নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি শ্লোক : চারটি রহস্যভেদ

০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

কচ্ছপের স্মরণে মাকড়সার মরণে

হট্টিটি পৃষ্ঠে কুমিরের দৃষ্টে.. !



আপনারা যাঁরা নিয়মিত আমার ছাইফাস পড়েন তাঁরা জানেন, আমার সমস্ত গল্পের আধার, আমার গল্প বলার আদর্শ আমার বাবা। আপনি যে প্রসঙ্গই বলুন না কেন আপনাকে পরপর কয়েকটি গল্প শুনিয়ে দেবেন তিনি, কোন গল্প দিয়ে যে কোথায় কোন সবক দেবেন তা আগেভাগে বুঝতেও পারবেন না আপনি। এসব গল্প ছেলেবেলা হতেই শুনে এসেছি। অবশ্য আমাকে তিনি কোনদিন কোন গল্প বলেননি। আমি শুনেছি সব কান পেতে। আপনাদের আমি বিভিন্ন প্রসঙ্গে যেসব দৃষ্টান্তমূলক গল্প বলি, তার অধিকাংশই আমার বাবার বলে যাওয়া।



আমার বাবা শিক্ষিত ছিলেন না তেমন। পড়তে পেরেছিলেন সেকালের চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত। পরে আর্টসের দিকে ঝোঁকেন। সার্টিফিকেইট না থাকুক, শিক্ষিতদের টেক্কা দিতেন যেকোন ব্যাপারে। এই ক্ষুদ্র বিদ্যা দিয়েই তিনি চার বছরের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক হয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক বাবাকে সবখানে পরিচয় করিয়ে দিতেন "ব্যারিস্টার" বলে। এমনই কথার ওজন ছিল তাঁর!



আমি তাঁর হাতের লেখা অনুকরণ করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু অত সুন্দর অক্ষরচেতনা আমার হয়ে ওঠেনি আজও। যাইহোক, বাবা সম্পর্কে ২০১২ সালে এখানে একবার লিখেছিলাম, আপনারা সেই লেখাটা আরেকবার পেতে অনেকবারই অনেকে অনুরোধ করেছেন, আলসেমির কারণে হয়ে ওঠেনি। আলসেমি আজও করব। আজও লিখব না।



বাবার গল্পপ্রচার সম্পর্কে আরেকটু বলি, সক্রেটিস মারা যাওয়ার পর প্লেটো তাঁর বাণী প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এবং প্লেটো যত যা বলেছেন, সব কথার শেষে প্রত্যেকবার উল্লেখ করেছেন যে, এ কথা আমার নয়, এ কথা পরম গুরু সক্রেটিসের!

ব্যাপারটা নিরেট ভক্তি আর শ্রদ্ধার।



আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যেন গল্পবক্তা হিসেবে কোথাও স্বীকৃতি না পাওয়া আমার বাবারই প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছি, তাঁর গল্প প্রচারের মাধ্যমে।



তাঁর সম্পর্কে আপনাদের অবশ্যই বলব, আপনারা তাগাদা দিতে থাকুন।



এবারে আসি উপর্যুক্ত শ্লোকটির ব্যাখ্যায়। শ্লোকটি শুনেছিলাম বাবার কাছে। এত যুগ পরে এখনও স্পষ্ট মনে আছে আমার। যুবক বয়সে শিক্ষকতাকালে এই শ্লোক ক্লাসে বলতে গিয়ে একটু থমকে গিয়েছিলাম। কোথায় যেন অসম্পূর্ণ অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছিল। তখন আরো দুটি পঙ্ক্তি জুড়ে দিয়ে উপমাটি সুগম করলাম।

পরিমার্জিত করে লিখলাম,





//কচ্ছপের স্মরণে মাকড়সার মরণে

হট্টিটি পৃষ্ঠে কুমিরের দৃষ্টে

কালে কালে বিজনে প্রাণীকুল সৃজনে

মাতাকুল অনুরূপ করে ভূপৃষ্ঠে।//



এখন কি কিছু আঁচ করতে পারছেন?



মাস দুই আগে এখানে প্রকাশ করা "অবন্তি তুমি কোথায়" কবিতাটিতে আমি লিখেছিলাম, "কচ্ছপের ডিম নিত্য আমায় টানে"। সেদিন কেউ এর রহস্যভেদ করতে পারেননি। আজ সেই রহস্য আমি ভাঙিয়ে দিচ্ছি।



যাঁরা মনোযোগী পাঠক এবং যাঁরা বাংলাকে অনুভব করেন, বোঝেন, তাঁরা হয়ত এতক্ষণে কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছেন। যদি না পারেন তবে সে দুর্ভাগ্য আমার নয়, দুর্ভাগ্য বাংলা ভাষার।



খেয়াল করলে দেখবেন, আমি ওখানে "প্রাণীকুল সৃজনে" কথাটি ব্যবহার করেছি। থাক, মেলাতে পারবেন না, সহজ কথায় বলি, ওই শ্লোকটিতে বলা হয়েছে চারটি প্রাণীর জন্মকথা বা রহস্য।



কচ্ছপ, মাকড়সা এবং কুমির আপনারা চেনেন। হট্টিটি চিনবেন বলে মনে হয় না। বুদ্ধদেব বসু আর হুমায়ূন আহমেদের প্রভেদ এবং দুর্ভাগ্য এখানেই।



হট্টিটি মানে হচ্ছে টুনটুনি।

টুনটুনি পাখি যখন ডিম পারে, তখন সে চিন্তাগ্রস্ত হয়। সে আকাশ দেখে আর ভয় পায়। ভাবে, ওই আকাশটার তো কোন খুঁটি নেই! যদি ভেঙে পড়ে?

আহা, যদি ভেঙে পড়ে তবে আমার ডিমগুলোর কী হবে ? আমার এত সাধের ডিমগুলো !



এই হচ্ছে মাতৃমনের মমতার সহৃদ অভিব্যক্তি। টুনটুনি আর রাতে ঘুমাতে স্বস্তি পায় না। পাছে আকাশ ভেঙে পড়ে ডিমগুলো গুড়িয়ে যায় এই ভয়ে সে চিৎ হয়ে ঠ্যাং দুটো আকাশের দিকে খাড়া করে দিয়ে পিঠ দিয়ে ডিম তা দেয় আর ভয়ে ভয়ে রাত কাটায়। আকাশ যদি ভেঙেই পড়ে তবে পা দিয়ে সে আকাশকে ঠেকিয়ে ধরে পরম মমতার ডিমগুলোকে রক্ষা করবে এই তার প্রতিজ্ঞা বা ভরসা! এই না হলে মাতৃমন!



টুনটুনির ছানা এভাবেই সৃষ্টি হয়।



ওভারব্রিজের তল দিয়ে হাঁটার সময় আমারও মনে হয় মাথায় একটা ছাতা ধরে রাখলে তবে ওভারব্রিজ ভেঙে পড়লে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যেত হয়ত!





এবার বলছি কুমিরের কথা।

কুমিরের ডিম তা দিতে বেশ সময় লাগে। কিন্তু কুমিরের যা স্বভাব, একনাগাড়ে বেশিক্ষণ পানি ছাড়া থাকতে পারে না। ডিম তো আর পানিতে বসে তা দেয়া যায় না।

তাই কুমিরের আছে ডিমে তা দেয়ার এক অভিনব প্রযুক্তি।



সে ডিমগুলোকে ডাঙায় বা তীরে রেখে সূর্যের দিকে মুখ করে পানিতে গিয়ে বসে। সূর্য যেদিকেই থাক, চোখের মাধ্যমে আলোক প্রতিফলন দ্বারা সে সৌরতাপকে কেন্দ্রীভূত করে তার ডিমের ওপর ফেলে। ডিম তাপ পায়। বাচ্চা ফোটে। ছানা সৃষ্টি হয়।

(টীকা দ্রষ্টব্য)



কচ্ছপের কথা বলব সবার শেষে, মাকড়সার মরণের ব্যাপারটি আপনাদের সবারই জানা আছে। মা মাকড়সা তার ডিম্বথলি নিজ পেটে বয়ে বেড়ায়। একটি থলিতে যতদূর মনে পড়ে দশহাজার পর্যন্ত ডিম থাকতে পারে। ওই ডিম থলিতে "তা" পায়, ডিম ফোটে, বাচ্চা সৃষ্টি হয় আর সে বাচ্চা মুক্ত পরিবেশে বের হবার ক্ষমতা না পাওয়া পর্যন্ত আহারস্বরূপ নিজের মায়ের শরীরের মাংসই খেতে শুরু করে। যেদিন শরীরটি সম্পূর্ণ খাওয়া শেষ হয়, মা মাকড়সার মৃত্যু হয়, সেদিনই মাকে খাওয়া বাচ্চারা বাইরে বেরিয়ে আসে। এই তার রহস্য।



আজ মা দিবস নয়। মা দিবস কবে আমি সে হিসেব রাখি না, দরকারও নেই তার। এই হলো মা। আত্মত্যাগ ও আত্মবিসর্জনের প্রতিভূ মা। এই মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন । সর্বোৎকৃষ্ট ভালোবাসাটুকু মাকে দিতে চেষ্টা করুন।

বাঘিনী মা আর বেড়াল মায়ের নবজাতক নিয়ে সংগ্রামের কথা আপনারা জেনে নেবেন।



লেখার স্পেইস শেষ। কচ্ছপের স্মরণে দিয়ে অভীষ্ট সমাপ্ত করি। কচ্ছপ ডিম পাড়ে বালিতে গর্ত করে। তার পরে সে ডিমের কথা ভুলে যায়। পানিতে নেমে মা কচ্ছপ সেই যে সাঁতার শুরু করে, আর তার খবর থাকে না। ডিম ওভাবেই বালি চাপা থাকে, চাই কি বছরের পর বছর। একদিন হঠাৎ মা কচ্ছপের স্মরণ হবে যে, আরে, আমি না অমুক জায়গায় সেবার ডিম পেড়ে এলাম! আহা, কোথায় আমার বাচ্চা?



যেখানেই থাকুক, সেদিনই ডিমগুলো ফুটে ছানা সৃষ্টি হয়।



খুঁৎ ধরতে আসবেন না। মন্তব্যে টীকা দেখুন। উত্তর পাবেন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:০৯

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: লেখাটির বক্তব্য বেশ উগ্র বা পাঠকের প্রতি অবজ্ঞাসূচক আমি জানি । আসলে এ লেখাটি ফেইসবুকের জন্য লেখা । ব্লগে অসংখ্য জ্ঞানী গুণীর সমাবেশ । আপনাদের সঙ্গে এসব আলোচনা যতটা নিশ্চিন্তে করা যায় ফেইসবুকে ততটা নয় । ওটা কেবলই হুজুগে লাফানো আর লাইক ব্যবসায়ী মানুষের আখড়া । বোধসম্পন্ন পাঠক ওখানে নেই বললেই চলে । আমার এই লেখার যাবতীয় বিরক্তি তাদের ওপর ।

টীকা—
শ্লোকের তথ্যগুলো কতটা সত্য আমি তা কখনই খতিয়ে দেখতে চাই না । কোনও খোঁজই আমি এ সম্পর্কে নিইনি । ইচ্ছে নেই । আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, গুগুল হাতড়ে ডিসকোভারি চ্যানেল টিপে খোঁজ নিতে পারেন ।

আমার ধারণা কথাগুলো সত্য । আমি ছেলেবেলায় বালির নিচে কচ্ছপের ডিম অনেকবার পেয়েছি । এই রহস্যগুলো শুনতে ভালো লাগে, গল্প করতেও ভালো লাগে । ক্ষতি নেই যদি এ মিথ্যেও হয় । এই সুন্দর মিথ্যেটির দোষে পৃথিবী তো আর ধ্বসে যাচ্ছে না ! :-)

২| ০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৭

মশিকুর বলেছেন:
আসাধারন লাগলো। আপনার বাবা খুবই জ্ঞানী লোক আর আপনি ওনার যোগ্য উত্তরসরী :) ভেঙ্গে না দিলে বুঝা কঠিন ছিল(অন্তত আমার পক্ষে)। কুমিরের ব্যাপারটা জানতাম না। মা দিবস, বাবা দিবস আমার কাছে হাস্যকর মনেহয় :)

"কচ্ছপের স্মরণে মাকড়সার মরণে
হট্টিটি পৃষ্ঠে কুমিরের দৃষ্টে
কালে কালে বিজনে প্রাণীকুল সৃজনে
মাতাকুল অনুরূপ করে ভূপৃষ্ঠে।"
-চমৎকার! চমৎকার!!


ভালো থাকুন :)

০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:২৬

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ব্লগের পাঠকগণ যে এই অবজ্ঞাসূচক লেখাকে খারাপ নজরে দেখছেন না এতেই আমি ধন্য এবং কৃতজ্ঞ । :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.