নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বান্দার ইস্তেগফার ও তাওবা আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়

০৮ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:১৪

তাওবাঃ
আল্লাহতায়ালা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং মহান আল্লাহ তাওবাকারীদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। কারণ আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে অত্যন্ত ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। মানবজাতি পাপকাজ করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হোক এটা আল্লাহতায়ালা চান না। আল্লাহতায়ালার দরবারে বান্দার তাওবা করা অধিক পছন্দনীয়। মানুষ অপরাধ করার পর আল্লাহতায়ালার নিকট তাওবা করা ও গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাকে তিনি অত্যধিক পঁছন্দ করেন। আল্লাহতায়ালা তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পুত পবিত্র করেন। তবে তাওবা কি বা তাওবা কবুল হওয়ার জন্য শর্তাবলী কি তা আমাদের জানা থাকা জরুরী। আল্লাহর হাবীব বিশ্বনবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তাওবা করার সঠিক নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ মু’মিন বান্দাদের সফলকাম হওয়ার জন্য আহ্বান করেন তাওবার মাধ্যমে। কারণ আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রভূ তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। যিনি প্রভূ তাঁর অন্যতম গুণ হল ক্ষমা করা। প্রতিটি মুসলিমকে মনে রাখতে হবে আল্লাহ আমাদের হিসাব নেয়ার আগে আমরা আমাদের নিজেদের হিসাব করে নিব। তাতে আমাদের হিসাব দেয়া সহজ হবে। যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন একবার অথবা সপ্তাহে বা অথবা কমপক্ষে মাসে একবার তাওবা করুন এবং আপনি আপনার হিসাব করুন। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, এমন কোন কাজ করছেন কি, যা সঠিক আক্বীদা পরিপন্থী/দ্বীনের স্তম্ভ সালাত কায়েমে আপনার কোন দুর্বলতা আছে কি? ইসলামের অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলি যথাযথভাবে আদায় করছেন কি? আপনি কোন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছেন কি? দুনিয়ার সফলতা এবং পরকালের অনাবিল শান্তি পাওয়ার আশা প্রত্যেকটি বনীআদমের হৃদয়ের গহিনে লুকিয়ে আছে। কিন্তু ইবলিস কি এমনিতেই তাদের ছেড়ে দেবে? সে আদম-সন্তানকে বিপথে নেয়ার জন্য সব সময় সরল পথে ওঁত পেতে বসে থাকে। যখনই কোনো মানুষ সৎকর্ম করতে করতে নাজাতের দারপ্রান্তে উপনীত হয়, ঠিক তখনই ইবলিস খপ করে ধরে তাকে টেনে নিয়ে যায় আপন ভুবনে, শয়তানি রাজ্যে। তাকে দিয়ে শিরক নামক মারাত্মক অপরাধটি পর্যন্ত করিয়ে ছাড়ে। শিরক এমন এক অপরাধ, যা মানুষের ইবাদতের প্রাসাদকে ভেঙে খান খান করে দেয়। ইহা মানুষকে নিক্ষেপ করে গোমরাহীর অতল গহিন অন্ধকারে। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত, আমাদের জানা-শোনার মধ্যে যেসব জগত রয়েছে এবং আমাদের জ্ঞানসীমার বাইরেও যে লক্ষ-কোটি জগত থাকতে পারে, এসবের নিরঙ্কুশ মালিক এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। তাঁর ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের মধ্যে অন্য কারও বিন্দুমাত্র অংশ নেই। আমরা সর্বদাই তাঁর করুণার পাত্র এবং অনুগ্রহের প্রত্যাশী। তিনি যখন, যেভাবে এবং যা চান তাই হয়ে থাকে। তিনি বলেন ‘তবু কি তারা কর্ণপাত করবে না? আর আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত বর্ধিত করে দেন আর কে আছে তোমাদের বিশ্রামের জন্য রাতকে নিয়ে আসতে পারে?’ (কাসাস : ৭১-৭২) মানব প্রকৃতি বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় সার্থকতা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর সমীপে মাথা নত করা, অন্য কারও কাছে নয়। কিন্তু কেউ যখন আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কারও কাছে মাথা নুইয়ে দেয় কিংবা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহকে ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের হকদার আছে, তখন সে মানবীয় সত্ত্বা থেকে বহুদূরে অবস্থান করে। ফলে তার অবস্থা হয়ে যায় একটি জীবন্ত লাশের ন্যায়। শয়তান তাকে অধঃপতনের গহিন সমুদ্রে ফেলে দেয়, সেখানে সে হাবুডুবু খেতে থাকে। তার উন্নত নেকআমল বরবাদ হয়ে যায়, ফলে তার সর্বশেষ ঠিকানা হয়ে যায় জাহান্নাম।
তাওবা কাহাকে বলেঃ
তাওবা শব্দের অর্থ : প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, অনুতাপ করা প্রভৃতি। পরিভাষায় : কোনো পাপকাজ সংঘটিত হওয়ার পর অনুতাপ-অনুশোচনা করে সেই পাপ কাজের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সেই পাপকাজ ছেড়ে ভালো কাজে ফিরে আসাকেই তাওবা বলে। খারাপ কাজ-গুনাহ, পাপাচার, অন্যায় অবিচার ও আল্লাহর নাফরমানি হতে ফিরে এসে, বান্দা নেক কাজ করার মাধ্যমে তার প্রভুর দিকে ফিরে আসাই তাওবা। অনেক অজ্ঞ বা মূর্খ লোকেরা মনে করে তাওবা শুধু মাত্র খারাব কাজ বা গুনাহের কাজ থেকে ফিরে আসার দ্বারাই হয়ে থাকে। তাদের এ ধরনের ধারণা মোটেও ঠিক না। বরং এখানে সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কথা হল, যে সব নেক আমল করার জন্য আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন তা ছেড়ে দেয়াও গুনাহ। যারা এ সব নেক আমালগুলো পালন করা ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া হতে তাওবা করা এবং ফিরে আসা, নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে তাওবা করা হতে আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ। অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর অনেক আদেশ, অন্তরের কার্যাদি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল বা যিকির ছেড়ে দেয়, অথচ তারা জানেই না যে এগুলো সবই আল্লাহর আদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এ গুলো ছেড়ে দেয়া বা এ সব আমল পালন করা হতে বিরত থাকা অপরাধ ও গুনাহ। অথবা জানা থাকলেও তারা তার পাবন্দি করে না এবং এগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে, তার পাপ হচ্ছে, তা থেকে ফিরে আসা ও তাওবা করা যে গুরুত্বপূর্ণ বা অতীব জরুরী তা তারা বিশ্বাস করে না। ফলে সত্যিকার জ্ঞান না থাকার কারণে তারা হয়ত পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত হয় অথবা অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। সত্যকে সত্য বলে জানা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থেকে তারা মন্দ পরিণতির অধিকারীই রয়ে গেল। মোট কথা, তাওবা বান্দার জীবনের শেষ ও শুরু। তবে তার প্রয়োজন যেমনিভাবে জীবনের শেষাংশে জরুরী অনুরূপভাবে জীবনের প্রথমাংশেও জরুরী। গুনাহগার বান্দা তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ নাফরমানী থেকে আল্লাহ দিকে পুনরায় ফিরে আসে। বান্দা যত গুনাহ করুক না কেন আল্লাহ কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা ও মাফ করেন। বান্দাহ গুনাহ যত বড় তাঁর রহমত এর চাইতেও বড়। তাই নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই।
তাওবার গুরুত্বঃ
ইস্তেগফার ও তাওবা আল্লাহর ইবাদত। ইস্তেগফার ও তাওবার কারনে গুনাহ মাফ হয়, বৃষ্টি বর্ষণ হয়, সন্তান ও সম্পদ দ্বারা সাহায্য করা হয় এবং জান্নাতের অধিকারী করা হয়। ইস্তেগফার ও তাওবার ফলে সর্বধিক থেকে শক্তি ও সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। আল্লাহতায়ালা বলেনঃ “তিনি তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন”। (হুদ : ৫২) ইস্তেগফার ও তাওবার ফলে সুখ-সমৃদ্ধি ও প্রাপ্য হক অর্জিত হয়। ইস্তেগফার ও তাওবার ফলে বালা-মুসিবত দুরীভূত হয়। আল্লাহতায়ালার কাছে ওই মু’মিন বান্দা প্রিয়, যে পাপকাজ করার পর মহান আল্লাহর দরবারে তাওবা করে। আর তাওবা করার পাশাপাশি পাপকাজ থেকে ফিরে আসে। পাপকাজ করার পর অনুতপ্ত হয়ে যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে পাপীদের মধ্যে উত্তম। তাওবা-এস্তেগফারের মর্যাদা আল্লাহ আরশ বহনকারী ফেরেশতাসহ অন্যান্য ফেরেশতাদের কাছেও অনেক বেশী। ফেরেশতারা নিষ্পাপ। তাদের দোয়া কবুল হয়। তাওবা করলে ফেরেশতারা তাওবাকারীর পরিবার ও সন্তানদেরকে বেহেশতে প্রবেশের জন্য দোয়া করেন। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণে আল্লাহতায়ালা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু এই পৃথিবীতে চলার পথে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে মানুষ অনেক ভুল করে বসে। ছোট ছোট গুনাহ করতে করতে অনেক সময় তারা জানা অজানা অনেক বড় বড় গুনাহ ও করে থাকে। অনেক মানুষ তাদের গুনাহের দিকে তাকিয়ে হতাশায় ভেঙ্গ পড়ে। আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির হতাশা কাটাতে তাওবার ব্যবস্থা করেছেন। তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ একজন মানুষকে নিস্পাপ করে দেন। মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহতায়ালার দরবারে বান্দার তাওবা অধিক পছন্দনীয়। কোন মানুষ অপরাধ করার পর যখন আল্লাহর কাছে তাওবা করে এবং তার দ্বারা সংঘটিত গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে অত্যধিক পছন্দ করেন, তার তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পবিত্র করেন। কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মহানআল্লাহ তাওবা কবুলকারী। এ জন্য বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ তাওবার প্রতি বেশি গুরুত্ব প্রদান করে তাঁর উম্মতদের তাওবার প্রতি উৎসাহিত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম) এ হাদীসের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওবার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে তার উম্মতদের তাওবা করার প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন নিষ্পাপ। তাঁর কোনো গুনাহ ছিল না। তারপরও তিনি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করতেন। তাঁর এই তাওবার মাধ্যমে তাঁর উম্মতদের শিক্ষা দিতেন ও (আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেয়ার জন্য) আল্লাহর প্রশংসা করতেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হাদীসে বলেছেন : মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবা কবুল করেন। (জামে আত তিরমিযী) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীস দ্বারা উম্মতের সব সময় তাওবা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ কার মৃত্যুযন্ত্রণা কখন শুরু হয় তা কেউ বলতে পারে না। তাই প্রতিটি মু’মিন বান্দার উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তোমরা কি পাপ কাজের মাধ্যমে ভ্রান্ত পথে অগ্রসর হয়েছো। তোমরা পাপ করার পর আল্লাহর দরবারে ফিরে এসো, আল্লাহ তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং জন্নাতে প্রবেশ করাবেন।
তাওবা কবুলের শর্ত সমূহঃ
মনে রাখতে হবে তাওবা শুধু করলেই কবুল হয়ে যায় না। মুখে ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারাই আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে দেন না। তাওবা কবুল হওয়া বা শুদ্ধ হওয়া জন্য একাধিক শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো পূরণ করা তাওবা কবুল হওয়া পূর্ব শর্ত। এ শর্তগুলোর বাস্তাবায়ন ছাড়া তাওবা কবুল হয় না। তাওবা করার জন্য নিম্মবর্ণিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে, তাহলেই আল্লাহ তায়ালা সেই তাওবা কবুল করবেন।
১.গুনার স্বীকৃতি : অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ক্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করতে হবে।
২.গুনার জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া : গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩.তাওবা করা ও মাফ চাওয়া : গুনাহর জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) “তাওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
৪.গুনাহ না করার ওয়াদা করা : গুনাহর কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তাওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো এ রকম হলে তাওবা হবে না।
৫.গুনাহ অন্তর থেকে ঘৃনা করা : অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
৬.কারো হক নষ্ট না করা : কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক্ক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। যেমন ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা, আপনি কাউকে গালি দিয়ে থাকলে অথবা কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করে থাকলে আপনার কর্তব্য হল, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যদি আপনি এমন কোন অন্যায় করেন যার মধ্যে অন্যের অধিকারের কোন সম্পর্কে নেই। উল্লেখ্য, তাওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না।
৭.অন্তরে আশা রাখা : অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তাওবা কবুল করবেন।
৮.ওয়াদার ওপর টিকে থাকার জন্য আল্লাহ সাহায্য প্রার্থনা করা : তাওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
৯.গুনাহ করার সাথে সাথে তাওবা করা : যে পাপ কাজ থেকে তাওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তাওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সাথে সাথে আবার তাওবা করে সেটা থেকে ফিরে আসতে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে সাথেই তাওবা করতে হবে, মৃত্যুপর্যন্ত।
১০.পূর্ণ এখলাস ও আন্তুরিকতার সাথে তাওবা করা : পূর্ণএখলাস ও আন্তরিকতারসাথে তাওবা করতে হবে। একে তাওবাতুন নাছুয়া বলে। পূর্ণএখলাস ও আন্তরিকতার সাথে তাওবা করলে আল্লাহ গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। জান্নাতে দাখিল করাবেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন-(তাওবাতুন নাছূহার বিনিময়ে) আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দকার্যগুলো মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রভাহিত। (তাহরীম : ০৮)
তাওবার ফলাফলঃ
ইমাম গাজালী রহ. তার কিতাব মিনহাজুল আবেদীনে’ লিখেন “অতপর হে! ইবাদতকারী তোমার ওপর কর্তব্য হল তুমি আল্লাহর নিকট তাওবা কর। আর তাওবা করবে তুমি দুইটি কারণে-
(এক ) আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য : তাওবার কারণে আল্লাহ আপনাকে তার আনুগত্য করা সহজ করে দিবেন এবং আপনার নেক কাজ করার তাওফীক ও সৌভাগ্য লাভ হবে। গুনাহের পরিণতি হল, গুনাহ মানুষকে বঞ্চিত করার অভিবাকত্ব করে এবং লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার দিকে ঠেলে দেয়। গুনাহতে আবদ্ধ লোককে আল্লাহর আনুগত্যের পথে চলা ও আল্লাহর দীনের খেদমতে অগ্রসর হতে গুনাহ বারণ করে। গুনাহের বোঝা ভারি হলে সকল প্রকার নেক আমল তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তার জন্য আর কোন নেক আমল করা সহজ হয় না ইবাদত বন্দেগীতে সে আর কোন উৎসাহ পায় না। আর সব চেয়ে বিপদজনক কথা হল, যারা সব সময় গুনাহে লিপ্ত থাকে তাদের অন্তর কালো হয়ে যায়, ফলে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। অন্তর ভাল মন্দের বিচার করতে অক্ষম হয়ে যায়, তাদের অন্তর পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে যায়। ফলে কোন ভাল কাজ তার অন্তর কবুল করে না। তখন একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সে আর কোন মুক্তি বা নাজাতের পথ খুজে পায় না। কোন কিছুতেই তৃপ্তি অনুভব করে না। সে নিজেকে অনিরাপদ মনে করে। নিজের জন্য কোথাও নিরাপদ স্থান খুঁজে পায় না এবং পায় না কোন আশ্রয় কেন্দ্র। পরিণতিতে ধাবিত হয় গভীর অন্ধকার ও ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে। ধীরে ধীরে গুনাহ তাকে ঈমান হারা হওয়া এবং শিরক ও কুফরের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আরো আশ্চযের্র বিষয় হল, যে ব্যক্তি দুর্ভাগা এবং যার অন্তর পাথরের চেয়েও বেশী কঠিন, তাকে কিভাবে আল্লাহর আনুগত্যের তাওফীক দেয়া হবে ? তাকে কিভাবে আহবান করা হবে কল্যাণের পথে ? অথচ সে গুনাহের কাজেই অবিচল, তার মধ্যে কোন অনুভূতি নাই। সে যে একজন অপরাধী ও অন্যায়কারী এ বিষয়ে তার মধ্যে কোন চেতনা জাগ্রত হয় না। সুতরাং তাকে কিভাবে কাছে আনা হবে যে নাপাকী ও দূর্গন্ধময় বস্তুর সাথে সর্বদা মাখামাখি করছে, গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে অহর্নিশ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে,তার মুখ থেকে দূর্গন্ধ বের হতে থাকে, আর সাথে সাথে তার কাছ থেকে দুই জন ফেরেশতা দূরে সরে যায়। তখন আর তার মুখ ও জিহবা আল্লাহর যিকিরের উপযোগী থাকে না। ফলে গুনাহে লিপ্ত থাকে এ ধরনের খুব কম লোকই আছে যারা পরর্বতীতে আল্লাহর আনুগত্যে ফিরে আসে এবং আল্লাহর ইবাদতে কোন স্বাদ আস্বাদন করে। যদি সে কোন দান-সদকা করে তা অনেক কষ্টে, এতে কোন স্বাদ উপভোগ করে না, আত্মার কোন তৃপ্তি হয় না এগুলো সবই হল গুনাহের পরিণতি এবং তাওবা না করার ফলাফল। একথাই সত্য যে, যদি আপনি দিনে রোজা এবং রাতে ইবাদত করতে না পার, তাহলে মনে রাখবেন আপনি একজন হাতে পায়ে কড়া পরিহিত শিকলাবদ্ধ লোক। আপনার গুনাহই আপনাকে এ পরিণতিতে টেনে এনেছে।
(দুই) ইবাদত বন্দেগী কবুল হওয়ার জন্য : আর দ্বিতীয় বিষয় হল, আপনাকে যে কারণে আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে তা হল, যাতে আল্লাহ আপনার ইবাদত বন্দেগীগুলো কবুল করেন। কারণ, পাওনাদার সাধারণত উপঢৌকন গ্রহণ করে না। গুনাহ হতে বিরত থাকা, গুনাহ হতে তাওবা করা এবং প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করা হল ফরয কাজ। আর অন্যান্য সকল ইবাদত তা সবই নফল। সুতরাং মূল পাওনা পরিশোধ ছাড়া আল্লাহতায়ালা আপনার থেকে কিভাবে উপঢৌকন গ্রহণ করবেন? আপনি কীভাবে তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বৈধ ও মুবাহ কাজ গুলি ছেড়ে দিবেন অথচ আপনি এখনো আল্লাহর নাফরমানী এবং নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত। আপনি কিভাবে আল্লাহকে ডাকবেন, তার সাথে মুনাজাত করবেন এবং তার প্রশংসা করবেন অথচ আল্লাহ আপনার উপর রাগান্বিত। মনে রাখতে হবে যারা আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত তাদের অবস্থা উল্লেখিত অবস্থার মোটেই ব্যতিক্রম নয়, তারা আল্লাহর অবাদ্ধতায় লিপ্ত অথচ তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করে, আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করে এবং তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।
তাওবাতুন নাছুহাঃ
মনে রাখতে হবে তাওবা হল মানুষের অন্তরের প্রচেষ্টা। অর্থাৎ মানুষের অন্তরে অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া এবং নিজেকে গুনাহের কারণে অপরাধী মনে করা যা বান্দার অন্তরে কখনো কখনো জাগ্রত হয়ে থাকে। অন্তরে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার অর্থই হল তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। আর আত্মাকে সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি হতে বিরত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা সফলকাম হতে পারে। জনৈক আলেম তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, আল্লাহর অসোন্তোষ ও পাকড়াওয়ের ভয়ে গুনাহের ইচ্ছা ছেড়ে দেয়া এবং সমপর্যায়ের যে সব গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু সংঘটিত গুনাহ নয়, যদি কোন গুনাহের ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে থাকে তা থেকে ফিরে আসাও এক ধরনের তাওবা। কারো তাওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বুঝবেন ? অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেনঃ কারো যদি তাওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থাৎ পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে তার তাওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। কিন্তু কারো যদি এমন না হয় অর্থাৎ তাওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তাওবাতে ক্রুটি আছে। তার উচিত হতাশ না হয়ে বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস নিয়তে তাওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
ইস্তেগফার ও তাওবার সময়ঃ
ইস্তেগফার ও তাওবা সব সময় করা যায়, কিন্ত গুনার পর ইস্তেগফার ও তাওবা করা ওয়াজিব এবং নেক আমল করার পর মুস্তাহাব। যেমন সালাত শেষে তিনবার ইস্তেগফার করা, হজ্ব শেষে ইস্তেগফার করা, বিশেষ করে পবিত্র রমযান মাসে বেশি বেশি করে ইস্তেগফার ও তাওবা করা ইত্যাদি। তবে ক্ষমা প্রার্থনার উত্তম সময় হলো ফরজ নামাজ শেষে ও শেষ রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। তখন চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার ও তাওবা করাই উত্তম। কারণ ওই চোখের পানি আল্লাহর কাছে অত্যান্ত প্রিয়। রমযান মাসে ইফতারী ও সেহরীর সময় ইস্তেগফার ও তাওবা করা ফজীলত বেশী। কারণ এ সময় আল্লাহ ইস্তেগফার ও তাওবা কবুুল করেন। তাদের ফরিয়াদ শুনেন। মনের আশা আঙ্খাংকা পুরণ করে দেন।
ইস্তেগফার ও তাওবার পার্থক্যঃ
ইস্তেগফারঃ ইস্তগেফার’ শব্দরে র্অথ কৃত পাপর্কমরে জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা র্প্রাথনা করা । ক্ষমা চাওয়ার। উদ্দেশ্য বান্দার আসতাগফিরুল্লাহ বলা।
তাওবাঃ আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আশা, গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, গুনাহ না করার
ওয়াদা করা, ওয়াদার ওপর টিকে থাকা ও তার প্রতি মনোনিবেশ করা।
তাওবা সর্ম্পকে কুরআনের ভাষ্যঃ
১.তিনি সেই সত্তা যিনি বান্দার তাওবা কবুল করেন, তাদের গুনাহ মাফ করেন এবং তোমরা যা করো সবকিছু তিনি জানেন। (শুরা : ২৫)
২.কেউ খরাপ কাজ করে কিংবা নিজের উপর জুলুম করে যদি আল্লাহ কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও মেহেরবান দেখতে পাবে। (নিসা : ১১০)
৩.তাওবা-এস্তেগফারকারীদের জন্য স্বয়ং আল্লাহ আরশ বহনকারী ফেরেশতা ও এর চারপাশের ফেরেশতারা এই বলে দোয়া করে যে, যারা তাওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। হে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদেরকে আপনার প্রতিশ্রুতি চিরকাল বসবাসের জান্নাতে প্রবেশ করান। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রশালী, প্রজ্ঞাময় এবং আপনি তাদেরকে অমঙ্গল ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন। আপনি যাকে সেদিন অমঙ্গল থেকে রক্ষা করেন, তাদের প্রতি অনুগ্রহই করেন। এটাই মহাসাফল্য। (মোমিন : ৭ থেকে ৯)
৪.কিন্তু যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে এবং ভাল কাজ করবে আল্লাহ তাদের খারাপ কাজসমূহকে ভাল কাজ দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আর যারা তাওবা করে এবং নেককাজ করে আল্লাহ প্রতি তাদের তাওবা সত্যিকারের তাওবা। (ফোরকান : ৭০ ও ৭১)
৫.তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাঁর নিকট তাওবা কর, তোমার প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়। (হুদ : ৯০)
৬.তোমরা প্রতিপালকের দয়া করা তাঁর কর্তব্য বলে স্থির করেছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞানতাবশত যদি মন্দ কাজ করে তারপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে (নিজের অবস্থার) তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আন’আম)
৭.তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে এবং তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, আমি এখন তাওবা করছি। তাওবা তাদের জন্যও নয়, যারা মারা যায় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা, যাদের জন্য আমি মর্মন্তদ শাস্তির ব্যবস্থা করেছি। (নিসা : ১৮)
৮.অত:পর তারা কি আল্লাহর দিকে তাওবা করে ফিরে আসবে না এবং তাদের গোনাহ সমূহের জন্যে ক্ষমা চাইবে না? অথচ আল্লাহ তো ক্ষমাশীল এবং মেহেরবান। (মায়েদা : ৭৪)
৯.কিন্তু তারা তাওবা করে ও নিজেদের কর্মনীতির সংশোধন করে নিবে এবং যা গোপন করছিল তা প্রকাশ করে তাদেরকে আমি মাফ করে দিব, প্রকৃতপক্ষে আমি তাওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু। (বাকারা : ১৬০)
১০.(তাওবাকারীর বৈশিষ্ট্য) আল্লাহ দিকে বার বার প্রত্যাবর্তনকারী তার বন্দেগী পালনকারী, তার প্রশংসা বাণী উচ্চারণকারী, তার জন্য জমীনে পরিভ্রমণকারী, তার সম্মুখে রুকু ও সিজদায় বিনীত, ভাল কাজের আদেশদানকারী, খারাপ কাজে বাধা দানকারী এবং আল্লাহ নির্দিষ্ট সীমা রক্ষাকারী এবং হে নবী এই মু’মিন লোকদের সুসংবাদ জানিয়ে দিন। (তাওবা : ১১২)
১১.আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী করুনাময়। (বাকারাহ : ১৯৯)
১২.অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ইরশাদ করেন : আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর। (ফুস্সিলাত : ৬)
১৩.তিনি বলেন ‘তবু কি তারা কর্ণপাত করবে না? আর আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত বর্ধিত করে দেন আর কে আছে তোমাদের বিশ্রামের জন্য রাতকে নিয়ে আসতে পারে?’ (কাসাস : ৭১-৭২)
১৪.হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা খালেস দিলে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো। আশা করা যায়,আল্লাহ তোমাদের ছোটখাটো ক্রটিবিচ্যুতি মার্জনা করে দেবেন এবং সেই জান্নাতে স্থান দেবেন। যাঁর পাদদেশ দিয়ে ঝরণা ধারা প্রবাহিত। (তাহরীম : ৮)
১৫.আল্লাহর কাছে তাদের তাওবাই সত্যিকারের তাওবা, যারা অজ্ঞতাবশত খারাপ কাজ করে এবং সাথে সাথেই তাওবা করে। আল্লাহতায়ালা তাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তো মহাজ্ঞানী ও হেকমতওয়ালা। (নিসা : ১৭)
তাওবা সর্ম্পকে হাদীসের ভাষ্যঃ
১.বোখারী শরীফে একটি ঘটনার উল্লেখ আছে। ঘটনাটি হলো, আগের উম্মাতের এক ব্যক্তি ৯৯টি হত্যার গুনাহ মাফ সম্ভব কিনা তা জানার জন্য একজন আলেমের কাছে যান। আলেম ব্যক্তিটি ‘না’ বলেন। তখন হত্যাকারী একেও হত্যা করে হত্যার সংখ্যা ১শত পূর্ণ করেন। তারপর ১শ’ হত্যার গুনাহ মাফ সম্ভব কিনা তা জানার জন্য আরেক আলেমের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথে তার মৃত্যু উপস্থিত হলে নেক ও পাপী লোকের মৃত্যুদানকারী ফেরেশতাদের মধ্যে কে তার রূহ হরণ করবে তা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে তার তাওবার গন্তব্যস্থল কাছে না প্রস্থান স্থল কাছে তা মাপার নির্দেশ আসে। জরীপে তাওবার স্থান নিকটবর্তী হওয়ায় নেক লোকের রূহ হরণকারী ফেরেশতারা তার রূহ হরণ করেন। এই ঘটনা তাওবার মর্ম ও মাহাতœ্যকে কি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
২.হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহ কাছে তাওবা কর এবং গুনাহ মাফ চাও। আমি প্রতিদিন একশ বার তাওবা করি। (সহীহ মুসলিম)
৩.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যার আমলনামায় অধিক এস্তেগফার থাকবে তার জন্য সুখবর। (ইবনে মাযাহ)
৪.সাদ্দাদ বিন আউস রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন বন্দার জন্য সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার হচ্ছে : যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দিনের বেলা এটা পাঠ করে, অতঃপর সে দিনেই সে সন্ধার পূর্বে মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তা পূর্ণ বিশ্বাস রেখে রাতের বেলা এটা পাঠ করে, অতঃপর সে রাতেই সে সকাল হওয়ার পূর্বে মারা যায়, সে জান্নাতবাসী। (সহীহ মুসলিম)
৫.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে সাইয়েদুল এস্তেগফার পড়ে এবং এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই দিনে মারা যায়, সে বেহশতবাসী হবে; আর যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস সহকারে তা পড়ে সকাল হওয়ার আগে রাত্রে মারা যায, সেও জান্নাতবাসী হবে। (সহীহ আল বোখারী)
আল্লাহুমা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়ানা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াহদিকা মাসতাত্ব’আতু ওয়া আউ’যুবিকা মিনশাররি মাছানা’তু আবুউ লাকা বিনিহমাতিকা আলাইয়া ওয়াআবুউ বিজানবি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা।
৬.হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। মৃত্যুর আগে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্মের বাক্যটি অধিক হারে উচ্চারন করতেন : “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু এলাহি।” (সহীহ মুসলিম)
৭.হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা গুনাহ করার পর ক্ষমা ভিঙ্খার জন্যে যখন আল্লাহ দিকে ফিরে যায় তখন আল্লাহ সে ব্যক্তির তাওবার দরুন ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন, যে ব্যক্তি নিজের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উট কোন ময়দানে হারিয়ে যাবার পর হঠাৎ তা পেয়ে যায়। (এ ব্যক্তি উট প্রাপ্তির পর কত যে খুশী হবে তা অনুমান করা সম্ভব নয়, অনুরূপভাবে বান্দা তাওবা করলে আল্লাহ খুশী হবে। বরং আল্লাহর খুশী বান্দার খুশির মোকাবিলার আরো অধিক হয়ে থাকে। কেননা তিনি হলেন দয়া ও করুনার মূল উৎস)। (সহীহ মুসলিম)
৮.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআল্লাহ পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন। কোন বান্দা গুনাহ করে এসে বলে, হে আল্লাহ, আমার গুনাহ মাফ করুন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে, সে জেনেছে যে তার একজন পালনকর্তা আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন। তারপর সে আবারও গুনাহ করেছে এবং বলেছে, হে আল্লাহ আমার গুনাহ মাফ করুন। আল্লাহ জবাবে বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করেন। আল্লাহ বলেন, তুমি যা ইচ্ছা করো, আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিলাম। (সহীহ মুসলিম)
৯.অল্লাহর জন্যে সদকা এবং বেশী বেশী তাওবা জাহান্নাম থেকে নাজাতের কারণ : ইবনে উমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে নারীগণ, তোমরা সদকা কর এবং বেশী বেশী তাওবা কর। কারণ, আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী দেখেছি। তাদের থেকে এক মহিলা বলল : কী কারণে আমরা অধিকাংশ জাহান্নামী? তিনি বললেন : তোমরা বেশী বেশী লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। আমি তোমাদের মত আকল ও দ্বীনে ক্রুটিপূর্ণ কাউকে দেখিনি, যে বিজ্ঞলোকদের উপর বিজয়ী হয়। সে বলল : আমাদের আকল ও দ্বীনে ক্রুটি কী? তিনি বললেন, দুজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান, এবং তোমরা কতক দিন অবস্থান কর, যাতে তোমরা নামায আদায় কর না। (সহীহ মুসলিম)
১০.তাওবা সবচেয়ে বড় যিকর। বান্দার উচিত এ যিকর বেশী বেশী করা। হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। ‘আল্লাহর শপথ’ প্রতি দিন আমি সত্তুরবারের চেয়েও অধিক আল্লাহর ইস্তিগফার ও তাওবা করি। (সহীহ মুসলিম)
নিষ্পাপ নবী দিনে ৭০ বারের বেশী তাওবা করলে আমাদেরমত পাপী উম্মাহর কত বার তাওবা করা দরকার তা ভেবে দেখা দরকার। দিনে কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০ এবং আরো বেশী তাওবা করা উচিত।
১১.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : অনুতপ্ত হওয়াই হলো তাওবা। (মুসনাদে আহমেদ ও ইবনে মাজাহ)
১২.নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ নিকট তাওবা করবে ঘড়ঘড়া উঠার পূর্বে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। (মুসনাদে আহমেদ ও জামে আত তিরমিযী)
১৩.রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের পরও তিন বার ইস্তিগফার করতেন। (সহীহ মুসলিম)
১৪.হযরত ইবনে আব্বাস রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইস্তেগফারকে অবশ্যম্ভাবী করবে, আল্লাহ তাকে সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করবেন এবং সকল পেরেশানী থেকে তাকে নাজাত দেবেন আর এমন জায়গা থেকে রিযিক দেবেন, যার কল্পনা পর্যন্ত সে করেনি।”
১৫.রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতের শেষ সময়ে আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার দিকে নাযিল হন এবং বলেন, ডাকার জন্যে কেউ আছে কি যার ডাক আমি শুনব, চাওয়ার জন্যে কেউ আছে কি যাকে আমি দেব, গুনাহ মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি যার গুনাহ আমি মাফ করব? (সহীহ মুসলিম)
১৬.হযরত আসরার ইবনে ইয়াসার আল মাজানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহ কাছে তাওবা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন একশত বার তাওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম)
১৭.হযরত আবু আব্দুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তার বান্দার তাওবা কবুল করেন। (জামে আত তিরমিযি)
খারাপ কাজ তথা পাপ করার সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করা। তাদের তাওবাই প্রকৃত তাওবা, যারা সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করে। আর আল্লাহ এমন মু’মিন বান্দাদের তাওবা কবুল করেন। মু’মিন বান্দাদের সত্যিকারভাবে সহী নিয়্যাতে অন্তরের অন্তস্থল থেকে একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করলে দুনিয়ার জীবনে ঘটে যাওয়া অন্যায় আল্লাহ মাফ করে দেবেন এবং মাফ করার পর জান্নাতের মাঝে স্থান দেবেন, যাঁর পাদদেশে নহর প্রবাহিত। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হলো, আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদেরকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন। আর আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন তাদের তাওবা যেন তিনি কবুল করেন। আমীন।




মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



আল্লাহ সময় করে আপনার সাথে কথা বলবেন একদিন।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সকলকে সকল গুনাহ থেকে বিরত থাকার তওফিক দান করুন এবং ইচছা-অনিচছায় গুনাহ হয়ে গেলে-করে ফেললে তওবা করার সুযোগ প্রদান করুন।আমাদের সকলের তওবা কবুল করুন।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:১৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আল্লাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকতে বলে নি বরং বলেছে, তোমরা গুনাহ না করলে আমি অন্য জাতি সৃষ্টি করতাম।বরং তিনি বলেছেন আমার সাথ কাউকে শরিক করো না।
সহীহ: মুসলিম ,২৭৪৯

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: ওখেই।

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৫৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার পোস্ট তথ্যবহুল। তবে এতো দীর্ঘ ধর্মীয় ( ভ্রমণ বা অন্যান্য অনেক বিষয়ে এই কথা প্রযোজ্য না) পোস্ট কেউ পড়ার ধৈর্য রাখতে পারে না। প্যারা করে লিখলে পড়তে সুবিধা হয়। তওবা আর ইস্তেগফারের পার্থক্যের ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করলে ভালো হয়।
আল্লাহ এতো মহান যে হাশরের দিনে আল্লাহ চাইলে কোন বান্দার গুনাহ ( আল্লাহর হক সংশ্লিষ্ট) নিজের ইচ্ছায় মাফ করে দিতে পারেন ( তওবা না করা সত্ত্বেও)। তবে শিরক করার গুনাহ আল্লাহ এভাবে মাফ করবেন না। তাওবা ছাড়া শিরকের গুনাহ মাফ হয় না।

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩২

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সকলকে সকল গুনাহ থেকে বিরত থাকার তওফিক দান করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.