নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দাহ কালের প্রণয়

মনিরুল ইসলাম রানা

কিছু বলার নাই

মনিরুল ইসলাম রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারত পারে, আমরা কবে পারবো !

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:১৬



গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় অন্যতম স্তাবক হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতি ও তার গ্রহণযোগ্যতা। ভারত গত কয়েক দশক ধরে নির্বাচনী স্বচ্ছতার সাফল্য ধরে রেখেছে এর মধ্যে লোকসভার ১৫টি আর রাজ্য বিধানসভার ৩৫০টি বেশি নির্বাচন যা ছিল সকল দলের জন্য গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠ । মানুষ দ্বারা পরিচালিত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এ নির্বাচনী পক্রিয়াকে সারা পৃথিবীর মানুষ প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে গনতান্ত্রিক নির্বাচনী পক্রিয়ার বিদ্যালয় হিসেবে ভাবে। অবশ্য ২০০৯ সালেই যে নির্বাচনযজ্ঞ ভারত দেখিয়েছে তার নমুনা- ৭১৪ মিলিয়ন ভোটার, ১.১৮ মিলিয়ন ইভিএম ১১ মিলিয়ন নির্বাচনকর্মী। ২০০৯ থেকে ২০১৪ এই সময় কালে ভোটার ১০০ বিলিয়ন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৪ মিলিয়ন ৫৪৩ আসনে মোট প্রার্থী সংখ্যা ৮২৫১। জনগণকে সরাসরি গণতান্ত্রিক পক্রিয়ায় রাষ্ট্রসিধান্ত নেওয়া ও উৎসাহ প্রদানে কাজ করেছে নির্বাচন কমিশন ২০১১ সাল থেকে ২৫ জানুয়ারী ন্যাশনাল ভোটার ডে ঘোষণা দেয় মুলতো তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে, এমন কি ভোট পক্রিয়া ও প্রোয়গের মতন নাগরিক দ্বায়িত্ববোধ যেমন তৈরি হয়েছে তেমনি আগামী নির্বাচনে এদের থেকেই বেছে নেওয়া হবে নির্বাচনকর্মী ও ভলানটিয়ার।নির্বাচন সংক্রান্ত সামাজিক ক্যাম্পেইন গুলোও ছিলো চোখে পরার মতন, তরুণদের হাতেই যে আগামির ভারত চলবে সে ব্যাপারে সচেতনতা দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রযুক্তির আধুনিকতা আরো গতিশীল করেছে পুরো পক্রিয়াকে ২০০৯ ইভিএম ব্যবহার করেছে তারা আর এইবার কমিউনিকেশন প্লান ফর ইলেকশন ট্রাকিং বা কমেট (comET), কমেট পুরো পক্রিয়াটিকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সাথে যা মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা থেকে ই-মেইলে পর্যন্ত সর্তক করবে এমন কি নির্বাচনকর্মী, এজেন্ট, পরিবহন থেকে পুলিশে সতর্ক বার্তা সবই অটোমেটিক জেনেরেটেট হবে, ১৪টি রাজ্যে এবার সফল ভাবে এই আধুনিক পক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে । কমেটের সাথে আবার যোগ করা হয়েছে ভিভিপিএটি নামের নতুন এক প্রযুক্তি ২০১৪ নির্বাচনে এই সর্বশেষ প্রযুক্তিকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নিয়ে সফলতার কথা শুনিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে নিয়ে আসা হয়েছে সচিত্র ভোটার স্লিপ আর ভোটারের বাড়িয়ে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই নিয়েছিলো কমিশন, ভোটার কার্ড আছে, কিন্তু নাম নেই ভোটার লিস্টে, এমন ভোটারদের জন্য থাকছে শেষ সুযোগ। তালিকায় কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে ইভিএমে না-ভোটের বোতাম টিপে দিলেই কাজ শেষ ভোটারদের। থাকছে ভিভিপ্যাটও। উদ্দেশ্য ভোটে কারচুপি রুখে আরও স্বচ্ছতা আনা।



ইউএস ফেডারেল ইলেকশন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের খরচ হয়েছিলো ৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার আর এবার ভারতের খরচ হয়েছে ৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার যা নির্বাচনে খরচের দিক দিয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় এ নির্বাচনকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ ক্যাম্পেইন হিসেবে আখ্যা করেছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম। একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে এবার নির্বাচনী ব্যয় সীমা ছিলো ৭০ লাক্ষ রুপি এবং এই বারই প্রথম নির্বাচন কমিশন আয় ব্যয় হিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলো এবং একটি বিশেষ বিভাগের মাধ্যমে মাঠে তাদের খরচ ও খরচের উৎস কঠোর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে একটি বিশেষ টিম। ফেইসবুক টুইটারে বিজ্ঞাপনের হার ও তার খরচ খতিয়ে দেখেছে নির্বাচন কমিশন।

৯ দফায় ভোট, ৮১ কোটির অধিক ভোটার, ৯ লক্ষ ১০ হাজার পোলিং বুথ শেষ হয়ে গেল পৃথিবীর বৃহৎ মানুষ পরিচালিত ভোটযজ্ঞ।

নির্বাচন কমিশনের এমন ধারাবাহিক সাফল্যের পর কমিশন নিজেই ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট (IIDEM) নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করেছে, গত দুই বছরে আফ্রো এশিয়া ও কমনওয়েলথ ভুক্ত ৪০টির মতন দেশ’কে স্বচ্ছ নির্বাচন পক্রিয়ার প্রশিক্ষণ, অভ্যান্তরিন কর্মীদের আরো দক্ষ করেছে এই ইন্সটিটিউড, সারা বিশ্বে IIDEM এখন নির্বাচন প্রশিক্ষণের আধুনিক ও অন্যতম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

ফিরে আসি বাংলাদেশে, ভারতের নির্বাচন নিয়ে টুকটাক খোঁজ খবর দিলেও হতাহতের খবর দিতে পারলাম না, যারা এপারে বসে নিয়মিত হিন্দি সিনেমা দেখেন এমন সংঘাতহীন নির্বাচনের খবরে বিচলিত হওয়া স্বাভাবিক। কোন সংঘাত নেই সেইটা বলা যাবে না তবে নির্বিচারে হত্যা নেই, পাবলিক পরিবহনে পেট্রল বোমা পরেনি, ঠিক এই সময় ( যখন লিখছি), প্রত্রিকা সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ছবি সবাইকে বিমর্ষ করেছে, রাজপথে পুড়ে ছাই হয়ে পরে আছে একজন রাজনীতিবিদ। বিমর্ষ আমরা এই রাজপথেই দেখি আগামী ও আগামী প্রজম্নের স্বপ্ন না কি পোড়া মানুষের ছাই ?

২৭ ডিসেম্বর ২০১৩, প্রথম আলোর ফিরে দেখা ২০১৩ রিপোটে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রান হারিয়েছেন ৪৯২ জন। আর এই মৃত্যুর কারন হিসেবে বলা হয়েছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনৈক্য, আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক পরাশক্তির মতের অমিল নতুন কিছু নয়, সারা পৃথিবীতে সব সভ্য জাতি যখন উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিতে যায় আর এ দেশে সেই একই পেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন, দলিয় করন, পক্রিয়ার মধ্যে পরে প্রতিদিন আতঙ্কিত হয়ে আমরা মিছিলের সামনে পরি, পুলিশের কাদানো গ্যাস খেয়ে বাসায় ফিরি আর মাঝে মাঝে ২/৪ টা লাশের সাথে দেখাও হয়ে যায় ।

প্রধান দুই পরাশক্তি এত হতাহতের পরেও একটু সুনির্দিষ্ট নির্বাচন পক্রিয়ায় পৌঁছাতে পারে নাই, নির্বাচন বর্জন, ইসি কে হ্যাসকর ভাবে দলগত ব্যবহার, হরতাল ,অবোরধ, ভাঙচুর ও নির্বিচারে গনমানুষের ক্ষতির কারন হয়ে উঠে প্রতি ৫ বছর পরের জনগনের গনতান্ত্রিক অধিকার ।

আমাদের সংঘাতহীন কোন নির্বাচনের খবর আমার জানা নাই, অভিনন্দন ভারতের প্রাপ্য। ভারতের নির্বাচন দেখে কিছুটা শিক্ষা কি আমাদের নীতিনির্ধারকরা নিতে পারেন না ?

তথ্য ঃ ইন্ডিয়ান টাইমস, ভারতের সাবেক নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরাইশি নির্বাচিত কলাম থেকে, দি গার্ডিয়ান ।

(আমাদের সময়ে প্রকাশিত কলাম)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.