নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের খেলাঘরে পাশাঘর পাশে রেখে। ভাঙ্গা টেবিলে বসেছি খাতা কলম নিয়েকিছু লিখব বলে।গল্প বা কবিতার ছলে।

আবদুল্লাহ আফফান

খুব সাধারণ একজন, ভালবাসি ঘুরতে আর পড়তে। মানুষ হতে চাই।

আবদুল্লাহ আফফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিময় একটি দিন

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩১


১৬ ডিসেম্বর, ২০২২। শুক্রবার। জুমার দিন। সপ্তাহের বিশেষ দিন। আজকের তারিখটি দেশের বিশেষ দিন। দেশ স্বাধীন হয়েছিল এই দিনে। সে উপলক্ষ্যে রাস্তার ধারে লাগানো হয়েছে লাল-সবুজ বাতি। বাড়ির ছাদে, দোকানের সামনে উড়ছে পতাকা। ছোট ছোট পতাকা জানালার গ্রিলে। এদিনে ঘুরতে ভালো লাগে। অনেকদিন থেকেই ভাবছি, মাওয়া যাবো। ঢাকা থাকছি বহুদিন, এখনো মাওয়া যাই নি।

সকাল ১১টায় রামপুরা থেকে বেরুলাম। গন্তব্য মাওয়া। সঙ্গি একসময়ের কলিগ কাউসার লাবিব ও নুরুদ্দিন তাছলিম। আমার আগেই তারা হাজির। বাসে সরাসরি পোস্তগোলা। খানিকটা ঘুমিয়ে নিলাম বাসে। সরকারি ছুটি থাকায় রাস্তায় মানুষ বেশি। বাস পাওয়া যাচ্ছে না। পথ না পেয়ে সিএনজি নিলাম। পোস্তগোলা ব্রিজের পর থেমে গেছে শহুরে কোলাহল, গাড়ির বহর। সিএনজি চলছে। দুই পাশে সবুজের মেলা। মাঝে মাঝে দেখা মিলছে দোতলা টিনের বাড়ি। এমন বাড়ি দেখা আমার প্রথম। চোখে পড়ছে মসজিদ। মসজিদগুলোও দেখার মতো। সময় নিয়ে সেখানে যাওয়ার মতো।

সিএনজি থামিয়ে জুমার নামাজ আদায় করলাম। সিএনজি চালকও আমাদের সাথে জুমা আদায় করলেন। সময় কম। নাইলে গ্রামেও চক্কর দিতাম। মাওয়ার পথ ধরলাম। কিছু সময় পর মাওয়া ঘাটে নিয়ে এলো আমাদের। পুরো সময়ে দেশিয় রাজনীতি ও আমাদের অবস্থান নিয়ে মত বিনিময় হলো। বেদের রাজধানীতে এসে তাদের বিষয়ে চমৎকার কিছু জানালো কাউসার লাবিব। তাদের ধর্ম চিন্তা নিয়েও জানলাম কিঞ্চিত। ছোটবেলা থেকেই তাদের দেখে আসছি। বাড়িতে ঘুরে ঘুরে তারা পোকা তুলতে ডাকত। তাদের ডাকে কাউকে সাড়া দিতে দেখি নি। তাদের ঝোলায় সাপ থাকে শুনেছি। সাপ ধরা তাদের কাজের অংশ। ভাবতাম, তারা চলে কীভাবে- মাথার উপর ছাদ নেই। চাকরি নেই। ব্যবসা নেই। অথচ কোনদিন তাদের মলিন মুখ দেখিনি। বেদে নারীরা গালভরা হাসি। ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেরায়। কারো কাখে সন্তান।

মাওয়া ঘাট। অনেক বড় এরিয়া। কয়েকমাস আগেও এখানে গাড়ির ভিড় ছিল। এলাকা ছিল মানুষমুখর। রকমারি দোকান ছিল। কতজনে কতভাবে জীবিকা নির্বাহ করেছে এখানে। এখন সব ফাঁকা। হোটেলগুলো আছে। তবে ইলিশ ভাজার ব্যবসা মিটমিটিয়ে চলছে। ঘাটে গিয়ে ওপারে যাওয়ার লঞ্চের খোঁজে নামলাম। লঞ্চ আসবে বিকেল ৪টায়। সময় কম, তাই অন্য ব্যবস্থার খোঁজে নামলাম। ট্রলার নিবো কিনা জিজ্ঞেস করল কয়েকজন। ট্রলার ওপারে যাবে না। আশেপাশে ঘুরায় তারা। বাধ্য হয়ে লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঘাটে ছোট খাটো জুয়া খেলা হচ্ছে। সেখানেও উঁকি দিলাম। বুঝার চেষ্টা করলাম, মানুষ কেন জুয়া খেলে। কুমিল্লায় পোনোরার মেলা খুব প্রশিদ্ধ। অনেক দূর থেকে আসত লোকজন। সেখানে ভিন্ন জায়গায় কাঠ মেলা হতো। মূল মেলার পাশে হতো সেটি। থাকত মূল মেলার পরেও। সেখানে জায়গায় জায়গায় জুয়ার আসর বসত। নিজের অর্থ-সম্বল হারিয়ে কাঁদতে, মাথা চাপড়াতে দেখেছি। বাড়ি ফেরার জন্য জুয়ারিদের কাছে হাত পাততেও দেখেছি। তবুও মানুষের আস মিটে না। অল্পতে অনেক পেতে চায়। শেষে সব হারায়।

লঞ্চ এলো। লঞ্চের ছাদে বসে আছি আমরা। প্রমত্ত পদ্মার বুক চিড়ে চলছে লঞ্চ। কুয়াশায় খুব দূরে দেখা যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে পদ্মা সেতু। স্বপ্নের সেতু। উভয়াঞ্চল মিলন সেতু। পদ্মার ওপারে একসময় যাওয়ার মাধ্যম লঞ্চ, ফেরি। কুয়াশার কারণে মানুষের দূর্ভোগ, পন্য নষ্ট হওয়ার সংবাদ পত্রিকায় দেখতাম। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন মানুষের বাধ ভাঙ্গা উচ্ছাস দেখেছি। সেতুর নিচ দিয়ে যাচ্ছি, আনন্দ প্রকাশের শব্দ খেই হারিয়েছে। শুধু দেখে যাচ্ছি। বিভিন্ন নিউজ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। উপর দিয়ে যাওয়ার অনুভূতি কেমন হবে জানি না।


পরিকল্পনা ছিল দুপুরের খাবার খাবো নদীর উপারে। রাতের খাবার খাবো মাওয়া ঘাটে। মঙ্গল মাঝির ঘাট পৌঁছলাম বিকেল ৫টায়। একঘন্টা পর ফেরার শেষ লঞ্চ। কিছু হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানলাম- খাবারের বিশেষ কিছু নেই। তাই হালকা খাবার নিলাম। এলাকা ঘুরার জন্য ভ্যান। একঘন্টা ঘুরিয়ে আনার চুক্তি হলো। ভ্যান চালকের নাম হাসান। তিনি এলাকা ঘুরিয়ে নিয়ে গেলেন পদ্ম সেতুর গোড়ায়। সেখানে নতুন থানার সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম। সে পথে ফিরিয়ে আনল। এলাকার ঘরগুলো ব্লক ব্লক করে তৈরি। এতো গুছানো এলাকা গ্রামে দেখা যায় না। হাসান ভাই জানালো, পদ্মা সেতু বানানোর সময় যাদের বাড়ি, জমি নষ্ট হয়েছে। তাদের জন্য এ গ্রাম। সামনে গাছের বাগান। আছে স্কুল, মাদরাসা।

৬টার একটু আগে লঞ্চ ঘাটে নামিয়ে দিলো। পিঠা নিয়ে লঞ্চে ওঠলাম। এটা শেষ লঞ্চ, কোন ভাবেই মিস করা যাবে না। কিন্তু লঞ্চ ছাড়ল আধঘন্টা পর। রাতের আঁধার ভেদ করে লঞ্চ এগিয়ে যাচ্ছে। শীতের মধ্যে ছাদে বসে আছি। মাথার উপর পূর্ণ চাঁদ। জড়িয়ে ধরেছে শীত ও কুয়াশা। ধোঁয়া সাথে বেরুচ্ছে ফুলকি। দিনের আলোয় দেখা না গেলেও রাতের আঁধারে তা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। আগের নাবিকদের কথা ভাবছি। মাসের পর মাস সমুদ্র যাত্রা তাদের। নতুন একটু মাটির খোঁজ। একটা দ্বীপ বা দ্বীপ রাষ্ট্র। মানুষের খোঁজ। নতুন পথের সন্ধান। অদ্ভুত তাদের জীবন, চিন্তা। যদি এভাবেই চলতে থাকত লঞ্চ। পথ না শেষ হতো। হতো নতুন ভোর। দেখতে দেখতে মাওয়া ঘাট স্পষ্ট হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে হোটেলগুলো। রঙিন আলোয় দর্শনার্থীদের আহ্বান করছে। ডেকে ডেকে দৃষ্টি কাড়ছে। লঞ্চ ঘাটে ভিড়ল। নেমে খাবার হোটেল দেখতে লাগলাম। দামদর করছে কাউসার লাবীব। এক হোটেলে ঢুকে পড়লাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সামনে আসল- ইলিশ ভাজা, বেগুন ভাজা, গরম ভাত। সাথে শুকনা মরিচ। সেই সকালে খেয়েছি। মাঝে নাস্তা করেছি কয়েকবার। কিন্তু ভাতের আস মিটে কী তাতে। খাওয়া শেষে ফেরার পালা। অনেকে ইলিশ খেতে মাওয়া যাচ্ছে মাত্র। সপরিবারে খাওয়া শেষে ফিরছে কেউ কেউ। আমরা তাদের দলে।
বিজয়ের দিন শেষ হলো। শেষ হলো আমাদের সময়ও। এবার ফেরার পালা। যে যার পথে। এক সময় ফেরার পথটাও এক ছিল। সময় তা বদলে দিয়েছে। সাক্ষাৎতে র্দীঘ বিরতি। বিচ্ছেদ। আনন্দঘন দিন কাটিয়ে ভরাক্রান্ত মনে ফিরছি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:০৪

শেরজা তপন বলেছেন: মাওয়া যে বেদেদের রাজধানী সেটা জানা ছিল না।
ব্রিজ হবার পরে দুইঘাটের বর্তমান চালচিত্র জানা হোল আপনার লিখা পড়ে সাথে অনেক ছোট ছোট তথ্য।

*কিছু মনে করবেন না; আপনার পোস্টে দুটো ভুল আছে। প্রথমে আপনাদের গ্রুপের ছবি। সেটা দুটো বার্তা দেয়; নিজের প্রচার করা আর কোন ধর্মীয় প্রচারণা ভিত্তিক পোস্ট মনে করে অনেকে এড়িয়ে গেছেন। মাছ ভাজার ছবিটা প্রথমে দিলে ভাল হোত।
দুই; লেখা একটানা না দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিশেষ কিছু অংশ বোল্ড করে দিলে ভাল হোত।

আমার কাছে চমৎকার লেগেছে আপনাদের ছোট্ট ব্যতিক্রমী ভ্রমণ কথা। সবাইতো পদ্মা সেতু দিয়ে যায় আর অনুভূতি ব্যক্ত করে- আপনারা করেছেন উল্টোটা।


০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০৭

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকাটা বেদেদের রাজধানী। যা মাওয়ার কাছেই।
ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ঠিক করে নিচ্ছি। যদিও ধর্ম প্রচার বা নিজেদের প্রচার কোনটাই উদ্দেশ্য আমার ছিল না। স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা ছিল তাতে।

তবে বিভিন্ন এলাকার মানুষের অভ্যাস, খাবার-দাবার, চিন্তাসহ নানা ছোট বিষয় আমাকে আকৃষ্ট করে। যার জন্য ভ্রমন আমাকে টানে।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৪০

নতুন নকিব বলেছেন:



চমৎকার ভ্রমন বৃত্তান্ত।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০৮

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: এরকম ভ্রমন সময় সুযোগ পেলেই চলে যাবেন।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০৮

আবদুল্লাহ আফফান বলেছেন: ভ্রমনের সুযোগ পেলেই বের হই। কিন্তু চাকরি ব্যস্ততা ছুটি দেয় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.