![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খানা খান ও পান করুন এবং অপব্যয় করবেন না। তিনি (আল্লাহ) অপব্যয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।
রাসূল (রাঃ) তার প্রিয় সাহাবিদের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ-প্রত্যেক বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। তার প্রতিটি কর্ম ও পদক্ষেপ মানবতার অনুসরণযোগ্য। সফলতা ও কামিয়াবির মাধ্যম। জীবন পথের পাথেয়। তার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করলে মুমিনের জীবনে বয়ে যাবে প্রশান্তির ফল্গুধারা।
রাসূল (রাঃ) কীভাবে খাবার খেতেন, খাবার গ্রহণে তার কী পদ্ধতি ছিল- সংক্ষিপ্তভাবে তা তুলে ধরা হলো।
১.খাবার হাত ধুয়ে শুরু করা
খাবার গ্রহণের আগে দুই হাত ক্ববজি পর্যন্ত ধৌত করা সুন্নত। রাসূল (রাঃ) খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার আদেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (রাঃ) পানাহারের আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতেন। (মুসনাদে আহমাদ)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (রাঃ) খাওয়ার পর কুলি করতেন এবং হাত ধৌত করতেন। (মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজাহ)
২. দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়া
দস্তুরখানের উপর খানা খাওয়া। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (রাঃ) পায়াবিশিষ্ট বড় পাত্রে খাবার খেতেন না। কাতাদা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে কীসের ওপর খানা খেতেন? তিনি বললেন, ‘চামড়ার দস্তরখানের ওপর। ’ ( বোখারী : ৫৩৮৬)
৩. খানার সময় বসা
বিনয়ী অবস্থায় সামনের দিকে ঝুঁকে একজন আল্লাহর মুখাপেক্ষী বান্দার মত বসে খাওয়া। খানা খাওয়ার সময় বাম পা বিছায়ে দিবে এবং ডান পা খাড়া রাখবে, অথবা দুই হাটু খাড়া রেখে কিংবা দুই হাটু ফেলে দুই পায়ের উপর বসবে। এই তিনটা থেকে যে কোন এক নিয়মে বসা সুন্নত।
হাদীসে আছে নবী (সাঃ) বাম পা উঠিয়ে, ডান পায়ের উপর বসতেন। অপর এক হাদীসে নবী (সাঃ) উভয় পা উঠিয়ে বসার কথা উল্লেখ আছে।
৪. খাবার শুরু করা
মাজখান থেকে খাবার শুরু করবেন না । নিজের ডান পার্শ্ব থেকেই খাবে। চার দিকে হাত মারবেন না।
রাসূল (রাঃ) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেতেন। বাম হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন তিনি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে। ’ (বুখারী : ৫৩৭৬; মুসলিম : ২০২২)
৫. খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
রাসূল (রাঃ) খাবার গ্রহণের আগে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন। তার সঙ্গীদেরও বিসমিল্লাহ বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসূল (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। এবং তোমার দিক হতে খাও। ’ (বুখারী : ৫১৬৭, তিরমিজি : ১৯১৩)
৬. বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে
খানার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে ভুলে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্র “বিসমিল্লাহি আওয়্যালাহু ওয়া আখীরাহ” পড়া। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (রাঃ) বলেন, “যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়াআখিরাহ। ” (আবু দাউদ : ৩৭৬৭, তিরমিজি : ১৮৫৮)
৭. হাত চেটে খাওয়া
রাসূল (রাঃ) খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনো হাত মুছতেন না। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করবে, তখন হাত চাটা নাগাদ তোমরা হাতকে মুছবে (ধোয়া) না। ’ (বুখারী : ৫২৪৫)
হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, খাবার শেষে যে ব্যক্তি বর্তন চেটে খাবে, তাহলে সেই প্লেট ঐ ব্যক্তির জন্য দোয়া করে এবং বলে আল্লাহ পাক তোমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিন যেভাবে তুমি আমাকে শয়তান থেকে স্বাধীন রেখেছ।
৮. আঙুল চেটে খাওয়া
খাবার শেষে হাতের আঙ্গুল সমূহ চেটে খাওয়া। এবং খাবারের পাত্রগুলো আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে খাওয়া। প্রথম মধ্যমা আঙ্গুল, তারপর শাহাদাত আঙ্গুল, এরপর বৃদ্ধাঙ্গুল ও অন্যান্য আঙ্গুল এবং বর্তনও চেটে নিবে। আঙুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকত লাভের অধিক সম্ভাবনা থাকে। কারণ খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে মানুষ তা জানে না। রাসূল (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ : ১৯১৪)
হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) খাবারের পর আঙ্গুল ও প্লেট চেটে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় তিনি আরো বলেছেন খাদ্যের কোন অংশে বরকত নিহিত আছে তা তোমরা কেউ জানো না। (সহীহ মুসলিম॥ মিশকাত : ৩৬৩)
৯. পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া
খাবার গ্রহণের সময় কখনো কখনো থালা-বাসন থেকে এক-দুইটি ভাত, রুটির টুকরো কিংবা অন্য কোনো খাবার পড়ে যায়। সম্ভব হলে এগুলো তুলে পরিচ্ছন্ন করে খাওয়া চাই।
রাসূল (রাঃ)-এর খাবারকালে যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তুলে খেতেন। জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (রাঃ) বলেন, ‘তোমাদের খাবার আহারকালে যদি লুকমা পড়ে যায়, তাহলে ময়লা ফেলে তা ভক্ষণ করো। শয়তানের জন্য ফেলে রেখো না। ’ (তিরমিজি : ১৯১৫; ইবনে মাজাহ : ৩৪০৩)
ইমাম গাজালী রহ: বলেন- রুটির টুকরো ও ছিলকাগুলো তুলে নাও। হাদীস শরীফ এ বর্ণিত হয়েছে যে, যারা এরকম করবে তাদের জীবন যাপনে আল্লাহ পাক প্রশস্ততা ওয়সাআত দান করবেন। তাদের বাচ্চাগুলো সুস্থ, নিরাপদ ও ত্রুটি মুক্ত থাকবে। এবং ঐ রুটির টুকরো গুলো জান্নাতী হুরগণের মহর স্বরুপ হবে। (কিমিয়ায়ে সা'য়াদত)
১০. হেলান দিয়ে না খাওয়া
কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খাবার খেতে তিনি নিষেধ করেছেন। হেলান দিয়ে খাবার খেলে পেট বড় হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দাম্ভিকতা প্রকাশ পায়। আবু হুজাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (রাঃ)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না। (বুখারী : ৫১৯০, তিরমিজি : ১৯৮৬)
১১.খাবারের দোষ-ত্রুটি না ধরা
শত চেষ্টা সত্ত্বেও খাবারে দোষ-ত্রুটি থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করা নিতান্ত বেমানান। রাসূল (রাঃ) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (রাঃ) কখনো খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। তার পছন্দ হলে খেতেন, আর অপছন্দ হলে খেতেন না। (বুখারী : ৫১৯৮; ইবনে মাজাহ : ৩৩৮২)
১২. খানা সময় একেবারে চুপ থাকা
খানা সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ। তাই খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পর ভালো ভালো কথা বার্তা বলবেন। তবে অহেতুক কথা দুঃশ্চিন্তাযুক্ত কথা এবং ঘৃণিত কথা বার্তা বলবেন না।
১৩. খাবারে ফুঁ না দেওয়া
খাবার ও পানীয়তে ফুঁ দেওয়ার কারণে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। রাসূল (রাঃ) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (রাঃ) কখনো খাবারে ফুঁ দিতেন না। কোনো কিছু পান করার সময়ও তিনি ফুঁ দিতেন না। (ইবনে মাজাহ : ৩৪১৩)
১৪. খাবারের পর মিসওয়াক করা
খাবারের পর মিসওয়াক করা সাওয়াবের কাজ । তাই সম্ভব হলে মেসওয়াক করবেন।
১৫. খাবারের পর ভালোভাবে হাত ধুয়া
খাবারের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে মুছে ফেলবে। এতে সাবান ও হ্যান্ডওয়াস ব্যবহার করা যাবে।
১৬. খাবারের শেষে দোয়া পড়া
খাবার শেষে রাসূল (রাঃ) আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন ও দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (রাঃ) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা। ’ তিনি কখনো এই দোয়া পড়তেন: ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ (বুখারী : ৫৪৫৮)
আল্লাহ তা’আলা খাবারের মাধ্যমে আমাদের প্রতি অনেক বড় দয়া ও অনুগ্রহ করেন। এ দয়ার কৃতজ্ঞতা আদায় করা সভ্যতা ও শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত।
রাসূল (রাঃ)-এর সুন্নতগুলো জীবনে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে, জীবন সুন্দর ও সার্থক হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
২| ০২ রা মার্চ, ২০২১ রাত ১১:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: অনেক দরিদ্র লোক তিনবেলা পেট ভরে খেতে পায় না।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১০
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সব কাজ অনুসরন যোগ্য না,কেউ অনুসরন করেও না,এমন কি আপনিও না।যদি বলেন দেখাতে পারি।কারন অনেক কাজ বর্তমান সভ্যতার সাথে যায় না,এমন কি দল্ডনীয় অপরাধ।