নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের খেলাঘরে পাশাঘর পাশে রেখে। ভাঙ্গা টেবিলে বসেছি খাতা কলম নিয়েকিছু লিখব বলে।গল্প বা কবিতার ছলে।

আবদুল্লাহ আফফান

খুব সাধারণ একজন, ভালবাসি ঘুরতে আর পড়তে। মানুষ হতে চাই।

আবদুল্লাহ আফফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প: এক পাগল বা পরাজিত সৈনিকের গল্প

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫১

মাঠের এক কোনে অযত্নে, অবহেলায় দাঁড়িয়ে আছে অর্ধশত বছর আগের বট গাছ। গাছের বেদির দু’একটি ইট খসে পড়ে গেছে। আস্তর উঠে ইটের জীর্ণ হাড় বেড়িয়ে আছে। এগুলোও যে কোন সময় একটি একটি করে খসে পড়ে যাবে। গাছের গোড়ায় সংসার পেতেছে কয়েক জোড়া ইঁদুর। গাছের ডালে শুকনা লতা-পাতা, ছোট ছোট ডাল-পালা দিয়ে ঘর বানিয়েছে কাক। মাটি বাইরে বেড়িয়ে থাকা অর্ধশত বছর আগের গাছের মোটা মোটা শিকড়ে দৌড়াদৌড়ি করে ছোট ইঁদুরগুলো। গাছের দিকে মানুষ তেমন না এলেও মাঠে ছেলে-মেয়েরা খেলে, সাইকেল চালানো শেখে। ছোট সন্তানকে হাঁটা শেখাতে আসে অনেকে। খেলতে গিয়ে কারো বল গাছের কাছে এলে ভয়ে ভয়ে বল নিয়ে চলে যায় তারা।

বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই বট গাছ। বড় বড় আন্দোলন শুরু হয়েছে এখানেই। এখানে অনেকেই নেতা, মহানেতার খাতায় নাম লেখিয়েছেন। সভা, মিটিং, তরুণ লেখকদের সাহিত্যআসর হতো এ বটতলায়। প্রেমিক যুগল, সদ্য বিবাহিতরা ভাব বিনিময় করতো। সব সময় মানুষের পদচারণা ছিল এখানে। সময়ের পরিক্রমায় আজ এই বটতলা জনমানুষ শূন্য। মিছিল-মিটিং, কবিতাপাঠ, সাহিত্য সমালোচনায় গুঞ্জরিত এলাকায় আজ শুধু কাকের কা-কা ডাক।

উসকো-খুশকো চুল। ময়লা পাঞ্জাবী। নতুন বা পুরানো পত্রিকা হাতে নিয়ে আসে ছেলেটা। গাছের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে পত্রিকা পড়ে। যেভাবে এসে ছিল ঠিক সেভাবেই চলে যায়। কোথায় কে কি করছে সে দিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। মাথা নিচু করে আপন মনে হেঁটে যায় সে। বিড়বিড় করে কি যেন বলে শোনা যায় না। লোকে বলে তাকে পাগল। এক সময় এই পাগল ছেলেটার ডাকে শ’খানেক মানুষ জড়ো হতো এই বটতলায়। তার শ্লোগান শুনে রাস্তায় নেমেছে ঘরকুনো ছেলে, ফুল হাতে প্রেমিকার আগমনের অপেক্ষায় থাকা প্রেমিক, বইয়ের সামনে পড়ে থাকা ছাত্র, কবিতা লিখতে খাতা কলম নিয়ে বসে থাকা কবি, সিগ্রেটের ধোঁয়া উড়িয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটা ভবঘুরে। সবার কণ্ঠে একই স্লোগান, ‘গাছ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’।

মানুষের স্বার্থের কাছে বলি হয়েছে একটা আন্দোলন, একটা প্রতিভা। পরাজিত হয়েছে একজন সৈনিক। ছেলেটা পাগল নয়; সে মানুষ, পরাজিত সৈনিক। স্বার্থের পিছনে ছোটা মানুষের সংস্রব ছেড়ে দিয়েছে সে। গাছ তার বন্ধু, সুখ-দুঃখের অর্ধাঙ্গীনি তার গাছই।

অন্যদিনের মতো আজও মাথা নিচু করে হাঁটছে সে। হাতে চকচকে নতুন পত্রিকা। কালির ঘ্রাণ এখনো গায়ে মেখে আছে। গাছকে বলল, এই দেখ বনের গাছ কেঁটে বেড়ানো লোকটা আজ পরিবেশ আন্দোলনের নেতা। ভণ্ডের দল সব। টাকা দিয়ে সবাইকে কিনে নিয়েছে। অর্থের কাছে সব অসহায় রে, সব অসহায়। গাছ লাগাতে টাকা লাগে। গাছ লাগানোর কথা বলতেও টাকা লাগে। আন্দোলন করতেও যে টাকা লাগে। এই টাকারে সবাই চিনল, আমিই চিনলাম না। আমি চিনলাম না।

একটু থেমে আবার বললে লাগলো, আমি আবার আন্দোলন করব। দেখিস। ফেস্টুন হাতে একা দাঁড়িয়ে থাকব। এইবার আন্দোলন করব গাছখেকো থেকে মানুষকে বাঁচনোর জন্য। অর্থলোভ থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য।

কয়েক দিন পর হয়ত রাস্তার মোড়ে দেখা যাবে ফেস্টুন হাতে ময়লা পাঞ্জাবী পড়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে লেখা, ‘গাছখেকো থেকে দূরে থাক’, ‘র্নিলোভী হয়ে বাঁচো’। সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে তার নতুন আন্দোলনের ছবি। হয়ত কেউ যোগ দিবে তার সাথে, কেউ ছবি তুলবে। দূর থেকে দেখে চলে যাবে কেউ কেউ। জয় পরাজয়ের পালা চলতে থাকবে। চলতে থাকবে নিরন্তর।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর প্রকাশ। ভালো থাকুন সবসময়

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২৬

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টা এডিট করে ঠিক করে নিন। দুবারে এসেছে।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৪২

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.