নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইলম অর্জন করা

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬

১.জানা ছাড়া মানা যায় না
ইসলাম যেহেতু নিখুঁত মতাদর্শ এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, সে জন্যে জ্ঞান ছাড়া এ আদর্শ ও জীবন-ব্যবস্থার অনুসারী হওয়া যায় না। সহজ কথায় বলতে গেলে, ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যার অপরিহার্য দাবি হলো, তাকে জানা ও মানা। আর মুসলিম বলা হয় সেই ব্যক্তিকে যিনি ইসলামকে জানেন এবং মানেন। দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করা সবার জন্য আবশ্যক। দুনিয়াতে চলার জন্য ও ইবাদত করার জন্য দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করা ফরয। অপরপক্ষে দ্বীনের খেদমত করার জন্য এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসারে জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য। কারণ একজন প্রকৃত আলেম একটি জাতি বা দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। ইমাম বুখারী (রহঃ) সহীহ বুখারীতে ‘কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান অর্জন করা’ শিরোনামে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এবং তার প্রমাণে কুরআনুল কারীমের নিম্নোক্ত আয়াতটি নিয়ে এসেছেন। যে ব্যক্তি যত বেশী জানবে সে তত বেশী আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করতে সচেষ্ট হবে এবং অহংকার করা থেকে দূরে থাকবে। সাথে সাথে প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহকে বেশী-বেশী ভয় করবে। এটাই একজন আলেমের বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে অনেক আলেম ও সাধারণ মানুষ তাদের সন্তান-সন্ততিকে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিতে চান না। এটা অতি পরিতাপের বিষয় বৈ কি? কেননা দ্বীনি ইলম না থাকলে, দ্বীনের খিদমতে এগিয়ে আসবে কিভাবে? সেকারণ কুরআন সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করা সবার জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। ইলম অর্জন দ্বারাই ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ইলম অর্জন করা কল্যাণ লাভের উপায়। আল্লাহ যার কল্যাণ চান সে ব্যক্তিই এ পথের পথিক হয়। ইলম অর্জন করলে জান্নাতে যাবার পথ সহজ হয়। আর যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য পথ চলে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। ইলম অর্জনের মাধ্যমে নবীগণের উত্তরাধিকারী হওয়া যায়। ইলম অর্জন করে অপরকে শিক্ষা দিলে, সে অনুযায়ী আমলকারী যে নেকী পাবে, শিক্ষাদাতাও অনুরূপ নেকী পাবে। জ্ঞান অর্জনকারীর উপর আল্লাহ রহম করেন। আর ফেরেশতাগণ, আসমান যমীনের অধিবাসীগণ, পিপিলিকা এমনকি সমুদ্রের মাছও দোয়া করতে থাকে। দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিয়ে গেলে মৃত্যুর পরেও তার ছওয়াব পাওয়া যায়। অবশ্য এই মূলনীতিটি সকল কার্যকরী ও নির্বাহী ব্যাপারেই প্রযোজ্য। আল্লাহতায়ালা মানব জীবনের সর্বস্তরে ইসলামকে মানার ও কার্যকর করার জন্যেই পাঠিয়েছেন। না জেনে, না বুঝে যেহেতু কোনো কিছুই মানা ও কার্যকর করা যায় না, ইসলাম তো বটেই, সেজন্যে ইসলামকে জানা বুঝা এবং ইসলামের সঠিক ও যথার্থ জ্ঞানার্জন করা অতীব জরুরি ও অপরিহার্য। মহাবিশ্ব ও এই পৃথিবীর মালিক মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের জীবন যাপন পদ্ধতি হিসেবে দ্বীন ইসলামকে শুধু পাঠিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং ইসলামকে জানা-বুঝারও নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন, ইসলামের জ্ঞানার্জন করার। ইসলামের বাস্তব শিক্ষা দেয়ার জন্যে তিনি রাসূলও পাঠিয়েছেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষক ও আদর্শ নেতা হিসেবে বাস্তবে শিক্ষা দানের মাধ্যমে তাঁর সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে গেছেন।
২.কুরআনের আলোকে জ্ঞানার্জন
এখানে ইসলামের জ্ঞানার্জন সম্পর্কে আল কুরআন থেকে মহান আল্লাহর কিছু বাণী উল্লেখ করছি :
১.সুতরাং জেনে রেখ, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই। (মুহাম্মাদ-৪৭ আয়াত : ১৯)
২.তিনি আরো বলেন, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে। পড় এবং তোমার প্রতিপালক মহা মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে (এমন জ্ঞান) যা সে জানতো না। (আলাক্ব-৯৬ আয়াত : ১-৫)
৩.মানুষ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে। এজন্য মহান আল্লাহ যারা জানে এবং যারা জানে না তাদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান’? (যুমার-৩৯ আয়াত : ৯)
৪.আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে; আল্লাহ পরক্রমশালী ক্ষমাশীল। (ফাতির-৩৫ আয়াত : ২৮)
৫.তিনি আরো বলেন, আল্লাহ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত কোন সত্য মা‘বূদ নেই এবং ফেরেশতাগণ, ন্যায়নিষ্ঠ বিদ্বানগণও (সাক্ষ্য প্রদান করেন) তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (ইমরান-৩ আয়াত : ১৮)
৬.সুতরাং এমন কেন করা হয় না যে, তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হতে এক একটি ছোট দল বহির্গত হয়, যাতে তারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করতে পারে, আর যাতে তারা নিজ কওমকে (নাফরমানী হতে) ভয় প্রদর্শন করে, যখন তারা ওদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা সতর্ক হয়। (তাওবাহ-৯ আয়াত : ১২২)
৭.তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত। (মুজাদালাহ-৫৮ আয়াত : ১১)
৮.বলো : প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও। (তোয়াহা-২০ আয়াত : ১১৪)
৯.যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করে জেনে নাও। (আন নহল -১৬ আয়াত : ৪৩)
১০.আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে তাকে (তালুতকে) শাসক মনোনীত করেছেন, কারণ তাকে তিনি অঢেল মানসিক (জ্ঞানগত) ও শারীরিক যোগ্যতা দান করেছেন। (বাকারা-২ আয়াত : ২৪৭)
১১.আল্লাহকে সেভাবে স্মরণ করো, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। (বাকারা-২ আয়াত : ২৩৯)
১২.আল্লাহ অতি প্রশস্ত উদার মহাজ্ঞানী। তিনি যাকে চান জ্ঞান দান করেন। আর যাকে জ্ঞান দেয়া হয়, সে তো বিরাট কল্যাণের অধিকারী। শিক্ষা লাভ করে তো কেবল তারাই যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী। (বাকারা-২ আয়াত: ২৬৮-২৬৯)
১৩.যেমন আমি তোমাদের থেকেই তোমাদের কাছে একজন রাসূল পাঠিয়েছি। সে তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শুনায়, তোমাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও বিকশিত করে তোলে, তোমাদের আল কিতাব ও হিকমাহ (কর্মকৌশল) শিক্ষা দেয়, তোমাদের আরো শিক্ষা দেয় তোমরা যা কিছু জানো না সেগুলো। (বাকারা-২ আয়াত : ১৫১)
১৪.এমন কোনো জিনিসের পিছে লেগে পড়ো না, যে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান নেই। (ইসরাঈল-১৭ আয়াত : ৩৬)
১৫.আল কুরআন পাঠ করো তরতিলের সাথে-অর্থাৎ বুঝে বুঝে ভাব প্রকাশযোগ্য ভঙ্গিতে। (মুজ্জামিল-৭৩ : আয়াত ৪)
১৬.যখন কুরআন পাঠ করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে পাঠ শুরু করবে। (আন নহল-১৬ আয়াত : ৯৮)
১৭.আল্লাহর বান্দাহদের মধ্যে কেবল জ্ঞানসম্পন্ন লোকেরাই তাঁকে ভয় করে। (ফাতির-৩৫ আয়াত : ২৮)
১৮.কিন্তু জ্ঞানের অধিকারী লোকেরা বললো : তোমাদের অবস্থার জন্যে দুঃখ হয়! যে ব্যক্তি ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ করে, তার জন্যে তো আল্লাহর পুরস্কারই উত্তম। (কাসাস-২৮ আয়াত : ৮০)
১৯.এবং আমি এই কুরআনকে পৃথক পৃথক করে নাযিল করেছি যেন আপনি উহা মানুষের সম্মুখে থেমে থেমে পড়তে পারেন, আর আমি উহাকে নাযিল করার সময়ও (অবস্থামত) ক্রমে ক্রমে নাযিল করেছি। (যেন উহা সহজ ও সুষ্পষ্টভাবে বোধগম্য হয়) (বনী ইসরাইল-১৭ আয়াত : ১০৬)
২০.আমি উহাকে এক বিশেষ দারায় আলাদা অংশে সজ্জিত করেছি। (ফুরকান-২৫ আয়াত : ৩২)
২১.উহারা কি দাবী করে যে কুরআন (আপনার) বানানো? আপনি বলুন, তোমরা যদি তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও তাহলে একটি সূরা অন্তত: তৈরী করে নিয়ে এস। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত যাদের সাহায্য প্রয়োজন বোধ কর, সাধ্যমত তাদেরকেও ডেকে নাও। (ইউনুস-১০ আয়াত : ৩৮)
২২.নিশ্চয়ই কুরআন আমিই নাজিল করেছি। আর অবশ্যই উহার হেফাজতের দায়িত্ব আমারই। (হিজর-১৫ আয়াত : ৯)
২৩.হে রাসূল দ্রুত কুরআন আয়ত্ত করার নিমিত্তে আপনি আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না। কুরআন সংরক্ষণ করা এবং উহা পাঠ করিয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব। সুতরাং আমি যখন (জিব্রাঈলের জবানে) উহা পাঠ করি, তখন আপনি উহা অনুসরণ করুণ। অত:পর উহা ব্যাখ্যাদানও আমার জিম্মাদারী। (কিয়ামাহ-৭৫ আয়াত : ১৬ থেকে ১৯)
৩.হাদিসের আলোকে জ্ঞানার্জন
আল কুরআনের এ আয়াতগুলো থেকে মুসলিমদের জন্যে জ্ঞানার্জনের অপরিহার্যতা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো। জ্ঞানার্জন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বিশেষভাবে তাগিদ করেছেন। তিনি বলেছেন-
১.হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে আবু যর, তুমি যদি আল্লাহর কিতাব থেকে একটা আয়াত শেখ, তবে সেটা তোমার জন্য একশো রাকাত (নফল) নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর যদি তুমি ইসলামী জ্ঞানের একটা অধ্যায়ও মানুষকে শেখাও, তবে তা তোমার জন্য এক হাজার রাকাত নামায পড়ার চয়েও উত্তম, চাই তদনুসারে আমল করা হোক বা না হোক। (ইবনে মাযাহ)
২.হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন ব্যক্তি কিয়ামাতের প্রাক্কালীন মহা আতংকে আতংকিত হবে না এবং তাদের কোন হিসাব দিতে হবে না, বরঞ্চ তারা সমস্ত সৃষ্টি জগতের হিসাব গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত একটা মস্কের পাহাড়ে থাকবে। (১) যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাড়লো এবং জনগনের সম্মতি নিয়ে কুরআনের বিধান অনুযায়ী তাদের নেতৃত্ব করলো, (২) যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষকে নামাযের দিকে ডাকে এবং (৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর হক ও বান্দার হক সুষ্ঠুভাবে পালন করে। (তাবরানী)
৩.যে ব্যক্তি কুরআন পাক অধ্যায়ন করবে এবং তদনুযায়ী আমল করবে কেয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে এমন মুকুট পরিধান করানো হবে যার জ্যোতি সূর্যের (আলো) জ্যোতির চেয়েও উজ্জল হবে।
৪.যে ব্যক্তি কুরআন পাক অধ্যায়ন করবে (অর্থ ও ব্যাখাসহ জ্ঞান করবে) অর্থাৎ তদনুযায়ী জীবন গঠন করবে-উহার হালালকে হালাল জানবে, হারামকে হারাম জানবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন এবং তার পরিবার পরিজনদের ভেতর থেকে এমন দশজনকে (জান্নাতের জন্য) সুপারিশ করার ক্ষমতা দান করবেন যাদের প্রত্যেকের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হয়েছিল।
৫.হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন: কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত পুণ্যবান লেখক ফিরেশতাগণের সঙ্গী (মর্যাদার দিক দিয়ে তারা সম্মানিত ফিরেশতাগনের সমতুল্য) আর যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে মুকে আটকে যায়, বার বার ঠেকে যায় এবং উচ্চারণ করা বড়ই কঠিন বোধ করে তার জন্য দ্বিগুন সওয়াব। শুধু তিলাওয়াত করার জন্য একগুন আর কষ্ট করার জন্য আর একগুণ। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
৬.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যারা কোন জায়গায় একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকে তারা আল্লাহর মেহমান হয়ে যায়। ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে যতক্ষন পর্যন্ত তারা উঠে না যায় বা অন্য কাজে লিপ্ত না হয়। ততক্ষন যাবত ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে।
৭.হযরত উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মসজিদে নববীতে আমরা বিভিন্ন মজলিসে বিভক্ত হয়ে দ্বীনের আলোচনা করতাম, কেউ যিকের, কেউ দোয়া, কেউ কুরআন তেলাওয়াত, কেউ কুরআন সর্ম্পকে আলোচনায় মশগুল থাকতাম। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযরা থেকে এসে কোরআনের মজলিসে বসে যেতেন। তিনি বলতেন আমাকে এই মজলিসে বসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৮.রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরয।
৯.আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে তিনি দীনের সঠিক বুঝ-জ্ঞান দান করেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
২৪.নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘আলেমগণই হলেন নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দীনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী করেন না। নিশ্চয়ই তাঁরা ইলমের উত্তরাধিকারী করেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল, সে বৃহদাংশ গ্রহণ করল’।
১০.রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিবে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় ছওয়াব পাবে, যে তার উপর আমল করল। কিন্তু আমলকারীর ছওয়াব থেকে একটুকুও কমানো হবে না’।
১১.আবু উমাম বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনাহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে দু’জন লোকের কথা উল্লেখ করা হলো। তাদের একজন আলেম, অপরজন আবেদ। তখন তিনি বললেন, আলেমের মর্যাদা আবেদর উপর ঐরূপ, যেরূপ আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের উপর। তারপর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ রহমত করেন এবং তাঁর ফেরেশতামন্ডলী, আসমান যমীনের অধিবাসী, এমনকি পিপিলিকা তার গর্তে থেকে এবং মাছও কল্যাণের শিক্ষা দানকারীর জন্য দোয়া করে।
১২.রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল ব্যতিক্রম (অর্থাৎ ঐ আমলগুলির সওয়াব মরণের পরেও পেতে থাকবে)। ঐ তিনটি আমল হলো প্রবাহমান দান-সাদাক্বা, এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে’। অতএব সবার উচিত সন্তান-সন্ততিদের ছোট থেকেই দ্বীনের সঠিক জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া। দ্বীনী ইলম শিক্ষা লাভ না করলে পৃথিবী অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। ফলে মানুষ দ্বীনী বিষয়ে অজ্ঞদের নিকট থেকে ফৎওয়া নিয়ে গোমরাহ হবে।
১৩.আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনাহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের থেকে ইলম ছিনিয়ে নেন না। বরং দ্বীনের আলেমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ইলমকে উঠিয়ে নিবেন। তখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবে না। ফলে লোকেরা মূর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নিবে, তাদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা না জেনে ফৎওয়া প্রদান করবে। এতে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে।
১৪.সোনা রূপার খনির মতো মানুষও (বিভিন্ন প্রকারের) খনি। তাদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে উত্তম (গুণ বৈশিষ্ট্যধারী) হয়ে থাকে, দীনের সঠিক বুঝ-জ্ঞান লাভ করতে পারলে ইসলাম গ্রহণের পরও তারাই উত্তম মানুষ হয়ে থাকে। (সহীহ মুসলিম)
১৫.জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীদের হারানো ধন। সুতরাং যেখানেই তা পাওয়া যাবে, প্রাপকই তার অধিকারী। (জামে আত তিরমিযী)
১৬.ইসলামের একজন সঠিক জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি শয়তানের জন্যে হাজারো (অজ্ঞ) ইবাদতগুজারের চাইতে ভয়ংকর। (জামে আত তিরমিযী)।
১৭.জ্ঞানান্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের একটি অবশ্য কর্তব্য কাজ। (ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)
১৮.দীনের জ্ঞানী ব্যক্তি কতইনা উত্তম মানুষ। তার কাছে লোকেরা এলে তিনি তাদের উপকৃত করেন, আর না এলে তিনি কারো মুখাপেক্ষী হন না। (রিযযীন, মিশকাত)
১৯.জ্ঞানের আধিক্য (নফল) ইবাদতের আধিক্যের চাইতে উত্তম। (বায়হাকি)
২০.সর্বোত্তম মানুষ হলো তারা, জ্ঞানীদের মধ্যে যারা উত্তম। (দারমি)
২১.কোনো বাবা মা তাদের সন্তানদের উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়ার চাইতে শ্রেষ্ঠ কিছু দান করতে পারে না। (জামে আত তিরমিযী)।
২২.যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের কোনো পথ অবলম্বন করে, তাতে আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতের একটি পথ সহজ করে দেন। যখন কিছু লোক আল্লাহর কোনো ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব (কুরআন) পড়ে এবং নিজেদের মাঝে তার মর্ম আলোচনা করে, তখন তাদের উপর নেমে আসে প্রশান্তি, ঢেকে নেয় তাদেরকে আল্লাহর রহমত, পরিবেষ্টিত করে তাদেরকে ফেরেশতাকুল। তাছাড়া আল্লাহ তাঁর কাছের ফেরেশতাদের নিকট তাদের কথা আলোচন করেন। যার আমল (কর্ম) তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না। (সহীহ মুসলিম)
২৩.ফেরেশতারা জ্ঞানান্বেষণকারীদের জন্যে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেয় (অর্থাৎ তাদের সহযোগিতা করে ও উৎসাহিত করে)। (মুসনাদে আহমদ)
২৪.জ্ঞান লাভে নিয়োযিত ব্যক্তি তা থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত বলে গণ্য হয়। (জামে আত তিরমিযী, দারমি)
২৫.যে ব্যক্তি জ্ঞানান্বেষণে আত্মনিয়োগ করে, এ কাজের ফলে তার অতীতের দোষক্রুটি মুছে যায়। (জামে আত তিরমিযী, দারমি)
২৬.তোমাদের মাঝে সবচেয়ে ভালো মানুষ সে, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যদের শিখায়। (সহীহ আল বুখারী)
২৭.যে ব্যক্তি জ্ঞানান্বেষণ করে তা অর্জন করেছে, তার জন্যে দ্বিগুণ প্রতিদান রয়েছে। আর যদি তা লাভ করতে নাও পেরে থাকে তবু তার জন্যে একগুণ প্রতিদান রয়েছে। (দারমি)
২৮.রাতের কিছু অংশ জ্ঞান চর্চা করা, সারা রাত (ইবাদতে) জাগ্রত থাকার চাইতে উত্তম। (দারমি)
২৯.জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা, এমনকি পানির নিচের মাছ। অজ্ঞ ইবাদতগুজারের তুলনায় জ্ঞানী ব্যক্তি ঠিক সেরকম মর্যাদাবান, যেমন পূর্ণিমা রাতের চাঁদ পৃথিবীবাসীর কাছে তারকারাজির উপর দীপ্তিমান। আর জ্ঞানীরা নবীদের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী। (মুসনাদে আহমদ, জামে আত তিরমিযি, আবু দাউদ)
৪.কোন জ্ঞান অর্জন করা ফরয?
জ্ঞানের রয়েছে বিভিন্ন শাখা প্রশাখা। একজন মুসলিমের জন্যে কোন জ্ঞান এবং কতটুকু জ্ঞানার্জন করা ফরয? এ বিষয়টি জানা থাকা জরুরি। ইসলামের আলোকে গুরুত্বের দিক থেকে জ্ঞানকে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়। যেমন -
(ক) দ্বীন ও শরীয়া সংক্রান্ত জ্ঞান : এ জ্ঞান অর্জন করা ফরয। অর্থাৎ একজন মুসলিমকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ঈমান-আকিদা সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান লাভ করতে হবে। ইসলামের মৌল নীতিসমূহ তার জানা থাকতে হবে। শরীয়তের মৌলিক বিধি-বিধানসমূহ তার জানা থাকতে হবে। সর্বোপরি শরীয়তের মৌলিক বিধি-বিধানসমূহ পালন করা, প্রয়োগ করা এবং বাস্তবায়ন করার শরীয়তসম্মত পদ্ধতি তার জানা থাকতে হবে। নিজের জীবিকা উপার্জনের হালাল ও বৈধ প্রক্রিয়া তার জানা থাকতে হবে। এসব জ্ঞান অর্জন করা তার জন্যে ফরয।
(খ) দ্বীনের অনুসন্ধানী জ্ঞান : মুসলিমদের মধ্যে সর্বকালেই এমন এক গ্রুপ লোক ছিলেন এবং থাকতে হবে, যারা ইসলামের অনুসন্ধানী জ্ঞানার্জন করবেন এবং ইজতিহাদ করার যোগ্যতা অর্জন করবেন। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে যুগ-সমস্যা ও নতুন নতুন বিষয়সমূহের সমাধান পেশ করা এ গ্রুপের দায়িত্ব। দীনের অনুসন্ধানী জ্ঞানার্জন করা ফরয না হলেও ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ একদল লোককে অবশ্যি এ জ্ঞানার্জনে এগিয়ে আসতে হবে।
(গ) মুস্তাহাব জ্ঞান : উপরোক্ত দুই ধরনের জ্ঞান ছাড়া মানব সমাজের জন্যে কল্যাণকর অন্যান্য জ্ঞানার্জন করা মুস্তাহাব বা পছন্দীয়।
(ঘ) ক্ষতিকর জ্ঞান : যেসব বিষয়ের জ্ঞানে ব্যক্তি বা মানব সমাজের কানো কল্যাণ নেই, বরং ক্ষতিকর ও সময় অপচয়কর, কোনো মুসলিমের উচিত নয় সেসব জ্ঞান অর্জন করা। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই সেই জ্ঞান থেকে যাতে কোনো কল্যাণ নেই এবং সেই অন্তর থেকে যার মধ্যে তোমার ভয় নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.