![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব সাধারণ একজন, ভালবাসি ঘুরতে আর পড়তে। মানুষ হতে চাই।
ভ্যানের প্যাডেল চাপার মতো শক্তি পাচ্ছে না কিশোর আশরাফুল। সেই সকালে বেরিয়েছে। এখন বাজে বেলা ১১টা। শরীর আর চলছে না। শক্তি পাচ্ছে না সে। বড়রা তাকে যে কাজ দেয় সে কাজই করে সে। কোথায়ও জার ভর্তি পানি পৌঁছে দেয়া, প্রেসের মাল ডেলিভারি দেয়া, কারো বাসায় চাল-ডাল পৌছে দেয়া কোন কাজে তার আপত্তি নেই। ভ্যান তার সঙ্গি।
পানির পাম্প থেকে জার ভর্তি করে হোটেলে নিয়ে যাচ্ছে। আশরাফুলের চোখের সামনে ভেসে ওঠল, মায়ের কষ্ট মিশ্রিত হাসি হাসি মুখ। তার মা ফকিরাপুলের বিভিন্ন মেস, দোকানে বাটি খাবার দেয়। ভোরে বাজার করে নিয়ে আসে। বাসায় রান্না করে বাজারের ব্যাগে বিশেষ কায়দায় বাটি সাজিয়ে দোকানে দোকানে খাবার দেয়। একটা সময় হাপিয়ে ওঠে। রাজ্যের ক্লান্তি ভর করে মুখে। বছরখানেক আগেও আশরাফুল মায়ের সাথে খাবার দিতে যেতো। ছোট একটা থলে থাকত তার হাতে। ২টা, ৩টা বাটি জায়গা নিতো সেখানে। এখন তার ছোট ভাই কে নিয়ে যায়।
‘খানকির পোলা গাঞ্জা খাইয়া রাস্তায় নামছ নাকি।’
রং সাইড দিয়ে আসা একটা মোটরসাইকেলে ঘষা খায় আশরাফুলের ভ্যান। খেকিয়ে ওঠে মধ্য বয়সী মোটরসাইকেলের চালক।
‘গালি দেন ক্যা, উলডা দিক দিয়া আপনি আইছেন’।
‘আবার কথা কছ। থাপরাইয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু’।
‘আমি কি উলডা দিক দিয়া আইছি? মারবেন ক্যান?’
‘আবার কথা কছ’।
মোটরসাইকেল থেকে নেমে আশরাফুলকে থাপ্পর মারতে থাকে। তাদের ঘিরে অনেকে জড়ো হয়। কেউ কোন কথা বলছে না। চুপচাপ দেখছে সবাই। নিজেদের মধ্যে কথা বলছে কেউ কেউ। মূলত দোষী কে বুঝার চেষ্টা করছে অনেকে। কারো ভাষ্য, তুই ভ্যান চালাছ। হুণ্ডার সাথে টক্কর দিতে যাছ ক্যান? হুণ্ডার কিছু হলে ঠিক করতে পারবি? কেউবা আবার বলছে, আচ্ছা মতো দেও। বদের হাড্ডি। রাস্তায় নামলে হুস থাকে না।
হাত ঠাণ্ডা করে মোটরসাইকেলে ওঠে লোকটি। পাঞ্জাবিটা ঠিক করে মোটরসাইকেল চালু করে। মনে মনে ভাবল, কত প্রিপারেশন নিয়ে বের হলাম। মুডটাই নষ্ট করে দিলো। কত মানুষের সামনে কথা বলতে হবে। এমপি সাহেব আসবে।
আশরাফুল কাঁদতে কাঁদতে বলল, পারবেন তো আমগোর মতো গরিবগোর লগেই।
চোখ মুছতে মুছতে হোটেলের যাচ্ছে সে। তার সামনে ভেসে ওঠে ৩-৪ বছর আগের একটি দৃশ্য। স্মৃতির স্তুপ থেকে উঁকি দেয় দৃশ্যটি। তার বয়স ছয় কিংবা সাত। ফকিরাপুলের কাঁচা বাজারের কাছে খেলছে। যাত্রী নিয়ে আব্দুস সুবহান ফকিরাপুল মোড়ের কাছে একটি হোটেলের সামনে নামে। ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে ধাক্কা দেয় যাত্রী। রাস্তায় পড়ে যায় আব্দুস সুবহান। মাল বোঝাই পিকআপ তার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। পুরা ঘটনা আশরাফুলের চোখের সামনে ঘটে। দৌড়ে আসে সে। রক্তাক্ত বাবাকে ধরে কাঁদতে থাকে। বিনা চিকিৎসায় মারা যায় তার বাবা।
‘হালায় অমানুষ একটা। এমনে মারন লাগে?’
‘আহারে, পোলাডা ক্যামনে কানতাছে দেহো।’
কথাগুলো ভেসে আসল পাশের চায়ের দোকান থেকে। মোটরসাইকেল চালক চলে যাওয়ার পর ভিড় আস্তে আস্তে কমে গেছে। এ জগতে মানুষই সার্কাসের হাতি মানুষই রিং মাস্টার।
দুই
ব্যানার, স্টেজ দেখে সন্তুষ্ট আশরাফ আলী। ভাবল, টাকা ঠিক হাতেই গিয়েছে। ব্যানারের একপাশে ওর আশরাফ আলীর ছবি দেয়া। নামের সাইজটাও চোখে পড়ার মতো। শিশু দিবসে এতিমখানায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এমপি সাহেব আসবে দেখে ব্যানার, স্টেজ আরও টুকটাক খরচ সে দিয়েছে। এতিমদের খাওয়ার টাকা দিচ্ছে এমপি নিজে। এক সপ্তাহ ধরে বক্তব্য সাজিয়েছে। আসার আগে কয়েকশ’ বার বক্তব্য দিয়ে এসেছে।
‘বড় ভাই এসে গেছেন?’
‘হ্যাঁ, চলে আসলাম।’
‘কোন সমস্যা হয় নি তো?’
‘তেমন সমস্যা হয় নি। হুণ্ডার সামনে একটা ভ্যান এসে পড়ছিল। নেমে কষিয়ে কয়েকটা মারলাম।’
‘ভালো করেছেন। এমপি সাহেবের সাথে কথা হয়েছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি এসে পড়বে।’
‘সমস্যা নেই। তুমি অন্যান্য বিষয়গুলো দেখো। আমি এখানে আছি।’
এমপি সাহেবকে ঘিরে নিয়ে আসছে, ১০-১২জন ছেলে। তিনি স্টেজে বসলেন। পাশের চেয়ারে আশরাফ আলী। আশরাফ আলীর গুণগান গেয়ে পরিচয় করিয়ে দেয় এমপির সাথে। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। একে একে সবাই বক্তব্য দিচ্ছে। এমপির আগে বক্তব্য দিবে আশরাফ আলী। এক সময় তার ডাক আসে। মাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কাশি দিয়ে কথা বলা শুরু করে।
‘আসসালামু আলাইকুম। মহতি এই অনুষ্ঠানে এমপি সাহেব অংশগ্রহন করায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। সামনে উপস্থিত সোনামনিরা, তোমরা আল্লার তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য উপহার। তোমাদের দেখাশুনা করা আমাদের দায়িত্ব। তোমরা আমাদের সন্তান। তোমরা মন দিয়ে পড়াশুনা করবে। দেশের যোগ্য নাগরিক হবে। তোমরা এক সময় দেশের বিভিন্ন দায়িত্ব নিবে। আমরা সেই সোনালি দিনে অপেক্ষা করছি। আমরা চাই না কোন শিশু কাজ করুক। এখন ওদের কাজ করার সময় না। এখন পড়ালেখা করার সময়, খেলাধুলা করার সময়। যোগ্য হওয়ার সময়। সুবিধাবঞ্চিত সকল শিশুদের পড়ালেখার ব্যবস্থা আমরা করব। তারাও আমাদের সন্তান।’
এতিমখানার অনুষ্ঠানে পানি দেয়ার কাজ আশরাফুল পেয়েছে। হোটেলে পানি দিয়ে অনুষ্ঠানে আসে। পকেটে পলিথিন নিয়ে এসেছে। টাকা-পয়সা তো পাবেই, অনুষ্ঠানের খাবারও বাড়ি নিতে পারবে। খাবারের রুমে পানির জার সাজিয়ে রাখছে সে। পানি রেখে হল রুমে গেলো। টাকা নিতে হবে।
মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিছুক্ষণ আগে তাকে অন্যায়ভাবে মারা লোকটি। বক্তব্য শেষে হাততালি দিচ্ছে সবাই। অসহায়ভাবে সবার উপর চোখ বুলালো আশরাফুল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেলো সে।
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫২
আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
লেখায় বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। কতটুকু পারি জানি না।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৯
আহমেদ জী এস বলেছেন: আবদুল্লাহ আফফান ,
গল্পের প্রথম অংশটি নিত্যদিনের বাস্তব। ভালো লিখেছেন।
লেখাটি দু'বার এসেছে।