![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলা সিনেমার প্রচলিত সকল ধারাকে পেছনে ফেলে চলমান লেনদেন নির্ভর ফিল্মি চিন্তার বা শৈল্পিক চিন্তার উর্ধে দাড়িয়ে একনতুন নন্দন তত্ত্বের নাম “মেঘমল্লার”। স্রেতে গা না ভাসিয়ে শিল্পীর অপেক্ষার অবসানের নাম “মেঘমল্লার”। ‘মেঘমল্লার’ শুধু চলচিত্র হয়ে থাকবে না, উত্তম বাংলা সিনেমার উদাহরণও হবে, সিনেমা পড়তে আশা কোন তরুণের গদার,তারকাভাস্কির সাথে অঞ্জন দর্শন দেখার নাম হবে ‘মেঘমল্লার’। ‘মেঘমল্লারে’ আছে ফেলে আশা ক্যাম্পাসের সম্পর্কের বুনিয়াদ যার প্রভাব চলচিত্রের সর্বত্র প্রতীয়মান বলছিলাম সুধীর পালসানের কথা, যে চোখে সুধির পালসানে বাংলাদেশের প্রকৃতি দেখেছেন আর যে ভাবে তার স্যলুলয়েডে পরিপূর্ণ রূপদান করেছেন তা আগে বাংলা সিনেমায় দেখেছি বলে আমার মনে পরে না ।
‘মেঘমল্লারে’ চলমান বাংলা সিনেমায় বিউগলে বাজানো করুণ সুরে নায়কের অপেক্ষায় থাকা নায়িকার কান্না নেই, স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকা বারান্দায় বৃষ্টি ভেজা খালি চায়ের কাপে বিউগল ও করুণ সুর বেজে উঠেছে।
মেঘে ঢাকা তারা (২০১৪) শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটকের বায়োগ্রাফিতে; ঘটককে এক পাগল বলে বসে ‘ আপকা পিকচার ম্যায়নে দেখা হ্যায়, পেইন্টিয় য্যায়সা দিখতা হ্যায় ‘ শ্রদ্ধেয় জাহিদুর রহিম অঞ্জন’কে ওই কথাটা বাংলায় আমিও বলতে চাই, “আপনার ছবি দেখলাম, পেইন্টিং –এর মতন মনে হয়” চোখ ফাঁকি দেয়নি ফ্রেমের মধ্যে দাঁড়ানো ১৯৭১ সালের পোষ্টবক্সটি। প্রফেসর নুরুল হুদার হাত ঘড়িটি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন তা জানার আগ্রহও আছে বৈকি ।
নুরুল হুদার পরিবারের অবস্থানগত যে ভৌগলিক মানচিত্র সিনেমায় দেখেছি, বলার অপেক্ষা রাখে না তাও আগে দেখিনি। বাড়িয় সামনের রাস্তা থেকে বাড়ির বারান্দা কিংবা কলেজের করিডোর কিংবা রেললাইন ধরে বাড়ি ফেরা সবই গল্পের ভৌগলিক অবস্থান ও সময়কে একটি স্থায়িরূপ দিয়েছে দর্শক হিসেবে এ সবকিছু সিনেমার সাথে আমার একটি যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
মাত্র একদিন আগে নির্মাতা মাসুদ হাসানের কলামে পড়েছিলাম; সমসাময়িক’রা ভাই বাবা ও বর তিনজনের সাথেই একই এক্সপেশনে কথা বলেন, ফ্রেমভর্তি সুড়সুড়ি আর অপারবাস্তবতার মধ্যে ‘মেঘমল্লার’ এক প্রকার স্বস্তির নিঃশ্বাস।
মুক্তিযুদ্ধের একটা গল্প দেখলাম অথচ নায়িকার শাড়ির আঁচল খসে মাটিতে পরেনি, একটাও লাশ নদীতে ভাসেনি, একটু গনসঙ্গীত ও রাখেনি, মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের বাইরে যে সকল মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙ্গালি দেশ, কাল ও সময়ের বাস্তবতায় সাথে যুদ্ধ করেছেন, জাহিদুর রহিম অঞ্জন ‘মেঘমল্লারে’ সেই যুদ্ধটাই স্যলুলয়েডে বন্ধি করেছেন।
মূলধারায় দাপিয়ে বেরানো গ্লামারাস নায়িকাকে চিরায়িত বাঙালী নারীতে পরিণত করার কাজটা শিল্পো নির্দেশনায় কাজ করা মানুষগুলো যথার্থ করেছেন, অপর্ণা ঘোষ না জানি একই ইমেজে বন্ধি হয়ে যান!
রেললাইন, আমগাছ, বৃষ্টি, সাদা ব্রীজ, নুরুল হুদা ই-৩ সাইনবোর্ড, নৌকা, মাঝি, ঘাট; বস্তুগত কিংবা অবস্তুগত সবকিছুকেই গল্পের অংশ করে তোলার এমন মুন্সিয়ানাও আগে দেখিনি অন্তন এ পারের বাংলা সিনেমায় ।
সিনেমা মানে যে একটা বড় কিছু, বিশাল আয়োজন তার পেছনে প্রতিদিনের শ্রম তা প্রতি ফ্রেমে প্রতীয়মান, সিনেমা দেখতে দেখতেই ভাবছিলাম কতদিন পর বাংলা সিনেমায় সহনীয় মাত্রার সাউন্ড ডিজাইন। যতটুকু বাস্তবতায় আমাদের প্রতিদিনের জীবনে আলোর প্রয়োগ ততটুকু আলোই পেয়েছি, চলমান চাকচিক্য পাইনি।
সিনেমা দেখতে দেখতে ভয় হচ্ছিলো যদি অভ্যাসগত কারনে বদহজম হয়ে যায়, যার প্রতিফলন সিনেমা শেষ করে ওয়াসরুমে যাওয়ার পথে দুই প্রেসকর্মীর আলাপে বুঝতে পারলাম, একজন আর একজনকে বলছেন; ‘কি দেখলাম খালি হাঁটে আর বৃষ্টি, বৃষ্টির শব্দে ঘুম চলে আসে’। সাউন্ড ডিজাইনার শুনলে নিশ্চয়ই খুশি হতেন।
সিনেমা সহ শিল্পের যে কোন মাধ্যম যখন বাজার নির্ভর শিল্প চর্চায় লিপ্ত স্রোতের বিপরীতে দাড়িয়ে থেকে একজন শিল্পীর শিল্পের প্রতি এক অনন্য অনুগত্যের নাম ‘ মেঘমল্লার ‘। বাংলা সিনেমায় মেঘমল্লার এক নতুন মাত্রা বিদেশে যাকে ‘ওয়েভ’ বলা হয়।
আর এই নিউওয়েভ কিংবা সুবাতাসের সবটুকু দাবিদার জাহিদুর রহিম অঞ্জন।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪১
খেলাঘর বলেছেন:
ধান ভানতে শিবের গীতি?