নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
মহানবী (সঃ) এর জন্ম তারিখ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে আধুনিক গবেষণা অনুযায়ী সঠিক তারিখ ৯ রবিউল আউয়াল তবে এটাও সন্দেহমুক্ত নয়। এর পূর্বে জনশ্রুতি ছিল মহানবী (সঃ) এর জন্ম তারিখ ১২ রবিউল আওয়াল। কাজেই আমরা এখনো স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছি না যে হরত মুহাম্মদ(সঃ) এর জন্ম তারিখ প্রকৃতই ১২ রবিউল আওয়াল নাকি ৯ রবিউল আওয়াল। তবে সকল ঐতিহাসিক সূত্রে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে মহানবী (সঃ) ১১ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সন্ধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন। আর সে হিসেবে ১২ রবিউল আউয়াল মুসলিম জাতীর জন্য একটি শোকাবহ দিন।
অথচ মুসলিম জাহানের জন্য শোকাবহ এ দিনটিকে আমরা আনন্দের তথা ঈদ-এ মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করছি। আর তাও আবার করছি মহানবী(সঃ) কে ভালবাসার দাবী নিয়ে। পুণ্য লাভের আশায়। মহানবীর (সঃ) জন্মদিন অবশ্যই পবিত্র ও বরকতময় এতে সন্দেহ নেই। যদিও এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ (সঃ) নিজে কখনোই কোন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা যায় না। মহানবী (সঃ) এর জীবদ্দশায় বা তার মৃত্যুর পড়েও সাহাবীয়ে কেরাম গন মহানবী (সঃ) এর জন্ম দিন পালন করেন নি। এমনকি তৎপর বর্তি সময়ে সাহাবী, তাবীঈ ও তাঁবে তাবীঈদের সময়েও এর রেওয়াজ ছিল না বলেই জানা যায়।
মহানবী (সঃ) এর প্রতি তার সাহাবীদের যে ভালবাসা ছিল। মহানবী (সঃ) ও ইসলামকে ভালবেসে যে ত্যাগ তারা স্বীকার করেছিলেন তার অসংখ্য প্রমাণ ইতিহাসে পাওয়া যায়। অথচ তারা কখনোই এই দিনটিকে জশনই জলুস হিসেবে পালন করেন নি। তবে কি আমরা দাবী করব যে, আমারা মহানবী (সঃ) এর সাথী বা সাহাবী, তাবীঈ ও তাঁবে তাবীঈদের থেকেও আমরা বেশি রসূল প্রেমী হয়ে গেছি!
মনগড়া এসব আনুষ্ঠানিকতা কি বিদআত নয়? সাহাবী, তাবীঈ ও তাঁবে তাবীঈদের সামনেও তো প্রতি বছরই এ দিনটি আসত। কিন্তু কারও থেকে এ ধরনের দিবস উদযাপনের কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। এর দ্বারা কি এটা স্পষ্ট হয় না যে, এ দিবস উদযাপন করা ইসলাম বহির্ভূত কাজ। এ ক্ষেত্রে আমরা মহানবী (সঃ) এর নিন্মোক্ত হাদিসকে অবলম্বন করতে পারি যেখানে তিনি বলেন-
« مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ »
“আমাদের এই দ্বীনের মাঝে যে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” সহীহুল বুখারী
তিনি আরও বলেন:
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّهَا ضَلاَلَةٌ فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَعَلَيْهِ بِسُنَّتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ »
“তোমরা আমার সুন্নত এবং আমার পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত পালন করবে। আর তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করবে। সাবধান! তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ প্রত্যেক নব প্রবর্তিত বিষয়ই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা”। (তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: সুন্নত গ্রহণ, ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ)
এ সমস্ত হাদিছে বিদআত প্রবর্তনের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে এবং উম্মতকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন ৪র্থ হিজরি শতকে মিশরের ইসমাইলিয় শিয়া শাসকগণ দ্বারা প্রবর্তিত হলেও একে সমস্ত মুসলিম বিশ্বে অন্যতম উৎসবে পরিণত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ইবরিলের শাসক আবু সাইদ । তাঁকেই এই অনুষ্ঠানের প্রকৃত প্রবর্তক বলেও মনে করা হয়ে থাকে। কেননা ৪র্থ হিজরি শতকে শিয়া সম্প্রদায় কর্তৃক মিশরে এর উদযাপন শুরু হলেও তখন বাইরের মুসলিম জগতে তার কোন প্রভাব পড়ে নি। এমনকি পরবর্তী ২০০ বৎসরের মধ্যেও মুসলিম বিশ্বের অন্য কোথাও এই উৎসব পালন করতে দেখা যায়নি। অথচ ৭ম হিজরি শতকের শুরুতে কুকবূরী ইরবিলে ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন শুরু করলে তা তৎকালীন মুসলিম সমাজগুলিতে সাড়া জাগায়। পরবর্তী ২০০ বৎসরের মধ্যে এশিয়া-আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম সমাজে অনেক মানুষ ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করতে শুরু করে। যার ধারাবাহিকতা আজো চলছে। এমনকি এখন ঈদে মিলাদুন্নবী রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে।
প্রশ্ন হল, যে সকল কর্মকাণ্ড রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে, সাহাবী, তাবীঈ ও তাঁবে তাবীঈদের যুগে ধর্মীয় কর্ম, আচার বা উৎসব হিসাবে প্রচলিত, পরিচিত বা আচরিত ছিল না, পরবর্তী যুগে মুসলিম সমাজে ধর্মীয় কর্ম হিসাবে প্রচলিত হয়েছে সে সকল কাজ মুসলিমদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হতে পারে? ইসলামের দৃষ্টিতে কি তা আদৌ বৈধ?
ঈদে মীলাদুন্নবী জাতীয় কোন অনুষ্ঠান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে, সাহাবী, তাবীঈ ও তাঁবে৸ তাবীঈদের যুগে প্রচলিত বা পরিচিত ছিল না তাই স্বভাবত:ই তা বিদ‘আঁত কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সাহাবীগণ, তাবেয়ীগন নবীর প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও যেহেতু এভাবে আনন্দ উৎসব বা উদযাপনের মাধ্যমে এ দিবসটি পালন করেন নি, কাজেই পরবর্তী যুগের মুসলিমদের জন্য তা কতটা শরি‘আত সঙ্গত।
আমাদের কি উচিৎ নয় প্রথম যুগের মুসলিমদের (সাহাবী, তাবীঈ ও তাঁবে তাবীঈদের) ন্যায় নবীর সুন্নত পালন, দরুদ ও সালাম এবং আন্তরিক ভালবাসার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানানো।
যেখানে মহান আল্লাহ নিজেই বলেন:
اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” (সূরা মায়েদাঃ ৩)
সেখানে মিলাদ মাহফিল বা নবীর জন্মোৎসব পালন বা এ জাতীয় অন্যান্য উৎসবাদির প্রবর্তনের দ্বারা আমরা কি সরাসরি আল্লাহরই বিরুদ্ধাচরণ করছি না? পাঠক এখানে আমি আমার নিজস্ব কোন ধারনা প্রচার করছি না। ১২ই রবিউল আউয়াল প্রিয় নবী(সঃ) এর মৃত্যুদিনে ঈদে মিলাদুন্নবীর যৌক্তিকতা নিয়ে আমার দ্বিধাকেই তুলে ধরেছি মাত্র। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
সঞ্চালক, আপন ভুবন.কম
[email protected]
কৃতজ্ঞতাঃ প্রফেসর ড. খন্দকার আ.ন.ম আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
বিঃদ্রঃ ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ লেখাটি প্রথম পোষ্ট করেছিলাম আজ রিপোষ্ট করছি।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫১
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: হ্যা বিষয়টা অনেকটা তেমনই। তবে ইবাদতকে যখন লৌকিকতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আর তা ইবাদত থাকে কিনা সে বিষয়ে আমার ঘোর সন্দেহ রয়েছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে @ অন্ধবিন্দু
২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৪
প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩০
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে প্রামানিক ভাই। ভাল থাকুন নিরন্তর
৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫১
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: আজ বড় দিনের শুভেচ্ছা রইলো আপনাকে। আর বড় দিনের ইতিহাস দিন খন সব ঠিক আছে যত ভুল মসুলমানদের ভেতর এক এক দেশে এক এক দিন এক এক উৎসব করে এমন কি নামাজ রোজার সময় নিয়েও বিভ্রান্তি কোথায় ৭-৮ ঘণ্টা রোজা আর কোথাও ১৯ ঘণ্টা রোজা আসলেই সব ফাউল কারবার।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৫
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
গালিব মেহেদী,
ঘটনা হচ্ছে আমরা খুঁজি শর্টকাট। ওই যেমন জুমাবারের নামায পড়েই মুসল্লী। যারা সারা বছর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাঁদের ভালবাসায় ও শ্রদ্ধায় সুন্নত পালন করে যায়, তাঁদের এসব যৌক্তিকতায় টাইম নষ্ট করতে হয় না ...