নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের খেলাঘরে পাশাঘর পাশে রেখে। ভাঙ্গা টেবিলে বসেছি খাতা কলম নিয়েকিছু লিখব বলে।গল্প বা কবিতার ছলে।

আবদুল্লাহ আফফান

খুব সাধারণ একজন, ভালবাসি ঘুরতে আর পড়তে। মানুষ হতে চাই।

আবদুল্লাহ আফফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেদনার নীলস্মৃতি

০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:০৬



ক্লান্ত বিকেল। নীল আকাশ। মৃদু হাওয়া গাছের পাতাগুলোকে নাড়াচ্ছে একটু পর পর। তাদের শান্তি ভঙ্গ করছে। মৃদু হাওয়ায় গাছের দু’একটি পাতা ঝড়ে পড়ে। পাতা ঝড়ে পড়ার সাথে সাথে অন্য পাতাগুলো কেঁপে উঠে। যেন হারানোর বেদনায় কাঁদছে সবাই। ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথায় ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। এটাই শেষ পরিনতি। যেন বসে থেকে দেখা ছাড়া কিছু করার নেই।

আছরের নামাজের পর মসজিদের সামনের বেঞ্চে বসে আছে বৃদ্ধ। পাশে আছে ছয় বছরের নাতি। মন তার খেলার মাঠে। সবাই খেলছে, শুধু সে বসে আছে। দাদুকে তার সবসময়ই ভাল লাগে। দাদু তাকে অনেক গল্প শুনায়। তার সাথে খেলে। তার সবচে’ ভাল লাগে যখন সে দাদুকে ঘোড়া বানায়।

বৃদ্ধ উদাস চোখে গাছের দিকে তাকিয়ে আছে। ফেলে আসা জীবনকে আবার দেখে। মনের অজান্তে চোখের কোণে অশ্রু ভিড় করে। ভারি ফ্রেমের চশমাটা নামিয়ে চোখ মুছল।

অবাক চোখে নাতি প্রশ্ন করে, দাদু! তুমি কাঁদছো?
কই না তো।
তোমার চোখে যে পানি।
ময়লা পড়ছে মনে হয়।
তুমি মিথ্যে কথাও বলতে পারো না।
আমি মিথ্যে কথা কি বললাম দাদু।
আম্মু বলেছে বড়দের সবাই সম্মান করে। কেউ তাদের কষ্ট দেয় না।
দুষ্টামি কণ্ঠে দাদু জানতে চায়, আমি কি বড়?
নয় তো কি, তোমার সব দাড়ি পেকে গেছে। তুমি বুড়া হয়ে গেছো।
দাদু হেসে নাতিকে আদর করে বলে, খুব পেকেছো তাই না।
খানিকটা গাল ফুলিয়ে নাতি বলে, আমি পেকেছি তোমাকে কে বলল। আমার গা কি লাল হয়ে গেছে? আম্মু বলেছে, আম পাকলে লাল হয়ে যায়।
আচ্ছা দাদু আমার ভুল হয়ে গেছে। তোমার আম্মুতো আমাকে শিখায়নি। তাই আমি জানি না।
আমি শিখিয়ে দিলাম। আর ভুল করবে না কিন্তু!
আচ্ছা দাদু, আর ভুল হবে না। তোমার রাগ কি কমেছে?
না কমে নি।
কি করলে কমবে?
একটা গল্প শুনাও তাহলে কমবে।
কোনটা বলব বলো। বুড়ি আর শিয়ালের গল্প, দুষ্ট রাখালের গল্প, কাঠবেড়ালি আর খরগোশের গল্প?
এগুলো না। নতুন কিছু বলো।
আচ্ছা। নতুন গল্প বলছি।
কার গল্প?
আমার গল্প, এই দেশের গল্প। পুরো পৃথিবীর গল্প।
বলো না দাদু বলো না!
বলছি, গল্প বলার সময় কোন কথা বলা যাবে না কিন্তু।
আচ্ছা।

(২)

তখন মাত্র পড়ালেখা শেষ করেছি। চাকরি খুঁজছি। ঢাকায় একটা মেসে থাকি আর চাকরি খুঁজি। পাশাপাশি কিছু করার চেষ্টা করছি। হঠাৎ শুনলাম মানুষ জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে। কোন অষুধে এসব রোগ ভাল হচ্ছে না। দিন দিন মানুষ মরছে। কারণ খুঁজতে বেরিয়ে এলো, এটা এক নতুন ভাইরাস। জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্ট এগুলো এই ভাইরাসের লক্ষণ। ভাইরাসটা খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যে অধিকাংশ দেশে এটা ছড়িয়ে গেলো। প্রতিদিন কয়েকশ’ মানুষ মারা যাচ্ছে। দিন দিন মৃতদের সংখ্যা বাড়ছে। এটা ছোঁয়াচে রোগ। স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা বন্ধ হলো। বন্ধ হলো কল-কারখানা, অফিস-আদালত। থমকে গেল জনজীবন। রাস্তায় মানুষের ভিড় নেই, গাড়ি নেই।

মানুষের বাইরে বের হওয়া বন্ধ হলো। যে যেখানে আছে সেখানেই বন্দি। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। বের হলেও প্রয়োজন শেষে ঘরে ফিরছে। তাদের মধ্যে আমিও একজন। আটকে গেলাম মেসে। কাজের বুয়া আসে না। নিজে রান্না করে খাই। সারাদিন রুমে থাকি, হাতে কাজ নেই। অর্থ সঙ্কটে পড়ে যাই।

তখন পৃথিবীর কি করুণ অবস্থা ছিল তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। সবকিছু এলোমেলো। এ আমাদের চির চেনা পৃথিবী নয়। যেন মৃত্যুপুরি। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু। বের হলেই হামলে পরবে। মানুষের মাঝে মৃত্যু ভয়, কিন্তু প্রকৃতিতে লেগেছে জন্মের আমেজ। নিজেদের বিস্তৃত করার আনন্দ। বায়ুদূষণের মাত্রা কমে দূষণমুক্ত হচ্ছে পরিবেশ। বাসা বাঁধছে বিলুপ্ত প্রায় পাখিরা। ছোট্ট ডলফিনগুলো হেসে খেলে বড় হচ্ছে। ডলফিনের রক্তে সমুদ্র লালের ভয় নেই। দ্বীপে নির্ভয়ে ডিম পাড়ায় ব্যস্ত মা কাছিম।

প্রকৃতির জন্য এই ভাইরাস আশীর্বাদ হলেও মানুষের জন্য ছিল অভিসাপ। এই ভাইরাস রূপ নিয়েছে মহামারিতে। রোগাক্রান্ত হয়ে, চিকিৎসার অভাবে, না খেয়ে মারা গেছে কয়েক লাখ। এদের মধ্যে আমার পরিবারও ছিল। শেষবারের মতো দেখতেও পারিনি তাদের।

এতক্ষণ অবাক চোখে গল্প শুনছিল ছোট্ট নাতি। সে বলল, দাদু তোমার কি কেউ নেই।
দাদা হেসে বলল, কে বলেছে নেই। এই যে তুমি আছো না। তুমিই তো আমার সব।
পরে কি হলো দাদু।

কিছু গল্পে শেষ থাকে না দাদু। ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। আজান হচ্ছে, চলো মসজিদে যাই ।
দুরের মসজিদ থেকে আজানের মধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। মুসল্লিরা মসজিদে আসছে। মসজিদে যাওয়ার জন্য দাদা নাতিকে নিয়ে ওঠল।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১:০০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: শ্রুতিমধুর লেখা।

০৬ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:০১

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: এই ভাইরাসের কারনে বহু লোকের চাকরি নেই। যাদের আছে তারা খুব একটা ভালো নেই। ফুল সেলারি পাচ্ছেন না। এমন কি ঈদে অনেকে বোনাসও পায় নি।

০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৩:৫৯

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: কেউই ভাল নেই। অর্থচিন্তা বা মানসিক ভাবে। সামলে নেয়ার চেষ্টায় আছি।

৩| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১:৪১

মানতাশা বলেছেন: @নেওয়াজ আলি গণহারে কমেন্ট করলেই কি মার্কেট ফাওন যায়বো?পড়ে তো কমেন্ট করতে হবে নাকি?

০৬ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:০০

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: এ গল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানাবেন আশা করি।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:৫৮

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ফজরের আজান হয়েছে ঘরে নামাজ পড়ে আপনার পোস্টে কমেন্ট করছি। সময় বদলে গেছে। মানুষ কার্যত গৃহবন্দি। অনেক সময় মানবতাও।

০৬ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০৩

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: সবকিছু বদলালেও মানুষ বদলায়নি।

গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.