নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সফলতা লাভের মাধ্যম হলো আত্নশুদ্ধি

২৫ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:৫২

আত্মশুদ্ধিঃ
আত্মশুদ্ধি বলতে বোঝায় অন্তরকে পবিত্র করা। অর্থাৎ অন্তর থেকে সব ধরনের মন্দ স্বভাব দূর করে ভালো ও উত্তম গুণসমূহ দ্বারা অন্তরকে সজ্জিত করা। ইসলামি পরিভাষায় সর্বপ্রকার অনৈসলামিক কথা ও কাজ থেকে নিজ অন্তরকে মুক্ত ও নির্মল রাখাকে আত্মশুদ্ধি বলা হয়। আল্লাহ তা’য়ালার স্মরণ, আনুগত্য ও ইবাদত ব্যতীত অন্য সব কিছু থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখাকেও আত্মশুদ্ধি বলা হয়। মোটকথা, আত্মশুদ্ধির দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত আত্মার ময়লা পরিষ্কার করা। অর্থাৎ আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় মন্দ অভ্যাসগুলো সংশোধন করা। দ্বিতীয়ত পছন্দনীয় গুণাবলি অর্জনের দ্বারা আত্মিক উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আত্মার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।
আত্মশুদ্ধির আরবি পরিভাষা হলো ‘তাজকিয়াতুন নাফস’। একে সংক্ষেপে তাজকিয়াও বলা হয়। মানুষের জন্য আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দেহ ও অন্তরের সমন্বয়ে মানুষ। দেহ বলা হয় হাত-পা, মাথা, বুক ইত্যাদি নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমষ্টি। আর অন্তর হলো আত্মা বা কলব। এ দুটির মধ্যে কলবের সংশোধন প্রয়োজন। আর কলবের সংশোধনই হলো আত্মশুদ্ধি। কলব যদি সৎ ও ভালো কাজের নির্দেশ দেয় তবে দেহ ভালো কাজ করে। একটি হাদীসে মহানবী (সাঃ) সুন্দরভাবে এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জেনে রেখো! শরীরে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে। যদি তা সংশোধিত হয়ে যায়, তবে গোটা শরীরই সংশোধিত হয়। আর যদি তা কলুষিত হয়, তবে গোটা শরীরই কলুষিত হয়ে যায়। মনে রেখো তা হলো কলব বা অন্তর।’ (বোখারী ও মুসলিম)। আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর ইবাদতের পূর্বশর্ত হলো পবিত্রতা। কেননা, আল্লাহ তা’য়ালা স্বয়ং পবিত্র। তিনি পবিত্রতা ব্যতীত কোনো জিনিসই কবুল করেন না। সুতরাং ইবাদতের জন্যও দেহ-মন পবিত্র হওয়া আবশ্যক। দৈহিক পবিত্রতা লাভ করলেই হবে না; বরং অন্তরকেও পবিত্র করতে হবে। অন্যসব কিছু থেকে মনকে পবিত্র রেখে শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করতে হবে। আর অন্তর বা আত্মার পবিত্রতা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। আত্মশুদ্ধি মানুষকে বিকশিত করে, তাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত করে। পরিশুদ্ধ মানুষ সবধরনের কুপ্রবৃত্তি থেকে, সব পাপাচার ও অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকে। ফলে সমাজে সে আদর্শ মানুষ হিসেবে সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা লাভ করে। এ হিসেবে আত্মশুদ্ধি হলো সফলতা লাভের মাধ্যম। যে ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে ব্যর্থ সে দুর্ভাগা। সে কখনোই সফলতা লাভ করতে পারে না। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আত্মাকে পূতপবিত্র রাখবে সেই সফলকাম হবে। আর সে ব্যক্তিই ব্যর্থ হবে যে নিজেকে কলুষিত করবে।’ (আশ-শামস : ৯-১০)। ইতিপূর্বে বর্ণিত সূর্য, চন্দ্র, দিবস, রাত্রি, আকাশ, পৃথিবী ও মানুষসহ সাতটি সৃষ্টবস্ত্তর শপথ করার পর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ উপরোক্ত কথা বলেছেন। এর দ্বারা তিনি অত্যন্ত জোরালোভাবে একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, পবিত্র আত্মার লোকেরাই পৃথিবীতে সফলকাম এবং কলুষিত আত্মার লোকেরা সর্বদা ব্যর্থকাম। তাদের বাহ্যিক পোষাক-পরিচ্ছদ যতই পবিত্র হৌক এবং সামাজিক মর্যাদা যতই উন্নত হৌক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা বা মালের দিকে দেখেন না। বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে’। (মুসলিম : ২৫৬৪; মিশকাত : ৫৩১৪ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায় ‘লোক দেখানো ও শুনানো’ অনুচ্ছেদ) উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘আত্নশু্দ্ধির’ অর্থ ‘শিরক ও পাপের কালিমাসমূহ হতে পবিত্র হওয়া’। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, সফলকাম হল সেই ব্যক্তি যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করল’(আ‘লা : ১৪)। মূলতঃ নবী প্রেরণের উদ্দেশ্যই ছিল মানুষকে পরিশুদ্ধ করা। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই মধ্য হতে একজনকে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন। আর তিনি তাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইতিপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে ছিল’। ‘এবং এটা তাদের জন্যেও যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি। আর আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ । (জুম‘আহ : ২-৩)
অত্র আয়াতদ্বয়ে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর যুগের ও পরবর্তী যুগে কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল আদম সন্তানের আত্মশুদ্ধির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। আর সেই আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হল পবিত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ। আর তার ভিত্তিতে যথার্থ ইলম ও আমলের মাধ্যমে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন শুদ্ধিতা অর্জন করা।
দ্বিতীয় আয়াতে এর বিপরীত বর্ণনা এসেছে যে, ব্যর্থকাম হল সেই ব্যক্তি যে তার আত্মাকে কলুষিত করে’। অর্থাৎ যারা কুরআন ও সুন্নাহর বাইরে গিয়ে সাফল্য তালাশ করে, তারা শয়তানের খপ্পরে পড়ে নিজেকে কলুষিত করে ফেলে। ক্বাতাদাহ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, ‘ঐ ব্যক্তি নিরাশ হয়েছে, যার আত্মা পাপে ডুবে গেছে’ (কুরতুবী)। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে ও সে পাপ তাকে বেষ্টন করে ফেলেছে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে’। (বাক্বারাহ : ৮১)
হযরত আবু আবদুল্লাহ নোমান বিন বশির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। এ দুইয়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, বেশির ভাগ মানুষ সেগুলো জানে না। অতঃপর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় থেকে বেঁচে থাকে, সে নিজের দ্বিন ও সম্মানকে ত্রুটিমুক্ত রাখে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক কাজে লিপ্ত হলো সে হারামে লিপ্ত হলো। যেমন কোনো রাখাল, তার (গবাদি) পশু সংরক্ষিত এলাকার আশপাশে চরায়। আর তখন আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, যেকোনো সময় কোনো পশু তার মধ্যে ঢুকে পড়বে। সাবধান! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে। আর আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো। সাবধান! নিশ্চয়ই মানবদেহে একখণ্ড গোশতের টুকরো আছে, যখন তা সুস্থ হয়ে যায় গোটা শরীরটাই সুস্থ হয়ে যায় এবং যখন তা অসুস্থ হয়ে যায় গোটা শরীরই অসুস্থ হয়ে যায়। জেনে রেখো! এটাই হচ্ছে কলব।’ (সহীহ মুসলিম : ৪১৭৮)
আলোচ্য হাদীসের শেষাংশে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আত্মশুদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন। আত্মা পরিশুদ্ধ না হলে মানুষের জীবনের কোনো কিছু সুন্দর ও সুস্থভাবে পরিচালিত হয় না। এ জন্য আল্লাহ বলেছেন, ‘সে-ই সফল যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং যে তার আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (আশ-শামস : ৯-১০)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: সফলতা আসলে ক্ষমতাবান মামা চাচার মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:০৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মুমিনদের আত্মা ছাড়া চলে না।বিজ্ঞান মনস্কদের আত্মা লাগে না।কারন বিজ্ঞান জানে ভাষার সাহায্যে মস্তিষ্ক চিন্তা করে।যার জন্য মুর্খ লোকেরাও বলে মাথাটা একটু খাটাও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.