নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমল

২১ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:০৩

‘আমল’ আরবী শব্দ। এর বাংলা হলো কাজ। মানুষ কোনো কাজের চিন্তা করলে ঐ কাজের সূচনা হয়। সে কাজের জন্য ইচ্ছা ও চেষ্টা করা হলে তাকে আমল বা কাজ বলা হয়।
তাকদীর সম্পর্কীয় আলোচনায় আমরা জেনেছি যে, কোনো কাজের ইচ্ছা ও চেষ্টা করা হলেই কাজটি সমাধা না হলেও তা কাজ করা হয়েছে বলে ধরা হবে। কারণ, কাজটি সমাধা করা আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে, এটা মানুষের ইখতিয়ারে নেই। কাজটি সমাধা না হলেও কাজের ফল আখিরাতে দেওয়া হবে। কাজটি ভালো হলে পুরস্কার পাবে, মন্দ হলে শাস্তি পাবে।
মানুষ শুধু ইচ্ছা ও চেষ্টার জন্য দায়ী। কোনো কাজ কারো হাতে যদি ইচ্ছা ও চেষ্টা ছাড়াই সমাধা হয়ে যায়, তাহলে এর জন্য তাকে দায়ী করা হয় না। যেমন— এক লোক পাখি শিকারের জন্য গাছে গুলি চালাল। গাছে যে একজন মানুষ ছিল তা সে জানত না। গুলি লেগে লোকটি মারা গেল। মেরে ফেলার কাজটি সমাধা হয়ে গেল। কিন্তু এ কাজের ইচ্ছা তো সে করেনি এবং এ উদ্দেশ্যে সে চেষ্টাও করেনি। আদালতে এ কথা প্রমাণিত হলে লোকটির কোনো শাস্তি হবে না। অথচ মেরে ফেলার কাজটি কিন্তু হয়েই গেল।
আল্লাহ তা‘আলার বড়ই মেহেরবানী যে, যদি কেউ কোনো ভালো কাজ করার নিয়ত বা ইচ্ছা করে, কিন্তু এর জন্য চেষ্টা করার সময় বা সুযোগ না পায়, তবুও তিনি তাকে কিছু পুরস্কার দেবেন। আর যদি সে মন্দ কাজের নিয়ত করে, তাহলে চেষ্টা না করা পর্যন্ত তাকে কোনো শাস্তি দেওয়া হবে না, বরং চেষ্টা না করার কারণে তাকে কিছু পুরস্কার দেওয়া হবে বলে রাসূল (সা.) বলেছেন।
মানুষের আমলের হিসাব মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হয় না
আদালতে আখিরাতে যখন মানুষের আমলনামা (দুনিয়ায় যা করেছে তার হিসাব) দেওয়া হবে, তখন যারা নেক আমল করেছে তাদের ডান হাতে এবং যারা বদ আমল করেছে তাদের বাম হাতে দেওয়া হবে। যারা আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা মতো চলেছে তারা নেক আমল করেছে বলে গণ্য হবে। আর যারা এর বিপরীত চলেছে তারা বদ আমল করেছে বলে ধরে নেওয়া হবে।
আমলনামা হাতে পেয়ে নেক লোক ও বদ লোক সবাই দেখবে যে, দুনিয়ায় তারা যে পরিমাণ কাজ করেছে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি কাজের হিসাব সেখানে লেখা আছে। তখন সবাই আল্লাহকে ডেকে বলবে, আমরা তো এত কিছু করিনি, আমাদের হিসাবে এত আমল কেমন করে লেখা হলো? জবাবে আল্লাহ বলবেন, দুনিয়ায় বেঁচে থাকাকালে তোমরা যা কিছু করেছ তা তো লেখা আছেই; মৃত্যুর পরও তোমাদের আমল বন্ধ হয়নি। তোমরা অন্যদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছ, তোমাদেরকে করতে দেখে যারা করতে শিখেছে, তোমরা যাদেরকে করতে উৎসাহ দিয়েছ, তারা যা আমল করেছে তাও তোমাদের আমলনামায় যোগ হয়েছে। তোমাদের মৃত্যুর পরও তোমাদের আমলের হিসাব জারি ছিল। এ কথা নেক ও বদ উভয় রকমের আমলের বেলায়ই সত্য।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাজের পথ দেখায় সে তার মতোই, যে কাজ করে।’ যে কাজ করে তার আমলনামায় যেমন সওয়াব বা গুনাহ লেখা হবে, যে ওই কাজের পথ দেখায় তার আমলনামায়ও তা যোগ হবে। আমার চেষ্টায় যদি কোনো বেনামাযী নামাযী হয়ে যায়, তাহলে সারা জীবনে সে যত নামায আদায় করেছে, এর নেকী ওই লোকের আমলনামায় যা হবে, আমার আমলনামায়ও তা-ই লেখা হবে। তাই মৃত্যুর পরও আমল জারি থাকে।
সহীহ্ নিয়ত ছাড়া নেক আমলও কবুল হয় না
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নিয়ত অনুযায়ীই আমলকে বিবেচনা করা হয়।’ কোনো আমল দেখতে যত ভালো বলেই মনে হোক, কী নিয়তে কাজটি করা হয়েছে এর হিসাব নিয়েই আল্লাহ ওই কাজটিকে কবুল করবেন।
হাদীসে আছে, হাশরের দিন এমন এক লোককে ডাকা হবে, যে জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়েছে। তাকে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, দুনিয়ায় আমার জন্য তুমি কী করেছ? সে বলবে, আমি তোমার দীনের জন্য জিহাদ করে আমার জান কুরবান করে দিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। তুমি এ নিয়তে জিহাদ করেছ যে, লোকেরা তোমাকে বীর বলবে, বাহাদুর বলবে। তোমার ঐ নিয়ত আমি দুনিয়ায়ই পূরণ করে দিয়েছি। লোকেরা তোমাকে বীর বলেছে। আমার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার নিয়ত তোমার ছিল না। তাই তোমাকে দোযখে দেওয়া হলো।
এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে? লোকটি জিহাদের ময়দানে জান দিয়ে দেওয়ার পরও তাকে দোযখে যেতে হলো। এর একমাত্র কারণ, তার নিয়ত সহীহ্‌ ছিল না। প্রমাণ হলো, খাঁটি নিয়ত ছাড়া জিহাদের ময়দানে শহীদ হলেও কোনো পুরস্কার পাওয়া যাবে না। তাই আমলের ব্যাপারে নিয়তের বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি। নিয়ত সহীহ্‌ না হলে বড় নেক আমলেরও কোনো দাম নেই। তাহলে সহীহ্‌ নিয়ত সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা দরকার।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ঐ লোকই বুদ্ধিমান, যে তার নাফ্‌সকে দমন করে এবং যে কোনো কাজ করলে এর ফল আখিরাতে কী পাবে সে হিসাব করেই করে।’ দুনিয়ায় নগদ কী ফল পাবে সে হিসাব করে কাজ করা একেবারেই বোকামি। যদি কেউ আখিরাতের হিসাব করে কাজ করে তাহলে— মিথ্যা কথা বলা, ওজনে কম দেওযা, ঘুষ নেওয়া ইত্যাদি কোনোটাই করতে সে সাহস করবে না।
নিয়তকে খাঁটি করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে— আমি যে নেক আমলই করি, তা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি (খুশি) ও আখিরাতের সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে করছি কি-না। নিয়ত সহীহ্‌ হলেই আল্লাহ আমাদের আমল কবুল করবেন ও পুরস্কার দেবেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করার সাথে সাথে আখিরাতের সফলতার কথাও খেয়ালে রাখতে হবে। আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকলেই আখিরাতে সফল হওয়া যাবে বটে; কিন্তু যেহেতু আখিরাতের সাফল্যই আসল উদ্দেশ্য, সেহেতু নিয়তের বেলায় ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের সাফল্য’— এ দুটো কথা একসাথেই খেয়াল করা জরুরি।
রাসূল (সা.) বলেছেন, শুধু আমলের কারণেই নাজাত পাওয়া যাবে না। একমাত্র আল্লাহর রহমত হলেই মুক্তির আশা করা যায়। এতে বোঝা গেল— যত নেক আমলই করি না কেন, আল্লাহর দরবারে তা কবুল হওয়ার যোগ্য না হলে এবং তিনি দয়া না করলে উপায় নেই। তাই তাঁর দয়ার আশাই আসল ভরসা।
দীন ইসলামের কতক জরুরি বিষয়ে সঠিক ধারণা
দীন ইসলামের এমন কতক বিষয় রয়েছে, যা সঠিকভাবে না জানলে পদে পদে ভুল ধারণা থেকে যাবে। তাই ঐ কয়টি বিষয় এখানে আলোচনা করছি:
১. মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে মুমিনের সম্পর্ক কেমন?
আমরা আগে জেনেছি যে, জীবনের সব দিকেই এবং সব সময়ই আল্লাহ আমাদের ‘একমাত্র হুকুমকর্তা প্রভু’। মুহাম্মাদ (সা.) তেমনি জীবনের সব ক্ষেত্রে ও সব সময় ‘একমাত্র আদর্শ নেতা।’। নেতা তাকেই বলা হয়, যার পেছনে চলতে হয়, যার কথা মানতে হয়, যাকে অনুসরণ করতে হয়।
আল্লাহ তাআলা সূরা আল আহযাবের ২১ নং আয়াতে বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য রাসূলের মধ্যে সুন্দরতম আদর্শ রয়েছে।’ আদর্শ মানে যা অনুকরণযোগ্য। হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য সুন্দর করে অক্ষরগুলো লেখাসহ বই আছে। ঐ সবকে বলে ‘আদর্শলিপি’। লিপি মানে লেখা। এ বই দেখে নকল করতে থাকলে হাতের লেখা সুন্দর হয়।
তেমনি আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সা.)-কে সুন্দর আদর্শ মানুষ বানিয়ে তাঁকে সব ব্যাপারে নকল করতে বলেছেন। তিনি যা বলেছেন ও যা করেছেন সবই সুন্দর বলে আল্লাহর ঐ আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষ হিসেবে দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে যা যা করতে হয় তা সবই তিনি সবচেয়ে সুন্দরভাবে করে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর জীবনকে আদর্শ হিসেবে অনুকরণ করলে নেক মানুষ, সৎ মানুষ ও আদর্শ মানুষ হওয়া যাবে।
তিনি সবদিক দিয়েই সবার আদর্শ। তিনি আদর্শ স্বামী, আদর্শ পিতা, আদর্শ শাসক, আদর্শ সেনাপতি, আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ বিচারক, আদর্শ প্রতিবেশী, আদর্শ বন্ধু ইত্যাদি।
মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের মতোই একজন মানুষ। তাই তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেছেন আমাদেরও সেভাবে চলা সম্ভব। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি জরুরি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে যা কিছু করতে হয় তা সুন্দরভাবে করতে হলে তাঁর জীবন ও শিক্ষা থেকেই তা জানতে হবে। মৃত্যুর পরও এ মানুষটি ছাড়া আমার উপায় নেই। কবরে তাঁকে দেখানো হবে এবং তাঁকে চিনি কি না সে কথা জিজ্ঞেস করা হবে। দুনিয়াতে যারা তাঁকে মেনে চলে তারা তাঁকে দেখে চিনতে পারবে। চিনতে পারলেই কবরের বিপদ কেটে যাবে। হাশরের ময়দানে কঠিন পিপাসায় যে পানি পান করলে আর পিপাসার কষ্ট হবে না, সে পানির কর্তা হবেন তিনি। হাউজে কাউসার নামের বিশাল পুকুরের পানি সে-ই পাবে, যাকে তিনি দেবেন। আল্লাহর নিকট সুপারিশ (শাফা‘আত) করার জন্যও তাঁকে দরকার হবে। তাহলে দেখা গেল, তাঁকে ছাড়া দুনিয়ায়ও ঠিকভাবে চলা সম্ভব নয়, আখিরাতেও তিনি ছাড়া উপায় নেই।
আমরা যাদেরকে আপনজন মনে করি, তাদেরকে আমরা ভালোবাসি। রাসূল সা. এর চেয়ে আপন আর কে হতে পারে? তাই তিনি বলেছেন, ‘পিতা-মাতা, সন্তানাদি এমনকি দুনিয়ার সব মানুষের চেয়ে আমাকে যে বেশি ভালো না বাসে সে মুমিন নয়।’ সত্যি তাঁর চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোনো মানুষ হতে পারে না। তাঁকে যে পরিমাণ ভালোবাসা হবে সে পরিমাণই তাঁকে মেনে চলা সম্ভব হবে।
তাই আল্লাহর যিক্‌র যেমন বেশি বেশি করতে হয, তেমনি রাসূল (সা.)-এর উপর বেশি কেরে দরূদ পড়তে হবে।
সূরা আলে ইমরানের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! মানুষকে বলুন, যদি তোমরা সত্যি আল্লাহকে মহব্বত কর, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর; তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে অবশ্যই রাসূলকে মেনে চলতে হবে।
রাসূল শুধু ধর্মনেতা নন, জীবনের সবদিকেই তিনি একমাত্র আদর্শ নেতা। তিনি ছাড়া আর কেউ আসল আদর্শ নয়। আমরা সাহাবায়ে কেরামকে কেন মানি? রাসূল (সা.)-কে কীভাবে মানতে হবে তা তাঁদের কাছ থেকেই আমরা শিখি। তাঁদেরকে মানার জন্য নয়, রাসূলকে মানার জন্যই তাঁদেরকে মানি। তাই আসল আদর্শ শুধু রাসূল (সা.)। অবশ্য রাসূলকে মানার ক্ষেত্রে তাঁর সাহাবায়ে কেরাম আমাদের আদর্শ। সাহাবা মানে সাথী। তাঁরা যেভাবে রাসূল (সা.)-কে মেনেছেন, আমাদেরকেও সেভাবে মানতে হবে।
২. কুরআন কেমন কিতাব?
মুসলিম জনগণ কুরআনকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে এবং সওয়াবের আশায় তিলাওযাত করে। কুরআনে কী বলা হয়েছে তারা তা জানা ও বোঝার দরকার মনে করে না। অথচ আল্লাহ কুরআনকে মানবজাতির হিদায়াতের জন্য পাঠিয়েছেন বলে ঘোষণা করেছেন। হিদায়াত মানে পথ দেখানো। কুরআনে কোন্‌ পথ দেখানো হয়েছে তা না জানলে কেমন করে তা মেনে চলা যাবে?
দুনিয়ার জীবনে যেভাবে চললে সুখ-শান্তি পাওয়া যাবে এবং আখিরাতেও সফল হওয়া যাবে, সে হিদায়াতই কুরআনে আছে। তাই কুরআনকে বুঝতে হবে। না বুঝে শুধু তিলাওয়াত করার জন্য কুরআন নাযিল হয়নি। যারা লেখাপড়া জানে না তাদের কথা আলাদা। তারা কোনো রকমে তিলাওয়াত করলেও প্রতিটি অক্ষরের জন্য ১০টি করে নেকী পাবে বলে হাদীসে আছে। কিন্তু যারা দুনিয়ার সামান্য জীবনের সুখের জন্য ১৫/২০ বছর বিদেশী ভাষা শেখে, কুরআন বোঝার চেষ্টা করা কি তাদের কর্তব্য নয়? অল্প লেখা-পড়া জানলেও কুরআন বোঝার সুযোগ আছে। বাংলা ভাষায় কুরআনের বেশ কয়েকটি তাফসীর আছে।
যার উপর কুরআন নাযিল হয়েছে তার জীবন থেকেই কুরআন বোঝা সহজ। রাসূলের জীবনধারার সাথে মিলিয়ে লেখা তাফসীর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক। রাসূলের জীবনই আসল কুরআন, জীবন্ত কুরআন। কুরআনের আয়াতগুলোর শুধু অনুবাদ পড়ে সর্বাংশে কুরআন বোঝা যায় না। এজন্য তাফসীর পড়তে হবে। কুরআনের ব্যাখ্যাকেই তাফসীর বলা হয়।
৩. সবচেয়ে উঁচুমানের মুসলমান কারা?
আল্লাহ ও রাসূলের সার্টিফিকেট অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরামই সবচেয়ে উঁচুমানের মুসলমান। তাঁরা সরাসরি রাসূল (সা.) থেকে ট্রেনিং পেয়েছেন। তাই তাঁদের জীবনী থেকেই সবচেয়ে বেশি শেখার আছে। তাঁদের মধ্যে প্রথম চার খলীফা— হযরত আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.), হযরত উসমান রা. ও হযরত আলী (রা.) অন্যদের চেয়ে সেরা। তাই এ চার জনের জীবনী বেশি করে জানা দরকার। [সাহাবাগণের জীবনী বাংলা ভাষায় প্রচুর রয়েছে, তাঁদের চর্চা বেশি হওয়া প্রয়োজন।]
সাহাবীগণের চেয়ে বেশি মর্যাদা আর কারো নয়। পরবর্তীদের মধ্যে যারা ঈমান, ইলম ও আমলের দিক দিয়ে তাঁদের যত কাছাকাছি তারা ততই শ্রদ্ধার পাত্র।
উন্নত মুসলিম হিসেবে মর্যাদার দিক দিয়ে সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে যারা দীন শিখেছেন তাদেরকেই গণ্য করতে হবে। ইসলামী পরিভাষায় এঁদেরকে ‘তাবেঈ’ বলা হয়। যাঁরা তাবেঈগণের কাছ থেকে দীন শিখেছেন, তাঁদেরকে তাবে-তাবেঈ বলা হয়। তাবেঈগণের পরেই তাবে-তাবেঈগণের মর্যাদা।
৪. দীনদারী ও দুনিয়াদারীতে পার্থক্য কী
সাধারণত মনে করা হয় যে, নামায-রোযা, তাসবীহ-তিলাওযাত, যিক্‌র-আয্‌কার, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি হলো দীনদারী কাজ। আর আয়-রোজগার করা, বিয়ে-শাহদী করা, খাওয়া-পরা ইত্যাদি দুনিয়াদারী কাজ।
এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ রাসূল (সা.) যা কিছু করেছেন সবই দীনদারী। তিনি সবকিছু নবী হিসেবেই করেছেন। তিনি দেশ শাসন করেছেন, বিয়ে-শাদী করেছেন, যুদ্ধ করেছেন— এ সবই দীনদারী।
দীনদারী ও দুনিয়াদারীতে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা মতো যা করা হয় সবই দীনদারী। আর যদি লোকদেখানোর জন্য নামায পড়া হয়, সুনামের উদ্দেশ্যে যাকাত দেওয়া হয় এবং নিজের নামে হাজী লেখার জন্য হজ্জ করা হয় তাহলে এগুলোও দুনিয়াদারী। দুনিয়ার সব কাজই দীনদারীও হতে পারে; দুনিয়াদারীও হতে পারে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ইশার নামায জামাআতের সাথে আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ল, আবার ফজরের নামাযের জামা‘আতে শরীক হলো, তার ঘুমের সময়টা ইবাদত বলে গণ্য হবে।’ বোঝা গেল, রাসূলের তরীকা মতো ঘুমালে ঘুমটাও দীনদারীতে পরিণত হয়।
৫. ইবাদত কাকে বলে?
ইবাদত শব্দটি আরবী। আব্‌দ শব্দ থেকে ইবাদত শব্দটি গঠন করা হয়েছে। আব্‌দ মানে দাস। এ শব্দের সাথে আল্লাহর গুণবাচক শব্দ যোগ করে নাম রাখা হয়— আবদুর রহীম, আবদুর রাহমান, আবদুল কারীম ইত্যাদি। এসব নামের অর্থ হলো আল্লাহর দাস।
ইবাদত শব্দের অর্থ দাসত্ব বা দাসের কাজ। আল্লাহ গোলাম হিসেবে তাঁর হুকুম ও রাসূলের তরীকা মতো যা করা হয় সেসবই আল্লাহর দাসত্ব। শুধু নামায-রোযাই ইবাদত নয়। আল্লাহর হুকুম মতো করলে সব কাজই ইবাদত।
অবশ্য একটু পার্থক্য আছে। নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত হলো বুনিয়াদী ইবাদত। এসব ইবাদতের দ্বারা আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয়; যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়। ওই চারটি ইবাদত অন্য সব কাজকে ইবাদত বানিয়ে দেয়। যেমন উপরে লেখা হাদীসে জানা গেল, নামায ঘুমকেও ইবাদত বানিয়ে দিতে পারে।
মুমিনের জীবনের দীনদারী ও দুনিয়াদারী আলাদা আলাদা নয়। গোটা জীবনই দীনদারী ও ইবাদত। মানুষের জীবন আল্লাহর দাসত্বের অধীন না হলে শয়তানের দাসত্বের অধীন হতে বাধ্য।
৬. কুরআন ও হাদীস
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জীবনের সকল দিকের জন্যই ওহীর মাধ্যমে রাসূল (সা.)-এর কাছে বিধি-বিধান ও নিয়ম-কানুন পাঠিয়েছেন। রাসূল (সা.) ওইসব বিধান শুধু মুখে শুনিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি নিজে সব বিধান পালন করে দেখিয়ে দিয়েছেন। যেকোন বিধান বুঝতে অসুবিধা মনে হলে, সাহাবায়ে কেরাম তা রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামের জীবনে যেসব নিয়ম-প্রথা চালু ছিল সেসবের কোনোটি শরী‘আত অনুযায়ী আপত্তিকর হলে রাসূল (সা.) দূর করতে বলে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের যেসব আয়াত নাযিল করেছেন, এর ভাষা আল্লাহ নিজে রচনা করেছেন এবং জিবরীল (আ.) রাসূল (সা.)-কে তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। এ ওহীকে ‘ওহীয়ে মাতলূ’ বলা হয়। মাতলূ মানে যা তিলাওয়াত করা হয়। রাসূল (সা.) জিবরীল (আ.) থেকে শুনে তা তিলাওয়াত করে (মুখে উচ্চারণ করে) সাহাবায়ে কেরামকে শুনিয়েছেন।
এ কুরআন একসাথে সবটুকু নাযিল হয়নি। রাসূল (সা.)-এর বয়স যখন ৪০ বছর তখন একদিন হেরা পর্বতের গুহায় জিবরীল (আ.) সূরা আলাক-এর প্রথম ৫টি আয়াত শুনিয়ে দেন। ৬৩ বছর বয়সে রাসূল (সা.) দুনিয়া থেকে বিদায় হন। এ ২৩ বছর ধরেই কিছু কিছু করে ১১৪টি সূরা নাযিল হয়।
কুরআনই শুধু ওহী নয়; হাদীসও ওহীর মধ্যে গণ্য। কুরআনের ভাষা ও ভাব সবটুকুই আল্লাহর রচনা আর হাদীসের ভাষা রাসূলের; ভাব আল্লাহর। কুরআনের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া, মানুষের জীবনকে কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী গড়ে তোলার দায়িত্ব রাসূল (সা.)-কেই দেওয়া হয়েছেন।
এ দায়িত্ব তিনি তিন রকমে পালন করেছেন।
১. মুখে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন,
২. নিজে করে দেখিয়েছেন,
৩. সাহাবীগণের দিকে তিনি খেয়াল রাখতেন এবং তাঁদের জীবনে যা আপত্তিকর দেখতেন তা দূর করতে বলতেন।
এসব তিনি ওহীর জ্ঞানের ভিত্তিতেই করতেন। এসব ইলমকে একসাথে সুন্নাহ বলা হয়। রাসূল (সা.) নিজের ভাষায়ই বলতেন, কিন্তু যা বলতেন, এর ভাব আল্লাহর কাছ থেকে পেতেন। তিনি নিজের মন থেকে কোনো কথা বানিয়ে বলতেন না। ওহীর জ্ঞান থেকে যা জানতেন তা-ই বলতেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করতেন। এ ওহী জিবরীল (আ.) তিলাওয়াত করে শুনিয়ে দেননি। ফলে একে ‘ওহী গায়রে মাতলূ’ বলা হয়। এ ওহীর ভাব আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (সা.)-এর মনে ঢেলে দিতেন এবং রাসূল (সা.) নিজের ভাষায় তা জানিয়ে দিতেন।
হাদীসের তিনটি ধরন
১. কাওলী হাদীস: হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী কতক হাদীসের শুরুতে বলেন, ‘রাসূল (সা.) বলেছেন’, বা ‘আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি’। এসব হাদীসকে ‘কাওলী’ হাদীস বলা হয়। কাওল মানে কথা। রাসূল (সা.) কথায় যা জানিয়েছেন তা-ই কাওলী হাদীস।
২. ফে‘লী হাদীস: হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী কতক হাদীসের শুরুতে বলেন, ‘আমি রাসূল (সা.)-কে এ রকম করতে দেখেছি’ বা ‘রাসূল (সা.) এ রকম করেছেন’। ফে‘ল মানে কাজ করা। রাসূল (সা.) কাজ করে যা জানিয়েছেন তা-ই ফে‘লী হাদীস।
৩. তাকরীরী হাদীস: যেসব কথা বা কাজ সাহাবায়ে কেরামকে বলতে ও করতে দেখে রাসূল (সা.) আপত্তি জানাননি বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব তাকরীরী হাদীস। ‘তাকরীরী’ শব্দের বাংলা অর্থ ‘অনুমোদন’ অর্থাৎ এসব রাসূল (সা.) অনুমোদন করেছেন বা সমর্থন করেছেন, কোনো আপত্তি করেননি।


‘আমল’ আরবী শব্দ। এর বাংলা হলো কাজ। মানুষ কোনো কাজের চিন্তা করলে ঐ কাজের সূচনা হয়। সে কাজের জন্য ইচ্ছা ও চেষ্টা করা হলে তাকে আমল বা কাজ বলা হয়।
তাকদীর সম্পর্কীয় আলোচনায় আমরা জেনেছি যে, কোনো কাজের ইচ্ছা ও চেষ্টা করা হলেই কাজটি সমাধা না হলেও তা কাজ করা হয়েছে বলে ধরা হবে। কারণ, কাজটি সমাধা করা আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে, এটা মানুষের ইখতিয়ারে নেই। কাজটি সমাধা না হলেও কাজের ফল আখিরাতে দেওয়া হবে। কাজটি ভালো হলে পুরস্কার পাবে, মন্দ হলে শাস্তি পাবে।
মানুষ শুধু ইচ্ছা ও চেষ্টার জন্য দায়ী। কোনো কাজ কারো হাতে যদি ইচ্ছা ও চেষ্টা ছাড়াই সমাধা হয়ে যায়, তাহলে এর জন্য তাকে দায়ী করা হয় না। যেমন— এক লোক পাখি শিকারের জন্য গাছে গুলি চালাল। গাছে যে একজন মানুষ ছিল তা সে জানত না। গুলি লেগে লোকটি মারা গেল। মেরে ফেলার কাজটি সমাধা হয়ে গেল। কিন্তু এ কাজের ইচ্ছা তো সে করেনি এবং এ উদ্দেশ্যে সে চেষ্টাও করেনি। আদালতে এ কথা প্রমাণিত হলে লোকটির কোনো শাস্তি হবে না। অথচ মেরে ফেলার কাজটি কিন্তু হয়েই গেল।
আল্লাহ তা‘আলার বড়ই মেহেরবানী যে, যদি কেউ কোনো ভালো কাজ করার নিয়ত বা ইচ্ছা করে, কিন্তু এর জন্য চেষ্টা করার সময় বা সুযোগ না পায়, তবুও তিনি তাকে কিছু পুরস্কার দেবেন। আর যদি সে মন্দ কাজের নিয়ত করে, তাহলে চেষ্টা না করা পর্যন্ত তাকে কোনো শাস্তি দেওয়া হবে না, বরং চেষ্টা না করার কারণে তাকে কিছু পুরস্কার দেওয়া হবে বলে রাসূল (সা.) বলেছেন।
মানুষের আমলের হিসাব মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হয় না
আদালতে আখিরাতে যখন মানুষের আমলনামা (দুনিয়ায় যা করেছে তার হিসাব) দেওয়া হবে, তখন যারা নেক আমল করেছে তাদের ডান হাতে এবং যারা বদ আমল করেছে তাদের বাম হাতে দেওয়া হবে। যারা আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা মতো চলেছে তারা নেক আমল করেছে বলে গণ্য হবে। আর যারা এর বিপরীত চলেছে তারা বদ আমল করেছে বলে ধরে নেওয়া হবে।
আমলনামা হাতে পেয়ে নেক লোক ও বদ লোক সবাই দেখবে যে, দুনিয়ায় তারা যে পরিমাণ কাজ করেছে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি কাজের হিসাব সেখানে লেখা আছে। তখন সবাই আল্লাহকে ডেকে বলবে, আমরা তো এত কিছু করিনি, আমাদের হিসাবে এত আমল কেমন করে লেখা হলো? জবাবে আল্লাহ বলবেন, দুনিয়ায় বেঁচে থাকাকালে তোমরা যা কিছু করেছ তা তো লেখা আছেই; মৃত্যুর পরও তোমাদের আমল বন্ধ হয়নি। তোমরা অন্যদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছ, তোমাদেরকে করতে দেখে যারা করতে শিখেছে, তোমরা যাদেরকে করতে উৎসাহ দিয়েছ, তারা যা আমল করেছে তাও তোমাদের আমলনামায় যোগ হয়েছে। তোমাদের মৃত্যুর পরও তোমাদের আমলের হিসাব জারি ছিল। এ কথা নেক ও বদ উভয় রকমের আমলের বেলায়ই সত্য।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাজের পথ দেখায় সে তার মতোই, যে কাজ করে।’ যে কাজ করে তার আমলনামায় যেমন সওয়াব বা গুনাহ লেখা হবে, যে ওই কাজের পথ দেখায় তার আমলনামায়ও তা যোগ হবে। আমার চেষ্টায় যদি কোনো বেনামাযী নামাযী হয়ে যায়, তাহলে সারা জীবনে সে যত নামায আদায় করেছে, এর নেকী ওই লোকের আমলনামায় যা হবে, আমার আমলনামায়ও তা-ই লেখা হবে। তাই মৃত্যুর পরও আমল জারি থাকে।
সহীহ্ নিয়ত ছাড়া নেক আমলও কবুল হয় না
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নিয়ত অনুযায়ীই আমলকে বিবেচনা করা হয়।’ কোনো আমল দেখতে যত ভালো বলেই মনে হোক, কী নিয়তে কাজটি করা হয়েছে এর হিসাব নিয়েই আল্লাহ ওই কাজটিকে কবুল করবেন।
হাদীসে আছে, হাশরের দিন এমন এক লোককে ডাকা হবে, যে জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়েছে। তাকে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, দুনিয়ায় আমার জন্য তুমি কী করেছ? সে বলবে, আমি তোমার দীনের জন্য জিহাদ করে আমার জান কুরবান করে দিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। তুমি এ নিয়তে জিহাদ করেছ যে, লোকেরা তোমাকে বীর বলবে, বাহাদুর বলবে। তোমার ঐ নিয়ত আমি দুনিয়ায়ই পূরণ করে দিয়েছি। লোকেরা তোমাকে বীর বলেছে। আমার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার নিয়ত তোমার ছিল না। তাই তোমাকে দোযখে দেওয়া হলো।
এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে? লোকটি জিহাদের ময়দানে জান দিয়ে দেওয়ার পরও তাকে দোযখে যেতে হলো। এর একমাত্র কারণ, তার নিয়ত সহীহ্‌ ছিল না। প্রমাণ হলো, খাঁটি নিয়ত ছাড়া জিহাদের ময়দানে শহীদ হলেও কোনো পুরস্কার পাওয়া যাবে না। তাই আমলের ব্যাপারে নিয়তের বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি। নিয়ত সহীহ্‌ না হলে বড় নেক আমলেরও কোনো দাম নেই। তাহলে সহীহ্‌ নিয়ত সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা দরকার।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ঐ লোকই বুদ্ধিমান, যে তার নাফ্‌সকে দমন করে এবং যে কোনো কাজ করলে এর ফল আখিরাতে কী পাবে সে হিসাব করেই করে।’ দুনিয়ায় নগদ কী ফল পাবে সে হিসাব করে কাজ করা একেবারেই বোকামি। যদি কেউ আখিরাতের হিসাব করে কাজ করে তাহলে— মিথ্যা কথা বলা, ওজনে কম দেওযা, ঘুষ নেওয়া ইত্যাদি কোনোটাই করতে সে সাহস করবে না।
নিয়তকে খাঁটি করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে— আমি যে নেক আমলই করি, তা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি (খুশি) ও আখিরাতের সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে করছি কি-না। নিয়ত সহীহ্‌ হলেই আল্লাহ আমাদের আমল কবুল করবেন ও পুরস্কার দেবেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করার সাথে সাথে আখিরাতের সফলতার কথাও খেয়ালে রাখতে হবে। আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকলেই আখিরাতে সফল হওয়া যাবে বটে; কিন্তু যেহেতু আখিরাতের সাফল্যই আসল উদ্দেশ্য, সেহেতু নিয়তের বেলায় ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের সাফল্য’— এ দুটো কথা একসাথেই খেয়াল করা জরুরি।
রাসূল (সা.) বলেছেন, শুধু আমলের কারণেই নাজাত পাওয়া যাবে না। একমাত্র আল্লাহর রহমত হলেই মুক্তির আশা করা যায়। এতে বোঝা গেল— যত নেক আমলই করি না কেন, আল্লাহর দরবারে তা কবুল হওয়ার যোগ্য না হলে এবং তিনি দয়া না করলে উপায় নেই। তাই তাঁর দয়ার আশাই আসল ভরসা।
দীন ইসলামের কতক জরুরি বিষয়ে সঠিক ধারণা
দীন ইসলামের এমন কতক বিষয় রয়েছে, যা সঠিকভাবে না জানলে পদে পদে ভুল ধারণা থেকে যাবে। তাই ঐ কয়টি বিষয় এখানে আলোচনা করছি:
১. মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে মুমিনের সম্পর্ক কেমন?
আমরা আগে জেনেছি যে, জীবনের সব দিকেই এবং সব সময়ই আল্লাহ আমাদের ‘একমাত্র হুকুমকর্তা প্রভু’। মুহাম্মাদ (সা.) তেমনি জীবনের সব ক্ষেত্রে ও সব সময় ‘একমাত্র আদর্শ নেতা।’। নেতা তাকেই বলা হয়, যার পেছনে চলতে হয়, যার কথা মানতে হয়, যাকে অনুসরণ করতে হয়।
আল্লাহ তাআলা সূরা আল আহযাবের ২১ নং আয়াতে বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য রাসূলের মধ্যে সুন্দরতম আদর্শ রয়েছে।’ আদর্শ মানে যা অনুকরণযোগ্য। হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য সুন্দর করে অক্ষরগুলো লেখাসহ বই আছে। ঐ সবকে বলে ‘আদর্শলিপি’। লিপি মানে লেখা। এ বই দেখে নকল করতে থাকলে হাতের লেখা সুন্দর হয়।
তেমনি আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সা.)-কে সুন্দর আদর্শ মানুষ বানিয়ে তাঁকে সব ব্যাপারে নকল করতে বলেছেন। তিনি যা বলেছেন ও যা করেছেন সবই সুন্দর বলে আল্লাহর ঐ আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষ হিসেবে দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে যা যা করতে হয় তা সবই তিনি সবচেয়ে সুন্দরভাবে করে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর জীবনকে আদর্শ হিসেবে অনুকরণ করলে নেক মানুষ, সৎ মানুষ ও আদর্শ মানুষ হওয়া যাবে।
তিনি সবদিক দিয়েই সবার আদর্শ। তিনি আদর্শ স্বামী, আদর্শ পিতা, আদর্শ শাসক, আদর্শ সেনাপতি, আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ বিচারক, আদর্শ প্রতিবেশী, আদর্শ বন্ধু ইত্যাদি।
মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের মতোই একজন মানুষ। তাই তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেছেন আমাদেরও সেভাবে চলা সম্ভব। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি জরুরি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে যা কিছু করতে হয় তা সুন্দরভাবে করতে হলে তাঁর জীবন ও শিক্ষা থেকেই তা জানতে হবে। মৃত্যুর পরও এ মানুষটি ছাড়া আমার উপায় নেই। কবরে তাঁকে দেখানো হবে এবং তাঁকে চিনি কি না সে কথা জিজ্ঞেস করা হবে। দুনিয়াতে যারা তাঁকে মেনে চলে তারা তাঁকে দেখে চিনতে পারবে। চিনতে পারলেই কবরের বিপদ কেটে যাবে। হাশরের ময়দানে কঠিন পিপাসায় যে পানি পান করলে আর পিপাসার কষ্ট হবে না, সে পানির কর্তা হবেন তিনি। হাউজে কাউসার নামের বিশাল পুকুরের পানি সে-ই পাবে, যাকে তিনি দেবেন। আল্লাহর নিকট সুপারিশ (শাফা‘আত) করার জন্যও তাঁকে দরকার হবে। তাহলে দেখা গেল, তাঁকে ছাড়া দুনিয়ায়ও ঠিকভাবে চলা সম্ভব নয়, আখিরাতেও তিনি ছাড়া উপায় নেই।
আমরা যাদেরকে আপনজন মনে করি, তাদেরকে আমরা ভালোবাসি। রাসূল সা. এর চেয়ে আপন আর কে হতে পারে? তাই তিনি বলেছেন, ‘পিতা-মাতা, সন্তানাদি এমনকি দুনিয়ার সব মানুষের চেয়ে আমাকে যে বেশি ভালো না বাসে সে মুমিন নয়।’ সত্যি তাঁর চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোনো মানুষ হতে পারে না। তাঁকে যে পরিমাণ ভালোবাসা হবে সে পরিমাণই তাঁকে মেনে চলা সম্ভব হবে।
তাই আল্লাহর যিক্‌র যেমন বেশি বেশি করতে হয, তেমনি রাসূল (সা.)-এর উপর বেশি কেরে দরূদ পড়তে হবে।
সূরা আলে ইমরানের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! মানুষকে বলুন, যদি তোমরা সত্যি আল্লাহকে মহব্বত কর, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর; তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে অবশ্যই রাসূলকে মেনে চলতে হবে।
রাসূল শুধু ধর্মনেতা নন, জীবনের সবদিকেই তিনি একমাত্র আদর্শ নেতা। তিনি ছাড়া আর কেউ আসল আদর্শ নয়। আমরা সাহাবায়ে কেরামকে কেন মানি? রাসূল (সা.)-কে কীভাবে মানতে হবে তা তাঁদের কাছ থেকেই আমরা শিখি। তাঁদেরকে মানার জন্য নয়, রাসূলকে মানার জন্যই তাঁদেরকে মানি। তাই আসল আদর্শ শুধু রাসূল (সা.)। অবশ্য রাসূলকে মানার ক্ষেত্রে তাঁর সাহাবায়ে কেরাম আমাদের আদর্শ। সাহাবা মানে সাথী। তাঁরা যেভাবে রাসূল (সা.)-কে মেনেছেন, আমাদেরকেও সেভাবে মানতে হবে।
২. কুরআন কেমন কিতাব?
মুসলিম জনগণ কুরআনকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে এবং সওয়াবের আশায় তিলাওযাত করে। কুরআনে কী বলা হয়েছে তারা তা জানা ও বোঝার দরকার মনে করে না। অথচ আল্লাহ কুরআনকে মানবজাতির হিদায়াতের জন্য পাঠিয়েছেন বলে ঘোষণা করেছেন। হিদায়াত মানে পথ দেখানো। কুরআনে কোন্‌ পথ দেখানো হয়েছে তা না জানলে কেমন করে তা মেনে চলা যাবে?
দুনিয়ার জীবনে যেভাবে চললে সুখ-শান্তি পাওয়া যাবে এবং আখিরাতেও সফল হওয়া যাবে, সে হিদায়াতই কুরআনে আছে। তাই কুরআনকে বুঝতে হবে। না বুঝে শুধু তিলাওয়াত করার জন্য কুরআন নাযিল হয়নি। যারা লেখাপড়া জানে না তাদের কথা আলাদা। তারা কোনো রকমে তিলাওয়াত করলেও প্রতিটি অক্ষরের জন্য ১০টি করে নেকী পাবে বলে হাদীসে আছে। কিন্তু যারা দুনিয়ার সামান্য জীবনের সুখের জন্য ১৫/২০ বছর বিদেশী ভাষা শেখে, কুরআন বোঝার চেষ্টা করা কি তাদের কর্তব্য নয়? অল্প লেখা-পড়া জানলেও কুরআন বোঝার সুযোগ আছে। বাংলা ভাষায় কুরআনের বেশ কয়েকটি তাফসীর আছে।
যার উপর কুরআন নাযিল হয়েছে তার জীবন থেকেই কুরআন বোঝা সহজ। রাসূলের জীবনধারার সাথে মিলিয়ে লেখা তাফসীর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক। রাসূলের জীবনই আসল কুরআন, জীবন্ত কুরআন। কুরআনের আয়াতগুলোর শুধু অনুবাদ পড়ে সর্বাংশে কুরআন বোঝা যায় না। এজন্য তাফসীর পড়তে হবে। কুরআনের ব্যাখ্যাকেই তাফসীর বলা হয়।
৩. সবচেয়ে উঁচুমানের মুসলমান কারা?
আল্লাহ ও রাসূলের সার্টিফিকেট অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরামই সবচেয়ে উঁচুমানের মুসলমান। তাঁরা সরাসরি রাসূল (সা.) থেকে ট্রেনিং পেয়েছেন। তাই তাঁদের জীবনী থেকেই সবচেয়ে বেশি শেখার আছে। তাঁদের মধ্যে প্রথম চার খলীফা— হযরত আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.), হযরত উসমান রা. ও হযরত আলী (রা.) অন্যদের চেয়ে সেরা। তাই এ চার জনের জীবনী বেশি করে জানা দরকার। [সাহাবাগণের জীবনী বাংলা ভাষায় প্রচুর রয়েছে, তাঁদের চর্চা বেশি হওয়া প্রয়োজন।]
সাহাবীগণের চেয়ে বেশি মর্যাদা আর কারো নয়। পরবর্তীদের মধ্যে যারা ঈমান, ইলম ও আমলের দিক দিয়ে তাঁদের যত কাছাকাছি তারা ততই শ্রদ্ধার পাত্র।
উন্নত মুসলিম হিসেবে মর্যাদার দিক দিয়ে সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে যারা দীন শিখেছেন তাদেরকেই গণ্য করতে হবে। ইসলামী পরিভাষায় এঁদেরকে ‘তাবেঈ’ বলা হয়। যাঁরা তাবেঈগণের কাছ থেকে দীন শিখেছেন, তাঁদেরকে তাবে-তাবেঈ বলা হয়। তাবেঈগণের পরেই তাবে-তাবেঈগণের মর্যাদা।
৪. দীনদারী ও দুনিয়াদারীতে পার্থক্য কী
সাধারণত মনে করা হয় যে, নামায-রোযা, তাসবীহ-তিলাওযাত, যিক্‌র-আয্‌কার, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি হলো দীনদারী কাজ। আর আয়-রোজগার করা, বিয়ে-শাহদী করা, খাওয়া-পরা ইত্যাদি দুনিয়াদারী কাজ।
এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ রাসূল (সা.) যা কিছু করেছেন সবই দীনদারী। তিনি সবকিছু নবী হিসেবেই করেছেন। তিনি দেশ শাসন করেছেন, বিয়ে-শাদী করেছেন, যুদ্ধ করেছেন— এ সবই দীনদারী।
দীনদারী ও দুনিয়াদারীতে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা মতো যা করা হয় সবই দীনদারী। আর যদি লোকদেখানোর জন্য নামায পড়া হয়, সুনামের উদ্দেশ্যে যাকাত দেওয়া হয় এবং নিজের নামে হাজী লেখার জন্য হজ্জ করা হয় তাহলে এগুলোও দুনিয়াদারী। দুনিয়ার সব কাজই দীনদারীও হতে পারে; দুনিয়াদারীও হতে পারে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ইশার নামায জামাআতের সাথে আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ল, আবার ফজরের নামাযের জামা‘আতে শরীক হলো, তার ঘুমের সময়টা ইবাদত বলে গণ্য হবে।’ বোঝা গেল, রাসূলের তরীকা মতো ঘুমালে ঘুমটাও দীনদারীতে পরিণত হয়।
৫. ইবাদত কাকে বলে?
ইবাদত শব্দটি আরবী। আব্‌দ শব্দ থেকে ইবাদত শব্দটি গঠন করা হয়েছে। আব্‌দ মানে দাস। এ শব্দের সাথে আল্লাহর গুণবাচক শব্দ যোগ করে নাম রাখা হয়— আবদুর রহীম, আবদুর রাহমান, আবদুল কারীম ইত্যাদি। এসব নামের অর্থ হলো আল্লাহর দাস।
ইবাদত শব্দের অর্থ দাসত্ব বা দাসের কাজ। আল্লাহ গোলাম হিসেবে তাঁর হুকুম ও রাসূলের তরীকা মতো যা করা হয় সেসবই আল্লাহর দাসত্ব। শুধু নামায-রোযাই ইবাদত নয়। আল্লাহর হুকুম মতো করলে সব কাজই ইবাদত।
অবশ্য একটু পার্থক্য আছে। নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত হলো বুনিয়াদী ইবাদত। এসব ইবাদতের দ্বারা আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয়; যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়। ওই চারটি ইবাদত অন্য সব কাজকে ইবাদত বানিয়ে দেয়। যেমন উপরে লেখা হাদীসে জানা গেল, নামায ঘুমকেও ইবাদত বানিয়ে দিতে পারে।
মুমিনের জীবনের দীনদারী ও দুনিয়াদারী আলাদা আলাদা নয়। গোটা জীবনই দীনদারী ও ইবাদত। মানুষের জীবন আল্লাহর দাসত্বের অধীন না হলে শয়তানের দাসত্বের অধীন হতে বাধ্য।
৬. কুরআন ও হাদীস
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জীবনের সকল দিকের জন্যই ওহীর মাধ্যমে রাসূল (সা.)-এর কাছে বিধি-বিধান ও নিয়ম-কানুন পাঠিয়েছেন। রাসূল (সা.) ওইসব বিধান শুধু মুখে শুনিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি নিজে সব বিধান পালন করে দেখিয়ে দিয়েছেন। যেকোন বিধান বুঝতে অসুবিধা মনে হলে, সাহাবায়ে কেরাম তা রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামের জীবনে যেসব নিয়ম-প্রথা চালু ছিল সেসবের কোনোটি শরী‘আত অনুযায়ী আপত্তিকর হলে রাসূল (সা.) দূর করতে বলে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের যেসব আয়াত নাযিল করেছেন, এর ভাষা আল্লাহ নিজে রচনা করেছেন এবং জিবরীল (আ.) রাসূল (সা.)-কে তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। এ ওহীকে ‘ওহীয়ে মাতলূ’ বলা হয়। মাতলূ মানে যা তিলাওয়াত করা হয়। রাসূল (সা.) জিবরীল (আ.) থেকে শুনে তা তিলাওয়াত করে (মুখে উচ্চারণ করে) সাহাবায়ে কেরামকে শুনিয়েছেন।
এ কুরআন একসাথে সবটুকু নাযিল হয়নি। রাসূল (সা.)-এর বয়স যখন ৪০ বছর তখন একদিন হেরা পর্বতের গুহায় জিবরীল (আ.) সূরা আলাক-এর প্রথম ৫টি আয়াত শুনিয়ে দেন। ৬৩ বছর বয়সে রাসূল (সা.) দুনিয়া থেকে বিদায় হন। এ ২৩ বছর ধরেই কিছু কিছু করে ১১৪টি সূরা নাযিল হয়।
কুরআনই শুধু ওহী নয়; হাদীসও ওহীর মধ্যে গণ্য। কুরআনের ভাষা ও ভাব সবটুকুই আল্লাহর রচনা আর হাদীসের ভাষা রাসূলের; ভাব আল্লাহর। কুরআনের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া, মানুষের জীবনকে কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী গড়ে তোলার দায়িত্ব রাসূল (সা.)-কেই দেওয়া হয়েছেন।
এ দায়িত্ব তিনি তিন রকমে পালন করেছেন।
১. মুখে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন,
২. নিজে করে দেখিয়েছেন,
৩. সাহাবীগণের দিকে তিনি খেয়াল রাখতেন এবং তাঁদের জীবনে যা আপত্তিকর দেখতেন তা দূর করতে বলতেন।
এসব তিনি ওহীর জ্ঞানের ভিত্তিতেই করতেন। এসব ইলমকে একসাথে সুন্নাহ বলা হয়। রাসূল (সা.) নিজের ভাষায়ই বলতেন, কিন্তু যা বলতেন, এর ভাব আল্লাহর কাছ থেকে পেতেন। তিনি নিজের মন থেকে কোনো কথা বানিয়ে বলতেন না। ওহীর জ্ঞান থেকে যা জানতেন তা-ই বলতেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করতেন। এ ওহী জিবরীল (আ.) তিলাওয়াত করে শুনিয়ে দেননি। ফলে একে ‘ওহী গায়রে মাতলূ’ বলা হয়। এ ওহীর ভাব আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (সা.)-এর মনে ঢেলে দিতেন এবং রাসূল (সা.) নিজের ভাষায় তা জানিয়ে দিতেন।
হাদীসের তিনটি ধরন
১. কাওলী হাদীস: হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী কতক হাদীসের শুরুতে বলেন, ‘রাসূল (সা.) বলেছেন’, বা ‘আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি’। এসব হাদীসকে ‘কাওলী’ হাদীস বলা হয়। কাওল মানে কথা। রাসূল (সা.) কথায় যা জানিয়েছেন তা-ই কাওলী হাদীস।
২. ফে‘লী হাদীস: হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী কতক হাদীসের শুরুতে বলেন, ‘আমি রাসূল (সা.)-কে এ রকম করতে দেখেছি’ বা ‘রাসূল (সা.) এ রকম করেছেন’। ফে‘ল মানে কাজ করা। রাসূল (সা.) কাজ করে যা জানিয়েছেন তা-ই ফে‘লী হাদীস।
৩. তাকরীরী হাদীস: যেসব কথা বা কাজ সাহাবায়ে কেরামকে বলতে ও করতে দেখে রাসূল (সা.) আপত্তি জানাননি বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব তাকরীরী হাদীস। ‘তাকরীরী’ শব্দের বাংলা অর্থ ‘অনুমোদন’ অর্থাৎ এসব রাসূল (সা.) অনুমোদন করেছেন বা সমর্থন করেছেন, কোনো আপত্তি করেননি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.