নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরি।

শুন্য বিলাস

জামাল হোসেন

শুন্য বিলাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প - শিকড়

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৪৪




আগুনের তেরচা শিখার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সাথে সাথে আনোয়ারা বেগমের বিলাপের ধ্বনিও ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল। প্রতিটি শিখার সাথে তিনি যেন তার কন্যার অবয়ব দেখতে পারছিলেন। এদিকে আব্দুস সোবহান ঠান্ডা মাথায় আগুনের তাপ নিচ্ছিলেন আর সিগারেট ফুকছিলেন। এই আগুন পোহানো তাদের কাছে নেহাত শরীর উষ্ণ করা নয়। বিশাল এক দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করা ঘটনার নিস্পত্তির চুড়ান্ত পর্ব আজকের এই শীতের রাতের আগুন পোহানো। আগুন পোহানোর সাথে সাথে এই দম্পতি টাইম মেশিনে ভ্রমন করে দুই বছর আগের এক সন্ধ্যায় চলে গেছেন ।

লোকেরা যখন আব্দুস সোবহানের বাড়িটিতে ভিড় করছিল তখন হাস্নাহেনা ফুলের মাতাল এক গন্ধে ম ম করছিল চারপাশ। বারান্দায় লাগানো এই হাস্নাহেনা গাছটি গন্ধ বিলিয়ে লোকেদের মস্তিস্কে ঝাঁকি দেওয়ার জন্য মনে হয় এই দিনটি বেছে নিয়েছিল । আর ছিল প্রবল জোছনা। শাদা জোছনার চাদরে ঢাকা সুলতানপুর গ্রামটিকে মনে হচ্ছিল সদ্য স্নান করা রুপবতী এক নারী। কিন্তু এইরকম উথাল পাতাল দিনে আনোয়ারা বেগমের বিলাপে সব তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে । আব্দুস সোবহান আর আনোয়ারা বেগমের একমাত্র কন্যা ফারজানা দুই বছর আগের ওই সন্ধ্যাবেলায় পুকুরপাড়ের আমগাছের ডালে ফাস নিয়ে আত্নহত্যা করে। তৃতীয় বারের মত এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করাটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি সে । যদিও আব্দুস সোবহান কিংবা আনোয়ারা বেগম কিছুই বলেননি। আনোয়ারা বেগম শুধু উঠানে শুকনো খড় বিচুলি গোছাতে গোছাতে ''আহারে নসিব রে ! আহারে কপাল রে ! '' বলে নিজে নিজেই মৃদু বিলাপ করে সান্ত্বনা খুজছিলেন ।খিল আটকে নিজের ঘরে অবস্থান করা ফারজানার কানে এই বিলাপের ধ্বনি না পৌঁছানোরই কথা । কিন্তু রাত নামার সাথে সাথে নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়ায় পরাস্ত হয় ফারজানা নিজেই।

গাছ থেকে লাশ নামিয়ে যখন বারান্দায় রাখা হয়েছিল তখন থেকেই মনে হয় হাস্নাহেনা ফুলের গন্ধ বিলানো তীব্র আকার ধারন করে। বাড়িটিতে জড়ো হওয়া প্রতিবেশীরা গভীর রাতে বাড়ী ফেরার সময়ও এই গন্ধ তাদের অবশ করে রেখেছিল । এস টি কলরিজের 'রাইম অব অ্যান্সাইন্ট মেরিনার' কবিতার নাবিকের ঘাড়ে ঝুলে থাকা অ্যালবাট্রস এর মত সুলতানপুর গ্রামের লোকেরা এই গন্ধ বয়ে বেড়িয়েছেন অনেক দিন। রীতি অনুযায়ী ফাঁস নেওয়া গাছ কেটে ফেলাই উত্তম। দাফনের তিন দিন পরে মিলাদের দিনে মসজিদের ইমামও আব্দুস সোবহানকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন । যথারীতি তাই করা হয়। তার পর থেকে শুরু হয় অদ্ভুত এক ঘটনা। ফি সপ্তাহে এক বার আব্দুস সোবহান একই রকম একটা স্বপ্ন দেখে থাকেন ।তার খোয়াব জুড়ে থাকে শিকড় আর শিকড়।তিনি দেখেন শিকড়ে চাপা পড়ে আছে তার কন্যার থেঁতলানো দেহ। যে রাতে সে এই স্বপ্ন দেখে পরদিন তীব্র জ্বর আর মাথা ব্যথায় সে বিছানায় পড়ে থাকে ।গ্রামের হরিপদ ডাক্তার পরে উপজেলা সদরে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখিয়েও কোন লাভ হয় নি । অতঃপর আবার মসজিদের ইমাম সাহেবের দ্বারস্থ হয় সে । তার পরামর্শক্রমে একজন কামলা সহযোগে আব্দুস সোবহান কেটে ফেলা গাছের শিকড় মাটি খুড়ে খুড়ে তুলে ফেলে এক শুক্রবারে। মাস খানেক রোদে রাখার পর শিকড়ের অত্যাচার হতে নিস্তার লাভ করার জন্য এক শীতের রাতে উঠানে আগুন জ্বালিয়ে দেন তারা। তেরচা আগুনে শরীর উষ্ণ করার পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ঘুম তাদের পরম আরাধ্য হয়ে উঠেছিল। আনোয়ারা বেগম আগুনের শিখার সাথে তার কন্যার মুখচ্ছবি ভেসে ঊঠছে বলে জানিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ।
অবশ্য আব্দুস সোবহান স্বপ্নে শিকড় দেখা থেকে নিস্তার পেলেও এবার আনোয়ারা বেগম অদ্ভুত সব খোয়াব দেখতে থাকেন। তার স্বপ্ন জুড়ে থাকে তেরচা আগুনের লেলিহান শিখা। তিনি দেখেন তার কন্যা আগুনে পুড়ে পুড়ে '' মা বাঁচাও, মা বাঁচাও'' বলে আর্তনাদ করছেন।
ছয় মাসের মাথায় আনোয়ারা বেগম পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তার স্থান হয়জেলার নারী ও কিশোরী সংশোধনাগার কেন্দ্রে। আনোয়ারা বেগমের পরিবারের সদস্যদের অনুমতি নিয়ে পুনরায় বিয়ে করে সোবহান ।বিয়ের বছর না পেরোতেই সন্তান নেওয়ার গ্রাম্য রীতি মেনে এক বছরের মাথায় এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন আব্দুস সোবহানের দ্বিতীয় স্ত্রী তাছলিমা। এক সন্ধ্যাবেলায় কন্যা ফাইজাকে দোলনায় দোলাতে দোলাতে দেয়ালে ঝুলানো ছবিটিতে চোখ গেলে রক্ত হিম হয়ে যায় তাছলিমার ।এইটা কি তার কন্যার বড়বেলার ছবি?নাকি ছবির এই রুপবতী মেয়েটিই কি তার ঘরে জন্ম নিয়েছে নতুন করে? ফাইজার নাক, মু্‌খ , চিবুক , কপাল সহ চেহারার অধিকাংশ গড়ন খোদিত হয়ে আছে দেয়ালের ওই ছবিটিতে।
আগুনের তেরচা শিখার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সাথে সাথে আনোয়ারা বেগমের বিলাপের ধ্বনিও ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল। প্রতিটি শিখার সাথে তিনি যেন তার কন্যার অবয়ব দেখতে পারছিলেন। এদিকে আব্দুস সোবহান ঠান্ডা মাথায় আগুনের তাপ নিচ্ছিলেন আর সিগারেট ফুকছিলেন। এই আগুন পোহানো তাদের কাছে নেহাত শরীর উষ্ণ করা নয়। বিশাল এক দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করা ঘটনার নিস্পত্তির চুড়ান্ত পর্ব আজকের এই শীতের রাতের আগুন পোহানো। আগুন পোহানোর সাথে সাথে এই দম্পতি টাইম মেশিনে ভ্রমন করে দুই বছর আগের এক সন্ধ্যায় চলে গেছেন ।

লোকেরা যখন আব্দুস সোবহানের বাড়িটিতে ভিড় করছিল তখন হাস্নাহেনা ফুলের মাতাল এক গন্ধে ম ম করছিল চারপাশ। বারান্দায় লাগানো এই হাস্নাহেনা গাছটি গন্ধ বিলিয়ে লোকেদের মস্তিস্কে ঝাঁকি দেওয়ার জন্য মনে হয় এই দিনটি বেছে নিয়েছিল । আর ছিল প্রবল জোছনা। শাদা জোছনার চাদরে ঢাকা সুলতানপুর গ্রামটিকে মনে হচ্ছিল সদ্য স্নান করা রুপবতী এক নারী। কিন্তু এইরকম উথাল পাতাল দিনে আনোয়ারা বেগমের বিলাপে সব তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে । আব্দুস সোবহান আর আনোয়ারা বেগমের একমাত্র কন্যা ফারজানা দুই বছর আগের ওই সন্ধ্যাবেলায় পুকুরপাড়ের আমগাছের ডালে ফাস নিয়ে আত্নহত্যা করে। তৃতীয় বারের মত এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করাটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি সে । যদিও আব্দুস সোবহান কিংবা আনোয়ারা বেগম কিছুই বলেননি। আনোয়ারা বেগম শুধু উঠানে শুকনো খড় বিচুলি গোছাতে গোছাতে ''আহারে নসিব রে ! আহারে কপাল রে ! '' বলে নিজে নিজেই মৃদু বিলাপ করে সান্ত্বনা খুজছিলেন ।খিল আটকে নিজের ঘরে অবস্থান করা ফারজানার কানে এই বিলাপের ধ্বনি না পৌঁছানোরই কথা । কিন্তু রাত নামার সাথে সাথে নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়ায় পরাস্ত হয় ফারজানা নিজেই।

গাছ থেকে লাশ নামিয়ে যখন বারান্দায় রাখা হয়েছিল তখন থেকেই মনে হয় হাস্নাহেনা ফুলের গন্ধ বিলানো তীব্র আকার ধারন করে। বাড়িটিতে জড়ো হওয়া প্রতিবেশীরা গভীর রাতে বাড়ী ফেরার সময়ও এই গন্ধ তাদের অবশ করে রেখেছিল । এস টি কলরিজের 'রাইম অব অ্যান্সাইন্ট মেরিনার' কবিতার নাবিকের ঘাড়ে ঝুলে থাকা অ্যালবাট্রস এর মত সুলতানপুর গ্রামের লোকেরা এই গন্ধ বয়ে বেড়িয়েছেন অনেক দিন। রীতি অনুযায়ী ফাঁস নেওয়া গাছ কেটে ফেলাই উত্তম। দাফনের তিন দিন পরে মিলাদের দিনে মসজিদের ইমামও আব্দুস সোবহানকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন । যথারীতি তাই করা হয়। তার পর থেকে শুরু হয় অদ্ভুত এক ঘটনা। ফি সপ্তাহে এক বার আব্দুস সোবহান একই রকম একটা স্বপ্ন দেখে থাকেন ।তার খোয়াব জুড়ে থাকে শিকড় আর শিকড়।তিনি দেখেন শিকড়ে চাপা পড়ে আছে তার কন্যার থেঁতলানো দেহ। যে রাতে সে এই স্বপ্ন দেখে পরদিন তীব্র জ্বর আর মাথা ব্যথায় সে বিছানায় পড়ে থাকে ।গ্রামের হরিপদ ডাক্তার পরে উপজেলা সদরে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখিয়েও কোন লাভ হয় নি । অতঃপর আবার মসজিদের ইমাম সাহেবের দ্বারস্থ হয় সে । তার পরামর্শক্রমে একজন কামলা সহযোগে আব্দুস সোবহান কেটে ফেলা গাছের শিকড় মাটি খুড়ে খুড়ে তুলে ফেলে এক শুক্রবারে। মাস খানেক রোদে রাখার পর শিকড়ের অত্যাচার হতে নিস্তার লাভ করার জন্য এক শীতের রাতে উঠানে আগুন জ্বালিয়ে দেন তারা। তেরচা আগুনে শরীর উষ্ণ করার পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ঘুম তাদের পরম আরাধ্য হয়ে উঠেছিল। আনোয়ারা বেগম আগুনের শিখার সাথে তার কন্যার মুখচ্ছবি ভেসে ঊঠছে বলে জানিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ।
অবশ্য আব্দুস সোবহান স্বপ্নে শিকড় দেখা থেকে নিস্তার পেলেও এবার আনোয়ারা বেগম অদ্ভুত সব খোয়াব দেখতে থাকেন। তার স্বপ্ন জুড়ে থাকে তেরচা আগুনের লেলিহান শিখা। তিনি দেখেন তার কন্যা আগুনে পুড়ে পুড়ে '' মা বাঁচাও, মা বাঁচাও'' বলে আর্তনাদ করছেন।
ছয় মাসের মাথায় আনোয়ারা বেগম পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তার স্থান হয়জেলার নারী ও কিশোরী সংশোধনাগার কেন্দ্রে। আনোয়ারা বেগমের পরিবারের সদস্যদের অনুমতি নিয়ে পুনরায় বিয়ে করে সোবহান ।বিয়ের বছর না পেরোতেই সন্তান নেওয়ার গ্রাম্য রীতি মেনে এক বছরের মাথায় এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন আব্দুস সোবহানের দ্বিতীয় স্ত্রী তাছলিমা। এক সন্ধ্যাবেলায় কন্যা ফাইজাকে দোলনায় দোলাতে দোলাতে দেয়ালে ঝুলানো ছবিটিতে চোখ গেলে রক্ত হিম হয়ে যায় তাছলিমার ।এইটা কি তার কন্যার বড়বেলার ছবি?নাকি ছবির এই রুপবতী মেয়েটিই কি তার ঘরে জন্ম নিয়েছে নতুন করে? ফাইজার নাক, মু্‌খ , চিবুক , কপাল সহ চেহারার অধিকাংশ গড়ন খোদিত হয়ে আছে দেয়ালের ওই ছবিটিতে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা দুবার এসেছে।

সুন্দর গল্প।

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৭

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ভাল ছিল +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.