নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাসূল (সাঃ) রামাদানে যে চারটি কাজ বেশি বেশি করতে বলেছেন

২৯ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:১০

হযরত সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবানের শেষ দিন রামাদানের আগমনী খুতবায় ইরশাদ করেন, “তোমরা এই মাসে (অর্থাৎ রামাদান মাসে) চারটি কাজ বেশি বেশি করতে থাকো। (তন্মধ্য হতে) দুটি কাজ এমন, যেগুলো দ্বারা তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করবে। আর দুটি কাজ এমন, যা না করে তোমাদের কোন উপায় নেই।
প্রথম দুটি কাজ যেগুলো দ্বারা তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করবে তা হলো, অধিক পরিমানে কালিমায়ে তায়্যিবা পড়বে এবং ইস্তেগফার করবে।
আর যে কাজ দুটি তোমাদের না করে কোন উপায় নেই তা হলো, আল্লাহ তা'আলার নিকট জান্নাত চাইবে এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি চাইবে।” (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ১৮৮৭; বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৬০৮)
মুসলিমদের কাছে সপ্তাহের সর্ব উত্তম দিন শুক্রবার। রাতের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ রাত শবে ক্কদরের রাত। আর মাসের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ মাস হলো রামাদান মাস। এই মাসের ফজিলত অনেক। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র রামাদান মাসে আমাদেরকে আল-কুরআন দিয়েছেন। তাই এ মাসের এত গুরুত্ব। রহমত-বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রামাদান। এ মাস মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের জন্য সব নেয়ামত আহরণের প্রতি আহ্বান করা হয়। যে যত বেশি নেয়ামত আহরণ করবে সে তত বেশি সফলকাম হবে।
উপরোক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় রামাদান মাসে নি¤েœাক্ত ৪টি কাজ বেশি বেশি করতে হবে। যে ব্যক্তি ৪টি কাজ বেশি বেশি করবে তার দুনিয়া ও পরকাল সফলকাম হবে।
১. কালেমা পাঠ :
অধিক পরিমানে কালিমায়ে তায়্যিবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া। শাহাদাতের এ কালেমা মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে ধাবিত করবে। মানুষ একত্ববাদের গোলাম। আর একত্ববাদের প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। রামাদান মাস দান করেছেন। পবিত্র কুরআন দান করেছেন। সব আম্বিয়া কেরামকে একত্ববাদের প্রতিষ্ঠার জন্য পাঠিয়েছেন। তাই কুরআন নাজিলের মাসে মহান আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি বেশি বেশি দেয়ার মাধ্যমে একত্ববাদের দিকে নিজেকে একনিষ্ঠ করে তোলা।
ক) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ঈমানের ৭০টির বেশি অথবা ৭৩টি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম শাখা হচ্ছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা, আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে পথে বা রাস্তার মধ্য থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দেয়া এবং লজ্জা হলো ঈমানের একটি শাখা।’ (মুসলিম : ১/৩৫)
খ) হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, জান্নাতের চাবি হলো এ সাক্ষ্য দেয়া যে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রতিপালক নেই)।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৩৬/২২১০২)
গ) হযরত ওসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ঘোষণা দেয় এবং এরই উপর মৃত্যুবরণ করে, তবে অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম : ১/২৬)
ঘ) হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এরূপ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল। তার জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।’ (মুসলিম : ১/২৯)
ঙ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কোনো বান্দা যদি ইখলাসের সাথে কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করে, তবে তার জন্য আকাশের দরোজাগুলো খুলে দেয়া হয়। (তিরমিজি : ৬৮)
চ) হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির শেষ কথা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে সে জান্নাতে যাবে।’ (আবু দাউদ : ২/৪৪৪)
ছ) ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হলো ঈমানের চাবি। ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করলে ঈমান মজবুত হয়। যে ব্যক্তি কালেমা পাঠ করে মৃত্যুবরণ করবে, ওই ব্যক্তি জান্নাতি হবে।
জ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদের কালেমার তালকিন করো।’ (মুসলিম : ১/৩০০)
মুমিন বান্দার কাছে কালেমার জিকির সর্বত্তোম জিকির। ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র জিকিরে মুমিন বান্দার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। যে ব্যক্তি বেশি বেশি কালেমার জিকির করবে ওই ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা পরকালে জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দেবেন এবং আকাশের সব রহমতের দরজা খুলে দেবেন।
দুনিয়ার সব পেরেশানি থেকে মুক্তি এবং পরকালের চিরস্থায়ী জান্নাতের সুখ শান্তি লাভের জন্য বেশি বেশি কালেমা পাঠ করা প্রয়োজন।
২. ইস্তেগফার :
ইস্তেগফার করা অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। যেমন আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া।
ক) মহান আল্লাহ বলেন : তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তেগফার কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
খ) মহান আল্লাহ বলেন : তাঁরা বলতেন হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার উপর ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। (ইমরান : ১৬)
গ) মহান আল্লাহ বলেন : হে ঈমাদারগণ তোমরা আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা কর নিশ্চয় তোমরা কামিয়াব হবে। (নূর : ৩১)
ক) সুনানে আবু দাউদ ও তিরমিযীতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত ইস্তেগফারটি পড়বে তাকে মাফ করে দেওয়া হবে যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করে (অর্থাৎ ভয়াবহ কোন গুনাহ করলেও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে)। (আবূ দাউদ : ১৫১৯; তিরমিজী : ৩৫৭৭)
ইস্তেগফারটি এই- আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযী লাইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়াতুবু ইলাইহি।
অর্থ : আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি চিরস্থায়ী চিরঞ্জীব, আমি তাঁর কাছেই তওবা করছি।
রাসূল (সাঃ) তাঁর পূর্বে ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ হওয়া সত্তেও বেশি বেশি ইস্তেগফার করতেন।
খ) হযরত ওমর (রাঃ) বলেন : রাসূল (সাঃ) দৈনন্দিন একশতের উপরে ইস্তেগফার পড়তেন।(আবু দাউদ)।
গ) হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন : রাসূল (সাঃ) ইন্তকালের পূর্ব মূহূর্তে বেশি বেশি ইস্তেগফার করে পড়তেন : সুবহান্নালিহি ওয়াবেহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া তুবু ইলাইহি। (বুখারী ও মুসলিম)।
ঘ) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন : আমি রাসূল (সাঃ) থেকে অধিক এ দোয়া পড়তে কাউকে দেখিনি : আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়াতুবু ইলাইহি। (নাসায়ী)
ঙ) আর রাসূল (সাঃ) ফরজ নামাজের পর তিন বার পড়তেন- আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ এর পর অন্যান্য মাসনূন দোয়া গুলো পড়তেন।
দৈনন্দিন ইস্তেগফার করা এটা আম্বিয়া কেরামগণের পাশাপাশি আল্লাহর ওয়ালি বা যুগে যুগে আসা উম্মাহর রাহবারদেরও সুন্নাত বা তরিকা ছিল।
চ) হযরত হাসান (রহ.) বলেন : তোমরা নামাজকে শেষ রাত্রি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাও অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।
আর বান্দা ব্যক্তিগত হোক বা সমষ্টিগত হোক, জানা গুনাহ হোক বা আজনা যে কোন গুনাহ করে আল্লাহর দরবারে তাওবাহ করে ক্ষমা চাইলেই তিনি ক্ষমা করে দিবেন।

৩. জান্নাত চাওয়া :
আল্লাহ তা’আলার নিকট জান্নাত চাইতে থাকা। আরবীতে এভাবে বলা যায়- আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাহ। অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট জান্নাত চাই।
মুমিন মুসলমানের আদি নিবাস জান্নাত লাভের আবেদন করা। যেটা দুনিয়ার কোনো বাড়ি নয়। যে বাড়িতে অবস্থানকারী ব্যক্তি কখনো বৃদ্ধ হবে না। পরিধানের জামা-কাপড় হবে না পুরনো। যেখানে বিরাজমান থাকবে মধু প্রবাহিত নদী। যে বাড়িতে মানুষ কখনো বুড়ো হবে না। শেষ হবে না তার যৌবন। এ জান্নাত আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। হাদীসে এসেছে-
ক) যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চায় না আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি রাগান্বিত হন।’ তাই জান্নাত লাভে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আকুতি জানাতে হবে হযরত আনাস (রাঃ) বলেন : “আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে : “হে আল্লাহ্! ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। ” (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)
খ) যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার এ দোয়াটি পড়বে (রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাও ওয়া বি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যাও ওয়া রাসূলা) আল্লাহ তা’য়ালার ওপর অবধারিত হবে কেয়ামাতের দিন তাকে (জান্নাত দানের মাধ্যমে) খুশি করা। (সুনানে তিরমিজি)।
গ) হযরত মুনজির (রাঃ) বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে এ দোয়াটি পড়বে আমি তার দায়িত্ব নিলাম, কেয়ামতের দিন আমি তাকে তার হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাব। (মুজামে কাবির : ৮৩৮ মুজামুস সাহাবাহ : ১৬৯৬)
রাদিতু বিল্লাহি রাববাও ওয়া বিল ইসলামি দিনাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিইয়াও ওয়া রাসূলা” (সাঃ) ।
অর্থ : আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট আমার প্রতিপালক হিসেবে এবং ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট আমার দীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সন্তুষ্ট আমার নবী হিসেবে।
ঘ) হযরত আবু মুসা আশআরি (রাঃ) বলেন, নবী করিম (সাঃ) একদিন আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভান্ডারের একটি বাক্য বলে দেব? আমি নিবেদন করলাম, অবশ্যই বলে দিন। তিনি বললেন- ‘লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’। (সহীহ মুসলিম : ৭০৪৩)
অর্থ : আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গোনাহ থেকে বিরত থাকা এবং নেক আমলে লিপ্ত হওয়া সম্ভব না।
ঙ) যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের নামাজ শেষে ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার’ সাতবার পাঠ করবে সে যদি ওই রাতে বা দিনে মারা যায় তাহলে অবশ্যই জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে। (সুনানে আবু দাউদ : ২/৭৪১)।
চ) যে ব্যক্তি সকালে ‘আউজু বিল্লাহিস সামিয়িল আলিমি মিনাশ শায়তনির রাজিম’ তিনবার পড়ার পর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত একবার পাঠ করবে, আল্লাহ তা’য়ালা তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকবে। আর যদি সে ব্যক্তি ওই দিন মারা যায় তাহলে শহীদি মৃত্যু লাভ করবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এ আমল করবে সেও ওই সম্মানের অধিকারী হবে। (সুনানে তিরমিজি : ৫/১৮২)।
ছ) যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে ‘সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার’ দিনে পড়বে, সে যদি ওইদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মারা যায় তাহলে সে জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে রাতে পড়বে, সে যদি সকাল হওয়ার আগে মারা যায় তাহলে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ বোখারী : ৮/৬৭)।
জ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সূরা বাকারার মধ্যে এমন একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি পুরো কোরআনের নেতা বা সর্দারস্বরূপ। তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। তা হলো- ‘আয়াতুল কুরসি’। (মুসতাদরাকে হাকিম)
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বায়্যুম লা তা’খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।
‪অর্থ‬ : আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
ঝ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, একটি বন্দি জিন আমাকে বলেছে, যখন আপনি বিছানায় শুতে যাবেন, তখন ‘আয়াতুল কুরসি’র প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। তাহলে আপনি সেই রাতে এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর হেফাজতের বহির্ভূত হবেন না। আর সকাল পর্যন্ত শয়তানও আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না। উপরন্তু সেই রাতে যা কিছু হবে, সবই কল্যাণকর হবে। পরিশেষে রাসূল (সাঃ) বললেন, সে মিথ্যাবাদী হলেও এটা সে সত্যই বলেছে। তবে হে আবু হুরায়রা! জানো কি, তুমি এ তিন রাত কার সঙ্গে কথা বলেছিলে? আমি বললাম, না। রাসূল (সাঃ) বললেন, সে ছিল শয়তান।
ঞ) অন্য একটি হাদীসে আবু ইমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তাকে মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু বেহেশতে যেতে বাধা দেয় না। হযরত ‎আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল নুরে মুজাসসাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। (নাসায়ী)
ট) হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসী নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাত প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশির ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (সুনানে বায়হাকী)
ঠ) হযরত আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন, আয়াতুল কুরসী। (নাসায়ী)
ড) হযরত উবাই বিন কাব থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমার কাছে কুরআন মজীদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুআল্ হাইয়্যূল কাইয়্যূম.....) তারপর রাসূলুল্লাহ্ নিজ হাত দ্বারা তার বক্ষে আঘাত করে বলেন: আবুল মুনযির! এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ। (সহীহ মুসলিম)
৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া :
আল্লাহ তা’আলার নিকট জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া। আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনান্নার। অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই।
পরকালের চিরস্থায়ী জীবন যেন আল্লাহর ভয়াবহ আজাবে পরিণত না হয় সে জন্যেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহর কোনো বান্দা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে, এটা মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না। যার প্রমাণ কুরআন এবং হাদিসের সব নসিহত। সব স্থানেই আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আর তা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন।
ক) হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে যে ব্যাক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে : ‘হে আল্লাহ্ ঐ ব্যাক্তিকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দাও।” (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)
উভয়টি একসাথে এভাবে বলা যায়-‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউযু বিকা মিনান্নার’। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি ইবাদতের সাথে রমাদানের প্রতিটি মুহূর্ত কাটানোর তাওফিক দান করুন।
খ) হাদীসে এসেছে যে ব্যক্তি প্রতিদিন তিনবার জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রার্থনা করবে; জান্নাত ও জাহান্নাম ওই ব্যক্তির জান্নাত প্রাপ্তিতে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে থাকবে। তাই মুসলিম উম্মাহর উচিত এ মাসে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-‘আল্লাহুম্মা আদখিলনাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নার।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদিগকে বেহেশত দান করুন এবং আমাদিগকে দোজখ হতে মুক্তি দান করুন।
গ) রাসূল (সাঃ) এর নিম্নে বর্ণিত হাদীসটি লক্ষ্য করুন রাসূল (সাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি প্রত্যেক ফরজ স্বালাতের পর- “সুবহা-নাল্লাহ” (আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান)” (৩৩ বার)
“আলহামদুলিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য) (৩৩ বার)
“আল্লা-হু আকবার” (আল্লাহ সবচেয়ে বড়)” (৩৩ বার) তারপর ১ বার নিম্নোক্ত দোয়া বলে-
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর)। “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।” তাহলে ঐ ব্যক্তির সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমতুল্যও হয়। (সহীহ মুসলিম : ১২৩৯)
রামাদানের দোয়া :
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে পাপমুক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করতে হবে, এর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন ইহকাল ও পরকালের সফলতার জন্য কীভাবে দোয়া করতে হবে এ মর্মে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন-
ক) ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয়ের মধ্যে সফলতা দান করো এবং আমাকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দাও।’
খ) অন্যত্র দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার নিজের ওপর অত্যাচার করেছি; এখন যদি তুমি আমাকে মাফ না করো এবং আমার ওপর দয়া না করো; তাহলে নিশ্চয়ই আমি ক্ষতিগস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’
গ) হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলে দিন, যদি আমি জানতে পারি যে লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে, তাতে আমি কি বলব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে তুমি পছন্দও করো, অতএব আমাকে ক্ষমা করো।’ (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
ঘ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সিজদায় বান্দা তার প্রভুর অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে, তাই তোমরা অধিক দোয়া করো।’ (মুসলিম)
ঙ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, এমন দুটি কলেমা বা বাক্য আছে, যা উচ্চারণ করতে খুবই সহজ, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমলনামা ওজনের পাল্লায় খুব ভারী এবং আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয়। তা হলো ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ (বুখারী ও মুসলিম)
চ) নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, রোজাদারের নিদ্রা ইবাদততুল্য, চুপ থাকা তাসবিহ-তাহলিলতুল্য, আমল ইবাদত সওয়াব হাসিলে বেশি অগ্রগণ্য, দোয়া কবুলযোগ্য ও তার গুনাহ ক্ষমার যোগ্য।’ (বায়হাকি)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ ৪ (চারটি) বেশি বেশি করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৩৮

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ইসলামী লেখাগুলো দীর্ঘ না করে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করলে ভাল হয় । এতো দীঘ লেখা পড়ার ধৈয্য অনেকেরই থাকে না ।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৫২

নাহিদ ২০১৯ বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩৯

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: তথ্য বহুল লেখা। সব চেয়ে ছোট দরুদ আছে কি যেটা সব সময় সহজেই পড়া যায়-রেফারেন্সসহকারে দিলে উপকৃত হতাম

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:২৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: উপকারী পোষ্ট । রমজানে সবাই সহনশীল হয়ে সঠিকভাবে ধর্ম পালন করা উচিত যারা ইসলাম মানে

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমি রোজা রাখি।

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১০:৪৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: চৌদ্দশ বছর আগে রসুল কি করতেন বর্তমানে সেটা কোন গুরুত্বই বহন করে না।আমাদের বর্তমানে কি করা উচিত সেটাই ভাবনার বিষয়।

৭| ০১ লা এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৪১

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী বলেছেন: দরূদ শরীফের মধ্যে সর্বোত্তম দরূদ হলো- দরূদে ইবরাহিম। যা নামাজের শেষ বৈঠকে পড়া হয়। আর সবচেয়ে ছোট দরূদ হচ্ছে এটি : সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ যা পাঠের মাধ্যমে সালাত ও সালাম পাঠের হুকুম আদায় হয়ে যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.