নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নজরুল সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা
(দ্বিতীয় খণ্ড)

০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১:৩৪

২. রবীন্দ্রনাথ- নজরুল বিরোধ?



"শ্বশুর না হইলে রবি

আমি হতাম বিশ্বকবি!"



রবীন্দ্রনাথ নজরুলের শ্বশুর ছিলেন— এই ধারণা বাঙালির মনে কোত্থেকে উদিত হল তা আমার জ্ঞানের অতীত। ...



( পূর্বালোচনাসূত্রের পর)



আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলাদেবীর পিতা বসন্তকুমার সেনগুপ্ত। তিনি ছিলেন ত্রিপুরার জমিদারের নায়েব; অন্যসূত্রে জানা যায়, তিনি ছিলেন কুমিল্লার তখনকার মেজিস্ট্রেট ড. উমাকান্তের পেশকার। এসব ইতিহাস এখন ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। অন্তত এটুকু নিশ্চিত যে, বসন্ত কুমার সে সময়ে জমিদার ছিলেন না। তবে একটু ভেবে দেখার বিষয় হল, বসন্ত কুমার অর্থাৎ প্রমীলাদের তেওতার বাড়িটি সেখানকার জমিদার বাড়ির দেয়াল ঘেঁষা ঠিক পাশের বাড়িই। সে অর্থে প্রমীলাদের বংশপরম্পরা জমিদার বংশের সঙ্গে যুক্ত কি না তা অনুসন্ধান সাপেক্ষ।



তেওতার ইতিহাস ঘেটে যেটুকু জানা যায়, তা হল, পনের শতকের গোঁড়ার দিকে পাঁচুসেন নামের এক ব্যক্তি সেখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করে পঞ্চানন ঠাকুর (মতান্তরে পঞ্চানন্দ ঠাকুর) নাম গ্রহণ করে বসবাস আরম্ভ করেন। এই পঞ্চানন সেন বা ঠাকুরকে প্রমীলার পূর্বপুরুষ ধরে নিচ্ছি আপাতত। (পূর্ব খণ্ডে এরকমই ইঙ্গিত করেছি।)



এবারে আসি রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে। তাঁর পূর্বপুরুষেরা জাতভ্রষ্ট পিরালী বামুন ছিলেন। সেই বামুনদের একজন ছিলেন পঞ্চানন ঠাকুর। এই পঞ্চানন ঠাকুরেরই পরম্পরা হলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথের পিতামহ।

ঠাকুর পঞ্চাননের পূর্বপুরুষের নিবাস বাংলাদেশের যশোরে। জাত নষ্টের ব্যাপারটা এখানে ঘটে। সে দীর্ঘ আলোচনা অন্যত্র হবে।



এখন এই দুই পঞ্চানন ঠাকুর যদি এক ব্যক্তি হনও, তাতেও তেমন কোন ভরসা দেখি না। এটা সত্য যে, রবীন্দ্রনাথ পরিবারের বাংলাদেশে জমিদারীসূত্রে আসা যাওয়া ছিল। এবং তেওতার জমিদার বিপ্লবী সমর্থক কিরণ শংকরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলেরও সৌহার্দ্য ছিল। আত্মীয়তার কোন আভাস এখানে মেলে না।



সে মতে, বংশপরম্পরা থাকেও যদি, তাতে বসন্ত কুমারের পরিবারের সঙ্গে কোন দহরম মহরমের নজির নেই।



রবীন্দ্রনাথ নজরুলের চাচাশ্বশুর— এই তথ্য কিভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আমি জানি না। উপর্যুক্ত কোন কবিতার চরণ নজরুল কখনও কোথাও কৌতুকচ্ছলে ব্যক্ত করেছিলেন কি না তাও আমার অজানা। আমি এখনও খোঁজ খবর করে যাচ্ছি।



রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুলের সম্পর্ক ছিল স্নেহ ও শ্রদ্ধার। রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে স্নেহস্বরূপ "তুই" বলে সম্বোধন করতেন।

এই দৃষ্টান্তটুকুই তাঁদের সম্পর্ক যাচাইয়ে যথেষ্ট।*



এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের স্নেহের পরিচয় মেলে নজরুলের ধুমকেতু পত্রিকার শুভেচ্ছা বাণীতে। রবীন্দ্রনাথ সেখানে লিখেছিলেন—



"কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষূ,

আয় চলে আয়রে ধুমকেতু।

আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,

দুর্দিনের এই দুর্গশিরে

উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।"



ধুমকেতু পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় এই শুভেচ্ছাবাণী ছাপানো থাকত।



নজরুল যখন কারাবরণকালে সেখানকার নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ অনশন আরম্ভ করেছিলেন, তখন স্নেহশীল রবীন্দ্রনাথ উদ্বিগ্ন হয়ে টেলিগ্রাম করেছিলেন—



"Give up hungerstrike, our literature claims you."



মানুষের মনে ওসব ভ্রান্ত ধারণা কে ঢুকিয়ে দিয়েছে জানি না! নজরুল যখন বিদ্রোহী কবিতাটি লিখে ফেললেন, তখন তিনি সোজা চলে এলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রথম। চেঁচিয়ে খলখলিয়ে বললেন, আমি তো আপনাকে এবার হারিয়ে দিতে পেরেছি! আপনি হেরে গেছেন!



রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন, কিভাবে?



নজরুল তখন তাঁকে ঘিরে বৃত্তাকারে তাঁর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে আবৃত্তি করতে লাগলেন



"বল বীর—

বল উন্নত মম শির!

শির নেহারি আমারি, নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির।

........"



রবীন্দ্রনাথ হিম হয়ে পুরোটা শুনলেন এবং মৌন পর্বতের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে বললেন, নজরুল, তুমি সত্যিই আমাকে আজ হারিয়ে দিয়েছ তোমার এই কবিতা দিয়ে!



এই ছিল তাঁদের মধ্যকার সম্পর্ক!



হ্যাঁ, বিবাদও ছিল তাঁদের মধ্যে। একটি বিবাদ ছিল। নজরুল রক্তের সমার্থক হিসেবে "খুন" শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, আর রবীন্দ্রনাথ তাতে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলেন। শেষতক কেই তাঁদের অভিমত পাল্টাননি। এটুকুই বিবাদ। এতে তাঁদের সম্পর্কেরও কোন অবনতি ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয় না।



লোকমুখে শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথ নাকি নজরুলের লেখা চুরি করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের ভাতিজি প্রমীলা (!) নাকি তাঁর চমতকার সব লেখা রবীন্দ্রনাথকে পাচার করে দিয়েছিলেন! এই কারণে নাকি নজরুল মরমে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছিলেন!

আরো প্রচলিত আছে যে, প্রমীলা নাকি রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থান বজায় রাখতে নজরুলকে স্লো পয়জনিং করেছিলেন!



যাঁরা এরকম ধারণা পোষণ করেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিংবা কাব্যশৈলী, কাব্যপ্রতিভা এবং ব্যক্তিচেতনার ধরণ ও প্রভেদ সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেন না।



আমাদের বাংলাদেশীদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের সাম্প্রদায়িক মনোভাব ও পূর্ববঙ্গবাসীদের প্রতি তাঁর প্রকাশিত বিদ্বেষের কারণে রবীন্দ্রনাথের প্রতি একটি যৌক্তিক মনঃক্ষুণ্নতা আছে। তা সত্ত্বেও এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা সমগ্র বঙ্গসন্তান অপেক্ষা অধিক উচ্চে।

সাহিত্য প্রতিভার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কারোরই তুলনা চলে না।



সে হিসেবে এটা নিশ্চিত যে, রবীন্দ্রনাথের মতো ব্যক্তিত্বের কখনই কারো লেখা চুরি করার বিন্দুমাত্রও প্রয়োজন পড়ে না।



প্রমীলাদেবীর সঙ্গে রবীন্দ্র পরিবারের কোন প্রকার যোগাযোগের নজির এখনও মেলেনি। সুতরাং স্লো পয়জনিং ইত্যাদি লোককথা কেবলই অজ্ঞের রটনা।



নজরুল সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন এবং সেখানে নির্যাতনেরও শিকার হয়েছিলেন। অন্যদিকে পরম আদরের শিশুপুত্র বুলবুলের অকালমৃত্যুতে নজরুলের আবেগী কবিহৃদয় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল।



নজরুলের বাকহীনতায় আক্রান্ত হবার পেছনে এ'দুটি বিষয় দায়ী বলে আমি মনে করি।



আজ এপর্যন্তই প্রমীলা- নজরুলের সংসার এবং এসংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণার জবাব পাবেন আগামী পর্বে।



*পুনশ্চ—



১. বাংলা কবিতার শ্রেষ্ঠ প্রতিভা জীবনান্দ দাশকে রবীন্দ্রনাথ কখনই দেখতে পারতেন না।



২. রবীন্দ্রনাথের মতো শ্রেষ্ঠ প্রতিভা যদি দ্বিতীয় কেউ থাকেন তবে তিনি বুদ্ধদেব বসু।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১:৫২

উড়োজাহাজ বলেছেন: সবই অমূলক ধারণা!

২| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১:৫৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: অতি চমৎকার একটি লেখা।

নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা লেখার পরের এই ঘটনাটা জানা ছিল না। রবীন্দ্রনাথ তার একটা কাব্যগ্রন্থ নজরুলকে উৎসর্গ করেছিলেন - এই মূহুর্তে নাম মনে করতে পারছি না। শুভকামনা এবং লেখায় অবশ্য অবশ্যই অনেকগুলো +++++++

০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ২:০৯

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে উৎসর্গ করেন বসন্ত গীতিনাট্যটি । এটি ছিল রবীন্দ্রনাথের সর্বপ্রথম পরিবারের বাইরের কাউকে বই উৎসর্গ করা ।

আর নজরুল রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেছিলেন সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থটি ।

৩| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ২:১৪

দি ভয়েস বলেছেন: চমৎকার বলেছেন ।


পোস্টে ++++++

৪| ০১ লা জুন, ২০১৪ সকাল ৭:১২

সকাল হাসান বলেছেন: জানলাম অনেক কথাই।

ধন্যবাদ জানানোর জন্য

৫| ০১ লা জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬

সোহেল খান বেস্ট বলেছেন: রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যে ছিল ভাগর্ম্ভে্্যর রবীন্দ্রনাথ যেমন নজরুলকে নজরুল তেমনি রবী্দন্দ্রনাথকে উনাদের আমাদের ধর্ম দিয়ে বিচার করার ঠিক হবে না।

৬| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ৮:৩৮

বোকামানুষ বলেছেন: ভাল লাগলো পোস্ট পড়তে অনেক কিছু জানতে পারলাম


বাংলা কবিতার শ্রেষ্ঠ প্রতিভা জীবনান্দ দাশকে রবীন্দ্রনাথ কখনই দেখতে পারতেন না


এই ব্যাপারটা জানা ছিলনা আজকেই প্রথম শুনলাম :||

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.