নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারাবির নামাজের ফযিলতঃ

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:৩৫

তারাবির নামাজের ফযিলতঃ
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো সালাত বা নামাজ এবং আরেকটি হলো সওম বা রোজা। তাই রোজার সঙ্গে নামাজের সম্পর্ক সুগভীর। প্রিয় নবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছে, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবির নামাজকে সুন্নত করেছি; অতএব যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবির নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এমন পবিত্র হবে যেমন নবজাতক মাতৃগর্ভ থেকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়। (নাসায়ি শরিফ, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ২৩৯)।
তারাবি শব্দের অর্থ
সালাতুত তারাবি রমজান মাসের বিশেষ একটি ইবাদত। মাহে রমজানে রাতের বেলায় এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পরে বেতরের আগে তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। তারাবি আরবি শব্দটি ‘তারবিহাতুন’ মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ ইস্তিরাহাত বা আরাম করা, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি। যেহেতু ২০ রাকাত তারাবির নামাজ প্রতি চার রাকাত অন্তর চার রাকাত নামাজের সমপরিমাণ সময় বিরতি দিয়ে আরামের সঙ্গে আদায় করা হয়, সে জন্য এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়। তারাবির নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদাহ, আদায় না করলে অবশ্যই গুনাহ হবে। যেটা গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি। তারাবির নামাজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত।
তারাবির নামাজের বিধান
তারাবির নামাজ ২০ রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদাহ। পুরুষদের জামাতে আদায় করা সুন্নত। তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ খতম করা সুন্নত। নারীদের জন্যও ২০ রাকাত সুন্নত। তারাবির নামাজের সময় এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত।
তারাবির নামাজ সম্পর্কিত কতিপয় হাদীস
হাদীসের তথ্যমতে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তিনদিন মসজিদে নববীতে জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। অতঃপর রাসূলের যুগে এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) -এর খিলাফতকালে এবং হযরত ওমর (রাঃ) -এর খিলাফলের প্রথম দিকে মুসলমানরা একাকী অথবা খণ্ড খণ্ড ছোট জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করতেন। অবশেষে হযরত ওমর (রাঃ) হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) -কে ঈমাম নির্ধারণ করে সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। (সহীহ আল-বোখারী, হাদীসঃ ২০১০)।
ইবনে রুমান (রাঃ) বলেন, হযরত উমর (রা.)-এর খিলাফতের সময় মানুষ ২৩ রাকাত (বিতিরসহ তারাবির নামাজ) পড়ত। (মুআত্তা মালিক, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ১১০, হাদীসঃ ২৮১; আবু দাউদ, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৬৯৯, হাদীসঃ ৪২৮৯)।
হাসান (রাঃ) বলেন, ‘হযরত উমর (রাঃ) মানুষকে একত্র করলেন হযরত উবাই ইবনে কাআব (রাঃ)-এর পেছনে; তখন তিনি তাদের ইমামতি করে ২০ রাকাত নামাজ পড়তেন।’ (আবু দাউদ, খণ্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ৬৫, হাদীসঃ ১৪২৯)।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাঃ) ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তেন এবং বিতির। (মাকতাবাতু ইবনে তাইমিয়া, খণ্ডঃ ১১, পৃষ্ঠাঃ ৩৯৩, হাদীসঃ ১৬১০৬)।
আবুজার গিফারি (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে করিম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে তারাবির নামাজ পড়ল ইমাম প্রস্থান করা পর্যন্ত; তার কিয়ামে লাইল (রাত জাগার সওয়াব পূর্ণরূপে) লিখিত হবে। (তিরমিজি, খণ্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ১৬১-১৬৯, হাদীসঃ ৮০৬)।
মোল্লা আলী কারি (রাঃ) বলেন, তারাবির নামাজ ২০ রাকাত, এ বিষয়ে সব সাহাবি ইজমা (ঐকমত্য) হয়েছেন। (মিরকাত শারহে মিশকাত, খণ্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ১৯৪)।
শাঈখ উসাইমিন (রাঃ) বলেছেনঃ ‘সুন্নত হলো যে, ইমামের অনুসরণ করবে; কারণ যখন ইমাম (তারাবির নামাজ) সম্পূর্ণ করার পূর্বে (মুক্তাদি)) চলে যায়, তখন সে কিয়ামে লাইল (রাত জাগরণ)-এর সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, খণ্ডঃ ১৪, পৃষ্ঠাঃ ২০০-২০১)।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাঃ) বলেনঃ ‘তবে তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে নিশ্চয় উবাই ইবনে কাআব (রাঃ) রমজানে রাত জেগে ২০ রাকাতে (তারাবির নামাজে) মানুষের ইমামতি করতেন এবং তিন রাকাত বিতির নামাজ পড়তেন। তাই বহু উলামায়ে কিরাম মনে করেন, এটাই সুন্নত; কেননা তা আনসার ও মুহাজির সব সাহাবির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত, আর কেউ তা অস্বীকার করেননি। অন্য ইমামেরা ৩৯ রাকাত (বিতিরসহ) তারাবির নামাজ পড়া পছন্দ করেন; কারণ তা হলো মদিনার আমল। তিনি আরও বলেনঃ সুতরাং ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়াই উত্তম, আর এটাই অধিকাংশ মুসলমানের আমল; আর নিশ্চয় এটি ১০ (সর্বনিম্ন) ও ৪০ (সর্বোচ্চ)-এর মাঝামাঝি। তবে যদি কেউ ৪০ রাকাত বা অন্য কোনো সংখ্যা আদায় করেন, তবে তাও জায়েজ হবে; এ বিষয়ে অন্য ইমামরাও আলোকপাত করেছেন। (মজমুআহ ফাতাওয়া, খণ্ডঃ ২২, পৃষ্ঠাঃ ২৭২; খণ্ডঃ ২৩, পৃষ্ঠাঃ ১১২)।
তারাবি বিশ রাকাত সুন্নাত। এটা রাসূল (সাঃ), সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)
সমস্ত সাহাবীদের আমলও বিশ রাকাত ছিল। রাসূল (সাঃ) এর নাতি হযরত আলী ইবনে হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রাঃ) এর নির্দেশে লোকদেরকে নিয়ে উবাই বিন কাব (রাঃ) বিশ রাকাত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদ)
এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, আলী (রাঃ) সহ সকল সাহাবীদের ঐক্যমতে বিশ তারাবি পড়া হয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, মক্কা ও মদীনা শরীফে সাহাবায়ে কেরামের যুগ হতে আজ পর্যন্ত সব সময় বিশ রাকাত তারাবি খতমে কোরআনসহ জামাতের সঙ্গে পড়া হয়। তারাবি নামাজে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণ করা ও সুন্নত। রাসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকী অর্জন করবে এবং একটি নেকীকে দশগুণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হবে। (তিরমিজি)
কুরআনে কারীম তেলাওয়াতের মতো শুনলেও একই রকম সওয়াব। এজন্য তারাবি নামাজে পরিপূর্ণ আদবের সাথে মনোযোগ দিয়ে কোরআন শুনতে হবে।
তারাবির নামাজ পড়ার ফযিলত
তারাবির নামাজের গুরুত্ব সীমাহীন। কারণ মাহে রমজান যেসব বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য মহিমাম্বিত, তার মধ্যে অন্যতম তারাবির নামাজ। তারাবির নামাজ মুসলমানদের ওপর সারা বছরের মধ্যে শুধুই রমজান মাসের জন্যে সুন্নত বিধান হিসেবে স্থিরকৃত। যেহেতু রমজান মাস ছাড়া বছরের অন্য কোনো সময়ে তারাবির নামাজ আদায় করার সুযোগ নেই তাই বার্ষিক ইবাদত হিসেবে এর গুরুত্ব অন্যান্য সুন্নত নামাজ অপেক্ষা বেশি। রাসূলে করিম (সাঃ) তারাবির নামাজকে অত্যন্ত গুরুত্বসহ আদায় করতেন বলে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তারাবির নামাজের ব্যাপারে সাহাবিদের উৎসাহিত করতেন কিন্তু তিনি তাঁদেরকে দৃঢ়তার সঙ্গে আদেশ করতেন না। তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে কিয়াম করবে অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহীহ আল-বোখারী, হাদীসঃ ২০০৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস ঃ ৭৫৯, মুআত্তা ইমাম মালেক, খণ্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ১৫৬ , হাদীসঃ ৩৭৬)
রাসূল (সাঃ) তারাবিকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তারাবি যেন ফরজ না হয়ে যায়, যেটা আদায়ে উম্মতের কষ্ট হতে পারে, সেটা রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদীস থেকেই বোঝা যায়।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি) আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তার সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তারা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের নিকট আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের ওপর উহা (তারাবি) ফরজ করে দেওয়া হয়। (বুখারী)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ ইমান ও সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে রমজান মাসের রাতে কিয়াম আদায় করবে অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহীহ আল-বোখারী, হাদীস ঃ ১৯০১, সহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ৭৫৯, সুনানে দারেমিঃ ১৮১৭, মুসনাদে আহমাদঃ ৯৪৪৫, মুসনাদে হুমাইদিঃ ১০৩৭)
বিশ রাকাত না পড়ে ইমামকে রেখে মসজিদ ত্যাগ করা উচিত নয়। রাসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে, তার জন্য পুরো রাত সিয়াম পালনের সওয়াব লাভ হবে। (তিরমিজি)
মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত পূর্ণ আমল তারাবির নামাজে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। আসুন আমরা যথাযথ গুরুত্বের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সত্য কথা হলো- এইসব ফযিলত জীবনের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.