![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসুন ছন্দ শিখি( ১ম কিস্তি)
আনিয়ন বিন হায়দার(মাসঊদ)
আধুনিক সাহিত্য চর্চায় অনেকেই ছন্দের অপ্রয়োজন মনে করলেও অস্বীকার করার উপায় নেই।আদি যুগ থেকেই কবিতা নির্মাণে সকল ভাষার কবিগণ অনেক আলোচনা পর্যালোচনা করে বিভিন্ন প্রকার ছন্দ আবিষ্কার করেছেন।তেমনি বাংলা ভাষায় ও।
বাংলা ভাষায় ছন্দের ইতিহাস ও বহু পুরাতন।
’ছন্দ’ শব্দটি বাংলায় এসেছে সংস্কৃত ’ছন্দ:’ বা ’ছন্দস’ থেকে। শব্দটি গঠিত হয়েছে সংস্কৃত শব্দ ’ছন্দ’ (দীপন) এবং অস(র্তৃ) প্রত্যয় যুক্ত হয়ে। দীপন অর্থ দীপ্তিকরণ, শোভন, উদ্দীপন, উত্তেজন। অস্ প্রত্যয়টি এখানে স্ত্রী-বাচক। এটি বিশেষ্য পদ। 'ছন্দ' শব্দটির আভিধানিক অর্থ পদ্যবন্ধ বা পদ্যের বিভিন্ন মাত্রার রচনারীতি বা পদ্য রচনার ছাঁদ বা ভাষার সুষমামণ্ডিত স্পন্দন বা গতির মাধুরী ও স্বাচ্ছন্দ্য।
ভাষাবিজ্ঞানী ড.সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাক্যস্থিত (অথবা বাক্যাংশস্থিত) পদগুলিকে যে ভাবে সাজাইলে বাক্যটি শ্রুতিমধুর হয় ও তাহার মধ্যে একটা কাল-গত ও ধ্বনি-গত সুষমা উপলব্ধ হয় পদ সাজাইবার সেই পদ্ধতিকে ছন্দ (বা ছন্দ: ) বলে। গদ্য রচনার ক্ষেত্রেও ছন্দ-এর এ সংজ্ঞা প্রযোজ্য।
ছন্দটা ঠিক কি,তা আমরা আরেকটি উদাহারণ দিয়ে ভিন্ন ভাবে বোঝার চেষ্টা করি।
ইট তৈরির কথা দিয়েই শুরু করা যাক। প্রথমেই প্রয়োজন উৎকৃষ্ট মাটির। মাটিকে আবর্জনা মুক্ত করে স্বচ্ছ পানি মিশিয়ে হাত দিয়ে বা মেশিনের সাহায্যে বারবার নেড়ে চেড়ে নরম করার প্রয়োজন পড়ে। তারপর এই মাটিকে ফর্মার মধ্যে ফেলা হয়। ফর্মায় মাটি ঠিক মতো পুরতে পারলেই মাটি আর মাটি থাকে না, ইটে পরিণত হয়। এখানেই শেষ নয়, এই নরম ইটকে শক্ত করার জন্য উচ্চ তাপে দগ্ধ করা হয়। লক্ষণীয় যে, নরম মাটিকে হাত দিয়ে পিটিয়ে বা মেশিনে নেড়ে চেড়েই ইটের রূপ দেয়া যায় না। দরকার একটি ফর্মা যা কিনা মাটিকে সুন্দর একটি ইটের আকার দিতে পারে।
কবিতার প্রসঙ্গেও একই রকম ভাবে বলা যায়, প্রথমেই প্রয়োজন সুন্দর একটা বিষয়। যদিও যে কোনো বিষয়েই উৎকৃষ্ট কবিতা তৈরীর প্রমাণ যথেষ্ট রয়েছে, তথাপি কবিতা লেখার শুরুর দিকে বা তরুণ কবিদের ক্ষেত্রে বিষয়ের গুরুত্ব অবহেলা করা যায় না। বিষয় স্পষ্ট হলে, তাকে ভাষায় রূপ দেয়ার জন্য দরকার শব্দ। বিষয় ও শব্দের একত্র মেলবন্ধনে গঠিত হয় কবিতার ভাব, যা ইট তৈরির পূর্বের ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করে। এখন প্রয়োজন ফর্মার। কবিতার ক্ষেত্রে এই ফর্মাই হলো ছন্দ। বিষয় এবং শব্দকে যদি নির্দিষ্ট ছন্দের মধ্যে গ্রন্থিত করা যায় তবে অন্তত দগ্ধ করার আগে কাঁচা ইটের মতো মোটামুটি একটা কবিতা দাঁড়িয়ে যায়। তারপর একে পরিপক্ক করার জন্য প্রয়োজন হয় উপমা, অনুপ্রাস, চিত্রকল্প ইত্যাদির।
আপনি আধুনিক কবিতা লিখুন আর যাই লিখুন।তাতেও আপনাকে ছন্দ জানা দরকার।আধুনিক কবিদের মাঝে যারা গদ্য কবিতা লিখেছেন,তাদের সকলেই আগে ছন্দে কবিতা লিখে বিশেষ করে অক্ষরবৃত্তে হাত পাকিয়েছেন।
তাছাড়া,আধুনিক কবিদের মধ্যে যারা গদ্য কবিতা লিখে নাম কামিয়েছেন,তারা ছন্দ কবিতাও লিখেছেন।
ইদানীং সোশ্যাল মিডয়ায় দেখা যাচ্ছে,যারা লেখালেখি করছেন,তারা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।একদল ছন্দের পক্ষে,একদল বিপক্ষে।আপনি পক্ষে বিপক্ষে,যেখানেই থাকুন না কেন,তবে ছন্দ আপনাকে জানতেই হবে।কোন কালেই ছন্দ কবিতার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না।আপনাকে যদি বলি,ছোট বেলার একটি কবিতা বলেন তো,তখন আপনি খুব সহজেই বলতে পারবেন,"আতা গাছে তোতা পাখি" বা "আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা মামার বাড়ি যাই" বা আরো অনেক কবিতা বা ছড়া।
কিন্ত,যখন বলা হবে একটি গদ্য কবিতা মুখস্ত বলুন,নিশ্চই আর পেরে উঠবেন না।অন্ত্যমিল যুক্ত ছন্দের কবিতা খুব সহজেই মুখস্ত হয়।তারমানে এই নয় যে,আমি গদ্য কবিতার বিরোধী।গদ্য কবিতা যদি ছন্দে লিখা যায়,তবে ছন্দ ছাড়া কেন?
যেমন,মধু কবির সৃষ্টি অমিত্রাক্ষর ছন্দ,মুক্তক ছন্দ,মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বা মিশ্রছন্দ,অক্ষরবৃত্ত ছন্দবা স্বরবৃত্ত ছন্দ গদ্যকবিতার জন্যে খুবেই উপযোগী ছন্দ।আর এতে অনেক কবিই বিখ্যাত কিছু কবিতা রচনা করেছেন।
যেমন,শামসুর রহমানের"স্বাধীনতা তুমি" মধু কবির "মেঘনাদ বদ" ছাড়া ও অনেক উদাহরণ।
যাক,এসবে না গিয়ে আমরা ছন্দ নিয়ে আলোচনায় যাই।
ছন্দ শিখতে হলে প্রথমেই জানতে হবে,ধ্বনির বা স্বরের উচ্চারণ।প্রতিটি শব্দের স্বর থাকে।তাহলে,প্রথমেই বুঝতে হবে,স্বর কি?
একট শব্দের এক ঝোঁকে যতটুকু সাবলীল ভাবে উচ্চারণ করা যায়,ততটুকুই একটি স্বর বলে গণ্য করা হয়।এটি অনেকটাই ইংরেজি সিলেবল বা শব্দাংশের মত।
যেমনঃসিলেবল এর উচ্চারণ হবে,সি+লে+বল অথাবা, বাংলাদেশ=বাং+লা+দেশ,অথাবাঃদিবাকর=দি+বা+কর,অথবা,উজ্জ্বল=উজ+জল ইত্যাদি।
এখন আসুন,এই স্বর কত প্রকার?কি কি?এবং চেনার বা বোঝার উপায়।
স্বর দুই প্রকারঃ১)মুক্তস্বর, ২)বন্ধস্বর।
১)মুক্তস্বরঃশব্দের যে অংশ বা স্বর কোন রকম বাঁধা ছাড়া উচ্চারিত হয় বা শেষে স্বরবর্ণের ধ্বনি ব্যঞ্জিত হয়,তাই মুক্ত স্বর।
যেমনঃকমল=ক+ম+ল এই শব্দে তিনটি স্বর আছে,তিনটিই মুক্ত স্বর।
চেনার উপায়ঃমুক্তস্বর অধিকাংশই স্বাধীন বা পাশের বর্ণের প্রভাব মুক্ত হয়।
২)বন্ধস্বরঃযে স্বর উচ্চারণ কালে বাঁধা পড়ে বা ফুসফুস তাড়িত বাতাস বের হতে বাঁধা পায় তাই বদ্ধস্বর।
যেমনঃনির্বাক=নির+বাক এ শব্দটি দুটি বদ্ধস্বরে গঠিত।
আবার,মুক্তমন=মুক+ত+মন।
এখানে,একটি মুক্তস্বর"ত" দুটি বদ্ধস্বর"মুক,মন"।
স্বর চেনা হয়ে গেলেই ছন্দ শেখার প্রাথমিক কাজ শেষ।এখন স্বর অনুশীলনের জন্যে নিচে কিছু শব্দ ভেঙ্গে দেয়া হলো।
প্রথম=প্র+থম।
পানি=পা+নি
সন্দিহান=সন+দি+হান।
অত্যন্ত=অত+তন+ত
সীমন্ত=সী+মান+ত
অভিজ্ঞাত=অ+ভিগ+গ+তা
টুনটুনি=টুন+টু+নি।
এবার,নিচের শব্দ গুলো ভেঙ্গে মুক্তস্বর আর বদ্ধস্বর নির্ণয় করে কমেন্ট করুন।
আমাদের=
দুর্গত =
সাবলীল=
চমক=
চমকে=
আনন্দিত=
স্বাধীনতা =
চমৎকার=
চমৎকৃত=
লজ্জিত=
এগুলো সহ আরো শব্দ নিজে নিজে অনুশীলন করুন।এর পর আগামী পর্বে আমরা মাত্রা ও ছন্দ নিয়ে আলোচনা করব।আপনাদের উৎসাহ পেলে আলোচনা চালিয়ে যাবার জন্যে প্রেরণা পাব।
আপনাদের যে কোন বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন কমেন্ট বক্সে করতে পারেন।
***ধন্যবাদ প্রিয় ঝুমু আপু কে,আমাকে আলোচনা করার আহবান জানানোর জন্যে।
আলোচক,
আনিয়ন বিন হায়দার(মাসঊদ)
বিঃদ্রঃকিছুটা ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
©somewhere in net ltd.