নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবীণ সর্ম্পকে কিছু কথা :

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:১৮

সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। সেই সাথে ভাঙ্গছে পারষ্পারিক সম্পর্ক। পরিবারগুলোর এমন ভাঙ্গনের ফলে বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন প্রবীণেরা। পরিববারের অবহেলা সন্তানের উপেক্ষা অশ্রুপাত প্রবীণদের একমাত্র নিয়তি। দারিদ্র ও নিঃসঙ্গতা প্রবীণদের কাছে অভিশাপ ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রবীণদের বার্ধক্য, স্বাস্থ্যসমস্যা, কর্মঅক্ষমতা, পরিবার হতে বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথভাবে গুরুত্ব দিয়ে তাদের কল্যানের জন্য ১৯৮২ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত হয় প্রবীণ বিষয়ক প্রথম বিশ^ সম্মেলন। উক্ত সম্মেলনে আর্ন্তজাতিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা গৃহীত হয়।
প্রবীণদের সমস্যা সর্ম্পকে ব্যাপক গনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে জাতিসংঘ প্রতিবছর ১লা অক্টোবর আর্ন্তজাতিক প্রবীণ দিবস পালননের সিদ্ধান্ত নেয়। সে ঘোষণার পর ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর ১লা অক্টোবর বিশ^ব্যাপী আর্ন্তজাতিক প্রবীণ দিবস পালণ করা হচ্ছে।
২০০২ সালে বিশে^র ১৫৯টি দেশের প্রতিনিধিকগনের অংশ গহণে স্পেনের মাদ্রিদে প্রবীন বিষয়ক দ্বিতীয় বিশ^ সম্মেল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে আর্ন্তজাতিক পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক ঘোষণা গৃহীত হয়। যা মাদ্রিদ আর্ন্তজাতিক কর্ম-পরিকল্পনা নামে পরিচিত। উক্ত সম্মেলনে ৩ (তিনটি) দিকনির্দেশনা ও ২৩৯টি (দুইশত উনচল্লিশটি) সুপারিশ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
পরবর্তীতে ২০০২ সালে মাদ্রিদ আর্ন্তজাতিক কর্ম-পরিকল্পনার প্রতি সম্মান প্রর্দশন পূর্বক বাংলাদেশ সরকার উক্ত পরিকল্পনার প্রতি রাষ্ট্রিয় সমর্থণ ব্যক্ত করেন এবং ২০১৩ সালে প্রবীণদের অীধকার,তাদের উন্নয়ন এবং সার্বিক কল্যাণে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় নীতিমালা-২০১৩ প্রণয়ণ করেন। এছাড়াও পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন-২০১৩ নামে আরো একটি আইন প্রণয়ন করেন। এই দ’ুটি আইন সর্ম্পকে অনেকেরই কোনো ষ্পষ্ট ধারণা নেই। কারণ এসব আইনের ব্যাপারে সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে কোনো প্রচারণা নেই। কোথাও তেমন কোন আলোচনাও চোখে পড়ে না। উক্ত আইনের লক্ষ্য ছিল প্রবীনদের মর্যাদাপূর্ণ, দারিদ্রমুক্ত, কর্মময়, সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ সামাজিক জীবন নিশ্চিত করা। কিন্তু আইন করা হলেও বাস্তবে তার কোন প্রয়োগ নেই। তাছাড়া যত আইনই করা হোক না কেন? সামাজিক ও নৈতিক মুল্যবোধ জাগ্রত না করলে এসব আইন দ্বারা কিছুই হবে না। সামাজিক ও নৈতিক মুল্যবোধ জাগ্রত করার জন্য প্রয়োজন কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান। কুরআন ও হাদীদের আলোকে পিতা-মাতা,আতœীয়স্বজন তথা সর্বস্তরের প্রবীণদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি? উক্ত দায়িত্ব কর্তব্য পালন করলে কি লাভ না করলে কি ক্ষতি ইত্যাদি সর্ম্পকে গনসচেতনতা জাগ্রত করা।
মা-সন্তানকে ১০মাস ১০দিন গর্ভে ধারণ করেন। মাতৃগর্ভ থেকে ভুমিষ্ট হবার সময় প্রসবকালীন কি যন্ত্রণা মাকে সহ্য করতে হয়। জম্মের পর ৩০ মাস দুধ খাওয়াতে হয়। মা অতি আদর যন্তে শিশুকে লালন-পালন করেন। সব সময় তার পরিচর্যা করেন। অসুখ বিসুখে বিনিদ্র রজনী যাপন করে সেবা শুশ্রষা করেন। কনকনে শীতের রাতে পর্ণকুটিরে কুপি জালিয়ে অসুস্থ শিশুকে পাহারা দেন। মমতার চাদর দিয়ে রৌদের প্রখর উত্তাপ থেকে রক্ষা করেন।
পিতা-মাতাকে সম্মান করা এবং তাঁদের ভরণপোষণ দেয়া ইবাদতের অংশ। রাসূল (সাঃ) বলেন হালাল উপার্জন দিয়ে পরিবারের জন্য যেই ব্যয় নির্বাহ করা হয় তা আল্লাহর নিকট সদকা হিসেবে বিবেচিত হয়। যে মাতা-পিতা সন্তানের জন্য এত কিছু করেন সে মাতা-পিতা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে থাকবে, নিঃসঙ্গ ও একাকিত্ব জীবন জাপন করবে এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না।
এব্যাপারে কুরআন মাজিদের ভাষ্য -
১.আর তোমার প্রতিপালক এ আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাকে ভিন্ন অপর কারো ইবাদত করো না। আর পিতা মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করো। যদি তাদের একজন কিংবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উদ্দেশ্যে কখনো ‘উহ’ পর্যন্ত বলবে না। তাদেরকে ধমক দিও না, বরং তাদের সাথে মার্জিত ভাষায় কথা বল। আর তাদের উদ্দেশ্যে অনুগ্রহে বিনয়ের বাহু অবনমিত কর। আর বল, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়কে অনুগ্রহ কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন। (বনী ইসরাইল-১৭ আয়াত : ২৩ ও ২৪)
২.আর আমি মানুষকে তার পিতা মাতা সম্পর্কে আদেশ করেছি। তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভধারণ করেছেন। দুই বছর পর্যন্ত তাকে স্তন্য দান করেছেন। এ মর্মে যে, তোমরা আমার এবং তোমাদের পিতা মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমার দিকেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (লোকমান-৩১ আয়াত : ১৪)

৩.আমি মানুষকে পথ নির্দেশ দিয়েছি যে, তারা যেন নিজেদের পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে। তার মাতা কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে রেখেছে এবং কষ্ট স্বীকার করেই তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণে ও দুধ পান ত্যাগ করানো ত্রিশ মাস অতিবাহিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সে যখন স্বীয় পূর্ণ শক্তি অর্জন করল এবং চল্লিশ বৎসরের হয়ে গেল, তখন সে বলল হে আমার খোদা! তুমি আমাকে তৌফিক দাও আমি যেন তোমার সেই সব নিয়ামতের শোকর আদায় করি যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা মাতাকে দান করেছ। (আহকাফ-৪৬ আয়াত :১৫)

এব্যাপারে হাদীসের ভাষ্য-
১.আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল হে আল্লাহর রাসূল, সন্তানের উপর পিতা মাতার কি হক আছে? তিনি বললেন তারা তোমার বেহেশত ও দোজখ। (ইবনে মাযাহ) এ হাদীস দ্বারা পরোক্ষাভাবে এ কাথাই বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার করলে সন্তানের জান্নাতে যাবে অন্যথায় তার জন্য জাহান্নামের শাস্তি অবধারিত।

২.হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলূল্লাহ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পিতা-মাতার সন্তুুষ্টিতে আল্লাহর সšু‘ষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুুষ্টি রয়েছে। (জামে আত তিরমিযী)

৩.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আমি নাবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম-কোন আমল আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ঠিক সময়ে নামায পড়া। সে বলল অত:পর কোনটি? তিনি বললেন, অত:পর মাতা-পিতার খেদমত করা। সে বলল তার পর কোনটি? তিনি বললেন, তারপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। (সহীহ আল বুখারী ও তিরমিযি)

৪.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার সর্বোত্তম ব্যবহারের হকদার কে? হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমার মা। লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করল অত:পর কে? হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমার মা! লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল অত:পর কে? হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবারও জবাব দিলেন তোমার মা। লোকটি পুন: জিজ্ঞেস করল অত:পর কে? এবারে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জওয়াব দিলেন যে, তোমার বাবা। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

ইসলাম বৃদ্ধদেরকে অসম্ভব শ্রদ্ধা ও সম্মান দিয়েছে। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একজন বয়োবৃদ্ধের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করবে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন তাকে কিয়ামতের দিন সকল ভয়-ভীতি ও আশঙ্কা থেকে নিরাপদে রাখবেন। বৃদ্ধদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করা আর ছোটোদের স্নেহ করা ইসলামি নৈতিকতার অন্যতম বিধান। যারা ইসলামের এই বিধান মেনে চলবে না, তারা অবশ্যই আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে উপস্থিত হবে। বস্তুত ‘জ্ঞানীকে তার জ্ঞানের জন্য আর বৃদ্ধকে তার বয়সের জন্য শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে হবে।’ এটাই ইসলামের শিক্ষা। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রবীণ ও নবীন মিলেই এ দুনিয়ার সমাজ ব্যবস্থা। যারা দুনিয়াতে আগে এসেছেন তারা পরবর্তীদের নিকট শ্রদ্ধাভাজন এবং প্রবীণ হিসেবে মর্যাদার অধিকারী। আর নবীনরা প্রবীণদের কাছে স্নেহভাজন এবং তাদের আদর-সোহাগ পাওয়ার অধিকারী।

প্রবীণদের শ্রদ্ধা করা এবং নবীনদের স্নেহ করা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে বলেন, ‘যারা ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।’

আসলে মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া উচিত। এটা মহানবীর শিক্ষা। এক হাদীসে রাসূলুল্রাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন মানুষের সঙ্গে তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করো। (আবু দাউদ)

ইসলামের শিক্ষা হলো- সন্তানের অসহায়ত্বেও সময় যেভাবে পিতা-মাতা তাকে স্নেহভরে লালন-পালন করেন। পিতা-মাতার অসহায়ত্ব তথা বৃদ্ধাবস্থায় তাদেরকে সেভাবে লালন-পালন করা সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা আমানবিক ও ইসলাম বিবর্জিত কাজ। এমন কাজ যারা করে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। এ অবহেলার জন্য সন্তানদের পরকালে কঠিন শাস্তি জাহান্নামের আগুনে জ¦লতে হবে আর দুনিয়াতেও তার বার্ধ্যকবস্থায় আরও চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।

ইসলামই পিতা-মাতা আত্বীয়-স্বজন ও সর্বস্তরের প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তাদের অসহায়ত্বের সময় সেবাযত্ন করার দাগিদ দিয়েছে। ইসলামের এ নির্দেশনা মেনে চললে প্রবীন নিবাসে বেদনাদায়কভাবে প্রবীণদের জীবনযাপন করার প্রয়োজন হতো না। একজন সুস্থ বিবেকবসম্পন্ন ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ তার বৃদ্ধা পিতা-মাতাকে এবং তার আত্বীয়-পরিজনকে অবহেলা ও উপেক্ষা করতে পারেনা।

ইসলামের নির্দেশ মতে, আমাদেরকে পিতা-মাতা আত্বীয়-স্বজন ও সর্বস্তরের প্রবীণদের প্রতি যত্নবান ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নিজেদের বার্ধ্যকের কথা চিন্তা করে বৃদ্ধ ও প্রবীণদের সেবাযত্ন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দিন। আমিন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.