নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা গল্প শুনুন,
একাদশ শ্রেণীর কক্ষে অফ পিরিয়ড। ছাত্র-ছাত্রীরা আরাম করে গল্প গুজব করছে একে অপরের সাথে। সাধারণত এমন অফ পিরিয়ড পাওয়া যায় না তো, তাই সবার কাছেই এই সময়টাতে আনন্দের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে।
এমন সময় ক্লাস ক্যাপ্টেন এসে সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলতে শুরু করল এই বলে ঘোষণা দিয়ে যে, দুইদিন পরে যে একুশে ফেব্রুয়ারি, তার জন্যে ফুল কিনবে বলে চাঁদা তোলা হচ্ছে। জনপ্রতি বিশ টাকা করে। তারপর স্বাভাবিকভাবেই সবাই টাকা দিতে লাগল তার কাছে।
- “ওই আরিফ, টাকা বের কর।” বলল ক্লাস ক্যাপ্টেন তাহা।
- “দাড়া, দিচ্ছি।” বলে টাকা বের করছে আরিফ। বের করতে করতেই জিজ্ঞেস করল, “কারা প্রোগ্রাম করছিস? ফুল দিতে কে কে যাবি? কখন যাবি?”
- “জানি না। স্যার বলল তুলতে, তাই আমি তুলছি টাকা” জবাব দিলো তাহা।
কি? খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা, তাই না? সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এক মুহূর্ত থেমে ভাববেন। আমি এর পর যে কথাগুলো বলব, সেগুলো শুনে আপনারা অনেকেই হাসতে পারেন, কিন্তু বিষয়টা একদমই ফেলনা নয়, গ্রহনযোগ্যতার বিচার আপনাদের উপর।
“জবাবদিহিতা” শব্দটি হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু শব্দের একটা। এর অর্থ হচ্ছে কোন কাজের বিপরীতে অন্যের করা প্রশ্নের সঠিক ও যৌক্তিক কারণ বলতে বাধ্য হওয়া। পরিবার, সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র যেকোন পর্যায়েই এই শব্দটা যোজন যোজন পার্থক্য তৈরি করতে পারে। যেকোন প্রতিষ্ঠানে, এমনকি রাষ্ট্রেও মানুষের মাঝে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে অস্পষ্টতা থেকে শুরু করে অশান্তির সৃষ্টির মূলে কলকাঠি নাড়ে এই জবাবদিহিতার অভাব, জবাবদিহিতার মানসিকতার অভাব। যদি সবার মাঝে এই জিনিসটা ঢুকিয়ে দেওয়া যেত যে, যে কেও যে কাজ ই করুক না কেন, ভালো বা মন্দ, তাকে সেটা নিয়ে কথা বলতেই হবে, জবাবদিহি করতে হবে, তাহলে যেকোন প্রকার অরাজকতা বহুলাংশে কমানো সম্ভব।
উপরের গল্পের আলোকে বলছি, যে শিক্ষক তাহাকে টাকা তুলতে বলেছিলেন, তিনি অবশ্যই ভালো উদ্দ্যোগের প্রেক্ষিতে টাকা তুলতে বলেছিলেন। আমি সে নিয়ে কথা বলছি না, আমি বলছি তাহা, ওই শিক্ষার্থী আরিফের প্রশ্নের জবাব দিতে না পারার প্রসঙ্গে। কিন্তু আজ তাহার মাঝে যদি জবাবদিহিতার বীজ বীপ্ত থাকত, তাহলে সে শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিতো যে, আয়োজন কারা করছে, এবং কে কে থাকবে, ইত্যাদি বিস্তারিত বিষয়গুলো।
আশ্চর্যের বিষয় হলো আরিফের মত বাকি যারা টাকা দিচ্ছে তারাও জানে না যে তাদের অনুষ্ঠান কিভাবে পরিচালিত হবে, কিভাবে কি। কারণ ক্লাসে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দেওয়া হয় নি। দেখার মত বিষয় হল তারা প্রশ্ন করার বা জানার আগ্রহও প্রকাশ করছে না।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় থেকেই ভবিষ্যতে বড় ঘটনার রূপ পাওয়া যায়। আজ আমরা দেখি যে নানা ক্ষেত্রেই বড় বড় কর্মকর্তারা দূর্নীতিগ্রস্থ এবং এর তেমন কোন কার্যকর জবাবদিহিতাও নেই জনগণের কাছে (ক্ষেত্রভেদে পার্থক্য আছে অবশ্যই)। এবং জনগনের একটা বিশাল অংশ এগুলো নিয়ে কোন মাথা ঘামায় না, তারা জানতেও চায় না। এর সাথে স্কুল কলেজের ঘটনাটির সাদৃশ্য পাওয়া যায় কি?
একটা বাচ্চার বেড়ে উঠার গুরুত্বপূর্ণ সময়টা শিশুরা পার করে বিদ্যালয়ে যা শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিক এক মাধ্যম। এবং একজন শিশুর প্রায় সমল মানবিক, নৈতিক, সামাজিক গুনের বিকাশ ঘটে এই বিদ্যালয়েই। তাহলে বিদ্যালয়ের, শিক্ষকদের কি উচিৎ না ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সাথে এসকল বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দেওয়া? প্রশ্ন করার ও জবাবদিহি করার গুনের বিকাশের দিকে নজর দেওয়ার? সময় এখনই। কারণ আমরা নিশ্চই আরেকটা আপেক্ষিক অন্ধ জাতি চাই না।
©somewhere in net ltd.