![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হজ্জ
হজ্জ আল্লাহ প্রেম ও বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ববন্ধনের অন্যতম পথ। হজ্জ বিশ্ব মুসলিমের সামাজিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি আল্লাহর নির্দেশিত এমন একটা ফরয বিধান, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চম স্তম্ভ এবং ইসলামের অপরাপর বিধান থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। হজ্জে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে, যা অন্য কোন ইবাদতে একসঙ্গে পাওয়া যায় না। হজ্জ সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও সাম্যের প্রতীক। যার ওপর হজ্জ ফরয তাকে অবশ্যই হজ্জ আদায় করতে হবে। ৮ যিলহজ্জ থেকে ১২ যিলহজ্জ পর্যন্ত এই ৫ দিনে মক্কা মুকাররমা ও তার আশে পাশের কয়েকটি জায়গায় (মক্কায় তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ায় সায়ী, মিনার তাঁবুর জীবন, আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে অবস্থান, মুজদালিফায় রাত্রি যাপন আবার মিনাতে প্রত্যাবর্তন, জামরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ, মিনাতে পশু কুরবানী, আবার ক্বাবা তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ায় সায়ী ইত্যাদি) কিছু কর্তব্য কার্য সম্পাদন করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়।‘হজ্জ’অর্থ কছদ, সংকল্প। হজ্জের আভিধানিক অর্থ হলো যিয়ারতের এরাদা করা। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জের অর্থ কতক কার্যক্রম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে ইহ্রামের সাথে বায়তুল্লাহ জেয়ারতের সংকল্প। অর্থাৎ আল্লাহকে রাজি খুশী করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের বিধান অনুসারে হজ্জের ইহ্রাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরীফসহ নির্দিষ্ট সম,ে নির্দিষ্ট স্থানসমূহে, নির্দিষ্ট কর্মসমূহ সুনির্দিষ্ট পন্থ্ায় সম্পাদন (যিয়ারত) করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়। হজ্জ একাধারে আর্থিক,শারীরিক ও মানসিক এবাদত। এতে অর্থ ব্যয় হয়, শারীরিক পরিশ্রম হয়, পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করার মত মানসিক কষ্টও রয়েছে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র মক্কা শরীফে যাতায়াতের খরচ বহন এবং ওই সময় স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহে সক্ষম, দৈহিকভাবে সামর্থ, প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানবান প্রত্যেক সহীহ মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ ফরয। সঠিকভাবে হজ্জব্রত আদায়কারীকেও দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। একবার হজ্জ করা ফরজ। একবারের বেশী করলে সেটা নফল।
ইসলামী ইবাদতসমূহের মধ্যে হজ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। নি¤েœ কোরআন, হাদীস ও শরীয়তের দৃষ্টিতে হজ্জের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
হজ্জের উদ্দেশ্য
হজ্জের উদ্দেশ্য হলো সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিমদের সম্মিলিত করার মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম পালন ও তাদের কল্যাণ সাধন করা। এক কথায় শিরক পরিহার করে আল্লাহকে একমাত্র প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নেয়া। হজ্জ অনুষ্ঠান বিশ্ব সহীহ মুসলিম ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অপূর্ব নিদর্শন। হজ্জের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে রাজি খুশী করা। তালবিয়া ঘোষণার মাধ্যমে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন যাপন করতে অঙ্গীকার বদ্ধ হওয়া।
কোরআনের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব
১. আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন কর। (সূরা আল বাকারা-আয়াত-১৯৬)
২. মক্কার কা’বা ঘরই দুনিয়ায় প্রথম হেদায়েতের কেন্দ্র, মহান আল্লাহর ঘোষণা: “মানব জাতির সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায় (মক্কার আরেক নাম বাক্কা), তার বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী” (সূরা আল ইমরান-৯৬)
৩. সার্বিক নিরাপত্তার স্থান কা’বা ঘর: মহান আল্লাহ বলেন:“তাতে অনেক সুষ্পষ্ট নিদর্শন আছে যেমন মাকামে ইব্রাহীম; এবং যে কেউ সেথায় প্রবেশ করে সে নিরাপদ”। (সূরা আল ইমরান-৯৭)
৪. প্রত্যেক সামর্থবান মুসলিমের জীবনে একবার হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য বা ফরয:মহান আল্লাহর নির্দেশ “মানুষের মধ্যে যার সেখানে পৌছাঁর সামর্থ আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য এবং কেউ (অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করতে আসবে না) প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক যে,আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নহেন।” (সূরা আল ইমরান-আয়াত-৯৭)
৫. যখন ইব্রাহীমের জন্য এই ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম একথা বলে যে, এখানে কোন প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহ্বান জানাও। তারা যেন এখানে পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে। তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে। (সূরা আল হজ্জ : ২৬-২৮)
৬. নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের হজ্জ অথবা ওমরাহ করবে,এই দুই পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়ানো তার জন্য কোন গুনাহর কাজ হবেনা (বরং সওয়াবের কাজ হবে)। (সূরা আল বাকারা ১৫৮)
৭. আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পারেনি। অথচ তার চারপাশে লোক লুণ্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেত। (সূরা আল আনকাবুত : ৬৭) অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুট-তরাজ, মারপিট, দাঙ্গা হাঙ্গামা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এই হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুর্ধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমার মধ্যে তার পিতৃহত্যাকেও দেখতে পেত, তবু এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না।
৮. এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়ে ছিলাম এবং ইব্রাহীমের ইবাদতের স্থানকে মুসাল্লা (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম। আর তাওয়াফকারী অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইব্রাহীম দু’আ করলো হে পালন কর্তা! আপনি এই শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন। (সূরা আল বাকারা ১২৫-১২৬)
৯. এবং স্মরণ কর ইব্রাহীম ও ইসমাঈল যখন এই ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দু’আ করেছিল; হে আমাদের রব। আমাদের এ চেষ্টা কবুল কর। তুমি সব কিছু জান ও সব কিছু শুনতে পাও। হে আমাদের পালন কর্তা। তুমি আমাদের দু’জনকেই সহীহ মুসলিম অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর। তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। হে পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে। তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দিবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বিজ্ঞ।” (সূরা আল বাকারা : ১২৭-১২৯)
১০.এবং স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম দু’আ করেছিল-হে আল্লাহ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বানিয়ে দাও। আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তি পূজার শিরক থেকে বাঁচাও। হে আল্লাহ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গুমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে তখন তুমি নিশ্চয় বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এই মহান ঘরের একটি এ ধূসর মরুভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি। এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব হে আল্লাহ। তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের দিকে দলে দলে চলে আসে এবং ফল-মূল দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে। (সূরা ইব্রাহীম-৩৫-৩৬)
১১. কুরাইশদের মনোবাঞ্ছনা পূরণের কারণে, তথা শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন বাণিজ্য সফরসমূহে তাদের বিশেষ মর্যাদার কারণে। অতএব তাদের উচিৎ তারা যেন এ ক্বাবা গৃহের প্রতিপালকের ইবাদতে নিবেদিত হয়, যিনি তাদেরকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে আহার্য সরবরাহ করেছেন এবং ভয় ভীতি হতেও দিয়েছেন পরিত্রাণ। (সূরাতুল ফীল)
১২. আর তোমরা যেখানেই থাকনা কেন আর মসজিদ আল হারামের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করবে। (সূরা আল ইমরান-১৪৪)
১৩. আল্লাহ কা’বা তথা পবিত্র গৃহকে মানবগোষ্ঠীর অস্তিত্বের জন্য রক্ষাকবচ করেছেন। আর সম্মানিত মাস, কুরবানীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত জন্তু ও এজন্তুর গলায় স্থাপিত চিহ্নসমূহকেও। ইহা এজন্যই যে তোমরা যেন জ্ঞাত হও যে আল্লাহ তা’আলা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে তার সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এবং আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞা। (সূরা মায়েদা-৯৭)
হাদীসের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব
ক. হজ্জ কখন কাদের উপর ফরজ
১. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী হলো-ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি: আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই আর মুহাম্বাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ সম্পন্ন করা ও রমযানের সাওম আদায় করা। (সহীহ আল বুখারী-৮ ও মুসলিম-১১৩)
২. প্রতিটি স্বাধীন, সুস্থ, বালেগ, বুদ্ধিমান ও সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর জীবনে কমপক্ষে একবার কা’বাঘরের হজ্জ আদায় করা ফরয। হযরত ওমার ইবনুল খাত্তাব ও আবু হুরায়রা রাদিয়াআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তারা বলেন:“একবার রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে খুতবা প্রদান উপলক্ষে বলেছিলেন। লোক সকল! তোমাদের উপর যে হজ্জ অবশ্যই ফরজ করা হয়েছে, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় কর। তখন জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, প্রতি বছরই কি আমাদের ওপর হজ্জ আদায় করা ফরয? রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব না দিয়ে চুপ থাকলেন। প্রশ্নকারী তার প্রশ্ন তিনবার পুনরাবৃত্তি করলো। এরপর আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তবে তোমাদের ওপর প্রতি বছর হজ্জ করা ফরয হয়ে যেতো, যা তোমরা পালন করতে পারতে না। (সহীহ মুসলিম-৩২৫৭)
৩. যে ব্যক্তি ভরন পোষণ জোগানোর পর হজ্জে যাওয়ার সামর্থ রাখে তার উপর আল্লাহ পাক হজ্জকে ফরজ করেছেন। (সহীহ মুসলিম)
৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজীর হয়ে নিবেদন করল, হজ্জ কখন ফরজ হয়? রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যখন পবিত্র মক্কা পর্যন্ত যাতায়াতের পথ খরচ ও যানবাহনের ব্যবস্থা হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী)
অধিকাংশ ফকীহদের মতে শর্তাবলী পুরণ হলে সাথে সাথেই হজ্জ আদায় করা ফরয। সেক্ষেত্রে বিলম্ব করার কারণে গুনাহগার হতে হবে।
খ. হজ্জ পালনকারীদের দায়িত্ব আল্লাহর
১. আবু হুরায়রা (রা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তিন ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহণ করেন: (ক) যে ব্যক্তি আল্লাহর কোন মসজিদের উদ্দেশে বের হয় (খ) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে বের হয় (গ) যে ব্যক্তি হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়।
গ. মাবরুর হজ্জের বিনিময় হলো জান্নাত
১. জাবির (রা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মাবরুর হজ্জের প্রতিদান কেবল জান্নাত। (মুসনাদে আহমদ)
২. হযরত আবু হুরায়রা (রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক ওমরাহ হতে অন্য ওমরাহ এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু গুনাহ হবে তার কাফফারা। আর মাবরুর হজ্জের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (সহীহ আল সহীহহাদীস নং-১৭৭৩ ও মুসনাদে আহমাদ-২/২৪৬)
৩. আবু দারদা (রা হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; এক ওমরাহ হতে আরেক ওমরাহ-এর মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা এবং কবুল হজ্জের একমাত্র বিনিময় হলো জান্নাত। (সহীহ মুসলিম)
৪. হযরত বিবি উম্মে সালমা (রা বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি বায়তুল মাকদাস হতে (মক্কার) বায়তুল হারামের দিকে হজ্জ বা ওমরাহর ইহরাম বাঁধে, তার পূর্বের বা পরের গুনাহ মাফ করা হবে। অথবা তিনি বলেছেন, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৫. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : বিশুদ্ধ মকবুল একটি হজ্জ পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যকার সব বস্তু থেকে উত্তম। বেহেশত ছাড়া আর কোন কিছুই এর বিনিময় হতে পারে না। (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
ঘ. হজ্জ গুনাহমোচন করে
১. হযরত আবু হুরায়রা (রা হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ্জ করলো, অতঃপর অশ্লীলতা এবং গুনাহের কাজ পরিহার করলো সে যেন সে দিনের মতো নিষ্পাপ অবস্থায় (নিজ ঘরে) ফিরে আসলো যে দিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। (সহীহ আল বুখারী-১৪২৪)
২. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি হজ্জ করে, তার মধ্যে বাজে কথা বলে না এবং কোন গুনাহর কাজও করে না, সে নিজের গুনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত ও পবিত্র হয়ে ফিরে যায়, যেন তার মা তাকে (এখনই) প্রসব করেছেন।
৩. ওমরাহর জন্য ও বড় সওয়াবের ওয়াদা রয়েছে। হাদীসে আছে হজ্জ এবং ওমরাহ উভয় গুনাহগুলোকে এমন ভাবে দূর করে দেয়, যেমন আগুন লোহার মরিচাকে দূর করে দেয়।
৪. হযরত আমর বিন আল-আস হতে বণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইসলাম গ্রহণ যেমন অতীত জীবনের গুনাহসমূহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়; তেমনি হজ্জ পালন অতীতের সব পাপ মোচন করে দেয়। (বায়হাকী)
৫. হযরত আমর ইবনুল আস (রা বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আমর কেউ যদি ইসলামে দীক্ষিত হয়! তবে ইতোপূর্বে কৃত তার সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আর হিজরত দ্বারা ইতোপূর্বে কৃত সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তেমনি হজ্জ ইতোপূর্বে কৃত সমস্ত গুনাহ শেষ করে দেয়। (সহীহ মুসলিম)
ঙ. হজ্জ ও ওমরাহকারী হলো আল্লাহর প্রতিনিধি
১. আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর পথের মুজাহিদ এবং হজ্জ ও ওমরাহকারী হলো আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা যদি আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দেন। আর তারা যদি গুনাহ মাফ চায় আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
২. অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হজ্জ ও ওমরাহকারীরা হলো আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন আর আল্লাহও তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। (মুসনাদে বাযযার)
৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: হজ্জ ওমরাহকারীরা হচ্ছে আল্লাহর দাওয়াতী যাত্রীদল। অতএব তারা যদি তাঁর নিকট প্রার্থনা করেন তবে তিনি তা কবুল করেন এবং যদি ক্ষমা চান তবে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ-২৮/৮৩)
চ. সর্বোত্তম আমল হজ্জ
১. আবু হুরায়রা (রা থেকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। জিজ্ঞাসা করা হলো, এরপর কী? বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। বলা হলো এরপর? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ। (সহীহ আল বুখারী-১৪২২)
২. উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। তাহলে আমরা (নারীরা) কি জিহাদ করব না? নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হলো মাবরুর হজ্জ। (সহীহ আল বুখারী)
৩. সর্বোত্তম আমল কী এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে বললেন, অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রতি ঈমান, ও তারপর মাবরুর হজ্জ যা সকল আমল থেকে শ্রেষ্ঠ। সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যে পার্থক্য ঠিক তারই মত। (মুসনাদে আহমাদ-৪/৩৪২)
৪. অন্য এক হাদীসে এসেছে, উত্তম আমল কি এই মর্মে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল, তারপর কী? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। বলা হল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ।
৫. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে হজ্জ গুনাহ এবং অন্যান্য খারাবি থেকে পবিত্র হবে, তার পুরষ্কার বেহশত ছাড়া অন্য কিছুই নয়। হজ্জ অতি উত্তম ইবাদত।
৬. মাবরুর হজ্জ ঐ হজ্জকে বলা হয় যে হজ্জের সাথে কোন গুনাহের কাজের সংমিশ্রণ হয় না। (ফিকহুস সুন্নাহ-১/৫২৭)
ছ. জেহাদের মর্যাদা
১. উম্মে সালমা (রা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হজ্জ হলো প্রত্যেক দুর্বলের জিহাদ। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
২. হযরত আবু হুরায়রা (রা বলেন : রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জ, ওমরাহ অথবা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের নিয়তে বের হয়, অতঃপর ঐ পথে মারা যায়, তার আমলনামায় গাজী, হাজী বা ওমরাহকারীর সওয়াব লেখা হয়। (বায়হাকী)
৩. হযরত আয়েশা (রা থেকে বর্ণিত হাদীস: তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম- হে আল্লাহ রাসূল মহিলাদের ওপর কি জিহাদ ফরয? তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ, তাদের ওপর এমন জিহাদ ফরয যাতে কিতাল ((রক্তপাত) নেই, আর তা হলো হজ্জ ও ওমরাহ। ইমাম আহমদ-২৫৩২২, ইবনে মাজাহ-২৯০১-এর দ্বারা জীবনে একবার ওমরাহ করাও ফরয় হওয়ার দলিল দিয়েছেন।
জ. অন্যান্য সওয়াব
১. হযরত আয়েশা (রা থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহ আরাফাহ’র দিন এতো সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য কোন দিন দেন না। এদিন আল্লাহ তা’আলা নিকটবর্তী হন ও আরাফাহ ময়দানে অবস্থানরত হাজীদেরকে নিয়ে তিনি ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন ও বলেন - ‘ওরা কী চায়?’ (সহীহ মুসলিম-১৪৮)
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুমিন যখন ইহরামের হালতে দিন কাটাবে তখন সূর্য তার সব গুনাহ নিয়ে অস্ত যাবে। আর কোনো সহীহ মুসলিম যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জের তালবিয়া পাঠ করবে তখন তার ডানে-বামে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সবকিছু তার পেস্যা দেবে। (জামে তিরমিযি হাদিস-৮১০; তারগির, হাদিস-১৭০৩)
৩. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ক্বাবা গৃহের উপর প্রত্যহ একশত বিশটি রহমত নাযিল হয়। ষাটটি তাওয়াফকারীদের জন্য, চল্লিশটি নামাজ আদায়কারীদের জন্য এবং বিশটি দর্শকদের জন্য।
৪. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মক্কা থেকে পাঁয়ে হেঁটে হজ্জব্রত পালন করে পুনরায় মক্কায় ফিরে আসেন তাঁর প্রতি কদমে হারাম শরীফের সওয়াবের সাতশত সওয়াব লেখা হয় এবং হারাম শরীফের প্রতিটি সওয়াবের পরিমাণ হচ্ছে লাখ গুণ।
৫. সাহল বিন সা’দ (রা হতে বির্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান যখন তালবিয়া (লাব্বাইকা................) বলে তখন তার ডান ও বাম পার্শ্বে প্রতিটি পাথর, গাছ ও বালুকণা তার সাথে তালবিয়া পড়তে থাকে, যতদূর পর্যন্ত তার কণ্ঠস্বর পৌঁছে। (তিরমিযি)
ঝ. হজ্জ ও ওমরাহ দারিদ্রতা দূর করে
১. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যিনি হজ্জ করেন তিনি কখনো দরিদ্র হন না। (সহীহ মুসলিম)
২. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা বলেন: রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হজ্জ ও ওমরাহ এক সাথে করো। কেননা এ দু’টি ইবাদত দারিদ্রতা ও গুনাহদূর করে, যেভাবে হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। কবুল হজ্জের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। (তিরমিযি ও নাসায়ী)
৩. ইবনে মাসউদ (রা হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, তোমরা পর পর হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করো। কেননা তা দারিদ্রতা ও পাপকে সরিয়ে দেয় যেমন সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লৌহ-স্বর্ণ-রূপার ময়লাকে। আর হজ্জে মাবরুর সওয়াব তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (সহীহ ইবনে খুজাইমাহ-৪/১৩০)
৪. হযরত ইবনে ওমর (রা হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন হাজীর সাথে সাক্ষাতের সময় তাকে সালাম দেবে, মোসাফাহ করবে, তোমার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে বলবে। কেননা হাজীগণ ক্ষমাপ্রাপ্ত। (তিরমিযি)
৫. হযরত আয়েশা (রা হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফিরিশতাগণ যানবাহনে আরোহী হাজীদের সাথে মোসাফাহ করেন এবং পদচারী হাজীদের সাথে আলিঙ্গন করেন। (মিশকাত)
ঞ. সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালন না করার পরিণতি
১. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্তকবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করল না, বা হজ্জকে উপেক্ষা করল, সে ইয়াহুদি হয়ে মরল না নাসারা হয়ে মরল তাতে আল্লাহ তায়ালার কোন কিছু আসে যায় না। (তিরমিযি)
২. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “যার কোন প্রকাশ্য অসুবিধা নেই, কোন যালিম বাদশাও যার পথ রোধ করেনি এবং যাকে কোন রোগ অসমর্থ করে রাখেনি এতদসত্ত্বেও সে যদি হজ্জ না করে মারা যায় তাহলে সে ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান হয়ে মরতে পারে।” (দায়েমী)
৩. হযরত ওমর ফারুক (রা এ ব্যাখ্যায় বলেছেন: সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ করে না তাদের ওপর জিযিয়া কর আরোপ করতে ইচ্ছে হয়; কারণ তারা, মুসলমান নয়।
সুতরাং হাদীসের শিক্ষাই হচ্ছে হজ্জ ফরজ হওয়ার পর কেউ কোন ওযর ব্যতিত হজ্জ পালন না করে মারা গেলে সে ইসলামের গন্ডি থেকে বেরিয়ে গেল। একথা প্রমাণিত হলো যে, ইসলামে হজ্জ অবহেলা করার কোন বিষয় নয় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যিযিয়ার বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। হজ্জ ফরজ হওয়ার পর হজ্জ না করলে সহীহ মুসলিম থাকারই সুযোগ থাকবে না। হজ্জ পালন করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। হজ্জ পালন করার মাধ্যমে যেহেতু আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ আদায় করা হয়ে থাকে, সেহেতু এর মাধ্যমে তাঁর সন্তুুষ্টি অর্জনও ত্বরান্বিত হয়। আর তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারলে পরকালীন মুক্তি অর্জন অবশ্যই সম্ভব হবে।
শরীয়তের দৃষ্টিতে হজ্জের বিধান
ক্ষমতা ও সামর্থ্যবান লোকদের জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ।
হজ্জ পরিত্যাগকারীর প্রতি ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
হজ্জ ফরয হওয়ার পর অবহেলা করা চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। এহেন লোকদের প্রতি হাদিস শরীফে কঠোর শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। জীবনের কোন নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং অনতিবিলম্বে তা আদায় করা কর্তব্য।
উপরে উল্লেখিত কোরআন, হাদীস ও শরীয়তের দৃষ্টিতে বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তাই হজ্জ পালনেচ্ছু প্রতিটি ব্যক্তিরই উচিত পবিত্র হজ্জের এই ফজিলতসমূহ পরিপূর্ণভাবে পাওয়ার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাওয়া। হজ্জ কবুল হওয়ার সকল শর্ত পূর্ণ করে সমস্ত পাপ বা গুনাহ থেকে মুক্ত থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হজ্জ পালন করা।
হজ্জ ফরয হওয়ার শর্ত ৮টি : ১) মুসলমান হওয়া ২) বালেগ হওয়া। ৩) বুদ্ধিমান হওয়া ৪) স্বাধীন হওয়া ৫) হজ্জের সময় হওয়া ৬) সম্পদশালী হওয়া (হজ্জ আদায় করার মত সামর্থ যোগ্য) ৭) সুস্থ থাকা ৮) যাতায়াতের পথ নিরাপদ হওয়া ।
মাসআলা
১. কারও যদি আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে, কিন্তু তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হন-এমতাবস্থায় তিনি কাউকে দিয়ে বদলি হজ্জ করাবেন।
২. মক্কা মুকাররমাহ ও তার আশে পাশে-যেমন জেদ্দা, তায়েফ প্রভৃতি এলাকায় চাকুরি বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে যারা আসবেন তাদের ওপর হজ্জ ফরয। নিজ নিজ সময় ও সুবিধা মতো তারা এ দায়িত্ব পালনে বাধ্য থাকবেন ।
৩. সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আ’ল শেখের মতে-কোন বয়স্কা মহিলার সঙ্গে যদি মাহরাম না থাকে, এমতাবস্থায় বিশ্বস্ত মহিলাদের সাথে তিনি হজ্জ করতে পারবেন। তবে শর্ত হলো তার সফরের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
হজ্জ তিন প্রকার
১) হজ্জে ইফরাদ
২) হজ্জে কেরান
৩) হজ্জে তামাত্তু
১। হজ্জে ইফরাদ : হজ্জের সাথে ওমরাহ না করে শুধু হজ্জ করাকে ইফরাদ হজ্জ বলে।
মীকাত থেকে শুধু হজ্জের নিয়তে (বর্ণিত নিয়মে) ইহরাম বাঁধুন।
মক্কা শরীফ পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করুন।
ইচ্ছা করলে এ তাওয়াফের পর সায়ী করুন। সে ক্ষেত্রে হজ্জের ফরজ-তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না।
তাওয়াফ ও সায়ী করার পর চুল ছাঁটবেন না।
তাওয়াফে কুদুমের পর ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকুন।
৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
বি: দ্র: ইফরান হজ্জ পালনকারীকে কুরবানী করতে হয়না। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
২। হজ্জের ক্বিরান : ওমরাহর সাথে যুক্ত করে একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ্জ আদায় করাকে ক্বিরান হজ্জ বলে।
ক্বিরান হজ্জ দু’ভাবে আদায় করা যায়।
এক. ১-১) মীকাত থেকে এহরাম বাঁধার সময় হজ্জ ও ওমরাহ উভয়টার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধুন।
১-২) মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহ ও সায়ী আদায় করুন। তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না।
১-৩) ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করুন।
১-৪) ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
দুই. ২-১) মীকাত থেকে শুধু ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বাঁধুন।
২-২) পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে হজ্জের নিয়ত ওমরাহর সাথে যুক্ত করে নেন।
২-৩) ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী শেষ করুন, তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না।
২-৪) ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকুন।
২-৫) ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
২-৬) মক্কাবাসীদের জন্য ক্বিরান হজ্জ নেই। যেহেতু তারা হারামের সীমানার ভেতরে অবস্থান করছেন, সেহেতু তাদের ক্বিরান হজ্জ করতে হয় না।
বি: দ্র: ক্বিরান হজ্জ পালনকারীদের কুরবানী করতে হয়। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানী করে মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
৩। হজ্জে তামাত্তু : এ হজ্জের জন্য পৃথকভাবে প্রথমে ওমরাহ ও পরে হজ্জ আদায় করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে।
তামাত্তু হজ্জ তিনভাবে করা যায়।
এক. ১-১. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ মীকাত থেকে প্রথমে ওমরাহর ইহরাম বাঁধুন।
১-২. মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করুন।
১.৩. তারপর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
১-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
দুই. ২-১. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ মীকাত থেকে প্রথমে ওমরাহ’র ইহরাম বাঁধুন।
২-২. মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করুন।
২-৩. তার পর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
২-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
২-৫. হজ্জের পূর্বে মদীনা যিয়ারত সেরে নেয়া।
২-৬. মদীনা থেকে মক্কায় আসার পথে আবায়ে আলী নামক জায়গা থেকে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা।
২-৭. ওমরাহ আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া।
২-৮. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
তিন. ৩-১. ইহরাম না বেঁধে সরাসরি মদীনা গমন করা।
৩-২. যিয়ারতে মদীনা সেরে মক্কায় আসার পথে আবায়ে আলী নামক জায়গা থেকে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা।
২-৭. ওমরাহ আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া।
২-৮. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
২-৯. হারামের সীমানার ভেতরের অধিবাসীদের জন্য তামাত্তু হজ্জ নেই।
৮ যিলহজ্জহজ্জের ইহরাম বেঁধে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করুন
বি: দ্র: তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের কুরবানী করতে হয়। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানী করে মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
মাসাআলা
ক. তামাত্তু বা ক্বিরান হজ্জের নিয়ত করে মীকাতের ভিতরে যদি কেউ নিয়ত পরিবর্তন করে অর্থাৎ ক্বিরান হজ্জের নিয়ত করার পর তামাত্তু হজ্জের মনস্থ করে; অথবা তামাত্তু হজ্জের নিয়ত করার পর ক্বিরান হজ্জের মনস্থ করে, তাহলে তার জন্য এরূপ করা জায়েয। ইফরাদ হজ্জের ক্ষেত্রেও এরূপ জায়েয।
খ. হাদঈ (পশু) জবেহ করা সামর্থ্য যাদের নেই, তারা দশটি রোযা অবশ্যই রাখবেন। কিন্তু অকুফে আরাফাতের দিন তাদের জন্য রোযা রাখা নিষেধ। হাজীগণ ছাড়া অন্যদের জন্য এ দিনের রোযা রাখা সওয়াব রয়েছে।
গ. তিন প্রকারের হজ্জ কুরআন এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এর মধ্যে যে কোন প্রকারের হজ্জ পালনের ইখতিয়ার হজ্জ পালনকারীর রয়েছে। তবে এর মধ্যে কোনটা উত্তম, সে ব্যাপারে ওলামাদের বিভিন্ন মত রয়েছে। জমহুম ওলামার মতে তামাত্তু হজ্জ উত্তম। অনেকের দৃষ্টিতে ক্বিরান হজ্জ উত্তম। কেউ কেউ ইফরাদ হজ্জকে উত্তম বলেছেন। সার কথা হলো, হজ্জ পালনকারী নিজের সুবিধা ও সামর্থকে সামনে রেখে এটা চয়ন করবেন। মূলত তিন প্রকারের হজ্জই আল্লাহর নিকট কবুলযোগ্য।
হজ্জের ফরজ ০৩ (তিন) টি
১। ইহ্রাম বাঁধা। (নিয়ত করা, ইহরাম বাঁধা ও তালবিয়া পাঠ করা)। অর্থাৎ এই তিনটি কাজ যেহেতু এক সাথেই করা হয়, এজন্য এ তিনটি অংশ মিলে এক ফরজ। সুতরাং এর কোনো অংশই বাদ দেয়া যাবে না।
২। অকুফে আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করা। অর্থাৎ ৯ যিলহজ্জ জোহরের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোন সময় আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করা।
৩। তাওয়াফে যিয়ারত (চার চক্কর পরিমাণ) করা। অর্থাৎ ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ তারিখের কোন একদিন পবিত্র ক্বাবাঘর প্রদক্ষিণ করা।
মাসাআলা
হজ্জের যে কোন একটি ফরয যদি বাদ পড়ে যায় তবে হজ্জ হবে না। পুনরায় হজ্জ করতে হবে।
হজ্জের ওয়াজিব ০৭ (সাত) টি
১। মুজদালিফায় অবস্থান করা। অর্থাৎ ৯ যিলহজ্জ রাতে (সূর্য ডোবার পর) আরাফাতের ময়দান হতে মিনায় ফিরার পথে মুজদালিফায় রাত যাপন।
২। মিনায় রমী অর্থাৎ কংকর নিক্ষেপ করা। অর্থাৎ ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ তারিখে জামরাতে কংকর মারা।
৩। হজ্জে ক্বিরান ও তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের দমে শোকর বা কুরবানী করা। ইফরাদ হজ্জের জন্য কুরবানী ওয়াজেব নয়।
৪। ইহরাম ভঙ্গ করার পর মাথার চুল ছাঁটা অথবা মুন্ডানো। মহিলা হজ্জযাত্রী হলে চুলের অগ্রভাগ কাটা।
৫। তাওয়াফে যেয়ারতের বাকি তিন চক্কর শেষ করা।
৬। সাফা মারওয়া সায়ী করা। অর্থাৎ নির্ধারিত নিয়মে সাত চক্কর দৌঁড়ানো।
৭। মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ বিদায় তাওয়াফ করা।
মাসাআলা
হজ্জের ওয়াজিব ছুটে গেলে হজ্জ আদায় হবে; তবে দম (ফিদইয়া) ওয়াজিব হবে। দমের আওতাভুক্ত পশু হচ্ছে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা অথবা গরু বা উটের সাত ভাগের এক ভাগ দান করা। মক্কার হারামের সীমানার মধ্যে দম দিতে হবে এবং এর গোশত কেবল মক্কার গরীবদের জন্য।
হজ্জের সুন্নাত ০৯ (নয়)টি
১) ইফরাদ এবং ক্বিরান হাজীগণের জন্য তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) অর্থাৎ সর্বপ্রথম তাওয়াফ করা।
২) তাওয়াফে কুদুম ও তাওয়াফে জিয়ারতে রমল করা।
৩) ইমামের তিন জায়গায় খুৎবা দেয়া। (৭ যিলহজ্জ মক্কা শরীফে, ৯ যিলহজ্জ আরাফাহ ময়দানে এবং ১১ যিলহজ্জ মিনায়)
৪) ৮ যিলহজ্জ মিনায় জোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজর এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা এবং সেখানে রাত যাপন করা।
৫) ৯ যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে গমন।
৬) আরাফাতের ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফা রওনা হওয়া।
৭) আরাফাতের ময়দানে গোসল করা।
৮) ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ মিনায় রাত যাপন।
৯) মিনা থেকে মক্কা শরীফে ফেরার সময় ‘মুহাচ্ছব’ নামক স্থানে অতি অল্প সময়ের জন্য হলেও অবস্থান করা।
মাসাআলা
ক. হজ্জের সুন্নাত বাদ গেলে কোন দম বা ক্ষতি পূরণ দিতে হবে না। তবে সুন্নাত যেন পালন করা যায় সেজন্য চেষ্টা করতে হবে।
খ. বিশেষ প্রয়োজনে বা সময়ের অভাবে সুন্নাত বাদ দিলে কোন ক্ষতি নেই। তবে সুন্নাতকে তুচ্ছ জানলে ঈমান থাকে না। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার কাছ থেকে তোমরা হজ্জের নিয়মাবলী গ্রহণ কর। (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
গ. সুন্নাত ইচ্ছাকৃত ভাবে ত্যাগ করা দোষনীয়। পালন করার মধ্যে অনেক ছাওয়াব আছে।
যে সব কারণে হজ্জ থেকে বিরত থাকতে হবে
ইহরাম বাঁধার পর যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা শত্রুর ভয় থাকে কিংবা মহিলা হজ্জযাত্রীর স্বামী ইন্তেকাল করে অথবা রাস্তায় সব টাকা পয়সা শেষ হয়ে যায় অথবা ভাড়া করা বাহন নষ্ট হয়ে যায়, সে বিপন্ন বলে গণ্য হবে।
বিপন্ন ব্যক্তি অন্য হাজীর কাছে একটি কুরবানীর পশু পাঠিয়ে দেবে কিংবা পশু খরিদের টাকা পাঠিয়ে দেবে এবং দিনক্ষণ ঠিক করে দেবে যে, অমুক দিন অমুক সময় পশু জবেহ করে দেবে। সে বাড়ি ফিরে এসে ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তারপর ইহরাম খুলে ফেলবে। মাথা মুন্ডানো কিংবা চুল ছোট করার প্রয়োজন নেই। পরবর্তী বছর বিপন্ন ব্যক্তি হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করে নেবে।
ইহরাম বাঁধা অবস্থায় যদি ঈদের দিনে সুবেহ সাদেকের আগে আরাফাতে অবস্থান করতে না পারে, তবে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাওয়ার পর পবিত্র ক্বাবার তাওয়াফ এবং সাফা মারওয়া সায়ী করে ইহরাম খুলে ফেলবে এবং পরবর্তী বছর আবার হজ্জ আদায় করতে হবে।
হজ্জে যাওয়ার পথে মৃত্যু বরণকারীর ফজিলত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা থেকে বর্ণিত। জনৈক মুহরিম ব্যক্তিকে তার সওয়ারি ভুপাতিত করলে তার মৃত্যু হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তাকে বরই পাতার পানি দ্বারা গোসল দাও এবং তার দু’টি কাপড়েই তাকে কাফন পরাও। তবে তার মাথা ও চেহারা ঢেকো না। কেননা, কিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠ করা অবস্থায় উত্থিত হবে। (সহীহ মুসলিম)
৮ জিলহজ্জ
অবস্থান : মক্কা শরীফ-মিনা
শওয়াল, যিলক্বদ এবং যিলহজ্জ মাসকে হজ্জের মাস হলা হয়। কিন্তু হজ্জের বাস্তব কাজ শুরু হয়ে ৮ যিলহজ্জ হতে এবং শেষ হয় ১৩ যিলহজ্জ সন্ধ্যায়। এ ৫ অথবা ৬ দিন হলো হাজীদের হজ্জ পালনের দিন। হজ্জের মাসয়ালা-মাসায়েল অজানা থাকলে বহু ধরণের ভুলভ্রান্তি হবার সম্ভাবনা থাকে। শুদ্ধভাবে ও সঠিক নিয়মে হজ্জের সমস্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য এখানে প্রত্যেক দিনের করণীয় বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হলো। হজ্জ শুরু করার পূর্বে এগুলো ভাল করে জেনে রাখতে পারলে এতমিনানের সাথে হজ্জ করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
করণীয় কাজসমূহ
৭ যিলহজ্জ থেকে আপনার হজ্জের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। যদিও ৮ই যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া সুন্নত, কিন্তু আজকাল ৭ তারিখ দিবাগত রাতেই মুআল্লিমের গাড়িতে হাজীদের মিনা পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। তাই যারা মুআল্লিমের গাড়ীতে মিনা যাবেন তারা ৭ তারিখ দিবগত রাত্রে হেরেম শরীফ অথবা নিজ বাসায় হজ্জের ইহ্রাম বাঁধবেন। আর হেঁটে গেলে ৮ যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনার উদ্দেশ্যে রওনা করুন।
ইহরাম বাঁধা
প্রথম কাজ
১। ইহরাম বাঁধা (ফরজ)
তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ ঐদিন নতুন করে ইহ্রাম বেঁধে হজ্জের নিয়ত করবেন (হেরেম শরীফের এলাকা থেকে ইহ্রাম বাঁধতে হবে)।
ইহ্রাম বাঁধার নিয়ম
০ পবিত্র অবস্থায় ইহ্রামের কাপড় পরিধান করুন।
চ-৮ (অ-২) ২০-০৭-১৭ ঐউ-১ ঈয. ২৪,১০০
দু’রাকাত ইহরামের সুন্নাত নামাজ আদায় করুন।
নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা কাফেরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা এখলাস পাঠ করুন।
হজ্জের নিয়ত করুন নিয়ত: (“লাব্বাইকা হাজ্জান কিংবা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান”)।
তালবিয়া পাঠ করুন : তালবিয়া : (“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক্ লা-শারিকা লাক”)।
সকালে হালকা মালসামানাসহ মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করুন।
শক্ত-সবল এবং মাইলের পর মাইল হেঁটে অতিক্রম করায় অভ্যস্ত না হলে মিনায় পায়ে হেঁটে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন না।
মোয়াল্লেমের বাসে করে মিনায় আসুন।
মিনায় আগমন।
দ্বিতীয় কাজ
মিনায় পৌঁছে করণীয়
ঐ দিন জোহর, আছর, মাগরিব ও এশার নামাজ মিনায় আদায় করুন।
রাতে মিনায় অবস্থান করুন।
পরদিন অকুফে আরাফাহ সময়টা কিভাবে কাটাবেন সেজন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
প্রত্যেকে নিজ নিজ তাঁবুতে থাকার চেষ্টা করবেন। সবাইকে নিয়ে একত্রে জামাতে নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন। মসজিদে খায়েফে নামাজ পড়তে হবে এটা খুব একটা জরুরী নয়। তবে পড়তে পারলে ভাল।
অবসর সময় দোয়া-দরূদ, যিকির-আযকার, কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য এবাদতে সময় অতিবাহিত করুন। তবে এখানে সবচেয়ে উত্তম হলো তালবিয়া পড়া।
তাকবীরে তাশরীকের বিধান
৯ যিলহজ্জ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ যিলহজ্জ আসর পর্যন্ত আপনি যেখানেই থাকুন, মোট ২৩ ওয়াক্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক পড়ুন। এ সময় তাকবীরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।
৯ জিলহজ্জ
অবস্থান : মিনা-আরাফাহ, আরাফাহ-মুযদালিফাহ
আরাফাহ
আরাফাহ অর্থ হলো মিলন, পরস্পরকে জানার এবং পরিচিত হবার স্থান। মক্কা শরীফ থেকে প্রায় ৭ মাইল পূর্ব দিকে তিন দিকে পাহাড় বেষ্টিত ধনুকাকৃতির একটি ময়দানের নাম। এটি দুই মাইল দৈর্ঘ্য ও দুই মাইল প্রস্থ একটি সমতল ময়দান। সেখানে হাজী সাহেবরা ৯ যিলহজ্জ তারিখে অকুফ বা অবস্থান করে থাকেন। ৯ যিলহজ্জ তারিখকে হাদীস শরীফে ইয়াওমু আরাফাহ বা আরাফাহ দিবস বলা হয়েছে। হজ্জের মূল কাজ হলো আরাফাতে অবস্থান করা। এই দিবসে দ্বি-প্রহরের পর থেকে যে কোন সময় এই ময়দানে অবস্থান করা হজ্জের অন্যতম প্রধান রুকন বা স্তম্ভ। আরাফাতে অবস্থান করা ফরয। আরাফাহ’র সকল অংশই ‘হাল্ল’ অর্থাৎ হারাম এলাকার বাইরে। হারাম সীমানা যেখানে শেষ, সেখানেই আরাফাতের সীমানা শুরু হয়েছে। মহা-মিলনের মহাকেন্দ্র আরাফাহ! মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ ও হযরত হাওয়া (আ
জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আসার পর দীর্ঘ বিচ্ছেদ শেষে এখানেই মিলিত হয়েছিলেন। নতুন করে পরিচিত হয়েছিলেন। এ কারণে এ জায়গায় নাম আরাফাহ। আল্লাহ্র নিকট এ দিনটি অত্যন্ত প্রিয়। আরাফাতে অবস্থান কিয়ামতের ময়দানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হাশরের ময়দানের দৃশ্যটি যদি কেউ দুনিয়াতে দেখতে চায় তাহলে আরাফাতে তার দৃশ্য দেখতে পাবে। সারা বিশ্ব থেকে আগত হাজীগণ এ ময়দানে একত্রিত হয়ে কায়মনোবাক্যে মহান আল্লাহ্র কাছে ধরণা দেন। বিভিন্ন বর্ণ ও বিভিন্ন ভাষার সকল মুসলমান একই ধরনের ইহরামের কাপড় পরিধান করে এখানে জমায়েত হন। বড়-ছোট, ধনী-গরীব, আরব-অনারব ও সাদা-কালোরে মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এটা সহীহ মুসলিম ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অপৃর্ব নিদর্শন। আল্লাহর প্রেমিকগণ আরাফাহ ময়দানে দাঁড়িয়ে ঠিক তেমনিভাবে সূর্যাস্তু পর্যন্ত কাঙ্গালের ন্যায় আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে থাকে নিজের গুনাহমাফের জন্য। সে এক অভিনব দৃশ্য! যেন জাহান্নামের ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি নিঃশেষ করে ফেলছে! যেখানে বস্ত্রহীন অবস্থায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে। সঠিক ঈমান ও আমলের অধিকারী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাবে আল্লাহর করুণায়। আর ঈমানহীন-ত্রুটিপূর্ণ ঈমান ও আমলওয়ালা ব্যক্তিদেরকে অনন্ত আযাব ভোগ করতে শেকল পরিয়ে ধরে নেয়া হবে জাহান্নামের পথে। মরু প্রান্তরে তাদের এ অবস্থান যেন প্রভুর অবারিত করুণা লাভের জন্য এক স্বর্গীয় সমাবেশ। একই সময়, একই স্থানে মুসলমানদের একত্রিত হওয়া, আল্লাহ্র প্রতি তাদের মনোযোগী হওয়া, অত্যন্ত বিনয় ও ন¤্রতার সাথে আল্লাহর নিকট দোয়া করা এবং নিজের ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া এ সবই আল্লাহর রহমত বর্ষণ ও আধ্যাত্মিকতার বিকাশ।
আরাফাতের দিনে করণীয়
আরাফাহ অভিমুখে রওয়ানা
মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করুন।
বাদ ফজর সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে মুআল্লিমের গাড়িযোগে আরাফাহ’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা করুন।
পথে তালবিয়া, দোয়া, তাসবীহ, (সুবহানাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), পড়তে পড়তে দুপুরের পূর্বেই মিনা থেকে ৬ মাইল দূরে অবস্থিত আরাফাহ ময়দানে পৌঁছুন।
শক্ত-সবল এবং মাইলের পর মাইল হেঁটে অতিক্রম করায় অভ্যস্ত না হলে আরাফায় পায়ে হেঁটে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন না।
জাবালে রহমত
জাবালে রহমত একটি পাহাড়ের নাম। জাবালে রহমত/রহমতের পাহাড় আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত। এই পাহাড়ে সর্বপ্রথম হযরত আদম (আ এর দোয়া কুবল করা হয়। এটিকে আরাফাহ পাহাড় এবং দোয়ার পাহাড়ও বলা হয়। এখানে তিনি বিবি হাওয়া (আ
এর সাক্ষাত পান। পাহাড়ের উপরে একটি সাদা ফলক। দূর থেকে দেখা যায়। পাহাড়ের পাদদেশে বহুলোকের ভিড়। বাংলাদেশী ও ইন্দোনেশীয় হকাররা নানা ধরনের পানীয় আর নানা রঙের পাথর ও তসবিহ বিক্রি করছে। সাজানো উটে চড়িয়ে পয়সা কামাই করছে কেউ। ক্যামেরাওয়ালারা ছবি তুলে সাথে সাথে সরবরাহ করছে। রহমতের পাহাড়ে উঠলে পুরো আরাফাহ’র ময়দান দেখা যায়। জনগণের কলকাকলী থেকে ছুটে বেরিয়ে পাহাড় চূড়ার এক প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ান। উচ্চারণ করুন- রাব্বানা জ্বালামনা আনফুসানা ওয়াইল্লাম তাগফিরলানা ওয়াতারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাসিরিন। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাবালুর রহমতে দাঁড়িয়ে বিদায় হজ্জের ভাষণ দেন। বিদায় হজ্জের দিন রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে বড় পাথরগুলোর কাছে দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করেছেন, পাহাড়ের উপরে উঠেননি। তাই হজ্জের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুকরণে জাবালে রহমতের পাশে দাঁড়ানো সুন্নাত। তবে পাহাড়ের উপরে উঠার কোন বিশেষ ফযীলত নেই।
জাবালে রহমতের উপর দৃষ্টি পড়লে করণীয়
জাবালে রহমতের উপর দৃষ্টি পড়তেই তস্বীহ্ (সুবহানাল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলার পর দোয়া করুন। যে দোয়া ইচ্ছা করতে পারেন।
আরাফাহ ময়দানে জাবালে আরাফাতে উঠার চেষ্টা করবেন না এমনকি তার কাছেও যাওয়ার চেষ্টা থেকেও বিরত থাকুন।
প্রথম কাজ
২। আরাফাতে অবস্থান: (ফরজ)
আরাফাতে মসজিদে নামিরা (যা আরাফাতের প্রান্তরে মক্কা মোকাররমার দিকে অবস্থিত) এর নিকট অবস্থান করবেন।
যদি জাবালে রহমতের নিকটবর্তী স্থান, যেখানে কালো পাথরের বিছানা রয়েছে সেখানে যদি জায়গা পাওয়া যায় তবে সেখানেই অবস্থান করবেন। এটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা-এর অবস্থান করার জায়গা। নতুবা যেখানে সম্ভব নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান করবেন।
জোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন।
পানাহার শেষ করে সূর্য হেলে পড়ার পূর্বে গোসল করবেন।
তারপর মসজিদে নামিরায় গিয়ে বসবেন।
আরাফাহ ময়দানের মসজিদে যেতে পারলে যোহর ও আসর একসাথে কছর করে আদায় করবেন।
যখন ইমাম খুৎবা পাঠ করবেন, তখন তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করবেন।
অন্যথায় তাঁবুতে যোহরের সময় যোহর এবং আসরের সময় আসর আদায় করবেন।
আরাফাহ ময়দানে নিজের অবস্থানস্থলে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম।
আরাফাহ ময়দানে হারিয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই নিজ তাঁবুতেই অবস্থান করুন।
টয়লেট ব্যবহার করতে গেলে কাউকে সঙ্গে নিয়ে বের হবেন।
মাসআলা
ক. আরাফাহ ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরার কিছু অংশ আরাফাতের বাইরে এবং কিছু অংশ আরফাতের ভিতরে। অতএব মসজিদে নামিরায় যোহর-আসর জামাতে আদায় করার পর আরাফাতের সীমানার ভিতরে এসে অকুফ করতে হবে।
খ. আরাফাতের সীমানার শুরু এবং শেষের বিশেষ চিহ্ন দেয়া আছে। মসজিদে নামিরার নিকটস্থ নি¤œ এলাকাটিকে বাতনে ওরানা বলা হয়। এটা আরাফাতের বাইরের অংশ। এখানে অকুফ করা জায়েজ নেই।
গ. আরাফাতের বিস্তীর্ণ এলাকার সবটাই অকুফ করার স্থান। অতএব জাবালে রহমতের পাশে গিয়ে অকুফ করতে হবে, এটা অত্যাবশ্যকীয় নয়। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (রা জাবালে রহমতের পাদদেশের একটি পাথরে অকুফের সময় উপস্থিত হাজীদের বলেছিলেন, যে আমি এখানে অকুফ করছি। কিন্তু আরাফাতের বিস্তীর্ণ এলাকার সবটাই অকুফ করেছিলেন। এটা সুন্নাত। একা একা অথবা স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে একত্রে হাত তুলে দোয়া করা।
ঘ. আরাফাহ ময়দানে মাগরিবের নামাজ পড়তে হয় না, বরং মাগরিব ও এশার নামাজ এক সাথে মুযদালিফায় পড়তে হয়।
ঙ. কেবলার দিকে মুখ করে অকুফ করা (যদি তা কষ্টদায়ক না হয়)। আল্লাহর নবী আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বাবা শরীফের দিকে মুখ করে অকুফ করেছিলেন। এটা সুন্নাত। একা একা অথবা স্ত্রী ও ছেলে- মেয়েদের নিয়ে একত্রে হাত তুলে দোয়া করা।
চ. কেউ যদি ৯ তারিখের দিবাগত রাতেও আরাফাতে হাজির হতে পারে তার হজ্জ শুদ্ধ হবে। এরপর হাজির হলে হজ্জ হবে না।
ছ. অবৈধ পন্থায় অর্থ সঞ্চয়কারীদের দোয়া কবুল হয় না। অনুরূপ মানুষের হক নষ্টকারীর দোয়াও কবুল হয় না। যতক্ষণ না সে তার কাছে থেকে মাফ পাবে।
জ. অকুফকারীদের জন্য এদিনে রোযা নিষিদ্ধ।
আরাফাহ ময়দানের ফজিলত
যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে ইয়াউমে আরাফাহকে আরাফাহ দিবস বলে। এক আল্লাহ্র সর্বোত্তম দিবস আরাফাহ দিবস। আল্লাহ তা’আলা, আরাফাহ দিবসে তাঁর বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নাম থেকে মুক্ত দেন। দ্বীন ইসলামের পরিপূর্ণতা এবং আল্লাহ্ পাকের একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম সর্ম্পকিত আয়াতটি (সূরা মায়িদা-৩) আরাফাতের দিন আরাফাতে নাযিল হয়।
১. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনে, হজ্জ হলো আরাফাতে অবস্থান করা।
২. আমরা সুনির্দিষ্ট স্থানের বাইরে উকুফে আরাফাহ করছিলাম। ইবনে মেরবা আনসারি আমাদের কাছে এলেন এবং বললেন, আমি আপনাদের কাছে রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতিনিধি। তিনি বলেছেন: হজ্জের মাশায়ের-অবস্থান করুন-কেননা আপনারা আপনাদের পিতা ইব্রাহীমের ঐতিহ্যের ওপর রয়েছেন। এর অর্থ ইব্রাহীম (আ উকুফে আরাফাহ করেছিলেন, সে হিসেবে আমরাও করে থাকি।
৩. হযরত আয়েশা (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো দিনই এমন নেই, যেদিন আল্লাহতা’আলা আরাফাহ্র দিনের চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। তিনি তাদের নিকটবর্তী হন। এরপর ফেরেশতাদের সাথে তাদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, কী চায় এরা? (সহীহ মুসলিম-১৩৪৮) আল্লামা ইবনু আব্দুল বার এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন যে, আল্লাহপাক আরাফাহবাসীদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেন। সেজন্যই তিনি ফিরিশতাদের নিকট তাদের প্রশংসা করেন।
৪. হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা ও হযরত আবু হুরায়রা (রা
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের সাথে আহলে আরাফাহকে নিয়ে গর্ব করেন এবং বলেন, আমার এসব বান্দাদের দেখো, কেমন ঊষ্কখুষ্ক চুলে, ধূলিমলিন হয়ে আমার নিকট এসেছে। (মুসনাদে আহমদ-২/২২৪)
৫. তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ (রা) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আরাফাহ দিবসে শয়তানকে এত বেশি লাঞ্ছিত, অপদস্থ, নিচু এবং রাগান্বিত দেখা যায় যে, অন্য কোন সময় তাকে এমন দেখা যায় না। বিশেষত যখন সে লক্ষ্য করে যে আল্লাহর রহমতের বৃদ্ধি বর্ষিত হচ্ছে এবং বান্দাহদের কবিরা গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হচ্ছে। তবে বদরের যুদ্ধের সময় তাকে এরূপ লাঞ্ছিত, অপদস্থ ও রাগান্বিত দেখা গিয়েছিল। (মিশকাত)
৬. রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আরাফাহ ময়দানে সূর্যাস্তের পূর্বে বেলাল (রা কে নির্দেশ দিলেন মানুষদেরকে চুপ করাতে। বেলাল বললেন: আপনারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য নীরবতা অবলম্বন করুন। জনতা নীরব হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,‘হে লোকসকল! একটু পূর্বে জিবরাইল আমার কাছে এসেছেন। তিনি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আহলে আরাফাহ ও আহলে মুযদালিফার জন্য আমার কাছে সালাম পৌঁছিয়েছেন, ও তাদের অন্যায়ের জিম্মাদারি নিয়েছেন। ওমর দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা কি শুধুই আমাদের জন্য? তিনি বললেন, এটা তোমাদের জন্য ও তোমাদের পর কেয়ামত পর্যন্ত যারা আসবে তাদের জন্য। ওমর (রা
বললেন, আল্লাহর অনুকম্পা অঢেল ও উত্তম।
৭. আরাফাহ দিবস মুসলমানদের ওপর আল্লাহর দ্বীন ও নেয়ামত পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিবস। তারিক ইবনে শিহাব থেকে সহীহ আল বুখারীর এক বর্ণনায় এসেছে, ইহুদিরা ওমর (রা কে বলল: আপনারা একটি আয়াত পড়েন, যদি তা আমাদের ওপর নাযিল হতো তাহলে এ দিবসে আমরা উৎসব পালন করতাম। ওমর (রা
বললেন, আমি অবশ্যই জানি কী উদ্দেশ্যে ও কোথায় তা নাযিল হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথায় ছিলেন যখন তা নাযিল হল। তা ছিল আরাফাহ দিবস। আর আমরা-আল্লাহ্র কসম-আরাফাহ ময়দানে। সুফিয়ান বলেন, দিনটি জুমাবার ছিল কি-না, আমার সন্দেহ আছে। আয়াতটি ছিল “আলইয়াওমা আকমালতু লাকুম দিনাকুম”- আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দিনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।
৮. আরাফাহ দিবসের রোজার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। তবে এ রোজা হাজীদের জন্য নয়, বরং যারা হজ্জ করতে আসেনি তাদের জন্য। হাজীদের জন্য আরাফাহ দিবসের রোজা মাকরুহ। রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জের সময় আরাফাহ দিবসে রোজা রাখেননি। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন।
৯. ইকরামহা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফাহ দিবসে আরাফাহ ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফাহ ময়দানে আরাফাহ দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।
১০. এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দিবসকে বছরের শ্রেষ্ঠ দিবস বলে ঘোষণা করেছেন। যারা হজ্জ করতে না যাবে তাদের জন্য এ দিনে রোজা রাখা সুন্নাত।
১১. আবু কাতাদাহ (রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই দিনে রোযার ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, এটি গত বছর এবং আগামী বছরের গুনাহমাফ করে দেয়।
আরাফাহ ময়দানের আমল
হাদীস: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আরাফাহ দিবসের শ্রেষ্ঠ দোয়া এবং আমি ও পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছি তার সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির’।
আরাফাহ ময়দানে নিজের অবস্থানস্থলে কেবলামুখী হয়ে নি¤েœাক্ত আমল করবেন :
১। সূরা ফাতেহা-৪ বার পড়া
“আলহামদু লিল্ল¬াহি রাব্বিল আলামীন। আর রাহমানির রাহীম। মালিকি ইয়াওমিদ্দীন। ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা’ঈন। ইহদিনাছ ছিরাত্বাল মুসতাক্বীম। সিরাতাল লাযীনা আন’আমতা আলাইহিম গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্বোয়াল্ল¬ীন”। আমীন।
২। সূরা ইখলাস-৩ বার পড়া :
“কুল-হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুছ ছামাদ। লাম ইয়ালিদ, ওয়ালাম ইউলাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্ল¬াহু কুফুওয়ান আহাদ”।
৩। দরূদ শরীফ-১০ বার পড়া
“আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদি ওয়া আলা আলে মুহাম্মদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
“আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মদিন কামা-বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ”।
সংক্ষিপ্ত দরূদ : “আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মদ ওয়া আলা আলে সায়্যিদিনা মুহাম্মদ”।
৪। সুবহানাল্ল¬াহ-৫ বার পড়া
“সুবহানাল্ল¬াহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্ল¬াল্ল¬াহু আল্ল¬াহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্ল¬াবিল্লা-হিল আলিয়্যিল আজীম, মাশাআল্ল¬াহু কানা, মা-লাম ইয়াশাউ লাম ইয়াকুন”।
৫। সুবহানাল্লাহি বেহামদিহি- ১০ বার পড়া
“সুবহানাল্ল¬াহি বেহামদিহী, ওয়া সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়া বেহামদিহী ওয়াসতাগফেরুল্লাহা রাব্বী মিন কুল্লে যাম্বিওঁ ওয়া আতুবু ইলাইহি”।
৬। ক) ৩৩ বার : খ) ৩৩ বার : গ) ৩৪ বার :
সুবহানাল্লাহ আল হামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবার পড়া
৭। ১০ বার :
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া হাইয়ুন লা-ইয়ামুতু- আবাদান আবাদা, বে ইয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর।
৮। ১০০ বার পড়া
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর”।
৯। ১০০ বার পড়া :
“সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম”।
১০। লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায যোয়ালেমীন।
১১। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।
১২। ১০০ বার পড়া :
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।
১৩। ১০০ বার পড়া :
“সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ”।
১৪। আয়াতুল কুরসী - ১ বার পড়া
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাউমু, লাহু-মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি, মানযাল্লাযী ইয়াস ফা’উ ইনদাহু ইল্লা বি‘ইযনিহি, ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা’-আ। ওয়াসিয়া কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা, ওয়ালা ইয়া’উদুহু হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলীয়্য্যল ‘আযীম”।
১৫। সূরা হাশরের শেষাংশ - ১ বার পড়া
“হুওয়াল্লা হুললাযী লা-ইলাহা ইল্লাহু আ’-লিমুল গাইবি ওয়াশশাহাদাতি হুওয়ার রাহমানুর রাহীম।
হুওয়াল্লা হুললাযী লা-ইলাহা ইল্লাহু আলমালিকুল কুদ্দুসু সালামুল মু‘মিনুল মুহাইমিনুল আযীযুল জ্বাব্বারুল মুতাক্বাব্বিরু; সুবহানাল্লাহি-আম্মা ইউশরিকুন।
হুয়াল্লা হুল খা-লিকুল বা-রিউল মুসাব্বিরু লাহুল আসমা-উল হুছনা; ইয়্যসাব্বিহু লাহূ মা-ফিস্সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া হুওয়াল আযীযুল হাকীম”।
১৬। সূরা আল বাকারার শেষ তিন আয়াত ১বার পড়া
“লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদী; ওয়াইন তুবদূ মা ফি আনফুসিকুম আও তুখফুহু ইউহাসিবকুম বিহিল্লাহ; ফাইয়াগফিরু লিমাইয়াশাউ ওয়াইউ’আযযিবু মাইইয়াশাউ; ওয়াল্লাহু আল্লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। -২৮৪
আমানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির রাব্বিহী ওয়াল মু’মিনুন; কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহি ওয়াকুতুবিহী ওয়া রুসূলিহি; লানুফাররিকু বাইনা আহাদিম-মির রুসূলিহি; ওয়া ক্বালু সামি’না ওয়াআত’¡না, গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছীর। -২৮৫
লাইয়্যুকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা; লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত; রাব্বানা লা তুআখিযনা ইন্নাসীনা আও আখতা’না; রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইছরান কামাহামালতাহু আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা; রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বক্বাতালানা বিহি, ওয়াফু আন্না, ওয়াগফিরলানা, ওয়ার হামনা, আনতা মাউলানা ফানছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরীন”। - ২৮৬
১৭। সূরা নাস ১বার পড়া
১৮। সূরা ফালাক ১বার পড়া
১৯। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল দু, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ।
২০। রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওযা শরীফে সালাম প্রেরণ
আস-সালাতু আস-সালামু আলাইকুম আইয়্যুহাননবী ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আস-সালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ
আস-সালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইকা ইয়া নাবীয়্যুাল্লাহ
আস-সালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইকা ইয়া হাবীবআল্লাহ
আস-সালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইকা ইয়া খায়রী খালকিল্লাহ
আস-সালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইকা ইয়া সাইয়্যিদুল মুরছালীন
আস-সালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইকা ইয়া খাতিমান নাবীয়্যিন
আস-সালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইকা ইয়া শাফিয়াল মুজনিবীন
আস-সালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইকা ইয়া রাহমাতাললিল আলামীন
মুযদালিফা
‘মুযদালিফা’ ইযদেলাফ শব্দ হতে নির্গত। যার অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা। আরেক অর্থ হলো অন্ধকার রাতে একত্রিত হওয়া। মুযদলিফা হলো মিনা এবং আরাফাহ’র মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি ময়দান। এ ময়দান মিনা থেকে তিন মাইল পূর্ব দিকে অবস্থিত। যেখানে হাজীগণ আরাফাতে অকুফ করার পর রাত যাপন করেন। আরাফাহ ময়দান থেকে ফিরে মুযদালিফায় খোলা আকাশের নীচে রাত যাপন করতে হয়। ৯ তারিখ বাদ মাগরিব আরাফাহ’র ময়দান থেকে এসে রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করতে হয়। আরাফাহ ময়দান থেকে ফিরে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নীচে রাত যাপন করতে হয়। এখানে ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা সকলেই সমান। কাজেই মিসকীনের ন্যায় সবাই একই অবস্থায় রাত যাপনের মধ্য দিয়ে মূলত এ সত্যই প্রকাশ করা যে, আল্লাহর কাছে সবাই মিসকিন। সহায়-সম্বলহীন এবং প্রত্যেকেই তাঁর অনুগ্রহপ্রার্থী।
মুযদালিফা অভিমুখে রওয়ানা
সূর্যাস্তের পর আরাফাহ বা রাস্তার কোথাও মাগরিবের নামাজ না পড়ে সোজা মুযদালিফার দিকে চলুন।
দ্বিতীয় কাজ
৩। মুযদালিফায় অবস্থান : (ওয়াজিব)
মুযদাফিলায় শেষ প্রান্তে মিনা প্রান্তরের কাছাকাছি অবস্থান নিতে পারলে ভাল।
মুযদালিফায় করণীয়
মুযদালিফায় এসে এক আজান ও দুই ইকামাতে এশার ওয়াক্তে প্রথমে মাগরিবের ৩ রাকাত ফরয নামাজ আদায় করুন এবং পরে এশার ৪ রাকাত ফরয ও তিন রাকাত বেতের নামাজ আলাদা আলাদা আদায় করুন।
ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীফ পড়ুন।
দুই নামাজের মাঝে কোন প্রকার সুন্নত, নফল পড়বেন না।
নামাজের পর কেবলামুখী হয়ে বিনয় সহকারে মুনাজাত করা।
রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করুন।
টয়লেট ব্যবহার করতে গেলে কাউকে সঙ্গে নিয়ে বের হবেন।
সকালে সূর্য উদয়ের পূর্বে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।
কংকর সংগ্রহ
মিনা অথবা মুযদালিফা থেকেও কংকর সংগ্রহ করতে পারেন।
১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে মীনায় অবস্থিত তিনটি শয়তানকে কঙ্কর মারার জন্য জন্য ৭০ টি কংকর (ছোলা বুটের সমান) সংগ্রহ করুন।
মিনা অথবা মুযদালিফা থেকেও কংকর সংগ্রহ করতে পারেন।
মাসআলা
ক. মুযদালিফায় রাত যাপন ওয়াজিব। অন্যথায় দম দিতে হবে।
খ. মহিলা, শিশু, অসুস্থ এবং দুর্বল লোকদের জন্য রাতের শেষ ভাগে মীনায় যাওয়ার অনুমতি আছে।
গ. মুযদালিফায় অবস্থানকালে বেতের ব্যতীত কোন নফল নামাজ নেই।
ঘ. মুযদালিফায় সম্পূর্ণ এলাকা রাত যাপনের স্থান। এর জন্য বিশেষ স্থান নির্দিষ্ট নেই।
মুযদালিফার রাতের ফযিলত
কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, তোমরা যখন আরাফাতে অবস্থান সম্পন্ন করবে, তখন মাশআরুল হারামের কাছে আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করবে। (সূরা আল বাকারা-১৯৮)
মাশআরুল হরাম মুযদালিফার একটি পাহাড়কে বলা হয়, যার অপর নাম হলো ক্বাযাহ। আল্লাহর নবী আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে রাত যাপন করেছিলেন এবং তিনি এটাও বলেছিলেন আমি এখানে রাত যাপন করছি, তবে সমস্ত মুযদালিফার এলাকা রাত যাপনের স্থান।
হজ্জের মৌসুমে মুযদালিফায় রাতের ফযিলত ক্বদরের রাতের চেয়েও উত্তম। যত বেশী সম্ভব রাত্রি জাগরণ করে এবাদত বন্দেগী করবেন।
এখানে প্রাণ ভরে দোয়া করা উচিত।
১০ যিলহজ্জ ইয়াওমুন নাহার
স্থান : মুজদালিফা-মিনা, মিনা-মক্কা শরীফ, মক্কা শরীফ-মিনা
মুযদালিফা থেকে মীনা ফেরার পর এ দিনটি হাজীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশ পরিশ্রমের। এদিনের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত ধীরে-স্থিরভাবে, নিয়মমাফিক ও তারতিলের সাথে আঞ্জাম দিতে হবে। হাজীদের জন্য এদিনের করণীয় বিষয়গুলো এখানে উল্লেখ করা হলো-
১০ যিলহজ্জ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান।
সুবহে সাদেকের পর অন্ধকার থাকতে প্রথম সময় ইমামের সাথে অথবা একাকী যেমন সুযোগ হয়, ফজরের নামাজ আদায় করুন।
ফজরের নামাজ পড়ে মাশআরে হারামের কাছে কেবলামুখী হয়ে লাব্বাইকা অথবা তসবীহ তাহলীল পড়বেন এবং হাত উপরে তুলে দোয়ায় লিপ্ত হবেন।
মিনা
হজ্জ এবং মক্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো মিনা। মক্কা মুয়াযযমা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরত্বে প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পূর্বে অবস্থিত একটি মাঠের নাম। হজ্জের কার্যাদি সম্পাদনকালে বেশিরভাগ সময় মিনাতেই কাটাতে হয়। হাজীদের জন্য ৮ যিলহজ্জজ যোহর থেকে ৯ যিলহজ্জ ফজর পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত নামায মিনায় আদায় করা সুন্নাত এবং সেখানে সেদিন রাত্রি যাপন করাও সুন্নাত। ৮ যিলহজ্জ তারিখকে ‘ইয়াওমুত তারবিয়াহ’ বলে। ‘তারবিয়াহ’ মানে পানির প্রস্তুতি গ্রহণ করা। রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে পানির স্বল্পতার কারণে এই দিবসে হাজীরা মিনা থেকে পানি সংগ্রহ করে আরাফাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেন। ৯ তারিখ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে পরের দিন সকালে পাথর নিক্ষেপ করা ও কুরবানী করা এবং পরবর্তী দুই বা তিন দিন মিনাতেই রাত্রি যাপন করতে হয়। মিনা হলো ‘মানহার’ বা কুরবানীর স্থান। মিনা এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে প্রবাহিত করা। মিনায় অধিক সংখ্যক কুরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিত করা হয় বলে একে মিনা বলা হয়। কুরবানীর দিনসহ আইয়্যামে তাশরীক মিনায় থাকার পর হাজীরা মক্কায় ফিরে আসেন।
মিনা অভিমুখে রওয়ানা
শেষ রাতে অন্ধকার থাকা অবস্থায় ফজর নামাজ পড়া।
১০ যিলহজ্জ ফজরের নামাজান্তে কিছুক্ষণ অবস্থান করে মিনার দিকে যাত্রা করবেন।
মুজদালিফা থেকে সূর্যোদয়ের একটু আগে যাত্রা করা সুন্নত।
এ অবস্থায় দরূদ, এস্তেগফার ও তালবিয়া পড়বেন এবং মন উজাড় করে দোয়া করতে থাকবেন।
মিনায় আগমন।
জিমার বা জামরাত বা শয়তান
মিনায় তিনটি স্থানে মানুষ সমান উঁচু স্তম্ভ নির্মিত রয়েছে। সেখানে রমী বা কংকর নিক্ষেপ করা হয়। ৫ম-তলা জামারা ব্রীজ হচ্ছে অনবদ্য স্থাপত্য। এটি এক দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ২০০ কিলোমিটার। নীচতলা, প্রথমতলা, দ্বিতলা, ত্রি-তলা, ৪র্থ তলা ও ৫মতলা দিয়ে পাথর মারতে হয়। ফলে হাজী সাহেবদের কষ্ট কম হয়।
হাদীস : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি জিমরায় রমি করলে তা তোমার জন্য কিয়ামতের দিন নূর হবে। (কাশফুল আসতার-১১৪০)
কংকর নিক্ষেপ
মুযদালিফা থেকে ফিরে মিনায় গিয়ে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়, এই পাথর নিক্ষেপ করাকেই জামরাহ বলা হয়। শয়তান ইব্রাহীম (আ কে এ তিনটি জায়গায় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। ইব্রাহীম (আ
শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মারেন এবং তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করেন। সেই তিনটি স্থানে প্রতি বছর হাজীগণ পাথর নিক্ষেপ করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে বাঁধা দেয়ার শয়তানী তৎপরতা প্রতিরোধের প্রতীক হলো মিনার জামরায় পাথর মারা। উক্ত স্থানে শয়তান বর্তমান থাকে না তবুও পাথর নিক্ষেপ করে সৈনিকদের ন্যায় চাঁদমারী করতে হয়। আবরাহা বাদশাহর সৈন্য সামন্ত কা’বা ঘর ধ্বংস করার জন্য এ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছিল। প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপের সময় আল্লাহর সৈনিকগণ বলে ওঠে: ‘আল্লাহু আকবর’ “আল্লাহর মহান শয়তান ও তার অনুসারীদের মুখ ধূলায় মলিন হোক।” পাথর নিক্ষেপ করার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সৈনিক এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে যে, হে আল্লাহ! তোমার দীন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য কিংবা তোমার আওয়াজকে স্তব্দ করার জন্য যে-ই চেষ্টা করবে আমি তোমার বাণীকে উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে এমনি করেই লড়াই করব। ঠিক এভাবে হজ্জের প্রতিটি বিধান পালনের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা মূলত এ ঘোষণাই দিয়ে থাকে যে, আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আখিরাতে মুক্তি পাওয়া ও জান্নাত লাভ করা।
প্রথম কাজ
৪। বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ: (ওয়াজিব)
যোহরের পূর্বে (তবে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বিলম্ব করা যায়) ভিড় বা দুর্বলতার কারণে অসুস্থ ও দুর্বল হাজীরা রাতেও ৩টি জামরার মধ্যে ১ম টিতে অর্থাৎ জামরাতুল আক্বাবায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করুন। এটা মীনার শেষপ্রান্তে মক্কার নিকটে অবস্থিত। সেখানে চিহ্ন দেয়া আছে। প্রথম আসবে ছোট শয়তান, তারপর মধ্যম শয়তান এবং তার পর বড় শয়তান। আজ কেবল বড় শয়তানকেই লক্ষ্য করে কংকর মারবেন।
মাসআলা
ক. ১০ তারিখ সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত বড় শয়তানকে কংকর মারার সময়।
খ. একটি করে কংকর মারবেন। এক সাথে সাতটি কংকর মারলে একটি গণ্য হবে।
গ. কংকর যেন চারপাশের গোলাকার বেষ্টনির ভিতরে পড়ে। এর বাইরে পড়লে আবার কংকর মারতে হবে। সেজন্য অতিরিক্ত কংকর সাথে রাখবেন।
ঘ. প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় অত্যন্ত আদবের সাথে “আল্লাহু আকবর” বলতে হবে।
ঙ. কংকর এতটুকু বড় হলে যেন ভিড়ের সময় দূর থেকে নিক্ষেপ করলে গোলাকার বেষ্টনির ভিতর পড়ে।
চ. কংকর ছাড়া অন্য কোন কিছু যেমন জুতা, স্যান্ডেল ও হাড় ইত্যাদি মারা নিষেধ।
ছ. আল্লাহর রাসূল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সাবধান হজ্জ পালনের ব্যাপারে তোমরা বাড়াবাড়ি করোনা। দ্বিতীয় জামরাতে কংকর মারা ইবাদত। ইবাদতে যেন বিঘœ না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
জ. মহিলা, অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিরা কংকর মারতে না যাওয়া উত্তম। কারণ প্রচন্ড ভিড়ে তাদের যে কোন অঘটন ঘটার আশংকা থাকতে পারে। এমতাবস্থায় কোন লোককে দিয়ে রমঈর (কংকর মারা) কাজ সম্পন্ন করবেন। তবে যদি রমঈ করবেন, আগে নিজের রমঈ করে এরপর অপরের রমঈ করবেন।
ঝ. যদি কেউ নির্দিষ্ট সময়ে রমঈ করতে না পারেন, তাকে দম দিতে হবে। কারণ রমঈ ওয়াজিব।
ঞ. বড় শয়তানকে কংকর মারার সঙ্গে সঙ্গে তালবিয়া পড়া শেষ। এরপর শুধু তাকবিরাত (আল্লাহু আকবর, আল্লাহু ্আকবর, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবর, ওয়লিল্লাহিল হামদ) বলতে হবে।
ট. মহিলা বৃদ্ধা এবং দুর্বল ব্যক্তিগণ ইচ্ছে করলে সূর্যাস্তের পর রমঈ করতে পারবেন।
কুরবানী
কুরবানী হলো হযরত ইব্রাহীম (আ এর সুন্নত। কুরবানীর মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের প্রতি তাদের আনুগত্য, দাসত্ব আতœসর্মপনের নজির স্থাপন করে। আল্লাহর নামে পশু কুরবানীর মাধ্যমে মূলত আল্লাহর কাছে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় যে, এখন তোমার সন্তুষ্টির জন্য যেরূপ পশু কুরবানী দিলাম, তোমার দ্বীনের জন্য তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রয়োজনে আমার জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধা করব না। আমার জীবন ও মৃত্যু তোমার জন্যই।
দ্বিতীয় কাজ
৫। কুরবানী করা: (ওয়াজিব)
কংকর মারার পর কুরবানী করুন।
ইফরাদ হজ্জ পালনকারীদের জন্য মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছাটার পর ইহরাম খোলা। তবে ফরয তাওয়াফ আদায় না করা পর্যন্ত স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ।
তামাত্তু বা ক্বিরান হজ্জ পালনকারীদের জন্য তাদঈ (পশু) জবেহ করা।
পশু খরিদ করার জন্য মিনার বাজারে আসুন।
মাসাআলা
ক. হাদঈ জবেহ করার সময় ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
খ. ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এবং গরু বা উটের সাত ভাগের এক ভাগ এ সময় হাদঈর অন্তর্ভুক্ত।
গ. মীনা অথবা মক্কার সীমানার ভিতরের যে কোন স্থানে হাদঈ জবেহ করতে হবে।
ঘ. হাদঈ জবেহ না করা পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করা বা চুল কাটা যাবে না।
ঙ. হাদঈর গোশত নিজে খেতে পারবে। অন্যকে খাওয়াতে পারবে।
চ-৮ (অ-৩) ২০-০৭-১৭ ঐউ-১ ঈয. ১৫,৭০০
চ. হাদঈ নিজ হাতে জবেহ করা যায়।
ছ. নিজে যবেহ করতে না পারলে পশুর কাছে হাজির থাকুন।
জ. ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা করে কুরবানী করতে পারেন। তবে কুরবানীর সময় জেনে নিবেন।
ঞ. কুরবানীর গোশত নিজে খাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
ট. এছাড়া সচ্ছল হাজীগণ ইচ্ছে করলে নফল কুরবানী করতে পারেন।
ঠ. তামাত্তো এবং কেরান হজ্জযাত্রীদের জন্য ইহা শুকরিয়া স্বরূপ ওয়াজেব কুরবানী।
ঢ. ইফরাদ হজ্জযাত্রীদের জন্য ইহা মুস্তাহাব।
কুরবনীর ফযিলত
কুরআন
১. কুরাআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন “সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন। কুরআনের আয়াত অনুযায়ী কুরবানী করা আমাদের ওপর ওয়াজিব।
২. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না এর গোশত ও রক্ত, পৌঁছায় কেবলমাত্র তোমাদের তাকওয়া।”
৩. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ আরো বলেছেন, আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করে থাকেন।
হাদীস
১. হযরত আবু হুরায়রা (রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে। এ থেকে কুরবানীর গুরুত্ব সহজে অনুমান করা যায়।
২. হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীগণ জিজ্ঞাস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল এ কুরবানী কি? তিনি উত্তরে বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আ
এর সুন্নাত। তারা আবার বললেন, এতে আমাদের কি কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী আছে। তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এ বকরীর পশমেরও কি তাই? জবাবে তিনি বললেন বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী আছে। উপযুক্ত হাদীস দু’টি থেকে একথা পরিষ্কার বুঝা যায়, কুরবানীর কতখানি গুরুত্ব বহন করে। সামর্থ্যবানদের কুরবানী না করার কারণে। ঈদগাহে আসতে বারণ করা হয়েছে। তার মানে কুরবানী না করলে ঈদের জামাতে আসার প্রয়োজন নেই। অতএব এ থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মহানবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর গুরুত্ব কতে বেশী দিয়েছেন।
৩. হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, উত্তম হজ্জ কী? তিনি বললেন, উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা ও পশু কুরবানী করা। (জামে তিরমিজি-৮২৭)
৪. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন......আর তুমি কুরবানী করলে তা তোমার প্রতিপালকের নিকট সঞ্চিত থাকবে। (বাযযার কাশফুল আসতার-১০৮২)
হলক বা কছর করা
তৃতীয় কাজ
৬। হলক বা কছর করা: (ওয়াজিব)
কুরবানী করার পর মাথা মু-ান বা চুল ছেঁটে ফেলুন।
হজ্জের ইহ্রাম থেকে হালাল
কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডানোর বা চুল ছেঁটে ফেলার মাধ্যমে আপনি এখন হজ্জের ইহ্রাম থেকে সম্পূর্ণ হালাল হয়ে গেলেন।
মহিলাদের সমগ্র চুলের অগ্রভাগ হাতের আঙ্গুলির এক কড়া পরিমাণ ছেঁটে হালাল হোন। চুল ছেঁটে ফেলার মাধ্যমে ইহ্রামের সমুদয় কাজ সমাপ্ত হল। এখন গোসল করে সিলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করুন।
মাথার চুল সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলা উত্তম। আল্লাহর (রাসূল) সা: এমন ব্যক্তির জন্য তিনবার রহমতের দোয়া করেছেন এবং চুল ছাঁটাইকারীর জন্য একবার রহমতের দোয়া করেছেন।
ফরয তাওয়াফ পর্যন্ত স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ। এর আগে সহবাস করলে দম দিতে হবে। তাহলে হজ্জ শুদ্ধ হবে।
খেয়াল রাখবেন: কংকর মারা কুরবানী করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরী ও ওয়াজিব; অন্যাথায় দম বা কাফ্ফারা দিয়ে হজ্জ শুদ্ধ করতে হবে। বর্তমানে এই সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় হচ্ছে ইফরাদ হজ্জ। যেখানে কুরবানী নেই হজ্জের পরে ওমরাহ করা যায়।
তাওয়াফ
চতুর্থ কাজ
৭। তাওয়াফ করা (ফরজ)
এরপর মিনা থেকে মক্কায় এসে (নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুবিধাজনক সময়) তাওয়াফের যিয়ারত পূর্ণ করুন।
মনে রাখবেন সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে যিয়ারত করে নিতে হবে। তা না হলে পরে তাওয়াফ করে দম বা কাফ্ফারা দিতে হবে।
তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করেন।
মসজিদে হারামের দিকে অগ্রসর হওয়া
মক্কায় আসার পর শারীরিক ক্লান্তি বা ক্ষুধা থাকলে কিংবা অন্য কোন জরুরী কাজ থাকলে সব সেরে শান্ত হোন। অতঃপর গোসল অথবা ওজু করে মসজিদে হারামের দিকে অগ্রসর হোন।
মসজিদে হারামে প্রবেশের জন্য চতুর্দিকে দরজা রয়েছে। যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারেন। তবে ‘বাবুস সালাম' নামক দরজা দিয়ে প্রবেশ করা উত্তম। তালবিয়া পড়তে পড়তে ডান পা রেখে এই দোয়া পড়ুন :
দোয়া : “বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মাফ্ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক”।
তাওয়াফের নিয়মাবলী
নিয়ত করা।
নিয়ত: (“আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারামি ফা-ইয়াস্সিরহু লী ওয়া-তাক্কাব্বালহু মিন্নী, সাব্আতা আশওয়াতিন লিল্লাহি তায়ালা আজ্জ ওয়া-জাল্লা”)।
ক্বাবা শরীফের দিকে ফিরে হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করুন। অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ বরাবর তাওয়াফের জায়গায় যে মোটা দাগ টানা আছে। সেটাকে আপনার ডান পার্শ্বে রাখুন।
তারপর নামাজের মতো উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবেন এবং বলবেন “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” এবং অত্যধিক ভিড় বা ধাক্কা ধাক্কি না থাকলে সামনে এগিয়ে অতি ভক্তি ও বিনয়ের সাথে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করুন। এটা সম্ভব না হলে যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখান থেকে উভয় হাতের তালু পাথরের দিকে ইঙ্গিত করে হাতে চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করুন।
হাজরে আসওয়াদের ইস্তিলামের পর বায়তুল্লাহ শরীফের দরজার দিকে অর্থাৎ নিজের ডান দিকে অগ্রসর হবেন এবং তাওয়াফে হাতীমকেও শামিল করবেন।
তাওয়াফের সময় সহজ দোয়া পাঠ।
দোয়া: (“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া-লাহাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহি আরাফাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম”)।
দোয়া : (“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহাইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুও ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”)।
তাওয়াফ আরম্ভ করার পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ রাখুন।
যখন রোকনে ইয়ামীনে অর্থাৎ বায়তুল্লাহ্র পশ্চিম দক্ষিণ কোণে পৌঁছবেন, তখন তাতে শুধু উভয় হাত অথবা ডান হাত লাগাবেন, চুমু দিবেন না।
যখন রোকনে ইয়ামীনে অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের (বায়তুল্লাহ্র পশ্চিম-দক্ষিণ) কোণে পৌঁছবেন তখন নি¤েœাক্ত দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হোন-
দোয়া : “রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া-হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল্ আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিন্না আযাবান্ না-রিওয়াদ খিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার ইয়া আজিজু ইয়া-গাফ্ফারু ইয়া-রাব্বাল আলামীন”।
এই দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছলে (মোটা দাগ দেখে নিন) এক চক্কর পূর্ণ হয়ে গেল।
প্রত্যেক চক্কর শেষে কাল পাথরে (হাজরে আসওয়াদ) চুমু দেন অথবা স্পর্শ করুন অথবা দু’হাতের তালু দ্বারা ইশারা করে চমু খান।
সম্ভব না হলে দাঁড়িয়েই কান পর্যন্ত দু’হাত উঁচু করে বলুন : (“বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হামদু ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ্”)। এবার দুই হাতে চুমু খেয়ে হাত নামিয়ে তাওয়াফ করুন।
এভাবে মোট সাত চক্কর পূর্ণ করে নিন।
সাত চক্কর পূর্ণ করার পর অষ্টমবারে হাজরে আস্ওয়াদ চুম্বন করবেন এতে তাওয়াফ সমাপ্ত হয়ে গেল।
১ম তিন চক্করে ‘রমল করা’ অর্থাৎ বীরের মত হেলে-দুলে জোর কদমে চলুন।
বাকি চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করুন।
তাওয়াফ শেষে আবার তালবিয়া পাঠ শুরু করুন।
বি:দ্র: অনেক লোক মুর্খতাবশত “হাজরে আসওয়াদ” চুম্বন করার জন্য ঠেলা-ধাক্কা শুরু করে যা খুবই অন্যায়।
মনে রাখতে হবে, “হাজরে আসওয়াদ” চুম্বন করা সুন্নত কিন্তু মানুষকে কষ্ট দেয়া বড় গুনাহ।
তাওয়াফের সময় করণীয়
তাওয়াফরত অবস্থায় বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না।
নিজের বুক ও পিঠ বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে করবেন না।
তবে হাজরে আসওয়াদ চুমু দেয়ার সময় বুক বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে করা যাবে।
যদি কারও কষ্ট না হয় তবে বায়তুল্লাহ শরীফের কাছ থেকে তাওয়াফ করা উত্তম।
তাওয়াফ করার সময় পর্দা ও শালীনতার বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকুন।
হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়া অথবা হাতে স্পর্শ করা অথবা হাতের তালু দ্বারা ইশারা করে হাতে চুমু খাওয়া সুন্নত। কাজেই এই তিন পদ্ধতির যে কোন একটি অবলম্বন করলেই সুন্নতের উপর আমল হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে, কুরআন হাদীসে যেসব দোয়া রয়েছে তাওয়াফের সময় বা অন্যান্য সময় সেগুলো পাঠ করা উত্তম। আর সব সময় মুখ দিয়ে দোয়া পাঠ করতেই হবে এমন নয়। কারন নবী করিম (সা বলেছেন ‘মান ছামাতা নাজা’। অর্থ :- যে চুপ থাকল সে মুক্তি পেয়ে গেল। (তিরমিযি)
মুলতাযামে আমল
মুলতাযাম হলো হাজরে আসওয়াদ ও ক্বাবা ঘরের দরজার মধ্যবর্তী স্থান। তাওয়াফ শেষ করার পর বেশী ভিড় ও ধাক্কাধাক্কি যদি না হয় তাহলে এই মোবারক স্থানটি (যদি খুশবু লাগানো না থাকে) আঁকড়ে ধরবেন। বুক এবং চেহারা দেয়ালের সাথে লাগাবেন, উভয় হাত উপরে উঠিয়ে দেয়ালে স্থাপন করবেন এবং খুব কাকুতি-মিনতি সহকারে দোয়া করবেন। রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘আমি এ স্থানে যে কোন দোয়া করেছি, তা কবুল হয়েছে’।
ক্বাবা শরীফের চৌকাঠ ধরে দোয়া
ক্বাবা শরীফের দরজা মোবারকের চৌকাঠ ধরে খুব দোয়া করুন, সম্ভব হলে গেলাফ মোবারক আঁকড়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করুন। ভিড়ের কারণে যদি অন্যের কষ্ট পাওয়ার কিংবা মেয়েলোকের গায়ে লাগার আশংকা থাকে তবে এ সবই ছেড়ে দিন। শুধু হাজরে আসওয়াদ ও চৌকাঠে চুমু খাবেন।
হাজরে আসওয়াদ এবং চৌকাঠ ছাড়া বায়তুল্লাহ শরীফের অন্য কোন স্থানে চুমু খাওয়া নিষেধ।
হাতীমে ক্বাবায় আমল
সম্ভব হলে হাতীমে ক্বাবায় দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। এখানে কান্নাকাটি করে দোয়া করুন।
মীজানে রহমতের আমল
হাতীমে ক্বাবায় যেখানে ক্বাবা শরীফের ছাদের পানি পড়ে, সেখানে দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। এখানে কান্নাকাটি করে দোয়া করুন।
রোকনে ইয়ামীনে দোয়া
যখন রোকনে ইয়ামীনে অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের (বায়তুল্লাহর পশ্চিম-দক্ষিণ) কোণে পৌঁছবেন তখন নি¤েœাক্ত দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হোন-
দোয়া: “রাব্বানা-আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া-হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল্ আ-খিরাতি হাসানাতওঁ ওয়া কিনা আযা-বান্ না-র। ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মাআল আবরার ইয়া -আজিজু ইয়া-গাফ্ফারু ইয়া-রাব্বাল্ আলামীন”।
মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ
তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমের (যা বায়তুল্লাহ্র পূর্বদিকে মাতাফের প্রান্তে অবস্থিত) দিকে (ওয়া ইয জা’আলনাল বাইতা মাছাবাতিল লিন্নাছি ওয়া আমানা; ওয়াত্তাখিজু মিম্ মাকামে ইব্রা-হীমা মুসাল্লা) স্মরণ কর, যখন আমি ক্বাবা গৃহকে মানুষের সম্মেলন স্থল, শান্তি ও নিরাপত্তার স্থান হিসেবে তৈরী করেছি, তখন বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে নামাজের স্থান বানাও (সূরা আল বাকারা-১২৫) পড়তে পড়তে অগ্রসর হবেন এবং মাকামে ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহ্ ও নিজের মাঝখানে রেখে দুই রাকাত নামায পড়ুন। তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমে দু’রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ভিড়ের জন্য যদি সম্ভব না হয় তাহলে আশে পাশে বা দূরবর্তী যে কোন স্থানে সহজ সম্ভব হয় পড়ে নিন।
যমযমের কাছে করণীয়
সালাতুত তাওয়াফ আদায় শেষে যমযম কুয়া পর্যন্ত পৌঁছে কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে তৃপ্তি সহকারে তিন তিন শ্বাসে যত ইচ্ছা পানি পান করুন।
যমযমের পানি দাঁড়িয়ে এবং বিস্মিল্লাহ বলে পান করা উচিৎ।
যমযমের পানি বেশী করে পান করেন, যাতে পাঁজর ডুবে যায়।
যমযমের পানি যে উদ্দেশ্যেই পান করা হয়, তা খুবই ফলদায়ক।
যমযমের পানি আরোগ্যের জন্য পান করলে আল্লাহ আরোগ্য দান করবেন।
এই নিয়ত করতে পারেন কেয়ামতের ময়দানে যেন আপনার আর পিপাসা না থাকে।
যমযমের পানি পান করার সময় এই দোয়া পড়ুন
দোয়া : (“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া-রিযক্কান ওয়া-সিয়ান ওয়া-শিফায়াম মিন কুল্লি দায়িন”)
বি: দ্র: বর্তমানে এই কূপ দেখার সিঁড়ি ও সুড়ঙ্গ পথের উপরাংশ ভরাট করে ক্বাবা চত্বরকে প্রশস্ত করা হয়েছে। তাই যমযম (কূপ) দেখার কোন সুযোগ নেই। তবে যমযমের পানি ক্বাবার ভিতরে বা বাইরে যে কোন স্থানে খাওয়া যায়।
সাফা মারওয়ার সায়ী
৫ম কাজ
৮। সায়ী করা: (ওয়াজিব)
তাওয়াফ শেষে নামাজ পড়ে (যমযম থেকে) সায়ীর জন্য সাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন।
সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে (এখন আর পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) পাহাড়ের চিহ্নস্বরূপ উঁচু জায়গা রয়েছে। এখানে উঠলে আপনার নজরে ক্বাবা শরীফ আসবে।
এখানে ক্বাবা শরীফের দিকে মুখ করে সায়ী-এর নিয়ত করে, দোয়ার মতো করে হাত তুলে তিনবার “আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে দোয়া করুন।
অতঃপর অন্তরের আবেগ অনুযায়ী দোয়া কালাম পাঠ করতে করতে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন।
সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সায়ী করার সময় এ দোয়া পড়ুন-
১. (“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া- লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া হাইয়ুন লা-ইয়ামুতু-আবাদান আবাদা, বে ইয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদীর লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াহদাহু, ওয়া নাছারা আব্দাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ”।)
২. (“সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লাহাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম”)।
এখানে সবুজ দু’টি স্তম্ভ আপনার নজরে পড়বে। এই স্তম্ভদ্বয়ের মাঝখানে কিছুটা দ্রুতগতিতে চলুন এবং এই দোয়া পড়ুন : “রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ’যযুল আকরাম”।
এর পর স্বাভাবিক গতিতে চলতে চলতে মারওয়া পাহাড়ের সামান্য উঁচুতে উঠে কিবলামুখী হয়ে উভয় হাত বুক পর্যন্ত উঠিয়ে তিন বার “আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলুন।
এতে সাফা থেকে মাওয়া পর্যন্ত এক চক্কর হয়ে গেল। আবার মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত পূর্বের নিয়মে যাবেন, তাতে দ্বিতীয় চক্কর হয়ে যাবে। এভাবে ৭ চক্কর পূর্ণ করুন।
সাফা মারওয়া পাহাড়ে সাতবার যাওয়া আসা করার সময় অজু না থাকলেও সায়ী সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে অজু থাকা ভাল।
সাফা মারওয়ার হুঁশিয়ারী
সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের উঁচু জায়গার শেষপ্রান্তে পৌঁছা সুন্নতের খেলাফ।
সায়ীর পর নফল নামাজ
সায়ী শেষে মসজিদে হারামে এসে মাতাফে অথবা হাজরে আসওয়াদের সামনে অথবা তাওয়াফ করার স্থানে কিংবা যেখানে স্থান পাওয়া যায় সেখানে দু’রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করুন।
মক্কা শরীফ থেকে মিনায় আগমন করুন।
সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সায়ী করার সময় নি¤েœর দোয়া পাঠ করা যায়-“ইন্নাছছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআয়িরিল্লাহ। ফামান হাজ্জাল বাইতা আবি’তামারা কালা জুনাহা আলাইহি আই ইত্তাওয়াফা বিহিমা”।
সায়ীর পর নফল নামাজ
সায়ী শেষে মসজিদে হারামে এসে মাতাফে অথবা হাজরে আসওয়াদের সামনে অথবা তাওয়াফ করার স্থানে কিংবা যেখানে স্থান পাওয়া যায় সেখানে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করুন।
মাসআলা
ক. তামাত্তু হাজীদেরকে তাওয়াফ করার পর সায়ী করতে হবে। ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীদের সায়ী করার দরকার নেই, যদি তারা তাওয়াফে কুদুম বা ওমরার তাওয়াফের সঙ্গে সায়ী করে থাকেন।
খ. ফরয তাওয়াফের পর সহবাস বৈধ।
গ. তাওয়াফ ও সায়ী শেষে মক্কায় অবস্থান না করে মীনায় চলে যেতে হবে। বিশেষ কারণবশত: সেখানে অবস্থান করায় ক্ষতি নেই।
ঘ. সেলাই করা পোষাক পরিধান এবং সুগন্ধী ব্যবহার করে তাওয়াফ ও সায়ী করবেন।
ঙ. ইহরামের কাপড় পরিধান করেও তাওয়াফ ও সায়ী করা যায়।
চ. আইয়্যামে তাশরিকের ৩ দিন ১০ থেকে ১৩ পর্যন্ত ফরয তাওয়াফ করা যাবে।
ছ. হায়েয-নিফাসের মহিলাগণ পাক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
১১ ও ১২ যিলহজ্জ
অবস্থান : মিনা
৯। মিনায় অবস্থান ও শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা : (ওয়াজিব)
প্রতিদিন তিন জামরায় ৭টি করে মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ (দুপুরের পর) করুন।
১১ যিলহজ্জ রাতে মিনায় অবস্থান করা।
সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ (১২ যিলহজ্জ) করুন।
১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত কংকর সংখ্যা =(৭+২১+২১)= ৪৯ টি
বি:দ্র: কোন কারনে ১২ যিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ না করতে পারলে ১৩ তারিখও মিনায় অবস্থান করুন। একই নিয়মে ১৩ তারিখ তিন জামরায ৭টি করে মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ (দুপুরের পর) করুন।
১৩ যিলহজ্জ
অবস্থান: মিনা-মক্কা
মিনায় অবস্থান করুন।
তিন জামরায় ৭টি করে মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ (দুপুরের পর) করুন।
সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনা ত্যাগ করুন।
১০ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত কংকর সংখ্যা =(৭+২১+২১+২১= ৭০টি)
মিনা থেকে মক্কা শরীফ আগমন।
মাসআলা
ক. বেশি ভিড়ের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রমঈ সম্ভব না হলে সন্ধ্যার পরও জায়েয বলে ওলামায়ে কেরাম মত ব্যক্ত করেছেন।
খ. তবে মহিলাগণ, দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তিগণ রাতের যে কোন সময়ে স্বেচ্ছায় গিয়ে রমঈর কাজ সমাধান করতে পারবেন। তবে অন্য কোন ব্যক্তির সাহায্যে দিন থাকতে রমঈ করিয়ে নেয়া উত্তম।
গ. এগারই যিলহজ্জ রমঈর পর বাকী সময়টুকু মীনায় নিজ নিজ তাঁবুতে অবস্থান করতে হয়। এ সময়কে এবাদত, দোয়াপাঠ, বিশ্রাম, পরস্পরের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ ও পরিচিতির মধ্যে ব্যয় করতে হবে। বাইরে অযথা ঘোরাফিরা করা বা অনর্থক গল্প-গুজব করা হজ্জের পরিপন্থী কাজ।
সর্বশেষ কাজ
১০। বিদায়ী তাওয়াফ করা : (ওয়াজিব)
এ তাওয়াফকে তাওয়াফে ছদর বলা হয়। এটা হলো হজ্জের সর্বশেষ কাজ। বিদায় মানে হচ্ছে আল্লাহর ঘর থেকে বিদায় গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ নিজের বিশেষ অনুগ্রহে পবিত্র হজ্জ পালনের তৌফিক দিয়েছেন। এর শোকর আদায় করা এবং ভবিষ্যতে হজ্জের শিক্ষার উপর দৃঢ় থাকার প্রতিজ্ঞা করার জন্যই বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়। অতএব বিদায়ী তাওয়াফ শেষে প্রস্থান করার সময় প্রতিটি হাজীর মধ্যে সেই ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হতে হবে। জীবনে আরেকবার এ ঘরে হাজিরা দেয়া সম্ভব কিনা কেউ বলতে পারে না। অতএব মনে দু:খ বেদনা এবং আফসোস নিয়ে বিদায় নেয়া উচিত। বিদায়ী তাওয়াফ শেষে আল্লাহর ঘরের দরজা এবং হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান মুলতাযেমে দাঁড়িয়ে দোয়া করুন।
করণীয়
মক্কা থেকে জেদ্দায় যাওয়ার পূর্বে অথবা মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়ার পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ করুন।
যারা মক্কাবাসী নন, তারা সকলে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। এটা করা ওয়াজিব। সময়-সুযোগ থাকলে, বিদায়ী তাওয়াফের পূর্বে কিছু ওমরাহও করা যায়। যে মহিলা হজ্জযাত্রী হজ্জের সমস্ত কাজকর্ম সমাধা করেছেন কেবল বিদায়ী তাওয়াফ বাকি আছে, তিনি যদি এই সময় হায়েয বা নিফাস অবস্থায় থাকেন, তাহলে তার ওপর বিদায়ী তাওয়াফ আর ওয়াজিব নয়। তখন তিনি মসজিদুল হারামে প্রবেশ না করে কেবল তার দরজার নিকট দাঁড়িয়ে দোয়া চেয়ে বিদায় হবেন।
এ তাওয়াফে সায়ী করতে হবে না। অর্থাৎ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌঁড়াতে হবে না।
বিদায়ী তাওয়াফ শেষে আল্লাহর ঘরের দরজা এবং হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান মুলতাযামে দাঁড়িয়ে দোয়া করুন।
জেদ্দা অথবা মদীনা শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করুন।
১৩ যিলহজ্জ থেকে মদীনা যাওয়ার আগ পর্যন্ত
অবস্থান : মক্কা শরীফ
মক্কা শরীফ অবস্থান করুন
হজ্জ শেষে করণীয় :
পবিত্র মক্কা-মদীনার কোনো অসুবিধার প্রতি কিংবা সেখানকার অধিবাসীদের কোনো দোষ-ত্রুটির কথা আদৌ খেয়াল করবেন না।
পরনিন্দা ও পরচর্চা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন নিজের কারণে কারো সাথে ঝগড়া বা তর্ক হলে আগেই মাফ চেয়ে নিন।
হজ্জের পর নেক আমলের প্রতি অধিকতর যতœবান হওয়া একান্ত কর্তব্য। কেননা হজ্জের পর নেক আমলের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়া হজ্জ কবুলের অন্যতম আলামত।
মক্কা শরীফে ও মদীনা মুনওয়ারায় সর্বদা অজুর সাথে থাকুন।
মক্কা শরীফে মসজিদে হারামে এবং মদীনা শরীফে মসজিদে নববীতে অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করুন, আর ভাবুন এখানে আসার এমন সৌভাগ্য আর নসিব হবে কি ?
বেশি বেশি আল্লাহর জিকির, তাওবা-এস্তেগফার, তাজবিহ তাহলিল এবং কুরআন তেলাওয়াত ও দ্বীনি বই পুস্তুক অধ্যয়ন করে অতিবাহিত করুন।
ঐতিহাসিক স্থানসমূহ পরিদর্শন করুন।
যে তারিখ মক্কা থেকে মদীনা অথবা মক্কা থেকে জেদ্দা যাবেন সে তারিখ
অবস্থান : মদীনা অথবা জেদ্দা
মদীনা-মক্কা শরীফ থেকে জেদ্দায় আগমন।
জেদ্দায় অবস্থান করুন।
বিমানের জন্য অপেক্ষা করুন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১০
নাবিক সিনবাদ বলেছেন: দারুণ উপকারী একটি পোস্ট, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।।