নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
নিজেকে জাহির করা মানুষের চিরন্তন স্বভাব। এর প্রক্রিয়া দুটি এক ইতিবাচক দুই নেতিবাচক। ইতিবাচক প্রক্রিয়ায় যারা ব্যর্থ হয় তারা নিশ্চিতভাবেই নেতিবাচক প্রক্রিয়ায় হলেও নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করে।
ঠিক একইভাবে নিজের যোগ্যতা বলে ব্যর্থদের সবার উপরে স্থান করে নেয়ার উদগ্র বাসনা করে তোলে হিংস্র শ্বাপদের মতই ভয়ংকর।
আসল ভয়টা এদের নিয়েই।
কারণ সাধারণত তাদের কাছ থেকে কেউ নেতিবাচক আচরণ আশা করেন না। এমনকি তাদের মিশন শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যদি কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোন কারণে অভিযোগের আঙুল তোলেনও তাও বিশ্বাস যোগ্য করে তোলাটা কঠিন হয়ে পড়ে কেননা খোলা চোখে এদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের পেছনে যৌক্তিক ব্যাখ্যাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
বেঈমানি করার সুযোগ তো তারই হয় যে আগেই ইমানদার পরিচয়ের সবগুলো চৌকাঠ মাড়িয়ে আসতে পেরেছেন। বিশ্বাস অর্জন বিশ্বাসভঙ্গর প্রথম শর্ত, কে না জানে। মুশকিল হল, এই লোকগুলো আমাদের সমাজের এক মস্ত বড় অংশ জুড়েই রয়েছেন অথচ সহসা তাদের চেনা দায়।
আপনি যদি খুব সচেতন হন, তাহলে হয়ত এদের নেতিবাচক মানসিকতার কিছুটা আচ করলে করতেও পারেন তবে সে ক্ষেত্রেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় অন্ধ ভালবাসা। কেননা এরা কিন্তু সাধারণত কাছের মানুষেরই ক্ষতি করে। অথবা সব থেকে আস্থা ভাজনের।
একটা মানুষের হীনমন্যতা, ঈর্ষা, মানসিক দীনতা তাকে খুব সহজেই তার জাত চিনিয়ে দিতে যথেষ্ট। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এসব সর্বদাই অগ্রাহ্য করে যাই। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এরা নির্বিঘ্নেই তাদের ক্রিয়াকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এদের অনিষ্ট থেকে রেহাই পেতে হলে পূর্বেই তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা এবং এদের পরামর্শ বর্জন জরুরী।
আমাদের সমাজে পেছন থেকে টেনে ধরার লোকের অভাব নেই এটা আমরা জানি, বলিও সব সময়। অথচ তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা কি কখনো করি? করিনা; এরা তো দূরের কেউ নন। আমার আপনার ঘরে আমাদের পোষ্য হয়েই তো তারা বেচে বর্তে থাকেন।
আমরা পনের আগস্টের শোকাবহ দিনটির কথা বলি। খন্দকার মুশতাকের উদগ্র বাসনাই কি সেদিনের সেই শোকাবহ ঘটনার জন্য একমাত্র দায়ী। শুধুমাত্র মেজর ডালিম-মেজর রশিদ সহ সেদিনের হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া কয়েকজন বিপথগামী সেনা অফিসারই কি এর জন্য দায়ী। পেছন থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছিলেন তাদের দায় কি করে উবে গেল? সেটা নিয়ে আমরা কতটুকুই বা সচেতন?
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের বিচার কার্য্য সম্পন্ন হয়েছে বলে আজ যারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছেন তাদের মনে কি এর পেছনে নীল নকশা প্রণয়নকারীদের বিচার না হোক অন্তত মুখোশটা উন্মোচিত করা উচিৎ বলেও একবার মনে হয় নি?
আজো যখন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আরেকটি পনের আগস্ট থেকে জাতিকে সতর্ক করার চেষ্টা করেন তখন এ প্রশ্নটাই উঠে আসে যে, পনের আগস্টের কুশীলবদের কেন জাতির সামনে টেনে আনা হল না? সে রহস্য উন্মোচনে যদি শত বর্ষেরও প্রয়োজন হয়, হোক। কেন সে রহস্য উন্মোচনে জাতীয় পর্যায় থেকে গবেষণা সেল তৈরি করা হল না। সে রহস্য উন্মোচন হলেই না ষড়যন্ত্রকারীদের থামানো সম্ভব হত আর তাহলেই না এ জাতী নিরাপদ হতে পারত।
আমরা ঘরে বাইরে ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে এগুচ্ছি। ষড়যন্ত্র কারিরা সর্বদাই থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অথচ আজকের বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ থেকে শুরু করে যত সমস্যা তার সবটার মুলেই এই পনের আগস্টের হত্যাকাণ্ড। একটি উদীয়মান জাতিসত্তাকে পিষে মাড়ার অপচেষ্টা।
ঘড়ির কাটা পেছনে ঘুড়ীয়ে দিলেই সময় পাল্টে যায় না অথচ সেই ব্যর্থ চেষ্টাটাই করা হয়েছে দিনের পর দিন। এর পেছনে মাস্টার মাইন্ড কারা?
সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা দুটি পক্ষ হয়েছি। বার বার পরস্পর বিরোধী ভাবে দুটি বা তিনটি রাষ্ট্রকে টেনে এনেছি। তর্কের খাতিরে তাদের কারো না কারো হাত আছে ধরেই নিলেও যেটি এড়িয়ে গেছি তা হল কালো চশমার আড়ালের ধূর্ত চোখ জোড়া।
পলাশীর প্রান্তরে নবাবের পতনের জন্য তো আমরা ক্লাইভ বাহিনীর বীরত্বের কথা বলি না। তাদের কুটচালের পাশাপাশি সেখানে আমরা মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, উমিচাঁদ, রাজবল্লভদের খুঁজে বের করি। তাহলে পনের আগস্টের বেলায় কেন ঘোষিত অপরাধীদের বাইরেও এর পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের দিকে দৃষ্টি ফেরাই না?
কেন আমরা কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য আর খন্দকার মুশতাকের মধ্যেই ঘুরপাক খাই। সাথে জুড়ে দেই বিদেশী রাষ্ট্রকে।
আমরা এর মধ্য দিয়ে যাদের আড়াল করছি তারাই পনের আগস্টের পর অবতার সেজেছিল, ভগবান সেজেছিল তারা ধর্মের রক্ষক সেজে আড়ালে বেঁচে দিয়েছে বাঙ্গালী জাতিসত্তাকে। বেচে দিয়েছিল আবহমানের বাংগালীয়ানা। এরা নিলাম করেছে অসাম্প্রদায়িকতা। এরা ধর্মকে করে তুলেছিল প্রাণহীন আচার সর্বস্ব।
আমরা কি তাদের চিনি না? আমরা কি জানি না তারা কারা? আমরা চিনি আমরা জানি অথচ ভাসুরের নাম মুখে আনা যাবে না বলে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছি।
যতদিন না পর্যন্ত আমরা এদের মুখোশ উন্মোচন না করতে পারব যতদিন না তারা জনে জনে ঘৃণিত হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে তারা ক্ষান্ত দিবে না। তারা তাদের চেষ্টা চালিয়েই যাবে।
পনের আগস্ট শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু ও তার পড়িবারবর্গকেই নিশ্চিহ্ন করা হয়নি নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছিল বাংলাদেশকেও। যারা গণতন্ত্রের কথা বলেন তাদের মনে রাখা উচিৎ শত ভাগ সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনও হয়নি। একাত্তরে যেমন এ দেশে বাংলাদেশ বিরোধী সক্রিয় ছিল। স্বাধীনতার পড়ে তারা আরও বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। বাঁধা ছিল একমাত্র বঙ্গবন্ধু। সরিয়ে দেয়া হল তাকে।
শত বাঁধা পেড়িয়ে যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই পথ চলতে শুরু করলেন বার বার সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হল তাকে। এর পেছনে কি সেই একই শক্তি ক্রিয়াশীল নয়?
এ জাতী তার অবিসংবাদিত নেতাকে ধরে রাখতে পারেনি মহান আল্লাহর অশেষ রহমত তারই কন্যার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে আবার। তাতে ষড়যন্ত্রকারীরা কি থেমে গেছে? মোটেই না যার সবথেকে বড় প্রমাণ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ভয়ংকর থাবা। লক্ষ অভিন্ন।
কাজেই বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে বাঙালী জাতিসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে হলে পনের আগস্টের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করতেই হবে।
এরা সমাজের এমন এক অবস্থানে বাস করে যেখানে কারো কিছু মনে করায় তাদের কিছুই যায় আসে না। সেখানে দুর্দমনীয় ভাবে টিকে থাকা অথবা একেবারে শেষ হয়ে যাওয়াটাই চূড়ান্ত পরিণতি।
[email protected]
©somewhere in net ltd.