![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাত্যহিক জীবনে প্রত্যেক মুসলমান কিছু না কিছু আল্লাহ তায়ালার কাছে চেয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে কারও দোয়া কবুল হয়, কারো বা হয় না। আর এই দোয়া কবুল না হওয়ার পিছনে অবশ্যই কোন না কোন কারণ রয়েছে। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে হালাল উপার্জন ও সৎপথে রোজগার একটি প্রশংসনীয় কাজ। মহান আল্লাহর কাছে প্রিয় একটি আমল হচ্ছে তাঁর কাছে দোয়া করা। যারা আল্লাহর কাছে চায় আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। আর যারা আল্লাহর কাছে চায় না তিনি তাদের অপছন্দ করেন। এ জন্য হাদীসে দোয়াকে ইবাদত বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (মুমিন, আয়াত : ৬০) এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, হে মানবমন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ করো। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (বাকারা : ১৬৮) অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘নিজ হাতের উপার্জিত খাবারই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট। আল্লাহর নবী দাউদ (আঃ) নিজ হাতের কামাই খেতেন। ’(বোখারী) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি) দোয়া সব ইবাদতের মূল। দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি পরিহার করা। হারাম উপার্জনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে যতই দোয়া করা হোক, তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না শরিয়তের বিধান হলো, হারাম উপার্জনকারীর কোনো আমল আল্লাহ তা’য়ালার কাছে কবুল হয় না। তার দোয়া কবুল হয় না। কোনো বরকত থাকে না তার সম্পদে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘হে সাদ! পবিত্র খাবার গ্রহণ করো, তাহলে তোমার দোয়া কবুল হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ; বান্দা যখন তার মুখে হারাম উপায়ে কোনো খাবার গ্রহণ করে, আল্লাহ ৪০ দিন তার কোনো আমল কবুল করেন না। আর যে ব্যক্তি বেড়ে ওঠে অবৈধ সম্পদ আর হারাম উপার্জিত অর্থে, তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উত্তম।’ অনেক মুসলমান আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করার পরও প্রত্যাশিত বিষয় না পেলে দোয়া করা ছেড়ে দেন। হতাশ হয়ে যান। অধৈর্য হয়ে পড়েন।
হাদীসে এসেছে, ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করেন।
(১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন।
(২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন।
(৩) অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদ তার থেকে দূরে করে দেন।
সকল সময়েই আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করার জন্য সর্বদা জাগ্রত আছেন। আমরা যদি এরপরও তার কাছে ক্ষমা না নিয়ে পৌঁছাতে না পারি তাহলে তা হবে আমাদের জন্য পরম দুর্ভাগ্য। আমাদের দোয়া কবুল হয় না। কেননা দোয়াকারী এমন কিছু চান যা তার জন্যে আদৌ কল্যাণকর নয়। অনেক সময় দোয়াকারী নিজেই অনুধাবন করেন যে, তিনি দোয়ার মাধ্যমে যা প্রার্থনা করেছিলেন তা ভুল ছিল। 'যেমন: কোনো অসুস্থ ব্যক্তি অথবা ছোট শিশু এমন কোনো খাদ্যের আবেদন করে যা তার জন্যে ক্ষতিকর, অথচ সে তা বোঝে না।' সুতরাং এমন অবস্থায় আল্লাহ তা’আলা দোয়া কবুল করেন না।
নিম্নে দোয়া কবুল না হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলঃ
১. হারাম থেকে বেঁচে থাকাঃ
দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি পরিহার করা। হারাম উপার্জনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে যতই দোয়া করা হোক, তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না।
২. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাঃ
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা একটি বড় ধরনের পাপ (অপরাধ)। এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
৩. আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়াঃ
হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তা’আলা শিগগির তোমাদের ওপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া গ্রহণ করবেন না। (তিরমিজি)
৪. আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম-কানুনের বাইরে চাওয়াঃ
দোয়ার মাধ্যমে এমন কিছু চাওয়া ঠিক নয় যা আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মের বহির্ভূত। 'যেমন, গাছ রোপণ না করেই ফলের জন্যে দোয়া করা। বিবাহ না করে সন্তানের দোয়া করা ' এ ধরনের দোয়া প্রাকৃতিক নিয়মের বহির্ভূত। কাজেই তা কবুল হওয়ার আশা রাখা আদৌ যুক্তিসংগত নয়।
৫. নিষ্ঠুরতা ও নির্দয়তাঃ
কঠোর, নির্মম, নির্দয় ও নিষ্ঠুরদের দোয়া আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। এ প্রকৃতির মানুষ অহংকারী হয়ে থাকে। ইখলাসের সহিত আল্লাহকে ডাকে না। নির্দয় মানুষের মনকে আল্লাহ তা’আলা পাথর কিংবা তার চেয়েও শক্ত বলে ঘোষণা করেছেন: এর (ঘটনার) পরও তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল, তা পাথর অথবা তদপেক্ষা কঠিন! পাথরের মধ্যে কতক এমনও আছে যা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়। আর কতক এমনও আছে যা বিদীর্ণ হওয়ার পর তা থেকে পানি নির্গত হয়। আবার কতক এমনও আছে যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে! আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে বেখবর নন।(বাকারা, ৭৪।)
৬. দোয়া কবুলে কল্যাণ না থাকাঃ
যেসব দোয়ায় বান্দার কল্যাণ থাকেনা সেসব দোয়া আল্লাহ তা’আলা কবুল করেন না। আল্লাহ তা’আলা তাঁর মনোনীত ও অমনোনীত উভয় বান্দাদের পার্থিব কল্যাণ দান করেন। কিন্তু আখেরাতের কল্যাণ শুধুমাত্র মনোনীত বান্দাদের দান করেন। মোমিন ব্যক্তি স্বীয় অজান্তে পার্থিব জীবনে এমন কিছু চেয়ে থাকেন যা তার জন্যে অকল্যাণকর। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা তাকে তা দেন না। অপরপক্ষে পারলৌকিক জীবনের জন্যে যা চান তাই দেন। আর কাফেরদেরকে পার্থিব জীবনে যা চায় তা চাওয়ার পূর্বেই দিয়ে থাকেন, কিন্তু বেহেস্তে তাদেরকে কিছুই দেবেন না।
(বিহারুল আনওয়ার)
৭. অন্যের প্রতি অত্যাচার করাঃ
অন্যের হক নষ্ট করা এবং অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করা, দোয়া কবুল না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।আল্লাহ বলেন- জালিমদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই। (আশশুরা:৮)
আমিরুল মোমেনিন হযরত আলী রাঃ বলেন: আল্লাহ তা’আলা হযরত ইসা (আঃ) প্রতি এমর্মে ওহি নাজিল করেন যে, হে ইসা! বনিইসরাইলকে বলেন, "যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমার কোনো একটি প্রাণীর প্রতিও জুলুম করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমিও তাদের কোনো দোয়া কবুল করব না!" (এদ্দাতুদ্ দায়ি)
৮. অন্যমনস্ক হয়ে দোয়া করা :
দোয়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করা। আল্লাহ অবচেতন মনের দোয়া গ্রহণ করেন না। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। (তিরমিজি)
৯.দ্রুত ফল না পাওয়ায় দোয়া বন্ধ করে দেওয়া:
দোয়ার পর আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখো যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন। নেতিবাচক কোনো চিন্তা না করা। অন্যথায় এ দোয়া বিফল হয়ে যেতে পারে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। (বুখারী) দোয়া একপ্রকার এবাদত। এবাদত কবুল হওয়ার শর্ত হচ্ছে হারাম থেকে দূরে থাকা। অনুরূপভাবে দোয়া কবুলের জন্যেও শর্ত হচ্ছে হারাম ভক্ষণ না করা। আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসিতে বলেন: তোমার দায়িত্ব হলো দোয়া করা। আর আমার দায়িত্ব হলো কবুল করা। হারাম ভক্ষণকারীর দোয়া ব্যতীত অন্য কোনো দোয়াই পর্দার আড়ালে থাকে না।
১০. গোনাহে লিপ্ত হওয়াঃ
আল্লাহর নিকট বান্দা এমন কিছু চেয়ে দোয়া করে যে, যদি তাকে সেটা দেওয়া হয় তাহলে পরবর্তীতে সে উক্ত বস্তুর মাধ্যমে গোনাহে লিপ্ত হবে। এ কারণে আল্লাহ তা’আলা ফেরেস্তাদের বলেন: 'তার চাহিদা পূরণ করো না! কেননা সে গুনাহের দিকে অগ্রসর হবে।' এ কারণে আমার পক্ষ থেকে দোয়া গ্রহণ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। (বিহারুল আনওয়ার)
১১. এছাড়াও
একদিন ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (মৃত্য:১৬২ হিজরী) (রাহিমাহুল্লাহ) বসরা শহরের একটি বাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকজন তার পাশে সমবেত হয়ে জিজ্ঞাস করল:
হে আবু ইসহাক ! আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা কুরআনে বলেন: “আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব” কিন্তু আমরা অনেক প্রার্থনা করার পরও আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছেনা। সে (ইব্রাহিম) বললেন, “ওহে বসরার অধিবাসী, দশটি ব্যাপারে তোমাদের অন্তর মরে গেছে"।
প্রথম: তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে অবগত কিন্তু তার প্রদত্ত কর্তব্যসমূহ পালন কর না।
দ্বিতীয়: তোমরা কুরআন পড় কিন্তু সে অনুযায়ী আমল কর না।
তৃতীয়: তোমরা দাবী কর যে রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাস কিন্তু তার সুন্নাহকে পরিত্যাগ কর।
চতুর্থ: তোমরা নিজেদেরকে শয়তানের শত্রু হিসাবে দাবী কর কিন্তু তোমরা তার পদাংক অনুসরন কর।
পঞ্চম: তোমার জান্নাতে যেতে উদগ্রীব কিন্তু তার জন্য পরিশ্রম কর না।
ষষ্ঠ: তোমরা জাহান্নামের ভয়ে আতঙ্কিত কিন্তু পাপের ম্যাধমে প্রতিনিয়ত তার নিকটবর্তী হচ্ছ।
সপ্তম: তোমরা স্বীকার কর মৃত্য অনিবার্য কিন্তু তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর না।
অষ্টম: তোমরা সর্বদা অন্যর দোষ বের করতে সচেষ্ট কিন্তু নিজের দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে উদাসীন।
নবম: তোমারা আল্লাহ’র অনুগ্রহ উপভোগ কর কিন্তু তার জন্য শুকরিয়া আদায় কর না।
দ্বাদশ: তোমরা মৃতদেহ’র দাফন সম্পন্ন করার পর তার থেকে শিক্ষা গ্রহন কর না।
২| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: অসহায় দুর্বল মূর্খ মানুষ কাজ না করে দোয়ায় চায়। হাস্যকর।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:৪০
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: দোয়া করেন ঠিক আছে।কিন্তু দোয়ায় কোন কাজ হয় না এটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমানীত।এসব অনেক আগে মীমাংসিত,নতুন করে আলোচনায় আনা অপ্রয়োজনিয়।