নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তি বা নাজাত লাভের জন্য প্রয়োজন আল্লাহর বিধান ও রাসূলের নির্দেশনা অনুসরণ

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:৩৯

ইসলাম প‚র্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাত ও খেলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্য। আল্লাহপাক চান বান্দা হিসাবে মানুষ একমাত্র তাঁরই দাসত্ব করবে এবং তাঁর মনোনীত রাসূলকেই (সা:) অনুসরণ করবে। এটাই মহান আল্লাহর চ‚ড়ান্ত ঘোষণা। এক আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার এবং রাসূলের (সা:) সর্বান্ত করনে অনুসরণ ছাড়া, আখেরাতের চ‚ড়ান্ত সফলতার জন্য অন্য কোনো পথই মানুষের জন্য খোলা রাখা হয়নি। মহান রাব্বুল আলামিনের নিরষ্কুষ দাসত্ব স্বীকার করা একমাত্র তাঁরই প্রতি আনুগত্যে মাথা নত করা এবং আমাদের জীবনের পথের সকল কর্মকান্ডে ও চিন্তায় গভীরে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ও রাসূলের (সা:) আনুগত্য করা। এছাড়া দ্বিতীয় কোনো দরজা আমাদের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়নি। আল্লাহর বান্দা তথা খলিফা হিসাবে, মুমিন হিসাবে আমাদের কখনো ভুল পথ গ্রহণ সমীচীন নয়। আর যদি সেটা পরিহার করে সোজা পথ অবলম্বন করি তাহলে আল্লাহ পাকের তরফ থেকে আমাদের জন্য রয়েছে সফলতাসহ সম্মাজনক পুরষ্কার।
মুমিনের সুখ-শান্তি, সম্পদ-সমৃদ্ধি, সম্মান-মর্যাদা সবকিছুই নির্ভর করে তার অনুসরণ-অনুকরণের ওপর। যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান ও রাসূলের জীবনকে যতটুকু অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি নিজ জীবনে ততটা সফল ও স্বার্থক হবে। মানব জীবনের প্রার্থিত আরাধ্য ধ্যান-জ্ঞান হলো আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি। পরকালের নাজাত মুক্তি এবং এরই মাধ্যমে অনন্ত সুখের জান্নাত নিশ্চিত করা। আর রাসূল (সা:) এর জীবন্ত নমুনা। কোন বঞ্চিত, অবহেলিত বা অধঃপতিত মানুষ যদি কুরআনের মর্মবাণীকে অনুধাবন করতে পারে, অনুসরণ করতে পারে, তাহলে সেও পরিণত হবে যথার্থ মানুষে, সফল মানুষে, আলোকিত মানুষে। আল্লাহর বিধান ও রাসূলের নির্দেশনা অনুসরণের মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত। যারা আল্লাহর বাণী গ্রহণ ও অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি। একটা কথা আমাদের ভালোভাবেই জেনে রাখা উচিত ‘পাপে আনে দুঃখ, পূণ্যে আনে সুখ। যখন আমরা জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে রাসূল (সা:) এর অনুসরণ-অনুকরণ করবো তখন দয়ালু আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আমাদেরকে ঢেকে নেবেন তার দয়া, রহম ও কর”ণার চাদরে। তখন পৃথিবীর সব শান্তি-সমৃদ্ধি ধরা দেবে আমাদের। মানুষ ইবাদাত ও খেলাফতের দায়িত্ব থেকে দ‚রে সরে যাওয়ার কারনে তাদেরকে সঠিক পথে আনার জন্য আল্লাহ রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন নবী বা রাসূলগনকে। মানব জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিতে যুগে যুগে এ পৃথিবীতে অসংখ্য মহামানবের আগমন ঘটেছে। তারা মহান আল্লাহর বাণী লাভে ধন্য হয়ে মানুষকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। তাদের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ও সুকোমল পরশে পাল্টে যেতে থাকে পৃথিবীর রূপ-বৈচিত্র। সজীব, সতেজ, নির্মল হয়ে ওঠে মানবাত্মা। আম‚ল পরিবর্তন সাধিত হয় পৃথিবীর প‚র্বে-পশ্চিমে সমানভাবে। পৃথিবী দেখতে পায় আলোর মশাল, আলোকিত ফোয়ারা। বয়ে চলে শান্তির ফল্গুধারা। অপার্থিব প্রশান্তি ছুঁয়ে যায় তার অনুসারীদের। পৃথিবীর যে প্রান্তের যে মানুষই তাকে অনুসরণ করেছে, সেই শান্তির নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। যুগ-যুগান্তরে, একালে-সেকালে। কী আরবে; কী আজমে; সবখানে।
যদি মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনে স্থিতি, শান্তি, সমৃদ্ধি পেতে চায় তাহলে মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনাদর্শ ব্যতীত অন্য কোথাও তা পাবে না। এটাই একান্ত এবং একমাত্র পথ যা মানব জীবনের প্রতিটি অনুসঙ্গের বিশ্বস্ত সমর্পিত পথ। এর বাইরে যা আছে সবই চাকচিক্য, মরিচিকা ও অন্তসারশ‚ন্য।
আল্লাহ তা’আলা মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও সঠিক পথের নির্ণায়ক মাপকাঠি হিসেবে রাসূল (সা:)-কে মানবীয় সকল গুণের অধিকারী করে প্রেরণ করেছেন। তার মাঝে প্রশংসিত সকল গুণের সমাবেশ ঘটেছিলো। আর সেই অনুপম আদর্শের উজ্জ্বল বিভায় পতঙ্গের মতো আছড়ে পড়েছিলো পুরো পৃথিবী। সত্য ও সুন্দরের বিজয় হয়েছিলো তারই হাত ধরে। সভ্যতার চ‚ড়ান্ত প‚র্ণাঙ্গ পাঠ অধ্যয়নে তো পৃথিবী তার কাছেই ঋণী।
পৃথিবী পেয়েছিলো ইতিহাসের সবচেয়ে আলোকিত ও মহিমান্বিত হাতে গড়া সমাজব্যবস্থা। যা এর আগে ও পরে কেউ পারেনি, আর পারবেও না। মুসলিম-অমুসলিম সকলেই যার আদর্শকে মেনে নিয়েছিলো নির্বিবাদে। তিনি ছিলেন পৃথিবীর জন্য শ্রেষ্ঠতম উপহার।
তার সে রেখে যাওয়া অনুপম আদর্শ পৃথিবীর যে প্রান্তেই প্রাণ পাবে, সে প্রান্ত আবারো হয়ে উঠবে সজীব, জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। দেখা দেবে সুবাসিত বসন্ত। সে অজেয় আদর্শ আজো পৃথিবীর সবখানেই সমানভাবে প্রার্থিত।
সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর বিধান ও রাসূলের (সা:) জীবনকেই অনুসরণ করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে। এর মধ্যেই নিহত রয়েছে আমাদের জন্য সকল প্রকার কল্যান ও একমাত্র মুক্তি।
মহান আল্লাহ তা’আলার আদেশ ও রাসূলের নির্দেশনার ব্যাপারে অসংখ্য কুরআনে আয়াত ও রাসূলের হাদীস রয়েছে তার মধ্যে কিছু আয়াত ও হাদীস পেশ করা হলো।
কুরআনের আয়াতঃ
১. “বল, ‘যদি তোমরা আল্লহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসেন এবং তোমাদেরকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। ” (ইমরান : ৩১)
২. “তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, সমস্ত কিছুই তাঁরই আনুগত্য করে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।” (ইমরান : ৮৩)
৩. ‘(হে বিশ্বাসীগণ!) তোমরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে আল্লাহর বিধান অনুসরণে অটল থাকো এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে, তিনি তোমাদের হৃদয়ে স¤প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পরের ভাই হয়ে গেছ। তোমরা জাহান্নামের কিনারায় ছিলে, তিনি তোমাদের রক্ষা করেছেন। আল্লাহ এভাবেই তাঁর বিধানসম‚হ সুস্পষ্টভাবে বয়ান করেন, যাতে তোমরা সৎপথে চলতে পারো।’ (ইমরান : ১০৩)
৪. ‘বল! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর তোমরা তাঁর আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, রাসূলের কর্তব্য হচ্ছে শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া’ (ন‚র : ৫৪)
৫. "আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়।" (ইমরান : ১৩২)
৬. "হে আমাদের রব! আমরা সে বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি, যা তুমি নাযিল করেছ, আমরা রাসূলের অনুসরন করছি। অতএব, আমাদিগকে সাক্ষ্যদাতাদের তালিকাভুক্ত করে নাও।" (ইমরান : ৫৩)
৭."তাদের বলুন, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়েনেয়, তবে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।" (ইমরান : ৩২)
৮. ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য লাভ করবে।’ (আহজাব : ৭১)।
৯. ‘হে নবী! আমার বান্দারা যদি আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন তাদের বলো, আমি তো তাদের খুব কাছেই আছি। প্রার্থনায় আমাকে যে ডাকে, আমি তার ডাক শুনি, তার ডাকে সাড়া দেই। তাই আমাকে বিশ্বাস করা ও আমার ডাকে সাড়া দেয়া অর্থাৎ আমার দেয়া ধর্মবিধান অনুসরণ করা তাদের কর্তব্য। তাহলেই তারা সত্যপথে চলতে পারবে।’ (বাকারা : ১৮৭)
১০. পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “এভাবে আমরা তোমাদের একটি উত্তম জাতিরূপে গড়ে তুলেছি, যাতে করে তোমরা গোটা মানব জাতির জন্য সত্যের সাক্ষ্যদাতা হতে পার এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তোমাদের সাক্ষ্য বা নমুনা হন।’’ (বাকারাহ : ১৪৩)
১১. "আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা অনুসরণ কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন’, তারা বলে ‘বরং আমরা অনুসরণ করব আমাদের বাপ-দাদাদেরকে যার উপর পেয়েছি। যদি তাদের বাপ-দাদারা কিছু না বুঝে এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত না হয়, তাহলেও কি ?" (বাকারা : ১৭০)
১২.‘ওদের মতাদর্শ অনুসরণ না করা পর্যন্ত ইহুদি ও খ্রিস্টানরা কখনোই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না। ওদের বলো, আল্লাহর পথনির্দেশই প্রকৃত পথনির্দেশ। সত্যজ্ঞান লাভের পর তুমি যদি ওদের ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহর হাত থেকে কেউ তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না, তোমার কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।’ (বাকারা : ১২০)
১৩.‘যদিও আমি বলেছিলাম, তোমরা সবাই এখান থেকে দুনিয়ায় যাও। তারপরও তোমাদের মঙ্গলের জন্যে আমি অবশ্যই (যুগে যুগে) সত্যপথের দিক-নির্দেশনা প্রেরণ করব। তখন যারা এই দিক-নির্দেশনা অর্থাৎ নৈতিক বিধিবিধান অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় বা দুঃখ থাকবে না। আর যারা এই সত্যপথের নৈতিক বিধি-বিধানকে প্রত্যাখ্যান করবে, তারাই জাহান্নামের আগুনে পুড়বে। সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল।’ (বাকারা : ৩৮-৩৯ )
১৪.‘(তিনি আরও নির্দেশ দিয়েছেন যে) প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত সৎ-উদ্দেশ্য ছাড়া এতিমের ধন-সম্পত্তির কাছে যাবে না। ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করবে। আমি কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেই না। যখন কথা বলবে, ন্যায্য কথা বলবে। আত্মীয়-স্বজনের বিপক্ষে গেলেও ন্যায্য কথা বলবে। আল্লাহর কাছে দেয়া ওয়াদা প‚রণ করবে। এভাবেই আল্লাহ পথনির্দেশনা দিয়েছেন, তা তোমরা অনুসরণ করবে।’ (আনআম : ১৫২)
১৫.‘অথবা এটাও বলতে পারবে না যে, ‘আমাদের ওপর কিতাব নাজিল হলে আমরা ওদের চেয়েও ভালভাবে তা অনুসরণ করতাম!’ এখন তোমাদের ওপর প্রতিপালকের কাছ থেকে সত্যের সুস্পষ্ট প্রমাণ, পথনির্দেশনা ও রহমত নাজিল হয়েছে। এরপর যদি কেউ আল্লাহর বাণীকে প্রত্যাখ্যান করে এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, তবে তার চেয়ে বড় সীমালঙ্ঘনকারী আর কে হবে? যারা আল্লাহর বাণী গ্রহণ ও অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি।’ (আনআম : ১৫৭)
১৬."আর নিশ্চয়় শয়়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে ওহী করে, যেন তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরেক হয়ে যাবে।" (আনআম : ১২১)
১৭."আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্প‚র্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।" (আনআম : ১১৬)
১৮.‘(একইভাবে) আমি এই কল্যাণময় কুরআন নাজিল করেছি। সুতরাং কুরআন অনুসরণ করো এবং আল্লাহ-সচেতন থাকো। তাহলেই তোমাদের ওপর রহমত নাজিল হবে।’ (আনআম : ১৫৫)
১৯.‘যারা গর্বভরে নিজেদের শান-শওকত প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, তাদের চালচলন অনুসরণ করো না। কারণ তারা (সত্য অস্বীকার করে আর) লোকদেরকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়। কিন্তু (ওরা বোঝে না যে) ওরা আল্লাহর শক্তির আওতার মধ্যেই রয়েছে।’ (আনফাল : ৪৭)
২০. মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপ‚র্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ প‚র্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য একমাত্র দীন হিসাবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।’’ (মায়েদাহ : ৩)
২১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,অর্থাৎ “আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।” (হাশ্র : ৭)
২২. তিনি আরো বলেন,অর্থাৎ “সে মনগড়া কথাও বলে না। তা তো অহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।” (নাজ্ম : ৩-৪)
২৩. তিনি অন্যত্র বলেছেন,অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (আহযাব : ২১)
২৪. ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতসম‚হে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহমান। আর সেটিই প্রকৃত সফলতা।’ (নিসা : ১)
২৫. "যে আল্লাহ ও রাসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতের নদী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটা জীবনের বিরাট সাফল্য। কিন্তু যে কেউ অমান্য করবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ এবং লংঘন করবে তাঁর (আল্লাহর নির্ধারিত) সীমানা, তিনি তাকে দাখিল করবেন আগুনে( জাাহান্নামে) । সে খানে সে থাকবে চিরকাল। তা ছাড়া তার জন্যে রয়েছে অপমানকর আযাব।" (নিসা : ১৩-১৪)
২৬. ‘তোমরা যদি আমার নির্দেশ অনুসরণ করে বড় বড় গুণাহের কাজ থেকে বিরত থাকো, তবে তোমাদের ছোটখাটো পাপগুলো আমি ক্ষমা করে দেবো। আর তোমাদের সম্মানজনক স্থানে, জান্নাতে দাখিল করব।’ (নিসা : ৩১)
২৭. তিনি আরো বলেন,অর্থাৎ “আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।” ( নিসা : ৫৯)
২৮. তিনি আরো বলেন, অর্থাৎ “কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মু’মিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।” (নিসা : ৬৫)
২৯."আর যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করে তারা থাকবে তাদের সাথে, যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্ম্শীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম।" (নিসা : ৬৯)
৩০."যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে মুখ ফিরিয়ে নিল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত¡াবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।" (নিসা : ৮০)
৩১. "তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের অনুগত্য কর আর সাবধান হও। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রাখ, আমার রাসূলের দায়িত্ব প্রকাশ্য প্রচার করা।" (মায়িদা : ৯২)
৩২.‘কিন্তু কেউ যদি সত্য জানার পরও রসুলের বিরোধিতা করে এবং বিশ্বাসীদের পথ ছাড়া ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, তবে আমি তার পছন্দের ওপর তাকে ছেড়ে দেবো। পরিণামে সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। আর থাকার জন্যে এটি নিকৃষ্টতম স্থান।’ (নিসা : ১১৫)
৩৩.‘আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশনা অনুসরণ করবে তারা নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহিদ ও সৎকর্মশীলদের অর্থাৎ আল্লাহর অনুগ্রহভাজনদের সঙ্গী হবে। এরাই উত্তম সঙ্গী।’ (নিসা : ৬৯)
৩৪.‘(হে নবী!) এভাবে আমি আরবি ভাষায় কুরআন নাজিল করেছি এবং বিশদভাবে সতর্কবাণীসম‚হ বয়ান করেছি, যাতে করে মানুষ আল্লাহ-সচেতন হয় এবং উপদেশ অনুসরণ করে।’ (তাহা : ১১৩)
৩৫. ‘(হে নবী!) কুরআনের বিধান অনুসরণ যিনি তোমার ওপর ফরজ করেছেন, তিনি অবশ্যই তোমাকে চ‚ড়ান্ত গন্তব্যে ফিরিয়ে আনবেন। (যারা সত্য অস্বীকার করছে তাদের) বলো, ‘আমার প্রতিপালক খুব ভালো করে জানেন, কে সত্যধর্ম নিয়ে এসেছে আর কে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে লিপ্ত।’ (কাসাস : ৮৫)
৩৬. ‘হে নবী! তুমি কখনো এমন কাউকে অনুসরণ করো না : (এক) যে কথায় কথায় শপথ করে, (দুই) যে সম্মানহীন, (তিন) যে পেছনে নিন্দা করে, (চার) যে একের কথা অন্যের কাছে অন্যের কাছে লাগায়, (পাঁচ) যে ভালো কাজে বাধা দেয়, (ছয়) যে অত্যাচারী, (সাত) যে পাপাচারী, (আট) যে বদমেজাজী, (নয়) যে অজ্ঞাতকুলশীল। ধনে-জনে শক্তিমান বলেই ওকে অনুসরণ করো না। ওর কাছে আমার সত্যবাণী শোনালে বলে, ‘এ-তো সেকেলে কল্পকাহিনী।’ (কলম : ১০-১৫)
৩৭. ‘হে নবী! ওদের জিজ্ঞেস করো, তোমরা যাদের উপাস্য হিসেবে আল্লাহর শরিক করো, তাদের মধ্যে কি কেউ তোমাদের সত্যের পথনির্দেশ করে? ওদের বলো, ‘একমাত্র আল্লাহই সত্যের পথনির্দেশনা প্রদান করেন।’ এখন কে বেশি আনুগত্য লাভের হকদার? যিনি সত্যের দিক-নির্দেশনা দেন, তাকে তোমরা অনুসরণ করবে, নাকি পথ না দেখালে যে পথ পায় না তাকে? তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা তোমাদের সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করছ না কেন?’ (ইউনুস : ৩৫)
৩৮. ‘(মা-বাবাকে সম্মান করো) কিন্তু যেহেতু তুমি জানো আল্লাহর কোন শরিক নেই, তাই তোমার মা-বাবা যদি আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করার ব্যাপারে চাপ দেয় (আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত কোন কাজ করতে বলে) তাহলে কখনো তাদের সে কথা মানবে না। তবে এরপরও তাদের সঙ্গে সবসময় সুন্দর ব্যবহার করবে, তাদের খেদমত করবে। যারা বিশুদ্ধচিত্তে আমার পথে চলে শুধু তাদেরকেই অনুসরণ করবে। তোমাদের সবাইকে শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তখন জীবনে যা কিছু করেছ, সবকিছুই বুঝিয়ে দেয়া হবে।’ (লোকমান : ১৫)
৩৯. ‘হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহর বিধানকে অনুসরণ করো এবং সত্যের সাক্ষ্যদানে অবিচল থেকো। কারো প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাকে সুবিচার থেকে দ‚রে সরে যাওয়ার মতো পাপে নিমজ্জিত না করে। সব সময় ন্যায়বিচারে দৃঢ় থাকবে- এটাই আল্লাহ-সচেতনতার ফলিত রূপ। তাই সব সময় আল্লাহ-সচেতন থেকো। তোমরা যা করো আল্লাহ তার সবকিছুরই খবর রাখেন।’ (মায়েদা : ৮)
৪০.‘অবশ্য কিতাবিরা যদি অবাধ্যতা ত্যাগ করে বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহর আনুগত্যের পথ অনুসরণ করত, তবে অবশ্যই আমি ওদের অতীতের পাপমোচন করতাম এবং চিরসুখময় জান্নাতে দাখিল করতাম।’ (মায়েদা : ৬৫)
৪১. তিনি অন্যত্রে বলেছেন,অর্থাৎ “আর নিশ্চয়ই তুমি সরল পথ প্রদর্শন কর---সেই আল্লাহর পথ।” (শুরা : ৫২)
৪২. তিনি আরো বলেন,অর্থাৎ “সুতরাং যারা তার আদেশের বির”দ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” (ন‚র : ৬৩ )
৪৩. ‘‘বলুন হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সবার প্রতিই আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” (আ‘রাফ : ১৭৫)
৪৪. আমি আপনাকে সমগ্র জগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’’ (আম্বিয়া : ১০৭)
৪৫. আল্লাহ বলেন,‘‘আমি তোমাদের প্রতি রাসূল পাঠিয়েছি সত্যের সাক্ষ্যরূপে, যেমন সাক্ষ্যরূপে রাসূল পাঠিয়েছিলাম ফির‘আউনের প্রতি।’’ (মুজ্জাম্মিল : ১৫)
৪৬."হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর। আর তোমাদের আমলসমুহ বিনষ্ট করো না।" (মুহাম্মদ : ৩৩)
৪৭."আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য।" (নুর : ৫২)
৪৮."নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পার।" (নুর : ৫৬)
৪৯."নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর।" (আহযাব : ৩৩)
৫০. তিনি আরো বলেন, অর্থাৎ “আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখ।” (আহযাব : ৩৪)
৫১."আর আপনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের নির্যাতন উপেক্ষা কর”ন আর আল্লাহর উপর ভরসা কর”ন। তত্ত¡াবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।" (আহযাব : ৪৮)
৫২. “যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলট পালট করা হবে; সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম।” (আহযাব : ৬৬)
৫৩. “নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর।” (আহযাব : ৩৩)
৫৪. তিনি আরো বলেন,অর্থাৎ “আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখ।” (আহযাব : ৩৪)
৫৫. “তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে এবং সৎকর্ম করবে, আমি তাকে দু’বার প্রতিদান দেব এবং তার জন্য আমি সম্মান জনক রিযিক প্রস্তুতকরে রেখেছি।" (আহযাব : ৩১)
৫৬. "তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসম‚হ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করলো।" (আহযাব: ৭১)
৫৭."তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর।" (মুজাদিলাহ : ১৩)
৫৮."এবং যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তাকে তিনি জান্নাতে দাখিল করাবেন, যার তলদেশে নহরসমুহ প্রবাহিত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পিছনে ফিরে যাবে তিনি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।" (ফাতহ : ১৭)
৫৯."তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। কিন্ত্ত তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমার রাসূলের তো একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেয়া।" (তাগাবুন : ১২)
৬০."অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।" (তাগাবুন : ১৬)
৬১."যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।" (মুমিনুন : ৩৪)
৬২."তারা বলেঃ আমরা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং আমরা আনুগত্য করেছি; অতঃপর তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তারা বিশ্বাসী নয়।"(নুর : ৪৭)
৬৩."আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের সাথে এর (কুরআনের)সাহায্যে কঠোর সংগ্রাম কর”ন।" (ফোরকান: ৫২)
৬৪." অতএব, আপনি আপনার পালনকর্তার আদেশের জন্যে ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা কর”ন এবং ওদের মধ্যকার কোন পাপিষ্ঠ কাফেরের আনুগত্য করবেন না।" (ইহসান : ২৪)
হাদীসসম‚হ :
১. হযরত আয়শা (রা:) তার অনুপম ভাব ও ভাষায় রাসূল (সা:) এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘কুরআনই তার চরিত্র। ’ (আদাবুল মুফরাদ : ৩০৮)
২. সে মর্মেই রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘যে আমার সুন্নতকে (পালন ও প্রচারের মাধ্যমে) জীবিত করবে, সে আমাকেই ভালোবাসবে। আর যে আমাকে ভালোবাসবে, সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে। ’ (তিরমিজি: ২৬০২)
৩. হযরত আব‚ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি যে ব্যাপারে তোমাদেরকে (বর্ণনা না দিয়ে) ছেড়ে দিয়েছি, সে ব্যাপারে তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ সে ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করো না)। কারণ, তোমাদের প‚র্ববর্তীরা তাদের অধিক প্রশ্ন করার এবং তাদের নবীদের সঙ্গে মতভেদ করার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে। সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোন জিনিস থেকে নিষেধ করব, তখন তোমরা তা হতে দ‚রে থাক। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন কর।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
৪. হযরত আব‚ নাজীহ আল-ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজব‚ত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসম‚হ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।’’ (আবুদাউদ : ৪৬০৭)
৫.হযরত আব‚ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।’’(বুখারী : ৭২৮০)
৬. হযরত আব‚ মুসলিম মতান্তরে আব‚ ইয়াস সালামাহ ইবনে ‘আমর ইবনে আকওয়া’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে বাম হাতে খাবার খেল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার ডান হাতে খাও।’’ সে বলল, ‘আমি পারব না।’ তখন তিনি বললেন, ‘‘তুমি যেন না পারো।’’ একমাত্র অহংকার তাকে ডান হাতে খাওয়া থেকে বাধা দিয়েছিল। অতঃপর সে তার ডান হাত তার মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি। (মুসলিম : ২০২১)
৭.হযরত আয়েশা (রা:) বলেছেন, ‘কোরআনই ছিলো তাঁর চরিত্র।’ রাসূলুল্লাহ (সা:) দুনিয়ার তাবৎ মানুষের সামনে শুধু কোরআনের শিক্ষাই পেশ করেননি। বরং তিনি নিজেকে কোরআনের জীবন্ত নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। কুরআন মজিদে যে নৈতিক গুণাবলীকে উৎকৃষ্ট কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব গুণে তিনি ছিলেন পরিপ‚র্ণ গুণান্বিত।
৮. রাসূল (সা:) একবার সাহাবিদের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলেন। এমন সময় একজন বেদুঈন এসে সেখানে পেশাব করা শুর” করলে সাহাবিরা তাকে ধমক দিয়ে থামতে বললেন। রাসূল (সা:) বললেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও; বাধার সৃষ্টি করো না।’ তারপর তিনি লোকটিকে ডেকে বললেন, ‘এটা মসজিদ, এ স্থান অপবিত্রতা কিংবা পেশাব পায়খানার জন্য উপযুক্ত নয়।’ অতঃপর রাসূল (সা:) একজনকে বললেন, তুমি পানি ভর্তি একটা বালতি নিয়ে আসো। এরপর এর ওপর ঢেলে দাও। তিনি বালতিতে পানি এনে তার ওপর ঢেলে দিলেন। (মুসনাদে আহমাদ : ১২৯৮৪) পেশাব আটকে রাখলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে, এই চিন্তা থেকে রাসূল (সা:) লেকটিকে পেশাবের মাঝে বাঁধা দিতে নিষেধ করেন। এবং মসজিদে পেশাব করার সাময়িক অনুমতি দেন। যারা উগ্র মানসিকতা সম্পন্ন, তাদের জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় ঘটনা। ভিন্নমতাবলম্বী মানুষের সঙ্গে ইসলাম কী ধরনের ব্যবহার করতে বলেছে, তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এখানে বিদ্যমান।
৯. সৃষ্টিক‚লের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মতো দানবীর আর কাউকে পাওয়া যাবে না। কেউ তাঁর কাছে কিছু চেয়েছে, অথচ তিনি তা দেননি এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। একবার তাঁর কাছে একজন লোক আসল সাহায্য প্রার্থী হয়ে, তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মাঝের সব বকরি দিয়ে দিলেন। অতঃপর লোকটি নিজের স¤প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলল, ‘হে আমার স¤প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। কেননা, মুহাম্মদ (সা:) এত বেশি পরিমাণে দান করেন যে তিনি নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কোনো ভয় করেন না।’ (মুসলিম : ২৩১২)
১০. সৃষ্টির সেরা মানুষ হয়েও তিনি বিলাশতামুক্ত অত্যন্ত সাদা-মাটা ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) গাছের লতা-পাতা দিয়ে তৈরি করা বিছানায় ঘুমাতেন। এতে তার শরীর মুবারকে দাগ হয়ে যেত। সাহাবারা ভালো কোনো বিছানার ব্যবস্থা করার আবদার জানালে তার প্রতিউত্তরে তিনি বলতেন, ‘আমার দুনিয়ার প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। আমি দুনিয়াতে একজন পথচারী ছাড়া আর কিছুই নই। যে পথচারী একটা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে একটু পরে সেটা ছেড়ে চলে যায়।’ (তিরমিজি : ২৩৭৭)
১১. কোরআন নাজিলের সূচনালগ্নে তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে খাদিজা (রা:) এর কাছে নিজের প্রাণনাশের আশঙ্কা ব্যক্ত করলে খাদিজা (রা:) তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। কারণ আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।’ (বুখারী : ৩)
১২. অতএব এরকম উন্নত আদর্শবান মানুষের ধ্বংস হবার কথা নয়। এ কথা হযরত খাদিজা তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) কখনো কোনো নারীর গায়ে হাত তোলেননি। তিনি ছিলেন স্ত্রীদের কাছে একজন আদর্শ স্বামী। এ প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। এবং আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। কেননা আমি আমার স্ত্রীদের কাছে উত্তম।' (ইবনে মাজাহ : ১৯৭৭)
১৩. তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তারা হচ্ছে তোমাদের ভাই ও তোমাদের খাদেম। মহান আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। অতএব তোমাদের যার অধীনে তার ভাই আছে, তাকে তাই খাওয়ানো উচিত যা সে নিজে খায় এবং তাকে তাই পরানো উচিত যা সে নিজে পরে। সামর্থ্যের বাইরের কাজের বোঝা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আর এ ধরনের কাজের বোঝা তাদের ওপর চাপিয়ে দিলে তবে তাদের সাহায্য করো।’ (বুখারী : ১৩৬০)।
১৪. হযরত আনাস (রা:) শিশু অবস্থায় রাসূল (সা:)-এর খাদেম হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি একটানা দশটি বছর রাসূল (সা:) এর সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। এই সুদীর্ঘ সময়ে রাসূল কখনোই আমার প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করে উফ শব্দটুকু উচ্চারণ করেননি। আমার কোনো কাজ দেখে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে কেন? কিংবা কাজ না করলে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে না কেন? (বুখারী : ৫৬৯১)।
১৫. রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সব লোকই জান্নাতি হবে অস্বীকারকারী ছাড়া। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! অস্বীকারকারী কে? রাসূল (সা:) বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার নাফরমানি করবে, সেই অস্বীকারকারী।’ (বুখারী : ৬৮৫১)
১৬. রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘আমাকে সচ্চরিত্রের প‚র্ণতা সাধনের নিমিত্তই প্রেরণ করা হয়েছে।’ (জামেউল : ৬৭২৯)
১৭. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘শাসক যে পর্যন্ত কোন পাপকার্যের আদেশ না করবে, সে পর্যন্ত তার আদেশ শোনা ও মেনে নেয়া প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য, তা তার পছন্দ হোক আর নাই হোক। হ্যা সে যদি কোন পাপকার্যের আদেশ করে তাহলে তার কথা শোনা বা তার আনুগত্য করার কোন প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী, মুসলিম)
১৮. হযরত আলী (রা:) বলেন, নবী করীম (সা:) বলেছেন, ‘গোনাহের কাজে কোন আনুগত্য নেই, আনুগত্য শুধু নেক কাজের ব্যাপারে।’ (বুখারী, মুসলিম)
১৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, ‘যে আমার এতায়াত বা আনুগত্য করল সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে আমার হুকুম অমান্য করল সে আল্লাহর হুকুমই অমান্য করল। যারা আমীরের আনুগত্য করল তারা আমার আনুগত্য করল। আর যারা আমীরের আদেশ অমান্য করল সে প্রকৃতপক্ষে আমারই আদেশ অমান্য করল।’ (বুখারী, মুসলিম)
২০. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) রাসূলে পাক (সা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আনুগত্যের বন্ধন থেকে হাত খুলে নেয়, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে এমন অবস্থায় হাজির হবে যে, আত্মপক্ষ সমর্থনে তার বলার কিছুই থাকবে না। আর যে ব্যক্তি বাইয়াত ছাড়া মারা যাবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।’ (মুসলিম)
আসুন পরকালের মুক্তি বা নাজাত লাভের জন্য আমরা আমাদের জীবনে আল্লাহর বিধান ও রাসূলের নির্দেশনা (সুন্নাহ) অনুসরণ করে নিজে আলোকিত হই। একটি আলোকিত ও সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করি। আমিন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহর বিধান ও রাসূলের নির্দেশনা অনুসরণ এই সমাজে কয়জন মানছে??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.