![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আল্লাহ তাআলা কোন কিছু অনর্থক সৃষ্টি করেননি। তিনি অনর্থক কোন কিছু করা থেকে পবিত্র। তিনি মহান হিকমত ও সার্বিক কল্যাণের ভিত্তিতে সৃষ্টি করে থাকেন। এ হেকমত কেউ জানে; কেউ জানে না। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আসমান-জমিন ও মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আসমান-জমিন, জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তাঁর আনুগত্য করে যাতে তাকে পুরস্কৃত করতে পারেন; আর কে তাঁর অবাধ্য হয় যাতে তাকে শাস্তি দিতে পারেন।
১. আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা কি মনে কর আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। তোমরা আমার নিকট প্রর্ত্যাবর্তন করবে না। সত্যিকার বাদশা আল্লাহ মহান হোন। তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই; যিনি মহান আরশের অধিপতি।” (মুমিনূন : ১১৫,১১৬)
২. আল্লাহ তাআলা বলেন : “আসমান-জমিন এবং এ দুইটির মাঝে যা কিছু আছে সে সব আমি তামাশা করে সৃষ্টি করিনি।” (আম্বিয়া : ১৬)
৩. আল্লাহ আরও বলেন: “আমি আসমান-জমিন আর এ দুটির মাঝে যা আছে সে সব তামাশা করে সৃষ্টি করিনি। আমি ও দুটিকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” (দুখান : ৩৮, ৩৯)
৪. তিনি আরও বলেন: “হা-মীম। এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। কাফেরদেরকে যে বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”(আহকাফ : ১-৩)
৫. যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। (আর রুম : ৩০)
৬.আল্লাহ বলেন: “যিনি করেছেন মরণ ও জীবন যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- আমলের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি মহা শক্তিধর, অতি ক্ষমাশীল।”(আল-মুল্ক : ২)
এ পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রভাব ফুটে উঠে। যেমন-‘আল-রহমান’, ‘আল-গফুর’, ‘আল-হাকিম’, ‘আল-তাওয়াব’, ‘আল-রহীম’ ইত্যাদি আল্লাহর গুণবাচক নাম। সবচেয়ে যে মহান উদ্দেশ্য ও মহা পরীক্ষার জন্য মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা হচ্ছে- তাওহীদ বা নিরংকুশভাবে এক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ প্রদান করা। মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে এক আল্লাহর ইবাদত (দাসত্ব) করা এবং তাঁর প্রতিনিধিত্বের (খিলাফতের) দায়িত্ব পালন করার জন্য। এক আল্লাহর ইবাদত (দাসত্ব) করা এবং তাঁর প্রতিনিধিত্বের (খিলাফতের) দায়িত্ব পালন করা ছাড়া মানুষের মুক্তির কোনো পথ নেই। সে জন্যে ইবাদত ও খিলাফতের মর্ম ও তাৎপর্য পরিষ্কার থাকা জরুরী। ইবাদত ও খিলাফত শব্দ দু’টি কুরআনের দু’টি পরিভাষা। শব্দ দু’টি কুরআন মজিদে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বুঝানোর জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে একটি একটি করে দু’টি বিষয় নিয়েই খুব সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
ইবাদাতঃ
সকল জীব এবং জৈব ও জড় সৃষ্টিই জন্মগত ও স্বভাবগতভাবে তাদের স্রষ্টার আব্দ বা ইবাদতকারী। তারা সবাই তাদের সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করে এবং তিনি যে পদ্ধতির ইবাদত তাদের স্বভাবজাত করে দিয়েছেন সে পদ্ধতিতেই তারা তাঁর ইবাদত করে। মহাবিশ্ব এবং পৃথিবী মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার দাস (আব্দ)। এ দুয়ের মধ্যে যারা আছে এবং যা কিছু আছে সবাই এবং সবকিছু তাঁর দাস (আব্দ)। তাঁর ইবাদত এবং দাসত্ব করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করার কোনো অবকাশ তাদের নেই । উপরোক্ত প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম শুধু জিন আর মানুষ। শয়তান জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ জিন আর মানব জাতিকে ইচ্ছার স্বাধীনতা (Freedom of will & choice) দিয়েছেন। সে কারণে শয়তান আল্লাহর হুকুম তামিল করতে অস্বীকার করেছিল। এই স্বাধীনতার কারণেই মানুষও আল্লাহর ইবাদত করতে অস্বীকার করে।
মহান আল্লাহ তাঁর ইবাদত করার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে দু’টি অবস্থা ও ব্যবস্থা সৃষ্টি করে দিয়েছেন :
১. প্রাকৃতিক বা জন্মগতভাবে মানুষ আল্লাহর দাস, ২. আল্লাহর দাস হবার ব্যাপারে সে স্বাধীন।
এ দু’টি অবস্থার কারণ হলো, মানুষের মধ্যে আল্লাহ দু’টি সত্তা সৃষ্টি করেছেন :
১. বস্তুগত সত্তা। অর্থাৎ তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও অন্যান্য বস্তুগত উপাদানসমূহ।
২. বুদ্ধিগত ও নৈতিক সত্তা। এর মধ্যে রয়েছে তার: intelligence, cognition. perception, sensation, ethics, judgment, feeling, will, choice, intention, desire, rationality, option, opinion, decisive power.
মানুষের বস্তুগত সত্তা জন্মগতভাবেই আল্লাহর দাস। মানুষের প্রতিটি অঙ্গ স্রষ্টার একান্ত অনুগত বাধ্যগত দাস। স্রষ্টা যে অঙ্গকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং তার জন্যে যে ক্রিয়া/কর্ম (Function) নির্দেশ করেছেন, সে বিনীতভাবে কেবল সে নির্দেশই পালন করে যাচ্ছে। মানুষের চোখ, কান, নাসিকা, জিহ্বা, দন্ত, রক্ত, মস্তিষ্ক ইত্যাদি প্রতিটি অরগ্যানই নিষ্ঠার সাথে স্রষ্টার হুকুম তামিল করে যাচ্ছে। নিজের অরগ্যানসমূহের উপর মানুষের কোনো কর্তৃত্ব (Command) নেই। কিন্তু পরম দয়াবান মহান আল্লাহ মানুষকে বস্তুগত সত্তার সাথে সাথে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সত্তাও দিয়েছেন এবং সে সত্তাটিকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি মানুষকে দিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা (Freedom of will & freeom of choice)।
ফলে একজন ব্যক্তি কার বাধ্যগত থাকবে, কার হুকুম বিধান পালন করবে, কার কাছে নত থাকবে, কার কাছে প্রার্থনা করবে, কার আনুগত্য করবে, কার দাসত্ব করবে? কার উপাসনা করবে? -এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সে সম্পূর্ণ স্বাধীন।
কিন্তু তার এই প্রবণতাগুলো কাউকেও না কাউকেও অর্পণ করতেই হবে। অর্থাৎ কারো না কারো ইবাদত তাকে করতেই হবে। ইবাদত থেকে কোনো অবস্থাতেই সে মুক্ত থাকতে পারে না। কারণ ইবাদত করাই মানুষের প্রবণতাসমূহের স্রষ্টা প্রদত্ত প্রকৃতি।
ইবাদত সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভুল ধরাণা রয়েছে। মানুষ মনে করে কুরআনে নির্দেশ পালনে নামাজ আদায় করা, রোজা ও হজ পালন করা, জাকাত দেয়া, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত করার নামই ইবাদত। না, ইবাদত মানে তা নয়। ইবাদাত হলো আল্লাহর বিধিবিধান মেনে চলা, হালালকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করা আর হারামকে হারাম হিসেবে বর্জন করা। এক কথায় আল্লাহ যা করতে বলেছেন তা করা যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা।
মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করার পর, আমাদের আরাম আয়েশের জন্য সব উপকরণের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করে তা, মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। কেননা মানুষই হচ্ছে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কাজেই জমিন ও আসমানের সকল জীবজন্তু, গাছপালা এবং সব জড় বস্তুকে মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এ জন্যই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-"এ ভূপৃষ্ঠের সব কিছুই মানুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।"
আল্লাহ নিজেই মানুষ সৃষ্টির এ উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন-
১.আল্লাহ বলেন : আমি জিন আর মানুষকে কেবল এজন্যেই সৃষ্টি করেছি, তারা যেনো (স্বেচ্ছায়) আমার ইবাদত করার পথই বেছে নেয়। (যারিয়াত : ৫৬)
২. আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন : ‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা দেন (নিয়ে এসেছেন), তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (হাশর : ৭)
৩. মূসা বললো : আমাদের রব তো তিনি, যিনি প্রতিটি জিনিসকে তার আকৃতি ও প্রকৃতি দান করেছেন অতপর (তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের) দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। (তোয়াহা : ৫০)
৪. অথচ মহাবিশ্ব এবং পৃথিবীতে যারা আছে, সকলেই ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ করেছে। (ইমরান : ৮৩)
৫. (ইবরাহিম তার পিতাকে আরো বলেছিল বাবা! শয়তানের ইবাদত করবেন না, কারণ শয়তান তো রহমানের অবাধ্য। (মরিয়ম : ৪৪।
৬. হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদের নির্দেশ দেইনি যে, শয়তানের ইবাদত করো না, কারণ সে তোমাদের সুস্পষ্ট শত্রু। (ইয়াসিন : ৬০)
৭. তাগুতের ইবাদত পরিহার করে এক আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ প্রদানের জন্যে আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই রসূল পাঠিয়েছি। (নহল : ৩৬)
৮. তাদের যখন বলা হতো : ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো।’ তখন তারা বলতো : ‘না, বরং আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যে নিয়মের উপর পেয়েছি আমরা কেবল তারই অনুসরণ করবো।’ (বাকারা : ১৭০)
৯. যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অলি হিসেবে গ্রহণ করে, তারা বলে : ‘আমরা তো তাদের ইবাদত করি এজন্যে, যাতে করে তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটে পৌঁছে দেয়। (যুমার : ৩)
১০. হুকুম দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। তিনি হুকুম দিয়েছেন: তোমরা ইবাদত করোনা একমাত্র তাঁর ছাড়া। (ইউসুফ : ৪০)
১১. পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যকে একমাত্র আল্লামুখী করে শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (বাইয়্যেনা : ৫)
১২. হে মানুষ! তোমরা ইবাদত করো তোমাদের রবের, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের ...। (বাকারা : ২১)
১৩. তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকেই অংশীদার করো না। (নিসা : ৩৬।)
১৪. কোনো উপাস্য নেই আমি ছাড়া। সুতরাং তোমরা কেবল আমারই ইবাদত করো। (আম্বিয়া : ২৫)
১৫. আমিই তোমাদের প্রভু। সুতরাং কেবল আমারই ইবাদত করো। (আম্বিয়া : ৯২)
১৬. আর তোমরা কেবল আমারই ইবাদত করো, এটাই সিরাতুল মুস্তাকিম- সরল সঠিক পথ। (ইয়াসিন : ৬১)
১৭. (ঈসা তার লোকদের বলেছিল নিশ্চয়ই আমার এবং তোমাদের প্রভু আল্লাহ। সুতরাং তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো, এটাই সিরাতুল মুস্তাকিম। (ইমরান : ৫১)
১৮. ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
অর্থাৎ আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদেরকে আমার ইবাদতের নির্দেশ প্রদান করার জন্য; তাদের প্রতি আমার মুখাপেক্ষিতার কারণে নয়। আলি বিন আবু তালহা ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, “একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য” অর্থাৎ যাতে তারা ইচ্ছাই বা অনিচ্ছায় আমার ইবাদতের স্বীকৃতি দেয়। এটি ইবনে জারীরের নির্বাচিত তাফসির। ইবনে জুরাইয বলেন: যাতে তারা আমাকে চিনে। আল-রাবি বিন আনাস বলেন: “একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য” অর্থাৎ ইবাদতের জন্য।
(তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/২৩৯))
১৯. শাইখ আব্দুর রহমান আল-সাদী (রহঃ) বলেন:
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য, তাঁর নাম ও গুণাবলির মাধ্যমে তাঁকে চেনার জন্য এবং তিনি তাঁকে সে নির্দেশ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি তাঁর প্রতি আনুগত্যশীল হবে এবং নির্দেশ পালন করবে সে সফলকাম। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিবে সে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদেরকে এমনস্থানে সম্মিলিত করা অনিবার্য যেখানে তিনি তাদেরকে তার আদেশ-নিষেধ পালনের ভিত্তিতে প্রতিদান দিতে পারবেন। এ কারণে মুশরিকদের প্রতিদানকে অস্বীকার করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট যাদু!"(হুদ : ০৭) অর্থাৎ যদি আপনি এদেরকে বলেন এবং মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানের ব্যাপারে সংবাদ দেন তারা আপনার কথায় বিশ্বাস করবে না। বরং আপনাকে তীব্রভাবে মিথ্যায়ন করবে এবং আপনি যা নিয়ে এসেছেন সেটার উপর অপবাদ দিবে। তারা বলবে: “এটা তো স্পষ্ট যাদু” জেনে রাখুন এটা স্পষ্ট সত্য।(তাফসিরে সাদী, পৃষ্ঠা- ৩৩৩)
তিনি আরও বলেন, “ছেড়ে দাও ওদেরকে, ওরা খেতে থাক আর ভোগ করতে থাক, আর (মিথ্যে) আশা ওদেরকে উদাসীনতায় ডুবিয়ে রাখুক, শীঘ্রই ওরা (ওদের আমলের পরিণতি) জানতে পারবে।”।(হিজর : ৩)
তিনি আরও বলেন: “আমি বহু সংখ্যক জ্বীন আর মানুষকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের অন্তর আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারা একেবারে বে-খবর।” (আরাফ : ১৭৯)
২০. হযরত আলী (রা বলতেন হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ভয়ে বা জান্নাতের লোভে তোমার ইবাদত করি না, আমি তোমার ইবাদত করি কারণ তুমি ইবাদতের যোগ্য।
খেলাফতঃ
আল্লাহ ভালবেসে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির সেরা মকলুকাত হিসাবে ঘোষণা করেছেন। দায়িত্ব দিয়েছেন আল্লাহর এবাদাত ও খলিফার দায়িত্ব পালনের। মানুষ আল্লাহর বিধান থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে তাদেরকে সরল ও সঠিক পথে আনার জন্য আল্লাহ যুগে যুগে নবী বা রাসূল পাঠিয়েছেন। শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা এর পরে আর কোন রাসূল আসবেনা। একাজ পালণ করেত হবে আমাদেরকে। কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকেই আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। খলিফা বা প্রতিনিধির কাজ হলো আল্লাহর বিধান ও রাসূলের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা।
খলিফা বা প্রতিনিধির কাজ কী? খলিফা বা প্রতিনিধির কার্যাবলী (Functions) সাধারণভাবে সকলেই জ্ঞাত ও অবহিত। মূলত খলিফার কার্যাবলী নিম্নরূপ :
১. মূল মালিকের বার্তা/আদেশ/নিষেধ/বিধান পৌঁছে দেয়া, জানিয়ে দেয়া এবং বুঝিয়ে দেয়া।
২. মূল মালিকের আনুগত্য করা, হুকুম পালন করা এবং তাঁর বাধ্যতা স্বীকার করার জন্য আহ্বান করা।
৩. মূল মালিকের বিরুদ্ধাচরণ না করার আহ্বান করা।
৪. মূল মালিকের অবাধ্যতা ও বিরুদ্ধাচরণের মন্দ পরিণতি সম্পর্কে সকলকে সর্বপ্রকারে সতর্ক করা।
৫. মূল মালিকের ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি বিধান করলে পুরস্কারের সুসংবাদ প্রদান করা।
৬. মূল মালিকের হুকুম-বিধান কার্যকর করা।
৭. মূল মালিকের ইচ্ছা ও আইন মোতাবেক শাসন পরিচালনা করা।
আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে খলিফা বানিয়েছেনঃ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বলেছিলেন : আমি পৃথিবীতে খলিফা বানাতে/নিযুক্ত করতে চাই। (বাকারা : ৩০) প্রশ্ন হলো, এখানে ‘খলিফা’ মানে কি? এক্ষেত্রে মুফাসসিরদের মধ্যে মত পার্থক্য হয়েছে। তবে নিম্নোক্ত দু’টি মত অধিকতর যুক্তিসংগত ও অগ্রাধিকারযোগ্য :
১. এখানে ‘খলিফা’ শব্দটি সবগুলো অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
২. এখানে ‘খলিফা’ শব্দটি প্রতিনিধি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
বিশ শতকের সবচাইতে প্রাজ্ঞ তিনজন মুফাস্সির শহীদ সাইয়েদ কুতুব তাঁর তফসির ফী যিলালিল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী তাঁর তফসির তাফহীমুল কুরআন এবং মুফতি মুহাম্মদ শফি তাঁর তফসির মা’আরিফুল কুরআনে শেষোক্ত দু’টি অর্থ অর্থাৎ প্রতিনিধি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থই গ্রহণ করেছেন।
মানুষ কার খলিফা?
কুরআন মজিদ অধ্যয়ন করলে জানা যায়, মানুষ দায়িত্ব পালন করে - ১. আল্লাহর খলিফা হিসেবে, অথবা ২. শয়তানের খলিফা হিসেবে।
শয়তানের খলিফারা দাসত্ব, ইবাদত বন্দেগি ও তাবেদারি করে-
১. স্বয়ং শয়তানের,
২. নফসের (কামনা বাসনার),
৩. শয়তানি (অর্থাৎ পাপিষ্ঠ ও দুস্কৃতিকারী) নেতৃত্বের এবং
৪. রসম-রেওয়াজ, প্রথা প্রচলন ও পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যের।
খলিফা হবার শর্তঃ
আল্লাহর খলিফা হবার জন্য তিনটি মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হবে। এ তিনটি শর্ত পূরণ করা ছাড়া আল্লাহর খলিফা হওয়া যায় না। শর্ত তিনটি হলো :
১. আল্লাহর তায়ালকে রব হিসেবে মেনে নিয়য় এবং তাঁর দাসত্ব স্বীকার করা।
২. আল্লাহর তায়ালাল নির্দেশ মেনে তাাঁর পারপূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করা।
৩. ঈমান ও ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কাউকেও শরিক না করা।
ক. যারা ঈমান আনে গায়েব-এর প্রতি। (বাকারা : ০৩)
খ. তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কাউকেও শরিক করো না। (আন নিসা : ৩৬)
খলিফার কাজঃ
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে এবং তাঁর বাধ্যতা ও দাসত্ব মেনে নিয়ে তাঁর খলিফা হয়, তাদের মূল কাজ হলো :
১. মানুষকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আহ্বান জানানো:
তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলের প্রতি এবং আমার অবতীর্ণ নূর (আল কুরআন)-এর প্রতি। (আত তাগাবুন : ৮)
২. মানব সমাজকে অন্যদের ইবাদত বর্জন করে শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান করা :
তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। ( নহল : ৩৬)
৩. আল্লাহর ইবাদতে কাউকে শরীক না করার আহ্বান জানানো :
তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর ইবাদতে কাউকেও শরিক করো না। (আন নিসা : ৩৬)
৪. আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার দাওয়াত দেয়া :
মানুষকে তোমার প্রভুর পথে (চলার) দাওয়াত দাও হিকমত ও মর্মস্পর্শী উপদেশের মাধ্যমে। (আন নহল : ১২৫)
৫. ভালো কাজের আদেশ দেয়া এবং মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা:
তোমরা শ্রেষ্ঠ মানবদল, মানবজাতির কল্যাণে তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ করো, মন্দ কাজে বাধা দাও।(আলে ইমরান : ১১০)
৬. আল্লাহর দীন কায়েমের কাজ করা :
তোমরা দীনকে (ইসলামকে) কায়েম করো, আর এ ব্যাপারে একে অপর থেকে আলাদা হয়ো না। (আশ শুরা : ১৩)
৭. সত্য গ্রহণের উপদেশ দান এবং সত্যের উপর অটল থাকার নসিহত করা:
(তারা) একে অপরকে সত্য গ্রহণের উপদেশ দেয় এবং (সত্যের উপর) অটল থাকার উপদেশ দেয়। - (আল আসর : ০৩)
৮. আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে শাসন কার্য ও বিচার ফায়সালা পরিচালনা করা :
হে দাউদ! আমি তোমাকে ভু-খণ্ডে খলিফা বানিয়েছি। কাজেই তুমি জনগণের মধ্যে সত্য দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করো এবং হাওয়া (নফস)-এর অনুসরণ করো না। ( ছোয়াদ : ২৬)
৯. ন্যায়পরায়ণ হওয়া ও মানব কল্যাণ করা :
আল্লাহ ন্যায়বিচার ও মানব কল্যাণের আদেশ দিচ্ছেন। (নাহল : ৯০)
মানুষের প্রতি ইহসান করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি ইহসান করেছেন। (কাসাস : ৭৭)
১০. দীনি আদর্শের বাস্তব নমুনা উপস্থাপন করা:
এমনি করে আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাহ বানিয়েছি, যাতে করে তোমরা সকল মানুষের উপর সাক্ষী (নমুনা) হও। (বাকারা : ১৪৩)
নিজে কুরআন সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা। মানুষকে কুরআন সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার আহ্বান জানানো।
ইবাদত ও খিলাফতের মর্মবাণী অতীব সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে সূরা আল আছরে : সময়ের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা নয়, যারা : ঈমান আনে, আমলে সালেহ করে এবং পরস্পরকে উপদেশ-পরামর্শ দেয় সত্যকে আঁকড়ে ধরতে এবং ধৈর্যধারণ করতে।" এখানে ক্ষতি থেকে বাঁচার শর্ত হিসেবে ইবাদত ও খিলাফতের কথা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কুরআনের এ ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি কাজ যথাযথভাবে আদায় ও বাস্তায়ন করার মাধ্যমে ইবাদত ও খেলাফতের পারিপূর্ণ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৩৮
নতুন নকিব বলেছেন:
চৌধুরী ভাই,
ভালো লিখেছেন। তবে, ভুয়া মফিজ ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে সহমত পোষন করছি।
আশা করছি, পরবর্তীতে পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে তার প্রথম পরামর্শটা লক্ষ্য রাখবেন এবং দ্বিতীয় পরামর্শ অনুযায়ী নবী রাসূলগণের নামের শেষে ব্যবহৃত (সাঃ), (রাঃ), (আঃ) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এডিট করে ঠিক করে দিবেন।
৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: আমি ভাই আল্লাহ ইবাদাত ও খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে পারবো না। আগে আমার পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাবা মার দায়িত্ব পালন করতে হবে। সমাজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এত এত দায়িত্ব পালন অন্য সব দায়িত্ব পালন করার সময় হবে না। স্যরি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:২৩
ভুয়া মফিজ বলেছেন: অস্থির হওয়ার কিছু নাই ভাইজান। পর পর পোষ্ট দিবেন না দয়া করে, দেখতে খুবই খারাপ লাগে। প্রথম পাতা থেকে একটা সরে গেলে আরেকটা দিবেন।
আর (সাঃ), (রাঃ) লিখতে গিয়ে হাসির ইমো চলে এসেছে। নবী-রাসুলদের নাম এমন হাস্যকরভাবে লেখা ঠিক না। আমার মন্তব্য থেকে কপি / পেষ্ট করে ঠিক করে দিন দয়া করে। আপনার অন্য পোষ্টেও একই অবস্থা।