নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

[email protected]

Work For Revival

ইউনিটি

Try to make a peaceful world

ইউনিটি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদরে উপাস্য কি আল্লাহ না টাকা?

১১ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১:২৬

বর্তমান সমাজে মানুষের প্রধান লক্ষ্য হল যে কোন উপায়েই হোক সম্পদশালী ও প্রতিষ্ঠিত হওয়া। সমাজের সবাই তাদের সম্পদ বৃদ্ধির চিন্তায় মগ্ন। যেন টাকা পয়সাই হচ্ছে জীবনে সাফল্যের চূড়ান্ত মাপকাঠি। কেউই তার বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট নয়। সবার চাহিদা ও আকাঙ্খা ক্রমাগত বাড়ছে। আর এসব চাহিদা ও আকাঙ্খা পূরণের জন্য মানুষ সবসময় নতুন নতুন সুযোগের সন্ধান করছে।

এখন অর্থ উপার্জন হল মানুষের লক্ষ্য, তা যে কোন উপায়েই হোক না কেন। ঘুষ নিয়ে হোক, অন্যের কাছ থেকে ছিনতাই করে হোক অথবা সুদের একাউন্টে টাকা জমিয়ে সেই টাকা দ্বিগুন বা তিনগুন হবার অপেক্ষা ইত্যাদি যে কোন উপায়েই হোক টাকা উপার্জন করতে হবে। কেননা এখনকার সমাজে টাকার সাথে সাথে বাড়ে স্ট্যাটাস; যার টাকা আছে সেই সম্মানিত, মান্যগন্য। যে যত বেশী দামের গাড়ীতে চড়ে, যার বিয়ে যত বেশী জাঁকজমক আর ব্যয়বহুল, যে যত বেশী খাবার অপচয় করতে পারে সে তত বেশী সফল। যে ব্যক্তি তেমন বেশী টাকার মালিক হতে ব্যর্থ হয়েছে, যেন তার জীবনটাই বৃথা। সবাই যেন অর্থ সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

টাকা পয়সার মালিক হওয়া আর নিজের প্রয়োজন ও আকাঙ্খা পূরণ



করার ব্যস্ততা এমনভাবে আমাদেরকে গ্রাস করেছে যে আমরা জীবনের মৌলিক বাস্তবতা পুরোপুরি ভুলে গিয়েছি। এ জীবনের বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করার কোন সময় আমাদের নেই। আমাদের অবস্থাটা এমন যেন চিরকাল বেঁচে থাকব। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, কাজকর্ম ও লাইফস্টাইল দেখে এমনটাই মনে হয় যেন আমাদের জীবন চিরস্থায়ী। আমরা ভুলে গিয়েছি যে কিছুকাল পূর্বে আমাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। আমরা এই সত্য বিস্মৃত হয়ে গিয়েছি যে, জীবন চিরস্থায়ী নয়। শীঘ্রই এ জীবনের শেষ হবে। আমাদের সবার জন্য চরম বাস্তবতা হচ্ছে মৃত্যু। আমাদের কারো জানা নেই আমরা কতদিন বাঁচব। হয়ত কয়েক বছর, কয়েক মাস, কয়েক দিন, কয়েক ঘন্টা এমনকি কয়েক মিনিট মাত্র। এই লেখা পড়ে শেষ করার পূর্বে আমাদের মৃত্যু হতে পারে। এ জীবনের প্রতি আমাদের নিয়ন্ত্রণ কত সামান্য!

এখন আমরা একটা পুরোপুরি বস্তুবাদী সমাজে বাস করছি। এখানে জীবনের উদ্দেশ্য হল সম্পদ জমা করা আর সর্বোচ্চ পরিমাণে জীবনের স্বাদ উপভোগ করা। নাচ-গান, গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড, দামী গাড়ী, পার্টি, ফিল্ম ইত্যাদি নিয়েই কাটছে আমাদের সময়। আর এসবের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের দরকার বেশী বেশী টাকা। এই “মানি এন্ড এনজয়” কালচার আমাদেরকে এতটাই ব্যস্ত রাখে যে আমরা আমাদের জীবনের মৌলিক বিষয়গুলো ভুলে যাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“নারী, সন্তান, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য, দাগ লাগানো অশ্ব, গবাদিপশু এবং ক্ষেত খামারের প্রতি আকর্ষণ মানুষের নিকট মনোরম করা হয়েছে। এই সবই ইহ জীবনের ভোগ্য বস্তু আর আল্লাহর নিকট আছে উত্তম আশ্রয়স্থল।” (আল কোরআন-০৩:১৪)



মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব কেননা আল্লাহ তার মধ্যে এক অনন্য চিন্তাশক্তি দান করেছেন। তাই এটা মানুষের বৈশিষ্ট্য হতে পারেনা যে, সে সারা জীবন ধরে একটার পর একটা চাহিদার পেছনে ছুটে চলবে আর কি উদ্দেশ্যে সে এই পৃথিবীতে এসেছে, মৃত্যুর পর তার কি পরিণতি হবে সে ব্যাপারে কোন চিন্তা-ভাবনা করবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কোরআনের শত শত আয়াতে মানবজাতিকে এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। কোরআন আমাদেরকে জীবনের প্রকৃত বাস্তবতার ব্যাপারে সবসময় সজাগ থাকতে বলেছে। কিন্তু আজ এ পৃথিবীর চাকচিক্য আমাদেরকে এমনভাবে ভোগবিলাসের চিন্তায় মগ্ন করে ফেলেছে যে, মানুষ যে কত দুর্বল তা আমরা উপলব্ধি করতে পারছিনা ।

এখন আমরা সামান্য সময়ের জন্যও চিন্তা করিনা যে, যে সমস্ত অর্থ ও সম্পদ আমরা পুঞ্জিভূত করছি তার কিছুই আমাদের সাথে কবরে যাবেনা। আমরা যতই টাকা পয়সা জমা করিনা কেন, তা কখনও মৃত্যুর ফেরেশতাকে আমাদের জীবন নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারবেনা । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“দুর্ভোগ তাদের প্রত্যেকের যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে; যে অর্থ জমায় ও তা বার বার গণনা করে- তার ধারণা যে তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে; কখনও নয়; সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়........।” (সূরা হুমাযাহ:০১-০৪)



“প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখে; যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও; এটা সঙ্গত নয়; শীঘ্রই তা তোমরা জানতে পারবে।” (সূরা তাকাসুর:০১-০৩)



আজ আমাদের অহংকারের কোন সীমা নেই । আমাদের ধারণা যে আমরা বহুদিন বাঁচব। যেভাবে আমরা ব্যয় করি, অপচয় করি এবং নিজের প্রশংসা করি তা থেকে আমাদের অহংকারের মাত্রাটা বোঝা যায়।



“মানুষ কি মনে করে যে কখনও তার উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না ? সে বলে (অহংকারের সাথে), আমি প্রচুর সম্পদ নি:শেষ করেছি। সে কি মনে করে তাকে কেউ দেখেনি ?” (সূরা আল বালাদ:০৫-০৬)



এখনও আমাদের সাবধান হওয়ার সময় আছে



ইসলাম মানুষকে তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার তাগিদ দেয়। সে কে? কোথা থেকে কি উদ্দেশ্যে সে এই পৃথিবীতে এসেছে ? মানুষ তার পরিচয় ও জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে বেখবর হয়ে পশুদের মত শুধুমাত্র আদিম চাহিদা ও প্রবৃত্তির দাস হয়ে সমস্ত জীবন কাটিয়ে দেবে- এটা হতে পারে না।

যদিও আমরা শুক্রবারে জুম্মার নামাজ উপস্থিত হয়ে আর মাঝে মাঝে মিলাদ মাহফিলে যোগ দিয়ে আল্লাহর সাথে চালাকি করতে চেষ্টা করি

কিন্তু বাস্তবে আমরা জানি যে শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে আমাদের জীবন পরিচালিত হচ্ছেনা। আমরা জীবন যাপন করি আমাদের নিজস্ব আকাঙ্খাগুলো পূরণের লক্ষ্যে। আমাদের ইসলাম সীমাবদ্ধ টুপি, পাঞ্জাবী ইত্যাদি কিছু বাহ্যিক আচার আচরণের মধ্যে। আমাদের পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তি হল যা আমাদের নিজেদেরকে সন্তুষ্ট ও অসন্তুষ্ট করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির প্রতি আমরা খুব সামান্যই খেয়াল করি। আমাদের ইচ্ছা-আকাঙ্খাগুলোই আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেন সেগুলোই আমাদের ‘উপাস্য’। আমাদের এ ধরণের মানসিকতার প্রতি নির্দেশ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,



“আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন যে তার নিজ খেয়াল খুশীকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে?” (সূরা আল ফুরকান:৪৩)



পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বার বার মানুষের অহংকার সম্পর্কে তাকে সাবধান করে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সতর্ক করেছেন বিচারের দিনের বাস্তবতা সম্পর্কে যা আমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,



“নিশ্চয়ই বিচারের দিন আসবে, এত কোন সন্দেহ নেই, তারপরও অধিকাংশ মানুষ অবিশ্বাসী।” (সূরা আল মুমিন:৫৯)



মানুষ যাতে নিজের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে চিন্তা করে সে জন্য ইসলাম এই পৃথিবীতে এসেছে। আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রত্যেককে চিন্তাশক্তি দান করেছেন যার মাধ্যমে আমরা আমাদের চারপাশের বাস্তবতা বুঝতে পারি। আমরা যখন চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করি তখন খুব সহজেই বুঝতে পারি আমরা কিভাবে পৃথিবীতে এসেছি এবং কোন উদ্দেশ্যে আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা না করাটা বোকামী ও উম্মাদনা বৈ আর কিছু নয়।

এ জীবনের পরে যে জীবন আসছে তা চিরস্থায়ী। তাহলে কেন আমরা এ জীবনকেই চিরস্থায়ী মনে করছি? যেহেতু মৃত্যু একটা নিশ্চিত সত্য এবং মৃত্যুর পরের জীবনটা চিরস্থায়ী এবং আল্লাহর বিচারে ঠিক হবে আমাদের সেই জীবন কেমন কাটবে সেহেতু আল্লাহ তাঁর রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে যেসব আদেশ ও নির্দেশ দিয়েছেন তার উপর ভিত্তি করে এ জীবন পরিচালিত করাই আমাদের জন্য একমাত্র করণীয়।



“এ পৃৃথিবীর জীবনটা খেলাধূলা আর তামাশা মাত্র। কিন্তু মুত্তাকীদের জন্য এর চাইতে উত্তম হল পরকালের আবাস। তাহলে কি এরপরও তোমরা বুঝবেনা?” (সূরা আল আনআম:৩২)



আমাদের বর্তমান সমাজ ইসলাম থেকে অনেক দূরে। এই সমাজে যেসব লক্ষ্য ও মূল্যবোধের প্রতি তাগিদ রয়েছে সেগুলো আল্লাহ প্রদত্ত লক্ষ্য ও মূল্যবোধ সমূহের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের জীবন কাটছে অন্যান্য প্রাণীদের মত শুধুমাত্র নিজের চাহিদা ও খেয়াল খুশীকে সামনে রেখে। কোন সুস্থ চিন্তা তথা আদর্শ আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে না। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরাধ, দুর্নীতি, নিপীড়ন, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদির ব্যাপক বিস্তার কোন আশ্চর্যের বিষয় নয়।



প্রিয় ভাই ও বোনেরা,





আমরা মুসলমান এই জন্য যে আমরা স্বীকার করে নিয়েছি যে আমরা আল্লাহর দাস, আল্লাহর আদেশ পালন করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা আমাদের কর্তব্য। কেননা আল্লাহতায়ালা পরিষ্কার ভাবে এ জীবনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করে দিয়েছেন।





“আমি মানুষ ও জ্বীন সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদাত করার জন্য।” (সূরা আয্ যারিয়াত:৫৬)



এর অর্থ হল পার্থিব ভোগ বিলাস নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য। ইসলাম মানুষকে খাওয়া ও পান করা, সন্তান জন্মদান ও আয় রোজগার করতে উৎসাহিত করে; কিন্তু এগুলোকেই জীবনের উদ্দেশ্য হিসাবে নির্ধারণ করেনি। তাই একজন মুসলমান কখনও নিজের চাহিদা ও আকাঙ্খাগুলোকে কেন্দ্র করে সমস্ত জীবন কাটিয়ে দিতে পারেনা।



প্রিয় মুসলমানগণ,



আজ সময় এসেছে ইসলামী লক্ষ্য ও মূল্যবোধ থেকে আমরা কতদূরে সেটা উপলব্ধি করার। কেন আমরা এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছি যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) কে ভুলে গিয়েছি। কেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) আমাদের জীবনে আর তত গুরুত্বপূর্ণ নয়? আমরা কিভাবে ভুলে গিয়েছি যে আল্লাহর সাথে আমাদের দেখা হবে এবং আমাদের কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে। কিভাবে আমরা এই তুচ্ছ জীবনের বিনিময়ে পরকাল বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছি? আর তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা জিজ্ঞেস করছেন,



“হে মানুষ ! কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম প্রতিপালক হতে বিভ্রান্ত করল?” (সূরা আল ইনতিফার:০৬)





মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৩:১৮

শয়তান বলেছেন: ট্যাকার উপ্রে কোন কিচ্ছু নাই

১১ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৩

ইউনিটি বলেছেন: শয়তান এর জন্য এইটা right

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.