![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বন্ধুত্বকে ভালবাসি। নতুন দের সাথে পরিচয়কে ইনজয় করি। আর বাস্তবভিত্তিক লেখা পড়ি ও লিখি। পসন্দের ব্যক্তিত্বের মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইসলামিক ল’প্রেকটিস করতে খুব পসন্দ করি। সমাজের যেকোন বিষয়ে ইসলামিক ল’ এর আলোকে সমাধান দিয়ে থাকি। একটি ইসলামিক ল’ ডিপার্ট মেন্টে কর্মরত।
---------------------------------------------------------------
--------------------------------------------------------------
...যে মেয়েটি অন্যের স্ত্রী হতে যাচ্ছে তাকেও জানতে হবে, শ্বশুরবাড়ীর লোকদের সাাথে কিরূপ আচরণ করা উচিত।
এ বিষয়ে আমাদের দেশের নিকট অতীতের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শাসছুল হক ফরিদপুরী রহ. এদেশের মেয়েদের উদ্দেশ্য করে লিখেছেন,
“ নিজের স্নেহময়ী মাতার ন্যায় প্রত্যেক কাজে শ্বাশুরীর আদব করিও এবং সর্বাবস্থায় তাহার সন্তুষ্টি অগ্রগণ্য মনে করিও।
তোমার শ্বাশুরী যদি কোন কাজে তোমাকে তাম্বীহ (সতর্ক) করেন,তবে উহা নীরবে শুন। যদি উহা মনের বিপরীত হয় এবং কটু কথাও বলেন,যাহা আশা করা যায় না। তবুও সুস্বাদু শরবতের ন্যায় অনায়াসে পান কর-সহ্য কর।
খবরদার! কস্মিনকালেও কঠোরভাবে প্রতি উত্তর করিও না। নিজের মায়ের সমতুল্য তাঁহার খেদমত করিও। আর মেহেরবান পিতার ন্যায় শ্বশুরের তাজিম ও শ্রদ্ধা কর।
শ্বাশুরীর বেলায় যেসব আদব-কায়দা লিখিয়াছি , শ্বশুরের বেলায়ও সেদিকে লক্ষ্য রাখিও। শ্বশুর বাড়ীর কোন মহিলা যদি বয়সে তোমার চেয়ে বড় হয় যেমন, স্বামীর বড় ভায়ের বিবি। তবে তাহার সাথে কথাবার্তা,উঠা-বসায় তাঁহার মর্তবার প্রতি লক্ষ্য রাখিও। তাঁহার সাথে দুধ-মিশ্রির মত এমনভাবে মিলিয়া মিশিয়া থাকিও যেন উভয়ে সহোদরা ভগ্নিদ্বয়-একজন বড় ও একজন ছোট।
যদি তুমি এমন ব্যবহার কর ,তবে অপর পক্ষও তোমার সাথে এরূপ ব্যবহার করিবে। আর যদি সে বয়সে ও মর্তবায় তোমার চেয়ে ছোট হয় ,তবে তাহার সাথে স্নেহ- মহব্বত সুলভ ব্যবহার কর। অনুরূপ স্বামীর ভগ্নী ভাগিনী ইত্যাদির সাথে যার যার মর্তবা অনুযায়ী সম্মান ও নম্র ব্যবহার কর। ” (আল্লামা শাসছুল হক ফরিদপুরী রহ, গ্রন্থাবলী, খ.২,পৃ.৯৯)
অত্যন্ত চমৎকারভাবে হযরত রহ. বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন।
শশুড়-শাশুড়ী ও স্বামীর বাড়ীর অন্যদের খেদমত করা আইনের দৃষ্টিতে যদিও পুত্রবধুর উপর বর্তায় না;তদুপরি একথা অনস্বীকার্য যে,আইনের শুষ্ক-রুক্ষ পথে সুখের সংসার রচিত হয় না।
এর জন্য প্রয়োজন-ত্যাগ,ভালবাসা,অন্যকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা,সেবা ইত্যাদি মহৎ গুণাবলীর চর্চা। সর্বোপরি নবীজীর সুন্নাহ অনুসরণ। এসবের মধ্য দিয়ে সুখের নীড় রচিত হবে। তাই পুত্রবধুর উচিত স্বেচ্ছায় শশুড়-শাশুড়ীর খেদমত করা। একে সৌভাগ্যের বিষয় মনে করা। যেমনটি হযরত ফরীদপুরী রহ. বলেছেন।
তবে এখানে মনে রাখতে হবে, বৌ হয়ে যে মেয়েটি বাড়ীতে আসলো তাঁর প্রতি শ্বশুরবাড়ীর লোকদেরও অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। তাদের ভুলে গেলে চলবে না, সেও একজন মানুষ। একটি সম্মানীত স্থানে সে অধিষ্ঠিত।
নিজ সন্তান, নিজ ভাই যেমন মা-বাবা ও ভাই-বোনদের নিকট প্রিয়,সম্মানিত তেমনি পুত্রবধুটি, ভায়ের বৌটিও সকলের নিকট প্রিয় ও সম্মানের হতে হবে। সে শ্বশুর বাড়ীর সেবিকা বা চাকরানী হয়ে আসেনি যে আসা মাত্রই তাকে গামলাভর্তি কাপড় ধুইতে দিব। থালা-বাসন পরিষ্কার থেকে শুরু করে সবকাজ তাঁর একার হবে। এমনও শোনা যায় যে, বিয়ের পরদিনই নতুন বৌকে থালা-বাসন থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড় সবকিছু পরিষ্কারের একটার পর একটা আদেশ করা হয়। এরপর একটু এদিক-সেদিক হলেই শুরু হয় বকাঝকা। সবাই ভুলে যায়, সেও একটি মানুষ। তাঁরও আছে স্বাদ-আহলাদ। তাঁরও দরকার আছে বিশ্রামের।
আরো মারাত্মক মানসিকতা হল, শশুর,শাশুড়ী ,ননদ,দেবর ও ভাসুর সকলেই মনে করে,ঘরের বৌ থেকে খেদমত নেয়াটা তাদের মৌলিক অধিকার। বৌ তার স্বামীর খেদমত করল কি করল না। সেটা বড় বিষয় নয়। পরিবারের অন্যদের খেদমত হল কি না সেটাই বড় বিষয়। এমনকি এ মানসিকতার কারণে অনেক পরিবারে বৌ আসার পর কাজের লোক রাখার প্রয়োজন অনুভব করা হয় না।
এই ভিত্তিহীন,অহেতুক ‘অধিকার জ্ঞান’ থেকেই শুরু হয় পুত্রবধুর সাথে পরিবারের অন্যদের ঝগড়া। এই ঝগড়ার পরিণতি যে কী ভয়াবহ,তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মনে রাখা উচিত, পুত্রবধু শশুর-শাশুড়ীকে আপন পিতা-মাতার মত তখনি মনে করবে,যখন শশুর-শাশুড়ীও তাকে আপন মেয়ের মত মনে করবে। এ আচরণ কখনোই কাম্য নয় যে, নিজের মেয়ে কবিরা গুনাহ করলেও মা তার দোষ গোপনে উঠে পড়ে লাগে। আর পুত্রবধুর রান্না করতে সামান্য দোষ হলে তা অন্যের নিকট বলার জন্য ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়।
একটি চাড়া গাছ থেকে ফল পেতে হলে গাছটি বড় হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে হয়। একটা সময় পর্যন্ত পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ও পানির ব্যবস্থা করতে হয়। এরপর ফল পাওয়া যায়। বৌ পরিচয়ে যে মেয়েটি আসল , সে তো একটি কচি চারা গাছ। তাই শ্বশুর বাড়ীর লোকদের উচিত তাকে সময় দেয়া। তাঁর সাথে ভাল আচরণ করা। তাঁর সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেখা। নতুন পরিবেশে যেন নিজেকে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করা।
শ্বশুরবাড়ীর লোকজন যখন তাঁর সাথে ভাল আচরণ করবে তখন সেও সকলের সাথে ওইরূপ আচরণ করবে।
সাথে এও মনে রাখতে হবে,আইনের দৃষ্টিতে পরিবারের সকলের খেদমত করা পুত্রবধুর দায়িত্বে পড়ে না। অতএব একে অন্যদের অধিকার ভাবা যাবে না। সে খেদমত না করলে তাকে বাধ্য করা যাবে না। একে কেন্দ্র করে ঝগড়া-কলহ করা যাবে না। তবে হাঁ, যেমনটি পূর্বে বলেছি-সুখের সংসার গড়ার জন্য পুত্রবধুর উচিত স্বেচ্ছায় সকলের খেদমত করা। একে সৌভাগ্যের বিষয় মনে করা। এটিই সুন্নাহ। অর্থাৎ ঘরের যাবতীয় কাজ করবে স্ত্রী। আর বাহিরের কাজ করবে স্বামী। এভাবে উভয়দিকে ভারসাম্য থাকতে হবে।
মোটকথা, বৌ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্য- উভয়দিক থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ কাম্য। তবেই রচিত হবে একটি সুখী পরিবার।
(উতসঃঅধমের একটি বই এর ভূমিকাল চুম্বকাংশ। )
©somewhere in net ltd.