নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের খেলাঘরে পাশাঘর পাশে রেখে। ভাঙ্গা টেবিলে বসেছি খাতা কলম নিয়েকিছু লিখব বলে।গল্প বা কবিতার ছলে।

আবদুল্লাহ আফফান

খুব সাধারণ একজন, ভালবাসি ঘুরতে আর পড়তে। মানুষ হতে চাই।

আবদুল্লাহ আফফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: একদল দুষ্ট ছেলে (৪র্থ পর্ব)

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৪৮



পুকুরের চারপাশে হরেক রকম ফল, কাঠের গাছে ছড়াছড়ি। তার পেছনেই বিস্তির্ণ ফসলি জমি। ফসলের জমি এ জায়গার সৌন্দর্য অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। ঋতুর সাথে সাথে জায়গার রূপ বদলায়, বদলায় তার সৌন্দর্য। বর্ষায় অঝোড় বৃষ্টি ও উঁচু অঞ্চল থেকে নেমে আসা পানিতে এই ফসলের মাঠ জলাসয়ের রূপ নেয়। স্ফটিকের মতো চকচকে পানি। মুখাবয়ব ভেসে ওঠে পানিতে। দুরের আকাশকে জমিনে নামিয়ে আনে এই পানি। হালকা ঢেউ তুলে পুবের হাওয়া। জলাসয় নয় যেন সমুদ্র, কচুরিপানাগুলো ছেড়া দ্বীপের মতো। পানির টানে এখানে ওখানে ভেসে বেড়ায়। পানি কমে গেলে কচুরিপানাগুলো নিচু জায়গায় এসে জমে। সবুজের মধ্যে সাদা, হালকা গোলাপি আর বেগুনির মিশেলে ফুটে রাশি রাশি ফুল। ভোরের স্নিগ্ধ আলোর মত কচুরিপানার ফুল। এ ধূলির ধরার কোন দৃশ্য নয় যেন স্বর্গের কোন দৃশ্য।

পুকুরের এক কোনে ডাল-পালা মেলে আম গাছটা দাড়িয়ে আছে। গাছটা শিহাবের জন্মের কয়েকদিন পরে শিহাবের বাবা লাগিয়েছিল। শুভ, শিহাব, আলামিন, হাসিব, শাওন সবাই গাছে বসে আছে। অবসরে তার গল্প করে এখানে। আজও ব্যতিক্রম হয় নি।

সারাদিন শুয়ে বসে থাকতে ভাল লাগে? বলল হাসিব।
শুইয়া বইসা থাকতে কে কইছে, ঘুমা তাইলে। বলে হেসে উঠল শাওন।
শাওনের কথায় হাসিতে যোগ দিলো সবাই।
ফালতু জোক মারা বন্ধ কর। নাইলে নাক ফাটাইয়া দিমু।

হাসিবের নাকের প্রতি দূর্বলতা আছে। এখন পর্যন্ত যে কয়েকজনের সাথে মারামারি করেছে প্রায় সবারই নাক ফাটিয়েছে সে। তাই সহজে কেউ তাকে ঘাটতে চায় না। কারো সাথে তর্ক লাগলে নাক ফাটানোর কথা মনে করিয়ে দেয়।

শুভ শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল, কি শুরু করলে তোমরা। হাসিব তো ঠিকই বলেছে। সারাদিন আমরা কি করছি? আর যাই হোক এভাবে বন্ধ কাটানো যায় না।
আলামিন বলল, কি করবা কও।
তোমরা বলো, আমার মাথায় কিছু আসছে না, বলল শুভ।
সেটা পরে ভাবা যাবে এখন সবাই ওঠো, বাসায় যেতে হবে। অনেক আগে বের হয়েছি বলে ওঠে পড়ল শিহাব।
তুমি যাও আমি আলামিনদের বাড়ি যাই বলল শুভ।
ঠিক আছে যাও। কাজ শেষ করে আমিও আসছি বলল শিহাব।

যে যার মতো চলে গেলো। শুভ আলামিনের সাথে হাঁটতে লাগলো। আলামিনের জন্ম এ গ্রামেই তবে তার মূল বাড়ি এ গ্রামের না। তার বাবা এখানে এসে বাড়ি বানিয়েছে। তিনটা ঘর নিয়ে তাদের বাড়ি। একটাতে সে তার বাবা-মা থাকে। আরেকটাতে তার বড় ভাই বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকে। আরেকটাতে খাট ফালানো মেহমান এলে থাকে। এমনিতে সারা বছর ফাঁকাই থাকে। ওই ঘরের এক পাশে ধান, পাট, আলু রাখে।

আলামিন শুভকে বলল, তুমি ঘরে গিয়া বহো আমি গরুরে ঘাস দিয়া আহি।
সমস্যা নাই। তুমি কাজ করে আসো আমি নৌকায় বসি।
নৌকায় গিয়া বহো, চালাইতে যাইয়ো না আবার। চালাইতে পারবা না।
আরে পারব সমস্যা নাই, গত বার চালিয়ে ছিলাম না।
গেলবার যতটুকু চালাইছ এডারে চালালো কয় নাকি। বৈঠা ধরছ মাত্র।
আরে পারব সমস্যা নেই। গত বার একটু চালিয়েছি এবার পুরাই শিখে যাব।
নৌকা চালান কিন্তু এত্তো সোজা না বলে আলামিন বাড়ির ভিতরে গেলে।

আলামিনের বাড়ির পাশ দিয়ে খাল চলে গেছে। খালেই নৌকা বাঁধা। খালে সবসময় পানি থাকে। এ খাল বাজারের দিকে গেছে। নৌকা দিয়ে ধান, আলু, সবজি, পাট বাজারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পাইকারি বিক্রি করে। শুভ নৌকার সামনে দাঁড়িয়ে চারপাশটা দেখছে। খালে কচুরিপানায় ভরে আছে। সরু রেখা মাঝখানের কচুরিপানাগুলোকে আলাদা করে রেখেছে। ঘন কচুরিপানার মাঝ দিয়ে দেখা যায় স্বচ্ছ পানি। এদিক দিয়ে নৌকা চলে বলে কচুরিপানাগুলো আলাদা হয়ে আছে। নৌকা চালানোয় পাকা না হলে এর মধ্যে নৌকা চালানো কঠিন; আর শুভর জন্য অসম্ভব।

আফনে কেমন আছেন?
শুভ পিছনে তাকিয়ে দেখে আলামিনের আব্বু দাঁড়িয়ে আছে। কোমড়ে গামছা বাঁধা। চুল, গায়ে গাছের গুড়া লেগে আছে।
জ্বি ভাল আছি, আপনি কেমন আছেন?
আফনাগো দোয়ায় আল্লা ভালাই রাখছে। আফনার আব্বায় কেমন আছে?
জ্বি ভাল আছে।
নাওয়ে (নৌকায়) ওঠবেন নাকি?
জ্বি।
ওঠেন বলে বৈঠা খুজতে লাগলো তালেব আলী। বৈঠাটা কই যে রাখছে। আফনে দাঁড়ান আমি খুইজ্জা লইয়া আহি।

***

তালেব আলী মূল বাড়ি মেঘনার পাড়ে। প্রতি বছরই বাড়ি-ঘর, জায়গা-জমি ভেঙ্গে নদীর গর্ভে বিলিন হয়। নদীর পাশে বসবাসকারীদের দুই, তিনটা করে বাড়ি থাকে। একটা নদীর পাশে অন্যগুলি নদী থেকে দূরে। নদী ভাঙ্গন শুরু হলে সে বাড়িতে আশ্রয় নেয় তারা। নদী অনেক দূরে দেখে সেবার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেনি কেউ। রাক্ষসী নদী এক রাতে সব শেষ করে দিয়েছে। কেউ হাতের কাছে যা পেয়েছে তা নিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। অনেকে শুধু জীবন নিয়েই ফিরতে পেরেছে। পাশে কে আছে কে নেই তা দেখারও সুযোগ নেই। ঘুমের মধ্যে নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে অনেকে। তাদের লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। পানির টানে চলে গেলে অন্য এলাকায়।

স্তব্ধ এলাকা। নিখোঁজদের খুঁজতে নদীতে নেমেছে বলবানরা। শেষবারের মতো যদি দেখা মিলে। নিজ হাতে যদি কাফন-দাফন করতে পারে। নাহ নেই। কারো লাশ পাওয়া যায় নি। শোকে মাতম সবাই। শান্তনা দেয়ার মতো ভাষা নেই কারো। শুভর দাদা সে সময় তাদের এলাকার প্রাইমারী স্কুলের হেড মাস্টার। তার উদ্দ্যোগে অসহায়দের সাহায্যের জন্য ফান্ড খোলা হয়। সেখানে সামর্থবানরাসহ যে যার সাধ্য অনুযায়ী দান করেছে। এ ফান্ড থেকে তাদের চিকিৎসা, খাওয়া, কাপড়, মাথা গোজার জন্য ঘর বানিয়ে দেয়া হয়।

তালেব আলী তখন সবে মাত্র যৌবনে পা দিয়েছে। তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। তখন থেকে সে শুভর দাদার সাথে থাকত। চাকরী জীবন থেকে অবসর নিয়ে বাড়ি আসার সময় তালেব আলীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। শুভর দাদা তাকে বাড়ি করার জন্য জমি দিয়েছে। কাজ দিয়েছে। পরেও কোন প্রয়োজনে গেলে তাকে খালি হাতে ফিরায় নি। সে কারণে তালেব আলী শুভর পরিবারের কাউকে নাম ধরে ডাকে না। অবশ্য শুভর বড় চাচা অনেকবার নিষেধ করেছে। তাতে কোন কাজ হয় নি। এখন আর কেউ কিছু বলে না। প্রথমদিকে একটু ইতস্তত বোধ করলেও এখন তাদের সয়ে গেছে।

তালেব আলী বলল, আর কইয়েন না, কেডা জানি চহুইরডা পুশকুনিতে ফালাইয়া দিছে। পোলাপাইনের জ্বালায় কোন কিছু ঠিক মতো রাখন যায় না।
তালেব আলী নৌকার রশি খুলে বলল, সাবধানে আইয়া বহেন; নাইলে পইরা যাইবেন।

শুভ নৌকায় বসল। বৈঠা দিয়ে কচুরিপানাগুলো আলাদা করে নৌকা চালাচ্ছে তালেব আলী। একটু সামনে কচুরিপানা নেই। টলটলে পানি। গাছের পাতা ভেসে থাকে পানিতে। সেখানে নৌকা চালানো কষ্টসাধ্য না। তরতরিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। সেখানে নৌকা চালালে নেশা ধরে যায়। ঘোরের মধ্যে চলে যায় তালেব আলী। কয়েক যুগ পিছিয়ে যায় সে। ছোট্ট নাও। এক পাশে সে বসে আছে, অন্যপাশে তার বাবা নৌকা চালাচ্ছে। ছোট্ট তালেব আলী মাছ রাখার হাড়ি নিয়ে বসে আছে। কখন মাছ তুলবে। নদীর মাছগুলো রোদের চকচক করে। মাছের লাফালাফি বড় ভাল লাগে ছোট্ট তালেব আলীর। মানুষের ডাকে ঘোর ভাঙ্গে তার। ছোট্ট তালেব আলী মুহুর্তেই আধ বুড়ো হয়ে যায়।

নৌকা চালাতে চালাতে তালেব আলী বলল, এহন শালুক পাওন যায় না। বানের সময় শাপলা, শালুক হয়। সামনের যে জলা ডা ওইডাতে অনেক শাপলা হয়। আপনের দাদায় ওইগুলা খাইতে বড় ভালবাসতো। হবায় পানিত্তে তুলুইন্না শাপলা খাইছেন?
না, এমন শাপলা খাইনি।
পোড়া শালুক খাইছেন?
শালুক খাইনি কখনো।
আপনে বানের সময় আইলে আপনেরেও খাওয়ামু। পোড়া শালুকের গেরান আপনে জীবনেও ভুলবেন না। এক্কেবারে জান্নাতি গেরান। হবায় পানিত্তে তুলুইন্না শাপলার কথা কি কমু। হবায় পানিত্তে তুলুইন্না শাপলায় নেশা ধইরা যায়। দুনিয়ায় আছি বইল্লা মনে হয় না। মনে হয় জান্নাতে আছি।
আচ্ছা চাচা। বন্যার সময় ছুটি নিয়ে আসব। তখন মাত্র পানি থেকে তোলা শাপলা আর শালুক পোড়া খাব।

চলবে...

প্রথম পর্বের লিঙ্ক: https://bit.ly/2x6cnVr
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক: https://bit.ly/39xjGEd
তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক: https://bit.ly/2wr5EoV

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: মোটামোটি।

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৩

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১২ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৫

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লাগলো।
শুভকামনা রইলো।

১৪ ই মার্চ, ২০২০ রাত ২:১৭

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.