহত হন বহু সংখ্যক যাত্রী। অনেক যাত্রী চিরদিনের জন্য বরন করে নেন পঙ্গুত্ব। কেউবা চিরতরে হন নিখোঁজ। গত এক দশকে এমনই অসংখ্য দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন কয়েক হাজার যাত্রী। দেশে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় ইতিমধ্যে নদ-নদীতে পানির প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। দেখা দিচ্ছে ঝড়-তুফান সেই সাথে এ পথে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। কেননা প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে একাধিক নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। যাতে প্রাণহানি ঘটে কয়েকশ’ মানুষের। প্রতিকার হীন এই সব দুর্ঘটনার পর সরকার যথারীতি তদন্ত কমিটি গঠন করে কিন্তু কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত প্রস্তাবনার কখনোই বাস্তবায়ন করেনা।
নজির নেই নৌ-দুর্ঘটনার কারণে কোনও নৌযান বা তার চালক কিংবা মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের। ফলে হ্রাস পায়না নৌ-দুর্ঘটনাও। এর সাথে যোগ হয় উদ্ধার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও জনবলের স্বল্পতা এবং সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি। যা প্রাণহানি ও সলিলসমাধির সংখ্যাকেই বাড়ায়।
নৌপথে যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কর্তৃক কিছু সুস্পষ্ট কিছু নির্দেশনা রয়েছে যেমন:
• দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কোনও বিশেষ সংকেত থাকলে কোনও নৌযান চলাচল করতে পারবে না। নির্দেশনা রয়েছে কি ধরনের সতর্কাবস্থায় নৌযান চলাচল করতে পারবে তারও ।
• যাত্রীবাহী কোনও লঞ্চে অতিরিক্ত মালামাল বহন করা যাবে না।
• প্রতিটি নৌযানেই থাকতে হবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইফ জ্যাকেট ও বয়া।
• প্রতিটি নৌযান সাদা দড়ি দিয়ে হালকা কিছু বেঁধে রাখতে হবে। যাতে কোনও কারণে নৌযান বা লঞ্চ নিমজ্জিত হলে তার সন্ধান খুঁজে পেতে সহজ হয়।
• প্রয়োজনীয় সংখ্যক ন্যাভিগেশন লাইট, রুট পারমিটসহ সব ধরনের কাগজপত্র নৌযানে রাখতে হবে।
• সর্বোপরি নির্ধারিত গ্রেডের মাস্টার, ড্রাইভার বা সারেং দিয়ে নৌযান চালাতে হবে।
এছাড়াও নির্দেশনা রয়েছে রাতে বালি বাহী, ইট বাহী ও মাটি বাহী ট্রলার, ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা না চলাচল করার।
যদি উপরোক্ত নির্দেশনা মেনে নৌযান পরিচালনা করা হত তাহলে হয়ত অনেকাংশেই কমিয়ে আনা যেত নৌ দুর্ঘটনা। কিন্তু যে দেশে আইন না মানাই সংস্কৃতি সে দেশের জনসাধারণ অত সহজে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রেহাই পাবে না এটাই স্বাভাবিক।
একদিকে আইন না মেনে চলার সংস্কৃতি অন্যদিকে সরকারও দিক নির্দেশনা প্রদান করেই তার দায়িত্ব শেষ করছে। ভোগান্তি যা কিছু তা সাধারণ মানুষের। লঞ্চ মালিকদের অভিযোগ-
• নৌপথে প্রয়োজনীয় বয়া, বিকন বাতি ও মার্ক নেই। দিনে সহজে চলাচল করতে পারলেও রাতে নৌযানগুলোকে চলতে হয় আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে।
• চালকদের অনিয়মতান্ত্রিক নৌযান পরিচালনা রোধে নেই কোন মেরিন ম্যাজিস্ট্রেট । সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে না।
• তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নেই রিভার পুলিশও।
• পোর্ট অফিসারদের লঞ্চ বা নৌযান থেকে জরিমানা আদায় বা দোষী নৌযানের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক বিচারকার্য পরিচালনার জন্য দেয়া হয়নি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা। ফলে তারা অভিযান পরিচালনা করলেও শাস্তি নিশ্চিত না করে শুধুমাত্র মামলা গ্রহণ করে তার ধারা উল্লেখ করে মেরিন কোর্টে পাঠিয়ে দেন। ওই কোর্টই দোষী লঞ্চ ও সারেংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
• সারাদেশে এই মেরিন কোর্ট আবার মাত্র একটি। ফলে সেখানে সর্বদাই জট লেগে থাকে কয়েক হাজার মামলার।
• তাছাড়া নৌ আইনে সাজার পরিমাণ কম হওয়াকেও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে হয়।
• অভিযোগ রয়েছে দেশের নৌপথ সংশ্লিষ্ট সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, নৌ-নিরাপত্তা বিভাগ, ড্রেজার বিভাগ এবং মেরিন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতারও।
এরই মাঝে চলছে নৌযান সমুহ। যার সংখ্যা বৈধ ৮ হাজার ৭০০ (ফিটনেস ও লাইসেন্স সহ) অবৈধ (ফিটনেস ও লাইসেন্স বিহীন) এর তিনগুণ অর্থাৎ প্রায় ২৫ হাজার । নদীপথে ছোট বড় দুর্ঘটনার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী নিয়ন্ত্রণ হীন অবৈধ এসব নৌযান।
রাজনৈতিক নেতা সহ অনেক মন্ত্রী এমপি নৌযানের মালিক হওয়ায় অনেক সময়ই এদের অনৈতিক প্রভাবে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এমনকি রাজনৈতিক প্রভাবে নৌ আদালতের বিচারাধীন মামলার রায় পর্যন্ত কার্যকর করা যায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে রোধ হচ্ছে না নৌ দুর্ঘটনা।
সমুদ্র পরিবহন আইনে রাতে নদীপথে কার্গো বা ট্যাংকার চলার নিয়ম নেই আইনের প্রতি কোনরকম তোয়াক্কা না করেই তা অবাধে চলাচল করছে। অথচ প্রায় সব দুর্ঘটনাই ঘটছে রাতের বেলায় বালি ভর্তি ও পণ্যবাহী কার্গো কিংবা ট্যাংকারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে।
নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে যা প্রয়োজন:
এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহের উদ্যোগ হয়ত কিছুটা প্রান হানী কমাতে সক্ষম হবে। কিন্তু নৌ দুর্ঘটনা রোধ নয়। আমরা আর একটিও নৌ দুর্ঘটনা দেখতে চাইনা। চাইনা নৌ দুর্ঘটনার কারণে আর একটিও প্রাণ হানী হোক। আর সে জন্যে এর রোধ কল্পে যে ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ জরুরী বলে মনে করি তা হল:
• মান্ধাতা আমলের নৌ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ।
• নৌযান মালিক, চালক ও যাত্রী সাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি। বেপরোয়া চালনা এবং অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল পরিবহন রোধ করা ।
• প্রতিটি দুর্ঘটনাটির বিষয়ে যথাযথ তদন্ত নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করে এর রিপোর্ট অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া।
• দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি নিহত ও নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দান বাধ্যতামূলক করা।
• নৌযান ডিজাইনের আধুনিকায়নের পাশাপাশি নিরাপদ ও সঠিক মাপের নৌযান নির্মাণ ।
• ত্রুটিপূর্ণ এবং অবৈধ নৌযান শনাক্তকরণ এবং এর পরিচালনা বন্ধ করা।
• যাত্রীবাহী নৌযানের যাত্রী সংখ্যা বিধি অনুযায়ী নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ।
• নৌ ডাকাতি রোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ।
• নৌ মন্ত্রণালয়ের সবগুলো বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে নৌ দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নেয়া।
• দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরগুলোতে মেরিন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ এবং তাৎক্ষণিক সুবিচার নিশ্চিত করা।
দেশের প্রতিটি নাগরিকের সব ধরনের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আশা করি আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য রাজনীতির নিতি বাদ দিয়ে জনস্বার্থকেও গুরুত্ব দিতে শুরু করবেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন।
[email protected]
তথ্যসূত্রঃ
Click This Link
Click This Link
http://www.theamarkagoj.com/?p=10278
©somewhere in net ltd.